আল্লাহর রাগের ওপর রহমত বিজয়ী

আল্লাহর রাগের উপরে রহমত সর্বদা বিজয়ী থাকবে যদি বান্দা শিরক মুক্ত থাকতে পারেন। আর ক্ষমা মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। যারা বেশী বেশী ক্ষমা করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা আল্লাহ নিকট উত্তম ব্যক্তি। আমরা জেনে বুঝে, প্রকাশে অপ্রকাশ্যে নানা প্রকার গুণাহ করে চলেছি। তাই প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রত্যাশায় ইস্তেগফার পাঠ করা প্রয়োজন। আল্লাহর নিকটে ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলেই আপনি দুনিয়া ত্যাগে পরোকালিন জীবনে সফল। আর কোন ভাবেই নিরাশ হবেন না, একশত রহমতের মধ্যে একটি রহমত দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এখনও তাঁর নিকটে নিরানব্বইটি রহমত রেখে দিয়েছেন। সেই রহমতের প্রত্যাশায় দিনে একশত বার অথবা কমপক্ষে সত্তর বার ইস্তেগফার পাঠ করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَاللهِ إِنِّيْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سبعيْنَ مرَّةً. ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)।

অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ- ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা অপরাধ করে থাক রাতে-দিনে। আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬)।

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ- ‘তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)।

তিনি আরো বলেন,فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ- ‘যখন বান্দা গোনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,إنَّ الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا- ‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে স্বীয় হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের গোনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহগার ব্যক্তিরা তওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৯)।

আরেকটি হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি, তুমি তা ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফিরিশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ চাইলেন। সে আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আরেক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সে যা ইচ্ছা করুক’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩)।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। তিনি আমাদের প্রতি রাগান্বিত না হয়ে ক্ষমা দৃষ্টিতে রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top