তাকবীর দেয়া সওয়াবের কাজ। আমরা প্রত্যেক দলের শ্লোগান যখন বলি, তখন ইসলাম পন্থী দলগুলোও একটি শ্লোগান ঠিক করেছেন। কেহ নারায়ে তাকবীর, লিল্লাহে তাকবীর ইত্যাদি। নারায়ে (نعره) শব্দটি উর্দূ। অর্থ: ধ্বনী বা উচ্চ আওয়াজ। তাকবীর শব্দটি আরবী। যার অর্থ: আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। আর লিল্লাহে আরবী শব্দ। যার অর্থ আল্লাহর জন্য। তবে জন সন্মুখে উচ্চস্বরে তাকবীর দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে রাসূল (ছাঃ) এটাকে থামিয়েও দিয়ে ছিলেন। যেমন –
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অভিমুখে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করলে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু! (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সাথেই আছেন (বুখারী হা/৪২০২)।
এই হাদীছ থেকে বুঝা যায় উপত্যকায় পৌঁছে তাকবীর দিয়েছেন। উপরে উঠার সময় তাকবীর দেয়ারও বিধান রয়েছে। যেমন জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা যখন কোন উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম, তখন তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করতাম আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, সে সময় সুবহানাল্লাহ্ বলতাম (বুখারী হা/২৯৯৪)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় চড়তেন তখন আল্লাহু আকবার বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন সুবহানাল্লাহ’ বলতেন। [আবু দাউদ হা/২৫৯৯, সনদ সহীহ]
ইবনু ’উমার তাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার সময় উটের পিঠে সোজা হয়ে বসে তিনবার ’আল্লাহু আকবার’ বলে এ আয়াত পড়তেন, سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا، وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
’’মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে ’আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রবের নিকট ফিরে যেতে হবে’(আয-যুখরুফ: ১৩-১৪)। অতঃপর সফরের দো’আগুলো পাঠ করতেন।
পরিশেষে বলা যায়, অমুসলিমদের মাঝে ভীতি প্রদর্শণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উচ্চস্বরে তাকবীর দেয়া যাবে। এভাবে উচ্চস্বরে তাকবীর দেয়া দোষের কিছু নহে। তাছাড়া এগুলো যিকির বলাও যায়। যেমন-
১. তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা) অর্থাৎ ‘সুবহান আল্লাহ’ পাঠ করা
২. তাহমীদ (প্রশংসা করা) অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ পড়া
৩. তাকবীর (আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা) অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করা।
৪. তাহলীল (আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষণা করা) অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।