— লিলবর আল-বারাদী—
বর্তমান নানা প্রকার উৎসবে সমাজে দায়-দায়িত্বহীন অবাধ অবৈধ যৌনতার প্রসার ঘটে এবং বিবাহ নামক পবিত্র দায়িত্বপূর্ণ সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বৈধ যৌন সম্পর্কের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আধুনিক প্রগতির নামে যুবক যুবতীরা নতুনত্ব খুজে। ফলে মানব সমাজ ও সভ্যতা ধীরে ধীরে দায়-দায়িত্বহীন অসভ্য-বর্বর পাশবিক সমাজের দিক দ্রুত ধাবিত হয়। ফলে মনুষত্ব হারিয়ে পশুত্ব বরণ করে নেয়। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক পবিত্র বন্ধন শিথীল হয়ে যায় এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধাহীন অশ্লীলতা মারাত্মক সয়লাবে কলুষিত সমাজে ধর্ষণ, পরকীয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, অবৈধ গর্ভপাত, আত্মহত্যা, মানসিক বিকৃতি, সংসার ভাঙ্গন ও অবৈধ সন্তানের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে।
অথচ ইসলামী বিধান মোতাবেক তা নিষিদ্ধ হারাম। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞভাবে অনর্থক কথা (বাদ্য-বাজনা) μয় করে এবং তাকে আনন্দ-ফূর্তি হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (লুক্বমান ৩১/৬)। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক এমন হবে যারা যেনা, সিল্ক (পুরুষের জন্য), মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী ২/৮৩৭ পৃঃ)।
মানব জাতির জন্য অশ্লীল বাদ্য গান বাজনা, অবৈধ যৌনাচার হারাম করেছেন। যিনা ও অশ্লীলতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ’ (সূরা আল-ইসরা-১৭/৩২)। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোনভাবেই এই অশ্লীলতার নিকটে গমন করা যাবে না, এসম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, উহার নিকটবর্তী হবে না, তা প্রকাশ্যেই হোক অথবা অপ্রকাশ্যে হোক’ (সুরা আনআম-৬/১৫১)।
ইসলামী শরী‘আতে যেকোন ধরনের নববর্ষ পালন করা হারাম ও বিদ‘আত। ইসলামে কোন নির্দিষ্ট দিবস পালনের সম্মতি বা বিধান নেই। এটা মুসলিমদের সংস্কৃতিও নয়। আর এই অনৈসলামিক সংস্কৃতি পালন করে মানুষ নিজেকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। মুসলমান আধুনিক প্রগতির নামে বিজাতীয় মতবাদকে মেনে নিতে পারে না। কেননা ইহা জান্নামে যাবার উসিলা হতে পারে। সুতরাং তাদের কোন মতামত ও সাদৃশ্য মুসলমানদের সমাজে থাকতে পারে না। এমর্মে রাসূল (ছা:) বলেন, যে ব্যক্তি যে জাতির (কওম) সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের দলভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়; বঙ্গানুবাদ হা/৪১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি অনুষ্ঠান (সময় ও স্থান) নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, যা তাদেরকে পালন করতে হয়’ (হজ্জ ২২/৬৭)। মূলতঃ দুই ঈদ ব্যতীত মুসলিমদের অন্য কোন ধর্মীয় উৎসব নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুসলিমদের দু’টি আনন্দের দিন ১. ঈদুল ফিতর ও ২. ঈদুল আযহা (ছহীহ বুখারী হা/৫৫৭১)।
আমরা যদি দ্বীন ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিকে বুকে ধারন করি, তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হব। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ – ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (বিধান) তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম’ (আহমাদ হা/১৭২০৯; তিরমিযী হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪)। মুসলমান আধুনিক প্রগতির নামে বিজাতীয় মতবাদকে মেনে নিতে পারে না। কেননা ইহা জান্নামে যাবার উসিলা হতে পারে। সুতরাং তাদের কোন মতামত ও সাদৃশ্য মুসলমানদের সমাজে থাকতে পারে না। এমর্মে রাসূল (ছা:) বলেন, যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের দলভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়; বঙ্গানুবাদ হা/৪১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)।
উৎসব উদ্যাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীকে উলংগ করে যুবকেরা হৈহুল্লোড় করে, ধর্ষন করে, নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যা অপ্রত্যাশিত। এটা কি প্রগতির নামে প্রহসন নয়?
তাই আসুন! বিজাতীয় অপসাংস্কৃতির কালো আগ্রাসন থেকে নিজে ও সন্তানদের দুরে রাখার জন্য সার্বজনীন প্রগতিবাদি শাশ্বত দ্বীন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। আমিন।