একজন মানুষকে পূর্ণ মু’মিন হতে হলে তাকে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। কিয়ামতের দিন উত্তম চরিত্র হবে সবচেয়ে ওযনদার ‘আমল। এজন্যই অত্র হাদীসে বলা হয়েছে, পরিপূর্ণ মু’মিন হলো ঐ ব্যক্তি যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী চরিত্র ব্যাপক শব্দ। যার মধ্যে রয়েছে- সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, নম্রতা প্রভৃতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওত প্রাপ্তির পূবেই এসকল গুণে গুণান্বিত হয়েছিলেন। অনুরূপ আমরা প্রকৃত মুমিন বা চরিত্রবান হতে চাইলে তা রপ্ত করার সাথে সাথে আমল বর্ধিত করতঃ মুমিনের সকল গুণাবলী রপ্ত করতে হবে।
মু’মিনের আরো কিছু গুণ হলো সে হবে সহানুভূতিশীল, দয়ার্দ্র, কোমল ও বিনয়ী। বিশেষ করে তার পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহশীল ও বিনয়ী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের প্রতি ছিলেন অধিক সহানুভূতিশীল। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শের নমুনা’’ (আল আহযাব ৩৩/ ২১)।
উত্তম চরিত্র ঈমানের পূর্ণতা দেয় :
পরিপূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যাদের চরিত্র উত্তম, তারাই পূর্ণ ঈমানদার’।
(আবূ দাঊদ হা/৪৬৮২, তিরমিযী হা/১১৭৮, দারিমী হা/২৭৯২, আহমাদ হা/৭৪০২, সহীহুল জামি‘ হা/২১১০, মিশকাত হা/ ৫১০১)।
এ প্রসঙ্গে ইবনু রাসলান (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘এখানে মানবজাতির ঐ সকল আচরণের কথা বলা হয়েছে যেই আচরণগুলো দৈনন্দিন জীবনে একজন অপরজনের সাথে প্রকাশ করে থাকে।’’ এ আচরণগুলো দু’ প্রকার : প্রশংসনীয় এবং নিন্দনীয়। প্রশংসনীয় আচরণ, যেমন : সদা সত্য কথা বলা, মানুষের সাথে সদাচরণ করা, নম্র ও ভদ্র সুরে কথা বলা, আমানতদার, বিপদে ধৈর্যধারণ করা, কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করা, সকল পাপ ও অনিষ্ট থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি।
প্রখ্যাত ফকীহ হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উত্তম চরিত্রের হাক্বীকাত হলো সৎ কাজ করা, কাউকে কষ্ট না দেয়া এবং হাসিমুখে কথা বলা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৬৭০)
স্ত্রীর নিকটে যে উত্তম, সেই প্রকৃত উত্তম :
স্বামী তার স্ত্রীর নিকটে উত্তম হলে স্বামীর চরিত্রের সাক্ষ্য মিলে। তবে শর্ত হলো- স্ত্রীকে প্রথমে চরিত্রবতী হতে হবে। ইসলামে সত্যবাদী ব্যক্তির স্বাক্ষ্য গ্রহণীয়। স্ত্রী স্বামী সম্পর্কে সত্য বলুক বা মিথ্যারোপ করুক তা নির্ভর করে তার সত্যবাদীতার উপর। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিই সর্বোত্তম মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ হাদীস। আবূ দাঊদ ’সর্বোত্তম ব্যবহার’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
(তিরমিযী হা/১১৬২, আবূ দাঊদ হা/৪৬৮২, আহমাদ হা/৭৪০২, সহীহ আল জামি‘ হা/১২৩২, মিশকাত হা/ ৩২৬৪, হাসান হাদীস)
‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে, তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। এর কারণ হলো একজন স্বামীকে তার স্ত্রী যত নিকট থেকে জানতে পারে এবং তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল বিষয় যত কিছু জানতে পারে সৃষ্টির মধ্যে পৃথিবীর কেউ এত জানতে পারে না। সুতরাং স্বামীর ভালো হওয়ার সেই সাক্ষ্য প্রকৃতপক্ষেই একজন মানুষের জন্য ভালো হওয়ার সাক্ষ্য ও প্রামাণ্য দলীল। অনুরূপভাবে বিপরীত অর্থাৎ স্ত্রী ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর সাক্ষ্যকে ধরা যেতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
প্রকাশ থাকে যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই দ্বীনের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে, অন্যথায় দ্বীন শারী‘আতের ধার ধারে না, কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে ভালো বললেই সে ভালো বলে বিবেচিত হবে না। পক্ষান্তরে মন্দ বললেও মন্দ বলে বিবেচ্য হবে না। মূলতঃ দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে কেহই কারু বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে না।
রাসূল ﷺ এর অন্যতম দোয়া ছিল: اللهم إني أعوذ بك من زوج تشيبني قبل المشيب ❝হে আল্লাহ! আমি এমন স্ত্রী থেকে আশ্রয় চাই, যে আমাকে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই বুড়ো বানিয়ে ছাড়বে!❞ [সিলসিলা সহীহাহ, ৭/৩৭৭, সনদ: জাইয়েদ]
ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আমার নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত এক সাথীকে বলতে শুনেছি: আমি আমার দ্বীন রক্ষার জন্য বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আমার দ্বীন তো গেলো গেলোই, সাথে আমার মা এবং পাড়া-প্রতিবেশিরও দ্বীন গেল। [ইমাম বায়হাকী বিরচিত “মানাকিবুশ শাফেয়ী”, পৃষ্ঠা: ১৯৩]
বিচার দিবসে মুমিন বান্দার সাক্ষ্য গ্রহণীয় :
মুসলমানদের মধ্যেও যারা দুনিয়াদার ও কপট বিশ্বাসী-মুনাফিক তাদের চরিত্র ইহুদী-নাছারাদের ন্যায়। ফলে তারাও একাজ থেকে বিরত থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, اَلْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ ‘মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরে সমান। তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় ও সৎকাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৬৭)। পক্ষান্তরে প্রকৃত মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ‘মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরে বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৭১)।
আখেরাতে ইহুদী-নাছারাদের নিকট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণীয় হবে না। বরং এ জাতি মুহাম্মাদ (ছা.)-এর উম্মত মুসলমানদের নিকট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণীয় হবে। দুনিয়াতে যেমন শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে আমরা অন্যান্য জাতির উপরে কল্যাণ ও মানবতার দৃষ্টান্ত হবো। ক্বিয়ামতের দিনেও তেমনি অন্যান্য সকল উম্মতের উপরে আমরা সাক্ষ্যদাতা হবো। আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন’ (বাক্বারাহ ২/১৪৩)। এই সাক্ষী হবে ক্বিয়ামতের দিন। আর সাক্ষী তিনিই হতে পারেন, যিনি নিরপেক্ষ, বিশ্বস্ত ও মর্যাদাবান মুমিন মুসলমান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন নূহ সহ অন্যান্য নবীদের ডাকা হবে এবং বলা হবে, তোমরা কি তোমাদের সম্প্রদায়ের কাছে তাওহীদের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছিলে? সকলে বলবেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তখন তাদের স্ব স্ব সম্প্রদায়কে ডাকবেন ও জিজ্ঞেস করবেন। কিন্তু তারা বলবে, না। তিনি আমাদেরকে দাওয়াত দেননি। তখন আল্লাহ নবীদের বলবেন, তোমাদের সাক্ষী কোথায়? তারা বলবেন, আমাদের সাক্ষী হলেন মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মতগণ। তখন তাদের ডাকা হবে এবং তারা বলবে, হ্যাঁ। নবীগণ স্ব স্ব কওমের নিকট দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। বলা হবে, কিভাবে তোমরা এটা জানলে? তারা বলবে ‘আমাদের নিকট আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এসেছিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের খবর দিয়েছেন যে, রাসূলগণ স্ব স্ব কওমের নিকট দাওয়াত পৌঁছেছেন’ (আহমাদ হা/১১৫৭৫; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮৪; ছহীহাহ হা/২৪৪৮; বুখারী হা/৪৪৮৭; মিশকাত হা/৫৫৫৩)।
(شَهِيد) শব্দটি (رَقِيبَ) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ ন্যায়পরায়ণতার জন্য পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। সে কারণে তাদের গোপন ও বাহ্যিক বিষয়সমূহ অবগত হওয়ার জন্য তিনি তাদের অবস্থাসমূহকে সংরক্ষণ করবেন। অতঃপর তাদের প্রশংসা করবেন। আর এজন্যও যে, তারা সমস্ত উম্মতের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ। উম্মতে মুহাম্মাদী পূর্বের উম্মতদের সাক্ষ্য হবেন আর তিনি (সা.) তাঁর উম্মাতের সাক্ষ্য হবেন। সমস্ত নবী সবার সাক্ষ্য প্রদান করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুনাফিকরাও আল্লাহর পয়ের নালা দেখবে, যেহেতু তারা মুমিনদের সাথেই রয়ে গেছে; অতঃপর আল্লাহ সিজদার মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করবেন। যে সিজদা করতে পারবে সে খাটি মু’মিন, আর যে তাতে সক্ষম হবে না সে হবে মুনাফিক। এভাবে মুমিন ও মুনাফেক্বদের আলাদা করা হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড, হা. ২৯৯)
এরপর আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের উপর ব্রীজ স্থাপন করবেন। একেই বলা হয় পুলসিরাত। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এই পুল পার হয়ে যেতে হবে। মুমিনেরা তাদের ‘আমল ও ঈমান অনুসারে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ পাখির গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার এবং কেউ উটের গতিতে পার হবে। কেউ নিরাপদেই পার হবে, কেউ পার হবে এমনভাবে তার দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবে, কেউ তো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জাহান্নামে পড়েই যাবে।
………… অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না।
তারা (মুমিনগণ তার সাথীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে) বলবে, হে আমাদের রব! এরা তো আমাদের সাথেই সালাত আদায় করত, ছিয়াম পালন করত, হাজ্জ করত। তখন আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ যাও তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে । মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ অগ্নি ভস্ম করে দিয়েছে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই ……. (বুখারী হা/৮০৬, মুসলিম হা/২৯৯, আবূদাউদ হা/৭৭০৩, মিশকাত হা/৫৫৭৯)।
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত সালাত আদায়কারী মু’মিনগণের সর্বাঙ্গ পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও সিজদার জায়গাগুলো পুড়বে না, ফলে ঐ সকল চিহ্ন দেখে বহু সংখ্যক জাহান্নামীদেরকে তারা বের করে এনে বলবেন, হে আল্লাহ! জাহান্নামে এ গুণের আর কোন মুমিন অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ সালাত আদায়কারী, সিয়াম পালনকারী, হজ্জ পালনকারী আর কেউ বাকী নেই। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আবার যাও দেখ যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ খায়র বা কল্যাণ পাও তাদের বের করে আন।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (خير) (খায়র) শব্দের অর্থ ইয়াকীন। সহীহ হলো নিরেট ঈমানের পর অতিরিক্ত কোন নেক কর্ম। এবারও তারা গিয়ে বহু মানুষকে বের করে আনবেন। আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদের আবার বলবেন, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ খায়র রয়েছে তাদের বের কর, অতঃপর তাদের বের করা হবে। এদের সংখ্যাও হবে অনেক। আবার বলা হবে, ফিরে যাও যার অন্তরে এক যাররা পরিমাণ খায়র পাও তাকেও বের কর। এবারও অনেক মানুষকে বের করা হবে। তারা বলবেন, হে আল্লাহ! আমরা খায়র থাকা কোন ব্যক্তিকে রেখে আসিনি।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, সবাই শাফা’আত করেছে এখন কেবল বাকি আমি আরহামুর রহীমীন, যার রহমত সমগ্র স্থানে পরিব্যপ্ত এবং সকল কিছু তার রহমতে ধন্য। এ বলে আল্লাহ তা’আলা মুষ্ঠিভরে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা কখনও কোন خير (খায়র) নেক আমল করেনি। শুধু ঈমানের বিশ্বাসটুকুই তাদের ছিল, নেক ‘আমল বলতে কিছুই ছিল না।
তাদের আদৌ কোন নেক আমল না থাকা এবং ঈমান অতীব সূক্ষ্ম এবং হালকা থাকায় নবী-রাসূল এবং মু’মিনগণের দৃষ্টিতে তা আসেনি, ফলে তারা তাদের জন্য শাফা’আত করতে পারেননি। অবশেষে আহকামুল হাকিমীন তাদের মধ্যে ঐ লুক্কায়িত ঈমান দেখে জাহান্নাম থেকে বের করবেন।
এদের জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতের দরজার সামনে উপস্থিত করা হবে, “হায়াত’ নামক নহরে গোসল করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এদের গর্দানে জাহান্নাম থেকে মুক্তির মোহর অঙ্কিত থাকবে, যা দেখে জান্নাতের সকল লোক তাদের চিনতে পারবে যে, এরা দয়াময় রহমানের অনুগ্রহপ্রাপ্ত এবং বিনা আমালে জান্নাতপ্রাপ্ত লোক।
তারা জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা যে জান্নাত দেখছ, অর্থাৎ তোমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে এর বাগ-বাগিচা, বালাখানা ও হুর গেলেমান যা রয়েছে এটা তোমাদের জন্য এবং এর সমপরিমাণ আরো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড, হা. ২৯৯)