ইসলামে পোশাকের সঠিক নীতিমালা

পোশাক ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সভ্যতা ও লজ্জাশীলতার পরিচায়ক। মানুষ পোশাক পরিধানের তাগিদ অনুভব করেছিল সেই আদিম আমলেই। আদিম থেকে আধুনিক—সব যুগেই আছে পোশাকের কদর। হোক না তা গাছের পাতা কিংবা সুতায় বোনা কাপড়।

তাই লাজুকতায় বশীভূত হয়ে লজ্জাস্থান ঢাকার প্রবণতা প্রাকৃতিক। মানুষ বিবস্ত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু নগ্নতার চাদর ছুড়ে ফেলে খুব শিগগিরই সে নিজেকে পোশাকের আবরণে ঢেকে ফেলে। এ চেতনাবোধ স্বভাবজাত। ইসলাম মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম।

ফিতরাতের চাহিদার বিপরীত কোনো নির্দেশনা ইসলামে নেই। স্বভাবধর্ম ইসলামে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। পোশাককে আরবিতে ‘লিবাস’ বলা হয়। এর অর্থ পরিহিত বস্তু বা যা পরিধান করা হয়।

ক. ইসলামী পোশাকের বৈশিষ্ট্য :

ইসলাম মানুষের জন্য যে পোশাক মনোনীত করেছে, তার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামসম্মত পোশাক বলতে সেই পোশাককে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান আবৃতকারী, মানানসই, সাদৃশ্যবর্জিত, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, বিলাসিতাবিবর্জিত, অহংকারমুক্ত, পরিচ্ছন্ন এবং (পুরুষের বেলায়) সেটি লাল, জাফরান, উসফুর (এক ধরনের গুল্ম, যা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়) ও ওর্স (এক ধরনের রঙের গাছ) ইত্যাদি রঙের হতে পারবে না।

খ. ইসলামী পোশাকের মূলনীতিমালা :

(১) পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য থাকবে  দেহকে  আবৃত  করা,  যেন  পোষাক  পরা  সত্ত্বেও লজ্জাস্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকাশ না হয়ে ওঠে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪)

(২) ভিতরে-বাইরে তাক্বওয়াশীল হতে হবে। এজন্য ঢিলেঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করতে হবে। হাদীছে সাদা পোষাক পরিধানের নির্দেশ এসেছে (আ‘রাফ ২৬; মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১০৮, ৪৩৫০ ও ৪৩৩৭)

(৩) পোষাক যেন অমুসলিমদের সাদৃশ্য না হয় (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)

(৪) পুরুষরা রেশম কাপড়ের পোষাক পরিধান করতে পারবে না (ছহীহ্ নাসাঈ হা/৫২৬৫; মিশকাত হা/৪৩৪১) 

(৫) পোষাক যেন টাখনুর নীচে না যায় (নাসাঈ (হা/৫৩৩১)

(৬) পুরুষের পোষাক মহিলার পোষাকের এবং মহিলার পোষাক পুরুষের পোষাকের সাদৃশ্যপূর্ণ না হয় (আবুদাঊদ হা/৪০৯৮; মিশকাত হা/৪৪৬৯)

গ. বিধি মোতাবেক পোশাকের উপকারিতা :

ইসলামী শরিয়তে পোশাক বলতে ওই বস্ত্রখণ্ডকে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলে। যে পোশাক লজ্জাস্থানকে পুরোপুরি আবৃত করে না কিংবা এতই সূক্ষ্ম, মসৃণ, পাতলা ও সংকীর্ণ হয় যে এর ফলে ঢেকে রাখার অঙ্গ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়, ইসলাম এমন বস্ত্রকে পোশাক বলেই স্বীকৃতি দেয় না। এরই সঙ্গে আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কিছুতেই ইসলামের সীমারেখা অতিক্রম করা যাবে না। পোশাকের রং, গুণ-বৈশিষ্ট্য, পরিধানের ধরন ও পদ্ধতিতে যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, কিছুতেই সেগুলোর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। ইসলামের আরোপিত বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে অনুসরণ করে পোশাক পরিধান করলেই শুধু তা ইসলামসম্মত পোশাক বলে পরিগণিত হবে।

দৃশ্যমান পোশাকের মধ্যে উপকারী পোশাক তিন প্রকার। যথা-

(১) সতর বা গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদিত করা পোশাক :

মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের সর্বপ্রথম আক্রমণ ও কুমন্ত্রণার ফলে আদম ও হাওয়া (আ.)-এর পোশাক খসে পড়েছিল। আজও শয়তান তার শিষ্যবর্গের মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছায় সভ্যতার নামে সর্বপ্রথম তাকে উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ করে পথে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টায় রত। শয়তানের তথাকথিত প্রগতি নারীকে লজ্জা-শরম থেকে বঞ্চিত করে সাধারণ্যে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় নিয়ে আসা ছাড়া অর্জিতই হয় না।

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা মৌলিক বিষয় যে, ঈমান আনয়নের পরে সর্বপ্রথম সতর বা ফরয গুপ্তাঙ্গগুলো আবৃত করা। শয়তান মানুষের এ দুর্বলতা আঁচ করে থাকে এবং সর্বপ্রথম গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের উপর হামলা করেছে। তাই মানুষের সর্বপ্রকার মঙ্গল বিধানকারী শারীয়তে গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের প্রতি এত গুরুত্ব আরোপ করছে যে, ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয গুপ্তাঙ্গ আবৃত করাকেই স্থির করেছে। সালাত, সওম ইত্যাদি সবই এরপর।

এখানে প্রকাশ থাকে যারা মনে করে লুঙ্গি, প্যান্ট, টিশার্ট পরিধান করে সালাত হবে না এরা দ্বীনে পোশাকের নীতিমালা বুঝতে অপারগ হয়েছে। সাহাবাগণ গায়ে ও পরনে চাদর জড়িয়েও ছালাত আদায় করেছেন। হজ্জের সময় শুধু মাত্র দুটো পোশাকে হজ্জ সম্পাদন করা হয়। অতএব সতর ঢাকা ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক।  রাসূল (সা.) কামিজ বা পোশাক পসন্দ করতেন। এর ব্যাখ্যা হলো- চাদরের চেয়ে জামাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান যুগের খ্যাতিমান পুরুষ শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও ডা. জাকির নায়েক শার্ট পরিধান করেছেন।

(২) শীত, বর্ষা, গ্রীষ্মকালে অঙ্গসজ্জা ও আত্মরক্ষা মূলক পোশাক :

পোশাক বিভিন্ন দেশ মহাদের ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। যেমন- প্রাক ইসলামে আরবের মানুষ জুব্বা পাগড়ী পরিধান করত। তাদের দেশের তাপদাহ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এমন পোশাক পরিধান করে থাকতেন। ইসলামের নন্দিত রাসূল (সা.) পাগড়ী-জুব্বা পরিধান করতেন। অনুরূপ ইসলামের নিন্দিত শত্রু আবু জাহেলও পাগড়ী-জুব্বা পরিধান করত। কিন্তু রাসূল (সা.) পরিধান করার ফলে তা সুন্নাত হিসেবে বিবেচ্য। আবার ভারতবর্ষের মানুষ ভারতবর্ষের প্রচলিত পাঞ্জাবী বিশ্বের অন্য দেশে চলে না। এটা আঞ্চলিক পোশাক। অথচ এটাকে সুন্নাতী পোশাক বলে এক শ্রেণীর মাথামোটা আলেম চালিয়ে দিচ্ছেন যা দ্বীনের নামে গর্হিত কাজ।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, রাসূল (সা.) বলেন তোমরা ইহুদী-নাসারাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করো না। এর অর্থ হলো- দ্বীনের বিষয়াবলীতে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণীয় নয়। যেমন ইহুদীরা দাড়ি সাদা করে রাখে কিন্তু রাসূল (সা.) দাড়ি রং করাকে পসন্দ করতেন। আবার পোশাকের ক্ষেত্রে হলে, বৈরাগীরা লাল ও হলুদ পোশাক পরে তাই তা মুসলমানদের জন্য পরিধান করা নিষেধ।

(৩) তাক্বওয়াশীল পোশাক :

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব নে‘মত দান করেছেন, পোশাক তার মধ্যে অন্যতম। আর পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ বলেন, يَا بَنِيْ آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِيْ سَوْآتِكُمْ وَرِيْشًا، وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ–  ‘হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (রাফ ৭/২৬)। তিনি আরো বলেন, يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلاَ تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক ছালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না। অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না’ (রাফ ৭/৩১)

(১) আল্লাহ তা’আলা বলেন,  وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ অর্থাৎ তা হচ্ছে তাক্বওয়ার পোষাক আর এটিই সর্বোত্তম পোষাক। এখানে لِبَاسُ التَّقْوَىٰ  শব্দ থেকে বুঝা যায় তাক্বওয়াশীল পোষাক, যা বাহ্যিক পোষাক দ্বারা গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। এ আল্লাহভীতি পোষাকের মধ্যেও এভাবে প্রকাশ পায়। তাই পোষাকে যেন গুপ্তাঙ্গগুলি পুরোপুরি আবৃত হয়। উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর না হয়। অহংকার ও গর্বের ভঙ্গিও না থাকা চাই। অপব্যয় না থাকা চাই। মহিলাদের জন্য পুরুষের পোষাকের মত আর পুরুষের জন্য মহিলাদের পোষাকের মত না হওয়া চাই। পোষাকে বিজাতির অনুকরণ না হওয়া চাই।

(২) ইবন আব্বাস ও উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমের তাফসীর অনুযায়ী তাকওয়ার পোষাক বলে সৎকর্ম ও আল্লাহভীতি বুঝানো হয়েছে। এটি মানুষের চারিত্রিক দোষ ও দুর্বলতার আবরণ এবং স্থায়ী কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে মুক্তিলাভের উপায়। এ কারণেই এটি সর্বোত্তম পোষাক। [তাবারী]

(৩) কাতাদা বলেন, তাক্বওয়ার পোষাক বলে ঈমানকে বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]

(৪) মুজাহিদ বলেন, আরবের কিছু লোক আল্লাহ্‌র ঘরের তাওয়াফ উলঙ্গ হয়ে সম্পাদন করত। আবার কোন কোন লোক যে পোষাক পরিধান করে তাওয়াফ করেছে সে পোষাক আর পরিধান করত না। এ আয়াতে তাদেরকেও উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী]

ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াত যুগে শয়তান মানুষকে যেসব লজ্জাজনক ও অর্থহীন কুপ্রথায় লিপ্ত করেছিল, তন্মধ্যে একটি ছিল এই যে, কুরাইশ ছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় কা’বা গৃহের তাওয়াফ করতে পারত না। তাকে হয় কোন কুরাইশীর কাছ থেকে বস্ত্র ধার করতে হত, না হয় উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে হত। এটা জানা কথা যে, আরবের সব মানুষকে বস্ত্র দেয়া কুরাইশদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। তাই পুরুষ মহিলা অধিকাংশ লোক উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত। মহিলারা সাধারণতঃ রাতের অন্ধকারে তাওয়াফ করত। তাদের নিকট এ শয়তানী কাজের যুক্তি হলো, যেসব পোষাক পরে আমরা পাপকাজ করি, সেগুলো পরিধান করে আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা বেআদবী।

এ জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টি বুঝত না যে, উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা আরো বেশী বেআদবীর কাজ। হারামের সেবক হওয়ার সুবাদে শুধু কুরাইশ গোত্র এ উলঙ্গতা আইনের ব্যতিক্রম ছিল। এ নির্লজ্জ প্রথা ও তার অনিষ্ট বর্ণনা করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়। [তাবারী] 

ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্ত্রীলোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করত এবং বলত, কে আমাকে একটি কাপড় ধার দিবে? এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্বীয় লজ্জাস্থান ঢাকা। আর এটাও বলত, আজ খুলে যাচ্ছে কিয়দংশ বা পূর্ণাংশ। তবে যে অংশটা খুলে সেটা আমি আর কখনো হালাল করব না। তখন অবতীর্ণ হলো, “প্রত্যেক সালাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন করবে”- (আল আ’রাফ ৭/৩১)।

সুন্দর পোশাক দ্বারা গুণগত ও কর্মগত সৌন্দর্য বুঝানো হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ .قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُوْنَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ انَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ.

‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পসন্দ করে যে তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অহংকার হ’ল হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’। (মুসলিম হা/৯১; আবু দাউদ হা/৪০৯২; তিরমিযী হা/১৯৯৯; মিশকাত হা/৫১০৮)

ইমাম মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ  দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বাগত সৌন্দর্য, গুণগত এবং কর্মগত সৌন্দর্য বুঝায়।

আর يُحِبُّ الْجَمَالَ  দ্বারা তোমাদের অবস্থাগত সৌন্দর্য (পরিষ্কার-পরিছন্নমূলক) এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে নিজেকে পবিত্র রাখাকে বুঝায়।

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ আলো এবং সৌন্দর্য উদ্দেশ্য। আবার বলা হয়েছে, তোমাদের সাথে উত্তম আচরণকারী এবং তোমাদের ওপর সুদৃষ্টিদানকারী (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

ইসলামী শরী‘আতে পোশাক তিন প্রকার। যথা- ওয়াজিব, মুস্তাহাব ও হারাম।

(ঘ) সতর ঢেকে রাখা পোশাক পরিধান করা ওয়াজিব : 

যে পোশাক সতর আবৃত করে, গরম ও শীত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ক্ষতি থেকে দেহকে হেফাযত করে সে পোশাক ওয়াজিব। বাহয বিন হাকিম তার পিতা হ’তে তিনি তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম,

يَا رَسُولَ اللهِ عَوْرَاتُنَا مَا نَأْتِى مِنْهَا وَمَا نَذَرُ قَالَ احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ الْقَوْمُ بَعْضُهُمْ فِى بَعْضٍ قَالَ إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ لاَ يَرَيَنَّهَا أَحَدٌ فَلاَ يَرَيَنَّهَا قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِذَا كَانَ أَحَدُنَا خَالِيًا قَالَ اللهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ.

হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাদের আবরণীয় অঙ্গসমূহ কার সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে অনাবৃত করতে পারি? তিনি বললেন, তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত সকলের সামনে তা আবৃত রাখ। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক লোক যখন পরস্পর একসাথে থাকে? তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব কেউ যেন অন্যের গোপন অঙ্গের দিকে না তাকায়। রাবী বলেন, আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষের চাইতে বেশী হকদার’। (আবু দাউদ হা/৪০১৭; ইবনু মাজাহ হা/১৯২০; তিরমিযী হা/২৭৬৯; মিশকাত হা/৩১১৭, সনদ হাসান)

বাহয বিন হাকীম (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, নির্জন জায়গাতেও বিবস্ত্র হওয়া বৈধ নয়। কিন্তু ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর মতে নির্জন কিংবা একাকীত্ব গোসল করার ক্ষেত্রে বিবস্ত্র হওয়া বৈধ। তিনি মূসা ও আইয়ূব (রহঃ)-এর ঘটনা থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন।

এখানে উভয় বর্ণনার সমন্বয়ে বলা যায় যে, বাহয বিন হাকীম (রহঃ)-এর বর্ণনাকৃত হাদীসটির উপর ‘আমল করা উত্তম। ইমাম বুখারী (রহঃ) সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তার কথা, যে ব্যক্তি নির্জন স্থানে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করবে এবং যে ব্যক্তি ঢেকে গোসল করবে তার অধ্যায়। আর নির্জন স্থানে ঢেকে গোসল করা উত্তম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৬৯)

(ঙ) ইসলামী শরীয়তে মুস্তাহাব পোশাক : 

যে পোশাকে সৌন্দর্য আছে, তা মুস্তাহাব পোশাক। অর্থাৎ আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ উত্তম ও সৌন্দর্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা জায়েজ।

عَنْ أَبِى الأَحْوَصِ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِىْ ثَوْبٍ دُوْنٍ فَقَالَ أَلَكَ مَالٌ. قَالَ نَعَمْ. قَالَ مِنْ أَىِّ الْمَالِ. قَالَ قَدْ أَتَانِىَ اللهُ مِنَ الإِبِلِ وَالْغَنَمِ وَالْخَيْلِ وَالرَّقِيْقِ قَالَ فَإِذَا أَتَاكَ اللهُ مَالاً فَلْيُرَ أَثَرُ نِعْمَةِ اللهِ عَلَيْكَ وَكَرَامَتِهِ.

আবুল আহওয়াছ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি নিম্নমানের পোশাক পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হ’লাম। তা দেখে তিনি বললেন, তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কী ধরনের সম্পদ? আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে উট, ভেড়া, ঘোড়া ও দাস-দাসী দিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহ’লে আল্লাহ যখন তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তখন তোমার বেশ-ভূষায় আল্লাহর নে‘মতের নির্দশন ও করুণা প্রকাশ পাওয়া উচিত’। (আবূদাঊদ হা/৪০৬৩; মিশকাত হা/৪৩৫২, সনদ ছহীহ)

হাদীসে উল্লেখিত লোকটির পরনে যে পোশাক ছিল তা তার মান-মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। হাদীসে ‘‘কী সম্পদ আছে?’’-এই জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্য হলো কী কী সম্পদ আছে তা জানা। ‘রক্বীক’ বলতে দাস-দাসী বুঝানো হয়েছে। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তুমি ধনী এবং আল্লাহ তোমাকে অনেক নি‘আমাত দিয়েছেন সেটা মানুষকে জানানোর জন্য উত্তম পোশাক পরিধান করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৫৯; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৬)

(চ) রাসূল (সা.)-এর জুম‘আ ও দুই ঈদের পোশাক :

রাসূলুল্লাহ (সা.) জুম‘আ ও দুই ঈদের দিনে সুন্দর পোশাক জুব্বা পরিধান করতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ أَوْ مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدْتُمْ أَنْ يَتَّخِذَ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَىْ مَهْنَتِهِ.

‘তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে সে যেন তার পেশাগত কাজে ব্যবহৃত পোশাক ব্যতীত জুম‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক তৈরী করে’। (আবূদাঊদ হা/১০৭৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৯৬; মিশকাত হা/১৩৮৯, সনদ ছহীহ)

জুমু‘আর দিনে সুন্দর পোশাক পরিধান করাটা মুস্তাহাব এবং অন্যান্য দিনে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া নতুন পোশাক পরিধান করাটা সুন্দর পোশাকের বিশেষত্ব। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন যে, এখানে বৈধতা রয়েছে যে, সামর্থ্যবান ব্যক্তি জুমু‘আর দিন বা ঈদের দিনে সুন্দর পোশাক পরিধান করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতেন এবং সুগন্ধি লাগাতেন ও সাধ্যানুযায়ী সুন্দর পোশাক পড়তেন জুমু‘আহ্ এবং ঈদের দিনে এবং তার মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ এবং তিনি সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা ও তৈল লাগাতে নির্দেশ দিতেন।

(ছ) রাসূল (সা.) জুব্বা পরিধান করতেন :

মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম দেশীয় আঁটসাট আস্তিনবিশিষ্ট জুব্বা পরিধান করেছেন। (বুখারী হা/৫৭৯৮, মুসলিম হা/৭৭, মিশকাত হা/৪৩০৫)।

আগের যুগে জুব্বা দ্বৈত কাপড়ে তৈরি করা হতো। দুই কাপড়ের মাঝে কটন বা তুলা দেয়া হতো। তবে যদি পশমী কাপড়ের জুব্বা হতো একক কাপড়েই তৈরি হতো।

অত্র হাদীসে রোমীয় জুব্বার কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু সহীহায়নের বর্ণনাসহ অধিকাংশ বর্ণনায় শামী জুব্বার কথা উল্লেখ আছে। এ দু’প্রকারের বর্ণনার মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই, কেননা শাম রাজ্যটি ঐ সময় মহারাষ্ট্র রোমের অধীনেই ছিল। অতএব নাম দু’টি হলেও মূলত একই রাজা বা বাদশাহর একই রাজ্য ছিল।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই জুব্বার আস্তিন ছিল আঁটসাঁট বা টাইট, এটা এক সফরের ঘটনা। এর বিস্তারিত ব্বিরণ সহীহুল বুখারীতে মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এক সফরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে পানি আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তখন তিনি তার বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং (স্বীয় প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য) চলতে চলতে রাতের আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে) যখন ফিরে এলেন আমি তার নিকট পানির পাত্র থেকে পানি ঢালতে লাগলাম, তিনি তার মুখমন্ডলে-লী ধৌত করলেন এবং দু’হাত ধৌত করলেন, এ সময় তার শরীরে শামী পশমী জুব্বা ছিল। তিনি (ধৌত করার জন্য) হাত দু’টি বের করতে চেষ্টা করলেন কিন্তু (আস্তিন আঁটসাট হওয়ার কারণে) হাত দু’টি বের করতে পারলেন না, ফলে জুব্বার নিচ দিয়ে তা বের করলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, শরীরের নীচ দিয়ে বের করলেন। সহীহ মুসলিমে একটু বর্ধিত এসেছে যে, তিনি জুব্বাটা খুলে দু’কাঁধের উপর রাখলেন এবং দু’হাত ধৌত করলেন……।

মুওয়াত্ত্বা মালিক, আহমাদ, আবূ দাঊদ প্রভৃতি গ্রন্থের বর্ণনায় এসেছে এটা তাবূকের যুদ্ধের (সময়ের) ঘটনা, আর তা ফজরের সালাতের সময় ঘটেছিল। (সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড, ২৩০ পৃঃ)

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, সুস্পষ্ট কোন নাপাকী দৃশ্যপটে না থাকলে কাফিরদের তৈরি পোশাকে সালাত আদায় বৈধ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমী জুব্বা পরিধান করেছেন, আর ঐ সময় রোম ছিল সম্পূর্ণ কাফির রাজ্য। ইমাম কুরতুবী এটাও বলেন যে, পশুর মৃত্যুর কারণে তার পশম নাপাক হয় না, কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জুব্বাটি শামীয় ছিল, আর শামী জুব্বা পশমের তৈরি হয়।

পশমের তৈরি জুব্বা বা পোশাক পরিধান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) অন্য পোশাক থাকতে পশমের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ বলেছেন। কেননা এতে দরবেশী ভাব প্রকাশ পায়, অথচ ‘আমল বা দরবেশী গোপন রাখাই উত্তম। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পশমের কাপড়ই যে শুধু দরবেশী ভাব প্রকাশ হয় এমনটিই নয়, বরং সূতী বা অন্যান্য কাপড়েও প্রকাশ পেতে পারে। হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি সত্তরজন বদরী সাহাবীকে পশমের কাপড় পরিধানরত দেখেছি।

এ হাদীসের ভিত্তিতে অনেকে নিজ আবাসনে নয় বরং সফরে আঁটসাট আস্তিন রাখা মুস্তাহাব মনে করেন। সাহাবীগণের সাধারণ জামার আস্তিনগুলো স্বাভাবিক এক বিঘত পরিমাণ ছিল। অবশ্য অতি প্রশস্ত আস্তিন ঠিক নয়, কেউ কেউ এটাকে বিদ্‘আতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (মিরক্বাতুল; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৬৮)

মুসলিম ইবনু ইয়াসার-এর সূত্রে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, তাতে উল্লেখ আছে,

كَانَ رَسُولُ اللهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يَلْبَسُ قَمِيصًا فَوْقَ الْكَعْبَيْنِ مُسْتَوِيَ الْكُمَّيْنِ لِأَطْرَافِ أَصَابِعِه

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জামা পরিধান করতেন যার বহর পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত ছিল আর দুই হাতার ঝুল ছিল আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত। সুতরাং আস্তিনের পরিমাপ কব্জি পর্যন্তই হতে হবে এমনটি নয় বরং কেউ ইচ্ছা করলে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত তৈরি করতে পারবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০২২)

(জ) ভারতবর্ষে প্রচলিত পাঞ্জাবী পোশাকের উৎপত্তি :

প্রাচীন পাঞ্জাব অঞ্চলের  লোকেরা সুতির পোশাক পরত। সকলের জন্যই উর্ধাঙ্গের পাঞ্জাবী জামাটি হাঁটু পর্যন্ত লম্বিত থাকত। এর সঙ্গে একটি ওড়না জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা হত। উভয় লিঙ্গের মানুষই নিম্নাঙ্গে ধুতি পরত। আধুনিক পাঞ্জাবী সমাজ এই পোশাকটিকে ধরে রেখেছে, তবে দীর্ঘ দিন পরে অন্য ধরনের পোশাকগুলিও এই পোশাকের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে।

পাঞ্জাব অঞ্চলে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে সুতি বস্ত্র শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প ছিল যখন বিভিন্ন ধরনের লুঙ্গি, খিস, দাতাহি, চাদর, শার্টের কাপড়, পর্দা, সুষি, দুরিস, গামছা ইত্যাদি তুলার কাপড়ের একটি সমৃদ্ধশালী শিল্প ছিল। এই সুতি কাপড়ের শিল্পটি পাঞ্জাবী পোশাককে সমৃদ্ধশালী করেছিল।

এই পাঞ্জাবী পোশাক শুধুমাত্র ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। সুতরাং এটা কখনও সুন্নতি পোশাক হিসেবে দাবী করা শুধুমাত্র যুক্তির খাতিরে এর বেশী নয়। কুরআনের আরবী শব্দ ‘লেবাস’ অর্থ পোশাক। যা দ্বারা সকল প্রকার পোশাককে বুঝানো হয়েছে।  আর لِبَاسُ التَّقْوَىٰ  শব্দ থেকে বুঝা যায় তাক্বওয়াশীল পোশাক, যা বাহ্যিক পোশাক দ্বারা গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। এ আল্লাহভীতি পোশাকের মধ্যেও এভাবে প্রকাশ পায়। তাই পোশাকে যেন গুপ্তাঙ্গগুলি পুরোপুরি আবৃত হয়। উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর না হয়। অহংকার ও গর্বের ভঙ্গিও না থাকা চাই। অপব্যয় না থাকা চাই। মহিলাদের জন্য পুরুষের পোশাকের মত আর পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাকের মত না হওয়া চাই। পোশাকে বিজাতির অনুকরণ না হওয়া চাই।

অর্থাৎ- ইসলামে নিষিদ্ধ পোশাক যেন না হয়। যথা- ১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ মিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক ৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক ৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক ৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।

এছাড়াও হাদীসের ভাষানুসারে উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْقَمِيصُ ‏. ‘নবী (সা.) -এর নিকট সবচাইতে পছন্দের পোশাক ছিল জামা’ (তিরমিযী হা/১৭৬২)।

 এখানে কামিছ বা জামা বলতে সকল পোশাককে বুঝানো হয়েছে। রাসূল (সা.) শুধু চাদরও পরিধান করতেন।  সুন্নাতী পোষাক কোনটি তা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কারণ সবদেশের আবহাওয়া ও পোষাক এক হওয়ার কথা নয়। তবে ইসলাম পোষাকের যে মূলনীতির কথা বলেছে লম্বা জামা ও টুপি সেই মূলনীতির মধ্যে পড়ে যায়। তাছাড়া মাথা ঢাকা বা টুপি পরা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top