মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি যারা

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‏كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ ‘তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে। (আলে ইমরান  ১১০)

কিয়ামতের মাঠে মুমিন বান্দা তথা নাজি ফির্কার লোক প্রতি হাযারে একজন হবে এবং জান্নাতের একশত বিশ কাতারে আশি কাতার হবেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জান্নাতি উম্মত। মুসলিম উম্মতকে ‘শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়’ হওয়ার কারণ হলো যে, মানব জাতির উপকারার্থে সমুত্থিত হয়েছে। মানব জাতি তাদের নিজেদের আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক সংশোধনের চেষ্টা করাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের তুলনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সৎকাজে আদেশ দান এবং অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব অধিকতর পুর্ণত্বলাভ করেছে। 
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মা’রূফ বা সৎকাজ হচ্ছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষী দেয়া, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেগুলোর স্বীকৃতি দেয়া এবং তার উপর কাফের মুশরিকদের সাথে জিহাদে থাকা। আর সবচেয়ে বড় মা’রূফ বা সৎকাজ হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র স্বীকৃতি আদায় করা। পক্ষান্তরে সবচেয়ে বড় মুনকার বা অসৎকাজ হচ্ছে, মিথ্যারোপ করা। [তাবারী]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সত্তরটি জাতিকে পূর্ণ করবে, তন্মধ্যে তোমরাই হলে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম এবং সবচেয়ে বেশী সম্মানিত (তিরমিযী হা/৩০০১, ৪২৮৭)। অপর হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীদের কাতার হবে একশ’ বিশটি। তন্মধ্যে আশিটি কাতার হবে এই উম্মতের” (তিরমিযী হা/২৫৪৬, ইবনে মাজাহ হা/৪২৮৯)। অপর বর্ণনায় এসেছে, ‘এ উম্মত হবে জান্নাতীদের অর্ধেক’ (বুখারী হা/৬৫২৮, মুসলিম হা/২২১)। আরেক হাদীসে এসেছে, ‘এ উম্মত সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম হা/৮৫৫, ইবনে মাজাহ হা/১০৮৩)।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, ‘মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা, যারা তাদের গর্দানে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসে এবং পরিশেষে তারা ইসলামে প্রবেশ করে। (বুখারী হা/৪৫৫৭)

রাসূল (সা.)-এর যুগের ব্যক্তিগণ :

মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের মানুষ অর্থাৎ সাহাবীগণ, অতঃপর উত্তম মানুষ হলেন তৎপরবর্তী লোকেরা অর্থাৎ তাবি‘ঈগণ, এরপর উত্তম মানুষ হলেন তাবি-তাবি‘ঈগণ। অত্র হাদীটিতে বলা হয়েছে, সর্বোত্তম যুগ, আমার যুগ এখানে ‘যুগ’ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? তা নিয়ে বিজ্ঞজনের মাঝে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“‏ خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ مِنْ بَعْدِهِمْ قَوْمٌ تَسْبِقُ شَهَادَتُهُمْ أَيْمَانَهُمْ وَأَيْمَانُهُمْ شَهَادَتَهُمْ ‏”‏‏.‏

সর্বোত্তম হল আমার যুগের লোকেরা। তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যুগের লোকেরা, তারপর উত্তম হল তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা, তারপর এমন সব লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যাদের সাক্ষ্য হবে কসমের পূর্বে, আর কসম হবে সাক্ষ্যের পূর্বে। (বুখারী হা/২৬৫২, মিশকাত হা/৩৭৬৭ )

অন্যত্র এসেছে,

 خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ‏”‏ ‏.‏ فَلاَ أَدْرِي فِي الثَّالِثَةِ أَوْ فِي الرَّابِعَةِ قَالَ ‏”‏ ثُمَّ يَتَخَلَّفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ

সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ আমার যুগ (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবীঈগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈগন)। এরপর তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না তৃতীয় কিংবা চতুর্থটি সম্পর্কে। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তাদের পরবর্তীতে এমন লোক আসবে, যাদের কেউ কেউ কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে (মুসলিম হা/২১২ )।

ইব্রাহীম (নাখ্য়ী; রাবী) বলেন, وَكَانُوْا يَضْرِبُوْنَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ وَالْعَهْدِ وَنَحْنُ صِغَارٌ ছোট বেলায় আমাদের মুরুববীগণ আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করতেন।

জনগণের উৎপাতে ধৈর্য ধারণকারী ব্যক্তি :

 যে মু’মিন ব্যক্তি সমাজের মানুষের সাথে মিলিত হয় সে উত্তম ব্যক্তি। তার ফাযীলাতের কথা এ হাদীসে বলা হয়েছে। এর কারণ হলো সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেয়ার মতো দু’টি ফরয কাজ সম্পাদন করতে পারে। এর পাশাপাশি সে তাদের সাথে সদাচরণের সুযোগ পায়।

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

الْمُؤْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ، وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ، خَيْرٌ مِنَ الَّذِي لاَ يُخَالِطُ النَّاسَ، وَلاَ يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ‏.‏

যে ঈমানদার ব্যক্তি জনগণের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের উৎপাত সহ্য করে সে যে ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের উৎপাতও সহ্য করে না, তার চেয়ে উত্তম (ইবনে মাজাহ হা/৪০৩২, আহমাদ হা/২৩১৪৭, ছহীহুল জামি‘ হা/৬৬৫১, মিশকাত হা/৫০৮৭)।

যে ব্যক্তি সমাজ জীবনে মানুষের সাথে লেনদেন এবং আচার অনুষ্ঠানে মেলামেশা করেনি তথা পার্থিব জীবনে দুঃখকষ্ট ও জ্বালা-যন্ত্রণায় পতিত হয়নি, এমন ব্যক্তির চেয়ে যে ব্যক্তি-এসব কিছুতে পতিত হয়ে ধৈর্যের সাথে সেটাকে অতিক্রম করে, সে অনেক উত্তম মু’মিন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৫০৭)

জিহাদে ঘোড় সওয়ার ব্যক্তি :

উম্মে মুবাশশির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  خَيْرُ النَّاسِ مَنْزِلَةً رَجُلٌ عَلَى مَتْنِ فَرَسِهِ يُخِيفُ الْعَدُوَّ وَيُخِيفُونَهُ মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সে, যে নিজ ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে শত্রুকে সন্ত্রস্ত করে এবং শত্রুরাও তাকে সন্ত্রস্ত করে। (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান হা/৪২৯১, সিলসিলা সহীহাহ হা/৩৩৩৩)

দ্বীনী জ্ঞান অর্জনকারী ব্যক্তি :

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَجِدُوْنَ النَّاسَ مَعَادِنَ خِيَارُهُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذَا فَقِهُوْا وَتَجِدُوْنَ خَيْرَ النَّاسِ فِيْ هَذَا الشَّأْنِ أَشَدَّهُمْ لَهُ كَرَاهِيَةً

তোমরা মানুষকে খণির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলীয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত। (বুখারী হা/৩৩৮৩ )

দাজ্জালের সময়ে উত্তম ব্যক্তি :

আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ননা করেছেন। বর্নিত কথা সমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদিনায় প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ করা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদিনার নিকতবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরন করবে। فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ يَوْمَئِذٍ رَجُلٌ، هُوَ خَيْرُ النَّاسِ ـ أَوْ مِنْ خَيْرِ النَّاسِ  তখন তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি যাবে যে উত্তম ব্যাক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন।

দাজ্জাল বলবে, আমি যদি তাঁকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তাঁরা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিলনা। তারপর দাজ্জাল বলবে, আমি লোকটিকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে আর হত্যা করতে সক্ষম হবে না (বুখারী হা/ ১৮৮২)।

শ্রেষ্ঠ্যত্ব আল্লাহর মনোনয়ন :

শ্রেষ্ঠ্যত্বের মনোনীত করার কারু কোন প্রকার এখতিয়ার নেই । আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ رَبُّکَ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ وَ یَخۡتَارُ ؕ مَا کَانَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ    ‘তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন আর যাকে ইচ্ছে মনোনীত করেন। এতে তাদের কোন এখতিয়ার নেই, আল্লাহ পবিত্র, মহান। তারা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে’ (কাসাস ২৮/৬৮)।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াত থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান উদ্ভাবন করেছেন। তা এই যে, দুনিয়াতে এক স্থানকে অন্য স্থানের উপর অথবা এক বস্তুকে অন্য বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। এই শেষ্ঠত্ব দান সংশ্লিষ্ট বস্তুর উপার্জন ও কর্মের ফল নয়; বরং এটা প্ৰত্যক্ষভাবে স্রষ্টার মনোনয়ন ও ইচ্ছার ফলশ্রুতি। তিনি সপ্ত-আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে উর্ধ্ব আকাশকে অন্যগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি জান্নাতুল ফেরদাউসকে অন্য সব জান্নাতের উপর, জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীল প্রমুখ বিশেষ ফেরেশতাগণকে অন্য ফেরেশতাদের উপর, নবী-রাসূলগণকে সমগ্র আদম সন্তানের উপর, তাদের মধ্যে দৃঢ়চেতা নবী-রাসূলগণকে অন্য নবী-রাসূলদের উপর, ইবরাহীম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়াসাল্লামকে অন্য দৃঢ়চেতা নবী-রাসূলগণের উপর, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধরদের সমগ্ৰ মানবজাতির উপর, কুরাইশদেরকে আরবদের উপরে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বনী হাশেমের উপর এবং এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য মনীষীকে অন্য মুসলিমদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

এগুলো সব আল্লাহ্ তা’আলার মনোনয়ন ও ইচ্ছার ফলশ্রুতি। এমনিভাবে পৃথিবীর অনেক স্থানকে অন্য স্থানের উপর, অনেক দিন ও রাতকে অন্য দিন ও রাতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করাও আল্লাহ তা’আলার মনোনয়ন ও ইচ্ছার প্রভাব। মোটকথাঃ শ্রেষ্ঠত্ব ও অশ্রেষ্ঠত্বের আসল মাপকাঠি এই মনোনয়ন ইচ্ছাই। এখানে অন্য কিছুর হাত নেই।

জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানব জাতি সম্মানিত। আল্লাহ তা‘আলা আদম (আ.)-কে শিক্ষা দিয়ে ফেরেশতা মণ্ডলীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ্যত্ব তুলে ধরেন। আল্লাহ বলেন, وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ کُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمۡ عَلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ ۙ فَقَالَ اَنۡۢبِـُٔوۡنِیۡ بِاَسۡمَآءِ هٰۤؤُلَآءِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ‘আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (বাক্বারাহ ২/৩১)।

ইবনে আব্বাস, কাতাদাহ ও মুজাহিদ বলেন, যে সমস্ত বস্তুর নাম আদমকে শিখিয়ে দিলেন সে বস্তুগুলো ফেরেশতাদের কাছে পেশ করে তাদের কাছে এগুলোর নাম জানতে চাওয়া হলো। [ইবন কাসীর] জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত হওয়ার পর আদম (আঃ) এই দ্বিতীয় সম্মান লাভ করেন। সিজদার অর্থঃ নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করা। আর তার সর্বশেষ পর্যায় হল, মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দেওয়া। (ক্বুরতুবী)

এই সিজদা ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য জায়েয নয়। নবী করীম (সাঃ)-এর প্রসিদ্ধ উক্তি হল, যদি (আল্লাহ ব্যতীত) অন্য কারো জন্য সিজদা করা জায়েয হত, তাহলে আমি মহিলাকে নির্দেশ দিতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে। তিরমিযী ১০৭৯নং) তবে ফিরিশ্তাগণ আল্লাহর নির্দেশে আদম (আঃ)-কে যে সিজদা করেছিলেন এবং যে সিজদা দ্বারা ফিরিশ্তাদের সামনে তাঁর (আদম)এর সম্মান ও ফযীলত প্রকাশ করা হয়েছিল, সে সিজদা ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে; ইবাদতের ভিত্তিতে নয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সাহচার্যে থেকে উত্তম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top