দ্বীনের দাওয়াত

আপনি দ্বীনের জ্ঞানে গুণান্বিত করে ছহীহ আক্বীদায় নিজেকে পরিবর্তন করেছেন, বেশ ভালো কথা শুকরিয়া স্বরূপ আল-হামদুলিল্লাহ। এবার আপনার পরিবারের সকলকে অনুরূপ পরিবর্তন করানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হোন এবং বেশী বেশী হেদায়াতের জন্য দো`আ করুন। এটা আপনার দাওয়াতের দ্বিতীয় ধাপ। দাওয়াত দিচ্ছেন দেখবেন হক্বের দাওয়াত কেহ খুব সহজেই গ্রহণ করেছে সে আপনার দাওয়াতের অনুকূলের উত্তম সঙ্গী। কিন্তু যদি কেউ আপনার দাওয়াত কবূল না করে তবে বারংবার তাকে উপদেশ দিতে থাকে। তার মন্দ আচরণ আপনাকে রাগান্বিত করবে কিন্তু তা হজম করতে শিখুন। কেননা, আপনি হক্বের উপদেশ দিতে গেলে অবশ্যই বাঁধা প্রাপ্ত হবেন; তাই সর্বদা ধর্য্য ধারনের প্রস্তুত থাকুন। সবুরকারী বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন তবে সূরা আছরের আলোকে ভালোবাসুন। এ সূরা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা`আলা বলেন,

وَالْعَصْرِ () إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ () إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ()

‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ব্যতীত যারা (জেনে-বুঝে) ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে ‘হক’-এর উপদেশ দিয়েছে ও পরস্পরকে ধৈর্য্যরে উপদেশ দিয়েছে’ (আছর ১০৩/১-৩)।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ-শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) বলেন, ‘যদি মানুষ এই সূরাটি গবেষণা করত, তাহ’লে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হ’ত’ (ইবনু কাছীর)।

এই সূরার আলোকে সকলকে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছায়ে দিন। মূল শিক্ষা হ’ল-

১. ঈমান আনতে হবে এবং এর ওপর দৃঢ়ভাবে অবস্থান করতে হবে। আর সকল বিশ্বাসের সাথে আক্বীদা পরিশুদ্ধ করতে হবে।

২. আমলে ছলেহ পালন করতে হবে। ঈমানের দ্বীপ্ততা বৃদ্ধির জন্য সর্বদা খালিছ অন্তরে বেশী বেশী ইবাদত করতে হবে। দো‘আ, যিকির ও ইবাদতের মাধ্যমে ঈমানের ধার আরো উজ্জল হয়।

৩. নিজেকে পরিশুদ্ধ করে পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে হক্বের উপদেশ দিতে হবে। উপদেশ প্রদানের সময় তাদের নিকট থেকে বাঁধা ও বিপত্তি আসতে পারে। আর সে সময় নিজেকে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনাদর্শের মানদণ্ডে ওজন করে অতিব সূক্ষ্মভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

৪. হক্বের দাওয়াত বা উপদেশ প্রদানের সময় যে বাঁধা বিপত্তি আসবে, সেখানে সবরের সাথে অবিচল থাকতে হবে। এটা মহৎ গুণ। সবায় এ গুণ অর্জন করতে সক্ষম নয়। তবে প্রত্যেক মুমিনের এই গুণ অবশ্যই অর্জন করতে হবে, নতুবা সে পরাজিত হবে। সফলতা তারাই অর্জন করেছে যারা সবর করেছেন। এটা ঈমানের পরীক্ষাও হতে পারে এবং সেখানে সর্বদা সবর করতে হবে।

একজন ব্যক্তিকে হেদায়েতের পথে আনতে পারলে আপনি সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ‘কোন ব্যক্তি যদি ভালো কাজের পথ দেখায়, সে ঐ পরিমাণ নেকী পাবে, যতটুক নেকী পাবে ঐ কাজ সম্পাদনকারী নিজে’।[মুসলিম হা/৪৮৯৯, ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়; রিয়াযুছ ছালেহীন (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২০০০) ১/১৪৯, হা/১৭৩।]

খায়বার যুদ্ধের সেনাপতি আলী বিন আবু তালিবকে নছীহতের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمُرِ النَّعَمِ ‘আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন লোককেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটা তোমার জন্য লাল উটের (কুরবানীর) চেয়েও উত্তম হবে’।[বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৭৫]

অবশেষে আপনি সফল না হলে বিদায় হজ্জের ভাষণের এই অংশটি মনে করে শান্তনা গ্রহণ করবেন যে, আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ প্রদান করে বলেন, أَلَا لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‘উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়’।[বুখারী হা/৬৫, ৪০৫৪, ৫১২৪, ৬৮৯৩]

হে আমার রব, তুমি আমাকে তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং সর্বদা দ্বীনের সঠিক বুঝ দাও ও দ্বীন ইসলামের ওপর অবিচল রাখো, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top