দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন। এর কোন বয়স বা সময়সীমা নেই। জীবনের দীর্ঘ সময় এ পথে ব্যয় করতে হবে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করতে হবে। তবেই জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করা সম্ভব হবে এবং পরিপক্ক জ্ঞানী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। হাসান বিন মানছূর আল-জাসসাস বলেন, আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত বছর পর্যন্ত একজন মানুষ লেখা পড়া শিখবে? তিনি বললেন, মৃত্যু পর্যন্ত’।(ত্বাবাকাতুল হানাবিলাহ ১/১৪০ পৃ.।)
আর সমাজে নেতৃত্ব দিতে হ’লে সর্বপ্রথম জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক। ওমর (রাঃ) বলেন, تَفَقَّهُوْا قَبْلَ أَنْ تُسَوَّدُوْا ‘নেতৃত্ব দেওয়ার পূর্বে তোমরা বিদ্যা অর্জন কর’। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ‘নেতা হওয়ার পরেও তোমরা বিদ্যা অর্জন করতে থাক। নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ তো বৃদ্ধ বয়সে বিদ্যা শিখেছেন’।(বুখারী তালীকান ১/৩৯ পৃ.।)
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, কুরআন পাঠের সময় ক্রন্দন করা সৎ মানুষের গুণ। ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, কেউ কুরআন পাঠের সময়ে কাঁদতে চাইলে মনকে চিন্তিত করতে হবে এবং তার মধ্যে বর্ণিত শাস্তি, ধমক, হুমকি, প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে ভয় করতে হবে। তারপর সে স্বীয় অভ্যন্তরে সেগুলোর কমতি বুঝতে পারবে। এরূপ হলে তার কান্না আসবে।
ইমাম ইবনু হাজার (রহঃ) সুমধুর সুরে উচ্চৈঃস্বরে চিন্তাবিমোহিত হয়ে ও নিজকে সংবাদ সম্পর্কে অন্যের নিকট অমুখাপেক্ষী মনে করে কুরআন পাঠ করে। কেননা সুললিত কন্ঠের পাঠ দ্বারা অন্তর বিমুগ্ধ হয় অন্তর বিগলিত হয়ে অশ্রু বয়ে যায়।
কুরআন তেলাওয়াত সাদাকাহ :
’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উচ্চস্বরে কুরআন পড়া প্রকাশ্যে সদকা করার মতো। আর চুপে চুপে কুরআন পড়া চুপে চুপে সদকা করার মতো। (আবূ দাঊদ হা/১৩৩৩, তিরমিযী হা/২৯১৯, নাসায়ী হা/২৫৬১, সহীহ আল জামি‘ হা/৩১০৫, মিশকাত হা/ ২২০২)।
ইমাম তিরমিযী (রহিঃ) বলেন, উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পড়ার চাইতে চুপি স্বরে পড়ার উত্তম, যেমন গোপনে সদাকাহ্ করা উত্তম। এ মতটি ব্যক্ত করেছেন। বিজ্ঞ ‘আলিমগণ বলেন, যেন মানুষ অহংকার থেকে নিরাপদ থাকে, কারণ যে গোপনে কোন ‘আমল করে তার অহংকারের ভয় থাকে না যা প্রকাশ্যে করলে হয়ে থাকে। আসলে উঁচু আওয়াজে কুরআন পড়া ও নিম্নস্বরে পড়া উভয় পক্ষে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
উভয়ের মাঝে সমাধানকল্পে ইমাম তিরমিযী বলেন, (إن الأسرار أبعد من الرياء فهو أفضل في حق من يخاف ذلك، فإن لم يخف الرياء فالجهر أفضل بشرط أن لا يؤذي غيره)
অর্থাৎ- নীরবে পড়া রিয়া বা লৌকিকতা থেকে অধিক দূরের বিষয়। আর যার রিয়ার আশংকা আছে তার জন্য নীরবে পড়া উত্তম। কিন্তু যার এই ভয় নেই তার উঁচু স্বরে পড়া বেশি ভাল, তবে এর দ্বারা মুসল্লি, ঘুমন্ত ব্যক্তির যেন কষ্ট না হয়। অর্থাৎ- যেখানে লৌকিকতা, মুসল্লির কষ্টের সম্ভাবনা রয়েছে সেথায় নীরবে পড়া উত্তম। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বরবে পড়া উত্তম। এর প্রতি ‘আমল করা উল্লেখযোগ্য কাজ। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ মনোযোগ সহকারে শোনার, শিক্ষার, অনুসরণ করার উপকার পায়। উপরন্তু এটি একটি ধর্মের প্রতীক। আর এর দ্বারা পাঠকের কলব জাগ্রত হয়, তার চেতনা চিন্তার জন্য পুঞ্জীভূত হয় কেননা এটা ঘুমকে দূরীভূত করে। এসব নিয়্যাতে উঁচু স্বরে কুরআন পড়া উত্তম কাজ।
তিন দিনের কম সময়ে কুরআন খতম না করা :
তিন দিনের কম সময়ে কুরআন তেলাওয়াত শেষ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন পড়েছে, সে কুরআন বুঝেনি। (তিরমিযী হা/২৯৪৯, ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৭, আবূ দাঊদ হা/১৩৯৪, মিশকাত হা/ ২২০১)।
তিন দিনের কমে কুরআন খতম করা মাকরূহ। এ মতের উপর অধিকাংশ ‘আলিম, মুহাদ্দিস ফাতাওয়া প্রদান করেছেন। এর কমে খতম করলে কুরআনকে বুঝতে পারবে না এবং তার প্রতিপাদ্য বিষয়াদি অনুধাবন করতে সক্ষম হবে না। তবে তার সাওয়াব হবে। তিন দিনের কমে খতম না করার আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে, যথাঃ (عن عائشة إنها قالت ولا أعلم نبي الله قرأ القرآن كله في ليلة) অর্থাৎ- আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গোটা কুরআন এক রাতে পড়ার কথা সম্পর্কে অবগত নই। তিনি আরো বলেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতেন না।
‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ বলেন, তোমরা তিন দিনের কমে কুরআন পড়ে শেষ করো না।
ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) তাঁর ‘আল কাবীর’ গ্রন্থে বলেন, তোমরা তিন দিনের কমে কুরআন পড়ো না, বরং সাত দিনে খতম কর।
সালাফগণ এ নিয়ে মতানৈক্য করেছেন তাদের অনেকে তিন দিনের কমে পড়াকে মাকরূহ বলেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ, ইসহাক বিন রহ্ওয়াইহি, আবূ ‘উবায়দ প্রমুখ। কোন জাহিরী মতাবলম্বী এটাকে হারাম বলেছেন, তবে কোন বিদ্বান এটার রুখসাত দিয়েছেন তারা দলীল হিসেবে ‘উসমান-এর হাদীস যথাঃ (إنه كان يقرأ القرآن في ركعة يوتر بها) এবং সা‘ঈদ বিন জুবায়র-এর হাদীস যথা (أنه قرأ القرآن في ركعة في الكعبة) উল্লেখ করেন।
হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) আহমাদ, ইসহাক-এর মতটি গ্রহণ করে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর হাদীস পেশ করেন।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ‘আলিমের অভিমত হলো যে, এর কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। এটা পাঠকের উৎসাহ, আগ্রহ, চাহিদা, শক্তির উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি বিশেষ অবস্থার কারণে পড়ার সময় বিভিন্ন রকম হতে পারে। সুতরাং যেই ব্যক্তির দ্রুত পড়ার সাথে সাথে আয়াতের ভাবার্থ, তাৎপর্য, মাহাত্ম্য পূর্ণরূপে বুঝতে পারবে সে তাড়াতাড়ি পড়বে। আর এর ব্যতিক্রম হলে সে ধীরে ধীরে পড়বে। মির্‘আতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, আমার নিকটে আহমাদ, ইসহাক-এর মতটি পছন্দনীয়। কেননা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ও ‘আয়িশাহ্ এর হাদীস সর্বাধিক অনুসরণযোগ্য।
কুরআন তাজবীদ সহকারে তেলাওয়াত করা :
কুরআন মাজীদকে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করা শারী‘আতের নির্দেশ। কুরআনকে সুর দিয়ে পড়লে আরো সুন্দর হয়। বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’তোমাদের মিষ্টি স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করো।’ (আহমদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
(আবূ দাঊদ হা/১৪৬৮, নাসায়ী হা/১০১৫, ইবনু মাজাহ হা/১৩৪২, মিশকাত হা/ ২১৯৯)।
সুমধুর কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর তা নিষিদ্ধ নয়, কেননা সৌন্দর্য বর্ধক জিনিস সেই বস্ত্তরই অন্তর্ভুক্ত। আল মানাবী (রহঃ) বলেন, আসলে উপরোক্ত হাদীস দ্বারা তারতীল সহ কুরআন তিলাওয়াতের উপর উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِيلًا ‘‘আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কুরআন পাঠ কর’’- (সূরা আল মুযযাম্মিল ৭৩ : ৪)। অর্থাৎ- কুরআন তাজবীদসহ চিন্তা বিমুগ্ধ করুন স্বরে পাঠ কর। সুন্দর কালামুল্লাহকে সুর করে পড়লে মানুষ বিমোহিত হয়ে পড়ে। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মূসা -এর তিলাওয়াত শুনে বললেন, (لقد أوتيت مزماراً من مزامير آل داود) তোমাকে দাঊদ (আঃ)-এর কণ্ঠস্বর দেয়া হয়েছে।
বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়। (দারিমী হা/৩৫৪৪, শু‘আবূল ঈমান হা/১৯৫৫, সহীহ আল জামি‘ হা/৩১৪৫, মিশকাত হা/২২০৮)।
ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, কুরআনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা বলতে তারতীলসহ বিনম্র করুণ সুরে শোকাকুল হয়ে সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে কুরআন স্বরবে সুন্দর আওয়াজে পড়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এর দ্বারা কোন মুসল্লি বা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট না হয়।
বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করা :
ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ’আলহাম্দু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’, এরপর থামতেন। তারপর বলতেন, ’আর্ রহমা-নির রহীম’, তারপর বিরতি দিতেন। ( তিরমিযী হা/২৯২৭, দারাকুত্বনী হা/১১৯১, সহীহ আল জামি‘ হা/৫০০০, মিশকাত হা/ ২২০৫)।
ইমাম বায়হাক্বী বলেছেন, প্রতি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করা বা থামা সুন্নাত যদিও তার পরবর্তী আয়াতের সাথে এর সম্পর্ক থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি আয়াতকে আলাদা আলাদা করে পড়তেন। ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ, হাকিম প্রত্যেক আয়াতের মাথায় থেমে যেতেন যদিও তার পরবর্তী আয়াতের সাথে এর সম্পর্ক থাকত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আয়াত পড়তেন, তারপর অল্প সময় কিরাআত থেকে বিরত থাকতেন, এরপর পরের আয়াত পড়তেন। এভাবে সম্পূর্ণ সূরা পড়তেন।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। আমরা তখন কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম। এ পাঠের মধ্যে ’আরব অনারব সবই ছিল (যারা কুরআন পাঠে ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারছিল না) তারপরও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পড়ে যাও। প্রত্যেকেই ভাল পড়ছো। (মনে রাখবে) অচিরেই এমন কতক দল আসবে যারা ঠিক মতো কুরআন পাঠ করবে, যেভাবে তীর সোজা রাখা হয়। তারা (দুনিয়াতেই) তাড়াতাড়ি এর ফল চাইবে। আখিরাতের জন্য অপেক্ষা করবে না। (আবূ দাঊদ হা/৮৩০, আহমাদ হা/১৫২৭৩, সহীহ আল জামি হা/১১৬৭)।
আল্লাহর বাণী الْأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا ‘‘বেদুঈন ‘আরবরা কুফরী আর মুনাফিক্বীতে সবচেয়ে কঠোর’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৯৭)।
العجمى বলা হয়, যারা ‘আরব অঞ্চলের বাহিরে রোম, পারস্যে, হাবশায় বসবাস করে। যেমন সালমান, শু‘আয়ব, বিলাল (রাঃ) প্রমুখ أعرابى হোক বা عجمى হোক সবার তিলাওয়াত সুন্দর ও প্রত্যাশিত এবং এটা সাওয়াব এর ফল। যদিও উভয়ের মাঝে শব্দ উচ্চারণের স্থান ও এর স্বাতন্ত্রতা এবং এর ‘আরাবী কায়দা কানুন একই রকম নয়। তবুও এর দ্বারা সাওয়াব পাওয়া যায় এবং এটা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি প্রজন্মের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, যেটা তার মু‘জিযা এর অন্তর্ভুক্ত, যে শীঘ্রই একটি দলের উদ্ভব ঘটবে যারা কুরআনের কিরাআত নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করবে। তারা শব্দকে সুন্দর করার জন্য, তার মাখরাজ ও সিফাতের প্রতি কঠিনভাবে নজর দিয়ে শব্দকে আদায় করার জন্য তীব্র কষ্ট উঠাবে। এটা এবং তারা পার্থিব সুনাম, খ্যাতি অর্জনের এবং লোককে দেখাবার উদ্দেশে করবে। তারা পৃথিবীতে এর প্রতিদান সাওয়াবের আশা করবে। কেউ বলেছেন তারা আল্লাহর আয়াতকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করবে কিন্তু তারা পরকালে এর প্রতিদানের আশা করবে না তারা শুধু খেয়ে যাবে, আল্লাহর ওপর ভরসা করবে না।
ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাবি‘ঈদেরকে কিরাআত সহজ ছিল। তিনি বলেন, তোমরা যেভাবে সহজ উচ্চারণ করতে পার সেভাবে কুরআন তেলাওয়াত কর। এক্ষেত্রে হরফ উচ্চারণে কষ্ট কাঠিন্য স্বীকার ও মাদ্দ, হামজা উচ্চারণে ও ইশ্বা করণে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ত করার দরকার নেই।
কুরআন অবমাননা হয় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা :
’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে সফর করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, কুরআন নিয়ে সফরে বের হয়ো না। কারণ কুরআন শত্রুর হাতে পড়ে যাওয়া আমি নিরাপদবোধ করি না।
(বুখারী হা/২৯৯০, মুসলিম হা/১৮৬৯, আবূ দাঊদ হা/২৬১০, মিশকাত হা/ ২১৯৭)।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন একটি সম্মানিত ঐশী গ্রন্থ। সবার নিকটে এর মর্যাদা রয়েছে। কোন মুসলিমকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের মাসহাফ নিয়ে অমুসলিম শত্রুদের ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন এই আশঙ্কায় যে, কোন শত্রু হয়ত তাকে পেয়ে অবমাননা করবে বা তুচ্ছ জ্ঞান করবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, শত্রু ভূখণ্ডে যদি কুরআনের অসম্মানের ভয় না থাকে তবে কুরআন নিয়ে সফর করা যাবে। যেমন কোন জায়গায় যদি মুসলিম সৈন্য বিজয়ী থাকে। কিন্তু কুরআন জানা ব্যক্তি সে সব জায়গায় সফর করতে পারবে। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ সফর করতেন শত্রু ভূখণ্ডে। এটা বিশুদ্ধ মত যার প্রতি ইমাম বুখারী, আবূ হানীফাসহ অন্যরাও সম্মতি দিয়েছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে দ্বীন বুঝে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার এবং কুরআন আমাদের জীবনে সাদাকাহ হিসেবে তাওফীক দান করুন, আমীন।