বিবাহের গুরুত্ব

 লিলবর আল-বারাদী
  ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ ও পরিবার সম্পূর্ণ একটি চুক্তিনামা জীবন ও দায়িত্ববোধ। বিয়ের উপযুক্ত সকল নারীকে বিবাহের জন্য শরীয়াহ্ মোতাবেক উপস্থাপিত করা এবং সকল পুরুষের তা সাদরে গ্রহণ করাÑ এই ‘ঈজাব’ ও ‘কবুল’ কর্তৃক বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সঙ্গে মিলে-মিশে দাম্পত্য জীবন যাপন করার সুযোগ লাভ করে। তাছাড়া বিবাহিত জীবন যাপনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যও রয়েছে। পৃথিবীর যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোন উদ্দেশ্য ছাড়া সম্পাদিত হয়নি বা হয়ও না। কুরআন, হাদীছ  ও বিজ্ঞানের আলোকে বিবাহের উদ্দেশ্য বহুবিধ। তন্মধ্যে, দ্বীনের আদেশ পালন, স্বীয় নৈতিক চরিত্র কলুষমুক্ত পবিত্র রাখতে পারা, জৈবিক চাহিদা পূরণ, মনের গভীর প্রশান্তি ও স্থিতি লাভ  এবং ভবিষ্যত বংশধর বৃদ্ধির লক্ষ্যে সন্তানের জন্মদান ও লালন-পালন এবং সমাজে সুস্থ মস্তিষ্ক দ্বীনী মানব গড়ে তোলা। দ্বীন ইসলামে কিছু নারীকে বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে, কিন্তু যাদের হালাল করা হয়েছে তাদেরকে উপযুক্ত মোহরানা বা অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে গ্রহণ করার অনুমতি রয়েছে। তাছাড়া হালাল নারীদের মোহরানা আদায় ব্যতিরিকে সম্পর্ক স্থাপন করা অবৈধ যৌনাচারের শামিল।  এ সম্পর্র্কে মহান আল্লাহ বলেন, (আরবী) “আর নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়Ñ এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদের ছাড়া তোমাদের জন্য সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্যÑ ব্যভিচারের জন্যে নয়” (নিসা-৪/২৪)।
যাদের বিয়ের বয়স অতিক্রান্ত হতে চলেছে তাদের বিয়ে করানো ফরয। যদি সামর্থ্য না থাকে তবে ততক্ষণ পযর্ন্ত সংযমী হতে হবে যতক্ষণ পযর্ন্ত না মহান আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে স্বচ্ছল, দারিদ্রমুক্ত করে দেন। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, (আরবী) তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করেনি, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।  আর যাদের বিবাহে সামর্থ্য নেই, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পযর্ন্ত না আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন (নূরÑ২৪/৩২-৩৩)। যারা বিয়ে করেনি এমন যুবক-যুবতীদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন,{আরবি} হে যুবক-যুবতীরা, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তাদের বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে নমিত রাখে, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যাদের সামর্থ্য নেই তাদের ছিয়াম পালন করা উচিৎ। আর ছিয়াম যৌন কামনা দমন করার মাধ্যম। (বুখারী-মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়)  আবার যারা অভাবের কারণে বিবাহ করে না তাদের সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ বলেন, তোমরা যদি ধনী হতে চাও, তবে বিবাহ কর। কেননা, মহান আল্লাহ্ বলেন, তবে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন (নূরÑ২৪/৩২) (তাফসীর মা’রেফুল কুরআন-পৃঃ-৯৩১)।
“যদি বিয়ের সামর্থ্য না থাকে তবে ছিয়াম পালন কর”Ñএ চিরন্তন বাণী রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) এ জন্য দিয়েছেন যে, ছিয়াম পালন করলে পানাহার কমে গিয়ে যৌন প্রবৃত্তি দমিত হয়। (মাও:মুহাম্মাদ আব্দুর রহিম, পরিবার ও পারিবারিক জীবন-পৃঃÑ৯৪)। তাছাড়া অস্বাভাবিক যৌন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, নারী-পুরুষের যৌন প্রেষণা (ঝবীঁধষ গড়ঃরাধঃরড়হ) নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ রক্ত স্রোতে বেশী বেশী যৌন হরমনের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখে। মনোবিজ্ঞান- প্রেষণা অধ্যায়, পৃঃÑ৬৮।
বিবাহ করা নবী-রাসূলের সুন্নাত। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন,{আরবি} চারটি কাজ নবীর সুন্নাত; তা হ’ল সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা, খাৎনা করা ও উপযুক্ত সময়ে বিবাহ করা (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি-হা-)।  আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেন,  وفيه ان النكاح من سنة النبى صلى الله عليه وسلم وزعم المهلب انه من سنن الاسلام وانه لا ؤهبا نية فيه- وان من تركه راغبا عن سنة النبى صلى الله عليه وسلم فهو مذموم مبتدع- ومن تركه من اجل انه ارفق له واعون على العبادة فلا ملامة عليه-     “বিবাহ করা নবীর সুন্নাত বিশেষ। মনীষী মহলাব বলেছেন বিয়ে ইসলামের অন্যতম রীতি ও বিধান। আর ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাতের প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করবে, সে অবশ্যই ভর্ৎসনার যোগ্য বিদ’আতী। তবে যদি কেহ মনে করে যে, বিয়ে না করে নিরিবিলি ইবাদত করে সারা জীবন অতিবাহিত করে দেবে, তবে তাকে দোষ দেয়া যাবে না। ইমাম দায়ূদ জাহেরী ও তার অনুসারীদের মতে বিয়ে করা ওয়াজিব। (পরিবার ও পারিবারিক জীবনÑ৮৩)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন, [আরবী} “কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি ছিয়াম পালন করি ও ছিয়াম ভঙ্গ করি, রাতে ছালাত আদায় করি ও নিদ্রা যায় এবং বিবাহ করি। আর এই (বিয়ে করা) হ’ল আমার নীতি আদর্শ, যে ব্যক্তি আমার এ সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে না, সে আমার উম্মাতের দল ভূক্ত নয় (বুখারী-মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কিতাব ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)। এছাড়া রাসূলের অনুসারী ঐ সকল ব্যক্তি যারাঃ الذى يتعين علية ان يفطرليقوى على الصوم وينام ليقوى على القيام وينكح النساء ليعف نظلره وفرجه- (سبل السلام- ج৩ ص১০৯) “যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট ভাবে ইফতার করবে সিয়াম পালনের সামর্থ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে, নিদ্রা যাবে রাতে ইবাদতে দাঁড়াবার শক্তি লাভের উদ্দেশ্যে এবং বিয়ে করবে দৃষ্টি নমিত ও যৌনাঙ্গ হেফাযতে রাখার উদ্দেশ্যে”। (পরিবার ও পারিবারিক জীবনÑ৮৩)।
বিবাহ মানুষকে তার নৈতিক চরিত্র সংরক্ষণে সহায়তা করে। তার দৃষ্টি নমিত থাকে, মানসিক প্রফুল্লতা ফিরে পায়, কুঅভ্যাস পরিহার করে, আয়-উপার্জনে মনযোগী হয়, সামাজিকতার প্রতি কর্ণপাত করে, মন্দের প্রতি উদাসীন হয়, ধর্মীয় অনুভূতির পূর্ণাঙ্গতা পায়, জীবনের ক্ষেত্রে সঠিক ঠিকানা খুঁজে পায় ইত্যাদি । আর সবচেয়ে বড় অবদান হ’ল বিবাহিত নারী-পুরুষকে তাদের জীবনের সকল প্রকার পবিত্রতা রক্ষার্থে মহান আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে সাহায্য করে থাকেন। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন, {আরবি} “তিন শ্রেণীর ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহর সাহায্য করা কর্তব্য হয়ে পড়ে। ১. ঐ দাস, যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে স্বচেষ্ট।  ২. ঐ ব্যক্তি, যে বিবাহ করে নিজের চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়।  ৩. ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে উৎসুক”। (নাসাঈ হা/৩১৬৬) 
বিবাহ না করে বৈরাগ্যতা অবলম্বন করে নানা প্রকার ক্ষতিগ্রস্থতায় নিপতিত হয়।  তাই যারা বিয়ে করেনা তাদের কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে গ্রীক বিজ্ঞানী জালিনুস বলেন, প্রজনন ক্ষমতার উপর আগুন ও বায়ুর প্রভাব রয়েছে, তার স্বভাব তপ্ত ও সিক্ত। এর অধিকাংশই যদি দীর্ঘদিন যাবৎ অবরূদ্ধ হয়ে থাকে, তাহ’লে নানা ধরনের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মনের ত্রাস, পাগলামী, মৃগী ও সন্ত্রাসের ভাবের সৃষ্টি হয়। আর যদি প্রজনন ক্ষমতার সুষ্ঠ ব্যবহার হয় তবে স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং বহু রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে।  পরিবার ও পারিবারিক জীবন-পৃঃÑ৮৫।
শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বিয়ে না করার অনিষ্টকারিতা সম্পর্কে বলেনঃاعلم ان المنى اذا اكثر تولده فى البدن صعد بخاره الى الدماغ- (حجة الله البالغة)  “জেনে রেখ, শুক্রের প্রজনন ক্ষমতা যখন দেহে খুব বেশী প্রবল হয়, তখন তা বের হতে না পারলে মগজে তার বাষ্পাকারে আঘাত হানে” (হুজ্জাতুল্লাহ বালেগাহ -)। প্রখ্যাত চিকিৎসাবীদ আল্লামা নফীসী বলেছেনঃو قد يستحيل المنى الى طبعية سمية ويرسل الى القلب و الدماغ بخارارديا سميا يوجب الغشى و الصرع نحوهما-(نافيسى) “শুক্র প্রবল হয়ে পড়লে অনেক সময় তা ভয়ানক বিষাক্ত হয়ে যায়। আত্মা ও মগজে এক প্রকার বিষাক্ত বাষ্প উত্থিত হয়, যার ফলে মৃগী রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়” (নাফিসী-পৃঃ-৪১৪ , পরিবার ও পারিবারিক জীবনÑ৮৫) প্রাপ্ত যৌবন কালে দেহে নিয়মিত শুক্রসৃষ্টি হয় এবং তা এপিডিডিমিস্, শুক্রবাহীনালী ও শুক্রস্থলিতে জমা হয়। আর এই শুক্র নিদির্ষ্ট সময় অন্তর অন্তর সে’টি বের হবার পথ খুঁজে  (ডাঃ এস. এন. পান্ডে- গাইনিকলজি শিক্ষা- আদিত্য প্রকাশনালয়-২য় সংস্করন-১৯৭৭, ৭৩) এবং সে কারণেই দেহে বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রদুর্ভাব ঘটে।  দীর্ঘ দিন  যাবৎ অবিবাহিত জীবন-যাপন মানসিক হীনমন্যতার জন্য পুরুষ-নারীদের প্রাপ্ত যৌবনে কৃত্রিম মৈথুন দ্বারা অনেক বেশী বীর্য ক্ষয় যৌন উত্তেজনা ও যৌনতার স্থায়ীত্ব কমে যায় এবং দেহের বিভিন্ন হরমোনের ক্রিয়া কমে আসে। যার ফলে ধ্বজভঙ্গসহ (ওসঢ়ৎড়ষবহপু) নানা প্রকার জটিল যৌন ব্যাধি পরিলক্ষিত হয়। (গাইনিকলজি শিক্ষা- ৬০) যারা বিয়ে করেনা কিন্তু যৌন কামনা খুব বেশী  অথচ অতৃপ্ত যৌন বাসনা তাদের হিষ্টিরিয়া বা মৃগী রোগ হবার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। (গাইনিকলজি শিক্ষা- ৯৪) বিবাহিত যৌনতায় শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূর্ণ হয়। তাছাড়া বিবাহ বহির্ভূত অস্বাভাবিক যৌনাচারের স্বাভাবিক পরিণতি হ’ল বিভন্ন ধরনের জটিল যৌনরোগ। যৌন ক্ষমতা বিনষ্ট, হিষ্টিরিয়া বা মৃগী, সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস প্রভৃতি যৌন রোগে আক্রান্ত হয়। (মাসিক পৃথিবীঃ প্রাশ্চাত্যে যৌন বিকৃতি- জুলাই ২০০১ইং)।
প্রাপ্ত যৌবনে অনেক সময় অতিরিক্ত কামভাবের প্রভাবে কুসংস্পর্শে কিংবা নানা প্রকার কুচিন্তায় অতিরিক্ত কামভাবের উত্তেজনা এবং ঘনঘন স্বপ্ন মৈথুনের ফলে দেহে পুষ্টি প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায়। যার কারণে স্বাস্থ্যহানী, খিটখিটে মেজাজ, কামশীতলতা, হরমোনের অভাব, গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়। (গাইনিকলজি শিক্ষা- ৬৭)  কিন্তু কেউ যদি বিবাহ করে পরিবার গঠন করে তবে সে ব্যক্তি জটিল সব রোগ থেকে মুক্তি পাবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে।
পবিত্র কুরআনে বিয়ের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, সংযম ও পবিত্রতা অর্জন করা,
শারীরিক সুস্থতা ও বংশধারা ঠিক রাখা। ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো,
সংযম ও সু-সন্তান লাভ করা। যেমন বলা হয়েছে, مُّحْصِنِينَ غَيْرَ
مُسَافِحِينَ অর্থাৎ তোমরা সংযম ও পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করো।
শুধু বীর্যপাত তথা যৌন চাহিদা মিটাতে বিয়ে করো না।

অন্যত্র বলা হয়েছে, ابتغوا ما كتب الله لكم অর্থাৎ সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে
স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হও। আল্লাহ যা তোমাদের ভাগ্যে রেখেছেন।

বিয়ে করলে মানুষের জীবন একটি রুটিনের মধ্যে চলে আসে। সে নিয়মাবর্তী হয়।
অধিক উপার্জনের চিন্তা করে। অযথা কাজ করে না। তার মধ্যে ভালোবাসা, লজ্জা,
আনুগত্য সৃষ্টি হয়। মানুষ সমৃদ্ধ ও সুস্থ জীবন যাপন করে।

বিয়ে সুস্থতা, আত্ম প্রশান্তি, আনন্দমুখর সুখী জীবন ও উভয় জগতে সফলতা লাভের মাধ্যম।

বিয়ে মানব সভ্যতার জন্য আল্লাহর অনন্য উপহার। দেশ-প্রেমের শক্ত ভিত্তি।
দেশ ও জাতির উচ্চতর সেবা। নানা রকম রোগ-বালাই থেকে বেঁচে থাকার কার্যকরী
মাধ্যম বা পথ্য। আল্লাহ তায়ালা যদি মানব সমাজে বিয়ের বিধান দান না করতে তবে
পৃথিবী আজ বিরাণ হয়ে যেতো। না, কোনো মানুষ বা সমাজ থাকতো। না, কোনো বসতি
বা বাগান থাকতো। [আল মাসালিহুল আকলিয়্যা লিল আহকামিল নকলিয়্যা,
পৃষ্ঠা-১৯৫।]

মানবজীবনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পরিবার
অপরিহার্য। নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গড়া হয়েছে মানবসমাজ। আর নারীর প্রবল
আকর্ষণ প্রকৃতিগত করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- মানব কুলকে
মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তানসন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব,
গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এ সবই হচ্ছে
পার্থিব জীবনের ভোগবস্তু। আর আল্লাহর কাছেই হলো উত্তম আশ্রয়।’ (সূরা ইমরান :
১৪)।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অকৃত্রিম মিলনই হলো তাদের প্রাকৃতিক
দাবি। এ মিলন যদি হয় লাগামহীন পন্থায় তবে সমাজ ও সভ্যতায় বিপর্যয় সৃষ্টি
হওয়াই অবধারিত। বস্তুত আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-পন্থা অনুযায়ী নারী-পুরুষের
সঠিক সম্পর্কের ওপরই নির্ভর করে সমাজ ও সভ্যতার সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আর
তাদের উভয়ের মধ্যে খোদায়ী বিধি অনুযায়ী এ সম্পর্ক কেবল বিয়ের মাধ্যমেই হতে
পারে। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়,
তাতে সূচনা হয় তাদের পারিবারিক জীবনের।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রা: বলেন, একদা নবী করিম [সা.] যুবকদের লক্ষ্য করে বললেন, হে যুব
সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা
বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে বিয়ের যোগ্যতা
রাখে না, তার উচিত রোজা পালন করা। [বোখারি ও মুসলিম]

পারিবারিক
জীবন ছাড়া মানুষের দাম্পত্য জীবন কোনো অবস্থাতেই সুখের হতে পারে না। অতঃপর
তাদের থেকে জন্ম নেয় সন্তানসন্ততি। সন্তান লালনপালন ও সুশিক্ষার জন্য
পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। মাতৃক্রোড়কে বলা হয়েছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়।
আল্লাহ তায়ালা প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, দয়া, স্নেহ, সহানুভূতি মানুষের
প্রকৃতিজাত করে দিয়েছেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার স্নেহ, দয়া এবং
পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রেমপ্রীতি
মানুষের চিরন্তন প্রকৃতিজাত নিয়ম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ
তোমাদের জন্য তোমাদেরই যুগল থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং
তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব, তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং আল্লাহর অৃনুগ্রহ অস্বীকার করে?’ (সূরা নাহল : ৭২)।

আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, তোমরা বিয়ে করো যাদের তোমাদের ভালো লাগে (সূরা
মায়িদা : ৪)। এর অর্থ হলো, বিয়ে-ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন তার ভালোলাগা বৈধ
নারীকে বিয়ে করে। [তাফসির আর-রাজি : ৯/১৭১]। আশ-শাওকানি রা: বলেছেন, যেসব
নারীর প্রতি তোমাদের চিত্ত আকৃষ্ট হয় এবং যেসব নারী তোমাদের মনঃপূত হয়
তোমরা তাদের বিয়ে করো [ফাতহুল কাদির : ১/৪৪৯]। মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিমা রা:
থেকে বর্ণিত- রাসূল [সা.] বলেছেন, যখন মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ কোনো পুরুষের
অন্তরে কোনো নারীর বিয়ের প্রস্তাব জাগরূক করে তখন তাকে দেখেশুনে
যাচাই-বাছাই করা দোষনীয় নয়। [ইবনে মাজাহ : ১৮৬৪]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top