ইসলাম বনাম গণতন্ত্র

গণতন্ত্র কি ? তা বুঝতে বিশ্লেষাত্তক ব্যাখ্যা
প্রয়োজন
 গণতন্ত্রশব্দটির ব্যুত্পত্তিগত অর্থ জনগণের
ক্ষমতা
অর্থাত্ সরকার বা শাসন ব্যবস্থা যখন জন
অভিমত দ্বারা পরিচালিত হয় তখন তাকে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বলে
আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে
তার মানে সরকার পরিচালনায় যখন জনগণের
অভিমত প্রতিফলিত হয় তখন উক্ত শাসন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক সরকার বা গণতান্ত্রিক
শাসন ব্যবস্থা বলা হয়
আমেরিকার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকন তাঁর গেটিসবার্গ এড্রেস-এ বলেছিলেন
, গণতন্ত্র জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা গঠিত সরকার এবং জনগণের জন্য সরকারগণতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন জন বিভিন্ন
অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকেন
শুধু তাই নয়, সারা
বিশ্ব আজ গণতন্ত্রের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে
অনেকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে গণতন্ত্র বা
জনগণের শাসন বলে কিছু নেই
তাদের মতে, ‘গণতন্ত্রএকটি মুখরোচক শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়পৃথিবীর কোথাও জনগণের শাসন আছে বলে
তারা মনে করেন না
আসলে জনগণের নামে গুটিকয়েক ব্যক্তিই
রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন বলে তাঁরা মনে করেন
জনগণের অধিকার শুধু ভোট দেওয়ার মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকে
ভোটের পরে শাসনকার্য পরিচালনায় জনগণের
কোনো ভূমিকা আছে বলে তারা মনে করেন না
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতন্ত্র
এমন একটি সরকার যেখানে প্রত্যেক সদস্যের অংশগ্রহণ রয়েছে
এ অংশগ্রহণ কথাটিও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে

এখন দেখা যাক, গণতান্ত্রিক সরকার বা গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থায় কিভাবে জনগণ সরকার পরিচালনায় বা শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে
আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বে
প্রাচীন গ্রিস এবং রোমের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রগুলোতে (
City State) অতিমাত্রায় ক্ষুদ্র আয়তন এবং স্বল্প
জনসংখ্যার কারণে সভা-সমিতির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সরাসরি জনগণের
মতামত নেওয়া সম্ভব হয়েছিল
এটাকে প্রত্যক্ষ বা বিশুদ্ধ গণতন্ত্র বলা হয়কালের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির
কারণে প্রাচীন যুগের নগর রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটেছে
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক
ম্যাকিয়াভেলি ষোড়শ শতাব্দীতে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের (
National State) গোড়াপত্তন করেনএ জাতীয় রাষ্ট্রের বিশাল আয়তন এবং
বিপুল জনসংখ্যাহেতু প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র সম্ভব নয়
তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের
কল্যাণে রাষ্ট্রীয় শাসনকার্য পরিচালনা করেন
এ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরই জন অভিমত বা জনগণের কণ্ঠস্বর
বলে মনে করা হয়
তারা নির্বাচিত হয়ে জনগণের স্বার্থের
প্রতিনিধিত্ব করবে বলে আশা করা হয়
এটাকে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলা হয়এ প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থাই আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি
তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি
রাষ্ট্র-দার্শনিক রুশো পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে
প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক সরকার বলতে নারাজ
কারণ, তিনি মনে করেন, জন
প্রতিনিধিরা মূলত জনস্বার্থে কাজ না করে তাদের আত্মস্বার্থ রক্ষার্থে শাসনকার্য
পরিচালনা করেন
তাই তিনি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন
ব্যবস্থাকে সমর্থন দিয়েছেন
যে ব্যবস্থায় জনস্বার্থ সুরক্ষিত থাকেরাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটলের
শিক্ষাগুরু প্লেটো গণতান্ত্রিক সরকার বা শাসন ব্যবস্থাকে সবচেয়ে অযোগ্যের শাসন বা
সরকার ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করেছেন
তাঁর মতে,
যেহেতু গণতন্ত্র
বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা
, সেহেতু গণতন্ত্র কখনো উন্নতমানের শাসন ব্যবস্থা হিসেবে
সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না
কারণ,
প্রত্যেক
রাষ্ট্রেই বিদ্বান
, সুপণ্ডিত এবং যোগ্য লোকের তুলনায়
অযোগ্য
, অশিক্ষিত এবং অজ্ঞ লোকের সংখ্যাই বেশিসুতরাং বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর শাসন মানেই
প্রকারান্তরে অযোগ্যের শাসন
যেখানে মুড়ি- মিশ্রি একদামে বিক্রি হয়মাথা গণনার দ্বারা সবকিছু নির্ধারিত হয়তাঁর মতে, গণতন্ত্র সংখ্যায় বিশ্বাসী, গুণে নয়তাই গণতন্ত্র কখনো উন্নতমানের শাসন
ব্যবস্থা হতে পারে না
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটলও
গণতন্ত্রকে স্বাগত জানাতে পারেননি
শুধু তাই নয়, তিনি
গণতন্ত্রের বিকৃত রূপ জনতাতন্ত্রের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন

গনতন্ত্র বনাম কুরআন

=>আজকের সমাজে আমরা মানব রচিত বিধানকে জাতীর সমাধান মনে করছি আল্লাহর বিধান
ত্যাগ করে
অথচ আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য কি বিধান ভুল
দিয়েছেন
? (নাউজুবিল্লাহ)
=>
আল-কুরআনঃ “যাবতীয় ক্ষমতা
শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য ” [২:১৬৫]

তন্ত্রঃ জনগনই সকল
ক্ষমতার উৎস

=>
আল-কুরআনঃ “আল্লাহ ছাড়া কারও
বিধান দেবার ক্ষমতা নেই
। ” [১২:৪০]
=>তন্ত্রঃ আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জনগন, সংসদ, মন্ত্রী-এমপির (মদ, পতিতালয় বৈধও হতে
পারে)

=>আল-কুরআনঃ
আল্লাহ তাআলা সার্বভৌমত্বের মালিক
। [৩:২৬]
তন্ত্রঃ
সার্বভৌমত্বের মালিক জনগন

=>আল-কুরআনঃ
“(হে নবী) আপনি যদি অধিকাংশের রায়কে মেনে নেন তাহলে তারা দ্বীন থেকে বিচ্যুত
করে ছাড়বে” [৬:১১৬]

তন্ত্রঃ
অধিকাংশ লোকের রায়ই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত যদিও তা আল্লাহ্‌র আদেশের বিরুদ্ধে হয়

=>আল-কুরআনঃ
“আল্লা
হ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম
করেছেন
। ” [২:২৭৫]
তন্ত্রঃ
গণতন্ত্র সূদভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করে

=>আল-কুরআনঃ
ব্যভিচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ
। [২৪:২]
তন্ত্রঃ
সংসদ পতিতালয়ের (যিনা) লাইসেন্স দেয়

=>আল-কুরআনঃ
মদ
, জুয়া,লটারী
নিষিদ্ধ
। [৫:৯০]
তন্ত্রঃ
মদ এর লাইসেন্স দেয়
জুয়া,লটারী বৈধ
=>আল-কুরআনঃ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না
তারা
একে অপরের বন্ধু
তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে
বন্ধুত্ব করবে
,সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত
আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।”
[
৫:৫১]
=>তন্ত্রঃ কোন সমস্যা
নাই
যার সাথে ইচ্ছা (আমেরিকা, ইসরাইল)বন্ধুত্ব কর
এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের হাতে গনতন্ত্রগ্রহন করবেন নাকি ইসলাম”?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top