শুরূক্ব অর্থ উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন (মির‘আত)।১
১. চাশতের ছালাতের নিয়ম :
চাশতের ছালাত দু’রাকা‘আত আদায় করাই যথেষ্ট।২ তবে রাসূল (ছাঃ) ২, ৪, ৬, ও ৮ রাকা‘আত ছালাত আদায় করেছেন। যা প্রতি দু’রাকা‘আত অন্তর অন্তর সালাম ফিরিয়েছেন।৩
২. চাশতের ছালাতের ফযীলত :
(১) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَلَّى الْفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ. ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে পড়েছে, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্র যিকির করে, অতঃপর দু’রাক‘আত নফল ছালাত পড়ে, তার জন্য হজ্জ ও ওমরাহর ছওয়াবের ন্যায় ছওয়াব আছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (পূর্ণ হজ্জ ও ওমরাহর)’।৪
(২) আবূ যার গিফারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى. ‘প্রভাত হওয়া মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেক গ্রন্থির জন্যই একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক হয়। তবে তোমাদের প্রত্যেক তাসবীহ একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহমীদ একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাহলীল একটি ছাদাক্বাহ, প্রত্যেক তাকবীর একটি ছাদাক্বাহ এবং সৎ কাজের আদেশ একটি ছাদাক্বাহ এবং অসৎ কাজে নিষেধও ছাদাক্বাহ বিশেষ। অবশ্যই চাশতের সময়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা এগুলির পরিবর্তে যথেষ্ট’।৫
(৩) বুরায়দা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, يَقُولُ فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلًا، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ، ‘মানুষের মধ্যে তিনশত ষাটটি গ্রন্থি আছে। সুতরাং তার পক্ষে প্রত্যেক গ্রন্থির পরিবর্তে একটি ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক’। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র নবী! এ সাধ্য কার আছে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তর করলেন, النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا، وَالشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ، فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ. ‘মসজিদে থুথু দেখলে তা মুছে দাও এবং কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তায় দেখলে তা দূর করে দাও। এটাই হবে তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। যদি এই কাজগুলি করার সুযোগ না পাও, তবে চাশতের দু’রাক‘আত ছালাত তোমার জন্য যথেষ্ট হবে’।৬
————————————————-
১. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃষ্ঠা-২৫৪।
২. আবূদাঊদ হা/৫২৪২; মিশকাত হা/১৩১৫।
৩. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃষ্ঠা-২৫৫।
৪. তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৭১।
৫. মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১১।
৬. আবূদাঊদ হা/৫২৪২; মিশকাত হা/১৩১৫।