কবীরা গুনাহ হ’ল যে সকল গুনাহের ব্যাপারে অভিসম্পাত করা হয়েছে এবং পরকালীন শাস্তি কিংবা দুনিয়ায় হদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কবীরা গোনাহ অর্থ মহাপাপ বা বড় পাপ। শরীয়তের পরিভাষায়, কবীরা গুনাহ্ বলতে সে সকল গুনাহ্কে বুঝানো হয় যে সকল গুনাহ্’র ব্যাপারে কুর‘আন বা ছহীহ হাদীসে নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান দুনিয়া ও আখিরাতে রাখা হয়েছে সে সকল গুণাহকে কবীরা বা মারাত্মক গুণাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: «إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ، وَنُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِيْمًا» ‘‘তোমরা যদি সকল মহাপাপ থেকে বিরত থাকো যা হতে তোমাদেরকে (কঠিনভাবে) বারণ করা হয়েছে তাহলে আমি তোমাদের সকল ছোট পাপ ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো খুব সম্মানজনক স্থানে’’। (নিসা’ : ৩১)
শির্কের মূল রহস্য কথা দু’টি:
১. আল্লাহ্ তা‘আলার কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে তুলনা করা। কাফের-মুশরেক ও সূফী-পীর-মাজার পূজারীরা মনে করে।
২. কোন বান্দাহ্ নিজকে আল্লাহ্ তা‘আলার ন্যায় মনে করা। যেমনটি নমরূপ ও ফেরাউন মনে করেছি।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু ‘আন্হুমা) বলেন: কবীরা গুনাহ্ সর্বমোট সাতটি।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেন:
اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ.
‘‘তোমরা বিধ্বংসী সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! ওগুলো কি? তিনি বলেন: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে অংশীদার করা, যাদু আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন এবং সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী হা/২৭৬৬ ও ৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯)
কবীরা গুনাহ্ সারা দেহের সাথে সম্পর্কিত ও যে অঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত হয় :
(১) অন্তরের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ দু’টি : আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ এবং তাঁর পাকড়াও থেকে একেবারেই নিশ্চিন্ত হওয়া।
(২) মুখের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও চারটি : মিথ্যা সাক্ষী, কোন সতী-সাধ্বী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাধ দেয়া, মিথ্যা কসম ও যাদু।
(৩) পেটের সাথে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ তিনটি : মদ্য পান, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ ও সুদ খাওয়া।
(৪) লজ্জাস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ দু’টি : ব্যভিচার ও সমকাম।
(৫) হাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও দু’টি : হত্যা ও চুরি।
(৬) পায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ একটি । আর তা হচ্ছে কাফির ও মুশরেকের সাথে সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন।
(৭) পুরো শরীরের সঙ্গে সম্পর্কিত কবীরা গুনাহ্ও একটি। আর তা হচ্ছে নিজ মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।
আর জেনে-শুনে বার বার ছগীরা গুনাহে লিপ্ত হ’লে তাও কবীরা গুনাহে পরিণত হয়। যেমন ওমর ও ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لاَ كَبِيْرَةَ مَعَ اسْتِغْفَارٍ وَلاَ صَغِيْرَةَ مِنْ إِصْرَارٍ، ‘ইস্তেগফার করলে কাবীরা গোনাহ থাকে না। আর বারবার করলে তা আর ছগীরা গোনাহ থাকে না’ (নববী, শরহ মুসলিম ২/৮৭)।
কবীরা গুণাহ থেকে তাওবা করার দো‘আ ও ফযীলত:
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ.
উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি’(৩ বার)।
অর্থ : ‘আমি আল্লাহ্র নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।
ফযীলত :
(১) আগার আল মুযানী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى رَبِّكُمْ فَإِنِّى أَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ. ‘হে মানুষ! আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমিও দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি’।১
(২) বিলাল ইবনে ইয়াসার ইবনে যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়িদ বলেছেন, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন। ‘যে ব্যক্তি বলে أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ،। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়’।২
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ. ‘রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবাহ কবূল করেন’।৩
(৪) রাসূল (ছাঃ) বলেন, طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِى صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا. ‘যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ ও আনন্দ।৪
—————————–
১. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; আহমাদ হা/১৭৮৮০।
২. তিরমিযী হা/৩৫৭৭; আবূদাঊদ হা/১৫১৭; মিশকাত হা/২৩৫৩; ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬২২।
৩. তিরমিযী হা/৩৫৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৩; মিশকাত হা/২৩৪৩; হাসান হাদীছ।
৪. ইবনু মাজাহ হা/৩৮১৮; নাসাঈ, মিশকাত হা/২৩৫৬।