চন্দন কাঠের উপকারিতা

চন্দনের উপকারিতা ও গুনাগুণের কোন অংশে কমতি নেই। চন্দন একটি সুগন্ধি গাছের নাম। এটি সবচাইতে বেশি পাওয়া যায় ভারতে এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশেও এই সুগন্ধি গাছ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চন্দন বহুল ব্যবহৃত হয়। এ চন্দন কাঠের ব্যবহার রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে আরবদের মাঝে ব্যাপক হারে প্রসিদ্ধ ছিল।

উম্মু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেন তোমরা শিশু-সন্তানদের তালু দাবিয়ে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ? অবশ্যই তোমরা এ রোগের জন্য (অর্থাৎ- আলজিহ্বা ফুলার জন্য) ঊদ হিন্দী (আগর কাঠ) ব্যবহার করো। কেননা এতে সাত রকম রোগের নিরাময় নিহিত আছে। তন্মধ্যে একটি হলো পাঁজরের ব্যথা। বাচ্চাদের আলজিহ্বা ফুলার ব্যথা হলে তা ঘষে পানির সাথে মিশিয়ে ফোঁটা ফোঁটা নাকের ভিতরে দেবে। আর পাঁজরের ব্যথা হলে মুখ দিয়ে খাওয়াতে হবে। (বুখারী হা/৫৭১৩, মুসলিম হা/২২১৪, মিশকাত হা/৪৫২৪)

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের গলা ব্যথায় ইন্ডিয়ান কাঠ ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বা হাদীস বেত্তাগণ ‘ঊদ হিন্দী ব্যবহারের সুন্দর নিয়ম বলে দিয়েছেন। তা হলো, শিশুদের আলজিহবা ফুলে যাওয়ার কারণে ‘উযরাহ্ নামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিত। এক্ষেত্রে আগর কাঠ গুঁড়া করে সামান্য পরিমাণ নাকে দিলে ‘উযরাহ্ রোগ নিরাময় হয়। আলোচ্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি রোগের আরোগ্যের কথা বললেও শুধুমাত্র দু’টি রোগের বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। বাকী পাঁচটি বিষয়ের কেন করেননি, এর কারণ ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেনঃ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে তৎকালীন যুগে ‘আরবদের মাঝে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল বিধায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রোগের উল্লেখ করে অবশিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করেননি।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কতিপয় মানসিক রোগী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীসের নির্দেশনায় আপত্তি প্রকাশ করেছেন। ইমাম মাযিরী তাদের এই আপত্তির প্রত্যুত্তরে বলেছেনঃ আপত্তি পেশকারীদের অজ্ঞতা সুস্পষ্ট। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ্ ইউনুসে উল্লেখ করেছেন, ‘‘তারা সে বিষয়টিকে মিথ্যা বলেছে যে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই’’- (ইউনুস ১০/৩৯)।

প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী জালিনূস ও অন্যদের মতে, কুস্তব (কোথ) বুকের ব্যথায় বেশ কার্যকর। প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এটি প্রয়োজনমত শরীরের বহিরাংশ ও অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয়, নাস্তিক ও আপত্তি পেশকারীদের ধারণা নিরর্থক ও ভিত্তিহীন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সাতটি রোগের মাঝে দু’টি উল্লেখ করে বাকী পাঁচটি উল্লেখ করেননি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষাপূর্বক উক্ত পাঁচটি রোগের বর্ণনা দিয়েছেন। রোগগুলো হচ্ছে, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব ও প্রস্রাবের সমস্যা, বীর্যের কার্যকারিতা বাতিল, যৌন সমস্যা, কৃমির সমস্যা। তবে তা মধু সহকারে সেব্য। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি রোগের কথা হাদীসে উল্লেখ করেছেন, তবে সাত শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কুস্তব-এর ব্যবহার শুধুমাত্র সাতটি রোগের চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top