— লিলবর আল-বারাদী
ভুমিকা :
মুমিন ব্যক্তির জন্য করোনা ভাইরাস ঈমানী পরীক্ষা স্বরূপ। যার যেমন মজবুত ঈমান, ঠিক তার তেমন কঠিন পরীক্ষা। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ছবরকারীদেরকে। যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩-১৫৬)। তবে যে কোন মুছিবতে ভীতু না হয়ে ছবর করা সর্বোত্তম যুক্তিযুক্ত। আর মুসলিম বান্দার কোন ভয় থাকে না। এই মর্মে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ‘তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিম বান্দার কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা নেই। এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ধর্য্য ধারন করে এবং আল্লাহর উপরে খুশি থাকে) তাহ’লে তার কারণে আল্লাহ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’। (বুখারী হা/৫৬৪১; মিশকাত হা/১৫৩৭) অতএব ভয় নয়, জানুন, বুঝুন, সতর্ক থাকুন ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করবেন।
ক. করোনা ভাইরাস কি?
‘করোনা’ (কোভিড ১৯) ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হ’তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভিতরে ইতিমধ্যে ‘মিউটেট করছে’। অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। ফলে এটি আরও বেশী বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। তবে গবেষকদের মতে, এটি শিশু ও ষাট বছরের উর্ধ্বে বৃদ্ধদের বেশী সংক্রমিত করছে।
২. করোনা ভাইরাসের অবস্থান :
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, করোনায় সংক্রমিত একজন রোগীর হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসটি ধরতে গবেষকেরা নেবুলাইজার ব্যবহার করেছেন। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি মুখ বা নাকনিঃসৃত তরলকণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তামার ওপর এটি টিকে থাকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত। আর প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের ওপর টিকতে পারে দুই থেকে তিন দিন। কার্ডবোর্ডের ওপর এটি টিকতে পারে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। (অনলাইন পত্রিকা : প্রথম আলো, ১৯ মার্চ ২০২০)
৩. করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সমূহ :
ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হ’ল, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের সম্পূর্ণ লক্ষণ দেখা দিতে ১৪ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হ’তে হয়।
৪. করোনা ভাইরাস নিজে নিজে পরীক্ষার উপায় :
তাইওয়ান বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করেছে কি-না তা পরীক্ষা করতে লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে তা ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। যদি এই সময়ে বুকে ব্যাথা অনুভব ও শুষ্ক কাশি শুরু না হয়, তবে আপনি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত।
৫. করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উপায় :
ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোন টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোন চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। তাই ভাইরাসটি প্রতিরোধের উপায় হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। যথা (১) নিয়মিত সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়া (২) হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা (৩) ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকা (৪) অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা (৫) ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা (৬) এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। (৭) ডিম ও গোশত খুব ভালো করে রান্না করা (৮) ময়লা কাপড় দ্রুত ধৌত করা। (৯) লোক সমাগম হয় এমন মজলিশ থেকে দূরে থাকা। (১০) বাসস্থান যথাযথ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
অন্যদিকে জাপানী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভাইরাসটি থেকে বাঁচতে অন্ততঃ ১৫ মিনিট পর পর পানি পান করুন অর্থাৎ খাদ্যনালী সর্বদা ভিজিয়ে রাখতে হবে। যাতে ভাইরাসটি গলা বা মুখের ভেতরে থাকলে পানির সাথে পাকস্থলীতে চলে যায়। আর পাকস্থলীর এসিডগুলো দ্বারা দহন হয়ে মারা যায়। তাছাড়া পাকস্থলী উর্বর রাখতে মধু ও কালোজিরা সেবন এবং সকালে গরম পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা ।
ডাঃ মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর কবীর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ১. ইমিউন সিস্টেম বুস্ট আপ করার জন্য ভিটামিন সি, ভিটামিন এ খাওয়া। জাম্বুরা, মাল্টা, কমলা চিবিয়ে খাওয়া। সুগার জাতীয় খাবার (শর্করা + চিনি) বাদ দেয়া। প্রসেসড ফুড, আনহায়জেনিক খাবার বাদ দেয়া। ২. ইমিউন সিস্টেম বুস্ট আপ করতে হেলথি ফুড, ভালো ঘুম, রিলেক্সেশন, মেডিটেশন (ছালাতের মাধ্যমে) ও এক্সার্সাইজ। ৩. রিলেক্স থাকা। উদ্বিগ্ন না হওয়া, টেনশনে না করা। ডিপ্রেশনে ভাইরাস সহজে কাবু করে ফেলতে পারে। খুশু খুযু নিয়ে ছালাত পড়লে, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে, তাক্বদীরের ভালো ও মন্দর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার মাধ্যমে রিল্যাক্সেশন পাওয়া যায়। রিলেক্সেশন ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের ফার্স্ট ও সেকেন্ড লাইন ডিফেন্সকে শক্তিশালী করবে। ৪. শরীরে ভিটামিন ডি সাপ্লাই করা। যা সকালে রোদে আধা ঘণ্টা বসে থাকা। দরকার হলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেয়া। ৫. লবণ-পানি খাওয়া ও হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করে মুখ ও গলা পরিস্কার রাখা। ঘন ঘন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। ৬. কোনোভাবে-ই জ্বর বাড়তে না দেয়া। ৭. ঠাণ্ডায় (ফ্রিজে) ছিলো এমন প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার গ্রহণ করা। দই জাতীয় খাবারে থাকে এক্সপার্ট কন্সেন্সাস। চীনে রিসেন্ট কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক খুব কাজে দিয়েছে।
প্রোবায়োটিক হলো পাকস্থলীতে হাজার হাজার কোটি ব্যাকটিরিয়া থাকে, দরকারি এবং অদরকারি মিলিয়ে। দরকারি ব্যাকটেরিয়াগুলি হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এর ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। অদরকারি ব্যাকটিরিয়াগুলি ঠিক এর উল্টো কাজটা করে। তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রে।
গবেষক স্যান্ডার্সের বলেন, প্রোবায়োটিককে ঠিক মতো শরীরের কাজে লাগালে তা আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়েরিয়া সারাতে সাহায্য করে, ল্যাক্টসে যাঁদের অ্যালার্জি তাদের সহায়তা করে ও উদরের প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরো বলেন, পেটে মাইক্রোঅর্গানিজমের কিছু পরিবর্তনের ফলে মানুষের এখন নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। যার ফলে শ্বাসকষ্ট, সেলিয়েক রোগ, বৃহদন্ত্রে ক্যান্সার, রক্ত শর্করা, বৃহদন্ত্রে ঘা, ইরিটেবেল বাওয়েল সিনড্রোম, পাকস্থলী ও অন্ত্রের সমস্যা, স্থূলতা, বাত, যকৃতের সমস্যাসহ নানা প্রকার রোগের তৈরী হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য এখন প্রত্যেকদিন প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খাওয়াটা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।
খ. মহামারী সম্পর্কে ইসলামী বিধি-বিধান :
মহামারী সম্পর্কে ইসলামী বিধি নিষেধ রয়েছে যা মান্য করা প্রত্যেক মানুষের জন্য কল্যাণকর। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্লেগ-মহামারী স¤পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি একটি আযাব। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার উপর এটি প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর মুমিন বান্দাগণের জন্য এটাকে ‘রহমত’ স্বরূপ করেছেন। ফলে কোন ব্যক্তি যদি মহামারী এলাকায় ধৈর্যের সাথে ও ছওয়াবের আশায় অবস্থান করে এবং হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাই হবে, তবে সে একজন শহীদের সমান পুরস্কার লাভ করবে’ (বুখারী হা/৩৪৭৪)। তিনি বলেন, ‘মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী মুসলিম শহীদ হিসাবে গণ্য হবে’ (মুসলিম হা/১৯১৬)। সংক্রমিত উটের দ্বারা অন্য উট সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে প্রশস্ত করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে সংক্রমিত করল কে? (বুখারী হা/৫৭১৭)।
১. দূর্যোগ ও অকল্যাণ আমাদেরই অর্জিত ফল :
মহান আল্লাহ সতর্ক করে বলেন, فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوْا وَالَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْ هَؤُلَاءِ سَيُصِيْبُهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوْا وَمَا هُمْ بِمُعْجِزِيْنَ ‘তাদের দুষ্কর্ম তাদেরকে বিপদে ফেলেছে, এদের মধ্যে যারা পাপী তাদেরকেও অতিসত্বর তাদের দুষ্কর্ম বিপদে ফেলবে। তারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না’ (যুমার ৩৯/৫১)। তিনি আরো বলেন,قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِنْ فَوْقِكُمْ أَوْ مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ ‘তুমি বল, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর থেকে অথবা নীচে থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠিয়ে দিতে সক্ষম’ (আন‘আম ৬/৬৫)।
বর্তমানে গোটা সমাজই অস্থিরতার মধ্যে অবস্থান করছে। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমাদের কৃতকর্মের জন্যই আজ এই বিপর্যয়। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ‘স্থলে ও সমুদ্রে মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)। অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের যেসব বিপদাপদ হয়, তা তোমাদের কতৃ কর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ মার্জনা করে দেন’ (শূরা ৪২/৩০)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا ظَهَرَ السُّوْءُ فِيْ الأَرْضِ أنْزَلَ اللهُ بَأْسَهُ بِأهْلِ الأَرْضِ وَإِنْ كَانَ فِيْهِمْ قَوْمٌ صَالِحُوْنَ يُصِيْبُهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسَ ثُمَّ يَرْجِعُوْنَ إِلَى رَحْمَةِ اللهِ ومَغْفِرَتِهِ ‘পৃথিবীতে যখন অশ্লীল কাজ বেশী বেশী প্রকাশ পায়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার অধিবাসীর প্রতি দুঃখ-দুর্দশা ও হতাশা নাযিল করেন। আর তাদের মধ্যে পুণ্যবান লোক থাকলে তাদের উপরেও ঐ শাস্তি আপতিত হয়, যা অন্যদের উপরে আসে। অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও ক্ষমার দিকে ফিরে আসে’। [ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮২]
২. সতর্ক থাকা ও সুরক্ষা রাখা জরুরী :
মুসলমান কখনো নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাকারাহ ২/১৯৫)। আবার অন্যকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে না। তিনি বলেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি কৃপাময়। (নিসা ৪/২৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যের ক্ষতি করো না এবং নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০)। সুতরাং নিজের জীবন ও অন্য মানুষের জীবন রক্ষা করা জরুরী। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে’ (মায়েদাহ ৫/৩২)। আলোচ্য আয়াতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কথা বলা হয়েছে।
মহামারী উপদ্রুত এলাকা যাওয়া-আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে এবং তোমরা সেখানে থাক, তাহ’লে পলায়ন করে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না’ (বুখারী হা/৫৭২৯-৩০; মুসলিম হা/২২১৯)।
৩. মহামারীতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা পায় :
ভীত না হয়ে তাওয়াক্বাল করতে হবে। আর এই করোনা ভাইরাসের মহামারীতে যদি কোন মুমিন মুসলমান মারা যায়, তবে সে শহীদের মর্যদা পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ছাড়াও আরও সাত শ্রেণীর মানুষ শাহাদতের মর্যাদা লাভ করবে। তারা হ’ল : (১) মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি (২) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি (৩) ‘যাতুল জাম্ব’ নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি। যেসব গর্ভবতী মেয়ের পেটে বাচ্চা মারা যায় এবং সেকারণে মাও মারা যায়, ঐ মেয়েকে যাতুল জাম্ব-এর রোগিনী বলা হয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এটিই প্রসিদ্ধ (ফাৎহুল বারী হা/২৮২৯-এর ব্যাখ্যা, ৬/৫১ পৃঃ)। (৪) (কলেরা বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি (৫) আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি (৬) ধ্বসে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও (৭) গর্ভাবস্থায় মৃত মহিলা’ (আবুদাউদ হা/৩১১১; মিশকাত হা/১৫৬১; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৯৮)। ঐ সকল মুমিন আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবেন। যদিও দুনিয়াতে তাদের গোসল ও জানাযা করা হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে নিহত শহীদের গোসল নেই। তিনি ঐ অবস্থায় ক্বিয়ামতের দিন উঠবেন’ (বুখারী হা/৪০৭৯; মিশকাত হা/১৬৬৫; মির‘আত হা/১৬৭৯, ৫/৪০০ পৃঃ)।
৪. মহামারী থেকে বেঁচে থাকার দো‘আ :
মহামারী থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। একইসাথে এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ দু’টি পাঠ করতে হবে। (১)اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ، (আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুযা-মি ওয়াল জুনূনি ওয়া মিন সাইয়িইল আসক্বা-ম) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হ’তে’ (আবূদাঊদ হা/১৫৫৪; নাসাঈ হা/৫৫০৮ ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অধ্যায়; মিশকাত হা/২৪৭০, সনদ ছহীহ)।
(২) اللَّهُمَّ إنِّيْ أعُوْذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأخْلاَقِ، وَالأعْمَالِ، والأهْوَاءِ وَالاَدْوَاءِ (আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন মুনকারা-তিল আখলা-ক্বি ওয়াল আ‘মা-লি ওয়াল আহওয়া-ই ওয়াল আদওয়া) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ-বালাই থেকে আশ্রয় চাই’ (তিরমিযী হা/৩৫৯১; মিশকাত হা/২৪৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৯৮)।
পরিশেষে, করোনা ভাইরাসকে নয়, করুণাময়কে ভয় করুন। নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষা রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। মহান আল্লাহ পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে হেফাযত করুন এবং হেদায়েতের পথে ফিরে আসার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।