উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, فَمِنۡهُمۡ شَقِیٌّ وَّ سَعِیۡدٌ “তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য এবং কেউ হবে ভাগ্যবান” (হুদ ১১/১০৫), এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী। তাহলে আমরা কিসের উপর আমল করব, এমন জিনিসের উপর যে প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে অথবা এমন কোন জিনিসের উপর যে প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি? তিনি বললেনঃ হে উমার! না, বরং এমন জিনিসের উপর যা পূর্বেই চূড়ান্ত হয়ে আছে এবং যার সাথে কলম জারী হয়ে গিয়েছে। তবে প্রত্যেকের করণীয় বিষয় সহজসাধ্য করে রাখা হয়েছে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (তিরমিযী হা/৩১১১)। অন্যত্র এসেছে, একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ’আমলের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মুয়াত্ত্বা মালিক হা/১৩৯৫, আবূ দাঊদ হা/৪০৮১, তিরমিযী হা/৩০০১; মিশকাত হা/৯৫)
ব্যাখ্যা : তাক্বদীরের খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যদি সে ঈমানদার হিসেবে লিখা হয়ে থাকে তবে তার জন্য সৎকাজ করা সহজ করে দেয়া হবে। আর যদি বদকার ও কাফের হিসেবে লেখা হয়ে থাকে তবে সে ভাল কাজ করতে চাইবে না, ভাল কাজ করা তার দ্বারা সহজ হবে না। তাই প্রত্যেকের উচিত ভাল কাজ করতে সচেষ্ট হওয়া। কারণ ভাল কাজের প্রতি প্রচেষ্টাই তার ভাগ্য ভাল কি মন্দ হয়েছে তার প্রতি প্রমাণবহ। তা না করে নিছক তাকদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে বুঝতে হবে যে, সে অবশ্যই হতভাগা, তার তাকদীরে ভালো লিখা হয়নি। যা অধিকাংশ দুর্ভাগা মানুষ সবসময় করে থাকে। তারা ভাগ্যকে অযথা টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে এবং ভাগ্য নিয়ে অযথা বাদানুবাদ করে।
অপরপক্ষে, যাদের ভাগ্য ভাল, তারা তাকদীরের উপর ঈমান রাখে কিন্তু সেটাকে টেনে এনে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে ভাল কাজ করতে সদা সচেষ্ট থাকে। তারপর যদি ভাল কিছু পায় তবে বুঝতে হবে যে, প্রচেষ্টা করার কথাও তার তাকদীরে লিখা আছে। আর যারা সৎ কাজের চেষ্টা না করে অযথা তাকদীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের সম্পর্কে বুঝতে হবে যে, তারা সৎকাজের প্রচেষ্টা করবে না এটাই লিখা হয়েছিল সে জন্য তারা দুর্ভাগা। তাকদীর সম্পর্কে এটাই হচ্ছে মূল কথা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یَوۡمَ یَاۡتِ لَا تَکَلَّمُ نَفۡسٌ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ ۚ فَمِنۡهُمۡ شَقِیٌّ وَّ سَعِیۡدٌ যেদিন তা আসবে সেদিন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলবে না। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কেউ দুর্ভাগা, আর কেউ সৌভাগ্যবান। (হুদ ১১/১০৫) অন্যত্র বলেন, “সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া অন্যরা কথা বলবে না এবং সে সঠিক বলবে।” (আন-নাবা ৩৮)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সেই দিন আম্বিয়াগণ ছাড়া কারোর কথা বলার হিম্মত ও সাহস হবে না। আর আম্বিয়াগণের মুখে সেদিন একমাত্র এই কথা হবে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে পরিত্রাণ দাও, আমাকে পরিত্রাণ দাও।’’ (বুখারী)
আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বসেছিলেন। তাঁর হাতে একটা কাঠি ছিল। তা দিয়ে তিনি মাটি খুদছিলেন। হঠাৎ তিনি মাথা তুললেন এবং বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেরই জান্নাতের ও জাহান্নামের বাসস্থান (অর্থাৎ কার বাসস্থান কোথায়) জানা হয়ে গেছে। উপস্থিত সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, তাহলে আমরা আর আমল করবো কেন? তিনি বললেনঃ আমল করে যাও। কারণ প্রত্যেককে যে আমলের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে আমল তার জন্য সহজ সাধ্য করা হয়েছে। “যে ব্যক্তি দান করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং যা ভালো তা মেনে নেয়, তার জন্য আমি শান্তির পথ সহজ করে দেব”। [সূরা লায়লঃ ৫-১০]
(বুখারী-৪৯৪৬, মুসলিম-২৬৪৭, মুসনাদে আহমাদ-১০৬৭, ১০৬৮, ১১১০, ১১৮১, ১৩৪৯)
শুধু ‘আমলের দ্বারা জান্নাত বা জাহান্নামে কেউ যাবে না বরং আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত বিষয় ‘তাক্বদীর’ এখানে বিশেষভাবে কার্যকর। অতএব, যার তাক্বদীরে যা লিখা আছে সে তারই হক্বদার হবে। তাছাড়া জান্নাতে সেই ব্যক্তি প্রবেশ করবে যার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনে প্রতি অবিচল রাখুন, আমীন।