কালো জাদুর অস্তিত্ব ও এর প্রতিকার

কালো জাদু কী ?

কালো জাদু বলতে এমন কিছু কাজ বুঝায়, যেগুলোর মাধ্যমে নিজ স্বার্থ হাছিল কিংবা অন্যের ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে। যেমন বশীকরণ, তাবীয-কবয করা, বান মারা, জাদু-টোনা ইত্যাদি। এসব কাজকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তা জাদু হিসাবেই পরিগণিত হবে।

কালো জাদু বা অন্ধকার জাদু হলো এমন এক ধরনের চর্চা যা অন্যের অনিষ্ট সাধনে কিংবা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে করা হয়। এটি অতিমানবিক ও অশুভ শক্তির সংশ্লিষ্টতা । কালো জাদু সাধারনত অতিমানবিক শক্তি দ্বারা করা হয় । তবে অনেকে বলেন এতে ভূতপ্রেতআত্মাপ্রেতাত্মা ব্যবহার করা হয় । অর্থাৎ বলা হয়ে থাকে যে কালো জাদু দিয়ে ভুতপ্রেতপ্রেতাত্মা ইত্যাদি বশ করে তাদের দিয়ে নানা কাজ করা যায়।

কালো জাদু ঐতিহ্যগতভাবে অলৌকিক শক্তি বা মন্দ এবং স্বার্থপর উদ্দেশ্যের জন্য জাদুর ব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে। বাম দিকের পথ এবং ডান দিকের পথ ডাইকোটোমির ক্ষেত্রে, কালো জাদুটি দয়ালু সাদা জাদুটি দূষিত, বাম দিকের অংশ। আধুনিক সময়ে, কেউ কেউ “কালো যাদু” সংজ্ঞাটিকে “কালো যাদু” হিসাবে অস্বীকার করে। এমন যাদু বা রীতিগত অনুশীলনগুলিকে সংজ্ঞায়িত করে, তাদের দ্বারা সংকুচিত করা হয়েছে।

ইসলামে কালো জাদুর অস্তিত্ব :

কালো জাদুর অস্তিত্ব ইসলামের ইতিহাসে পরিলক্ষিত হয়, যা অনেক পুরাতন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জাদুগ্রস্থ হোন এবং খুব অসস্থিবোধ করতেন। কীভাবে তিনি জাদুগ্রস্থ হোন এ আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর একবার যাদু করা হয়। এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর মনে হতো তিনি বিবিগণের কাছে এসেছেন, অথচ তিনি আদৌ তাঁদের কাছে আসেননি। সুফ্ইয়ান বলেন, এ অবস্থা যাদুর চরম প্রতিক্রিয়া।

বর্ণনাকারী বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেনঃ হে ’আয়িশাহ! তুমি জেনে নাও যে, আমি আল্লাহর কাছে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে তা বলে দিয়েছেন। স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক এলেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং আরেকজন আমার পায়ের নিকট বসলেন। আমার কাছের লোকটি অন্যজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটির কী অবস্থা? দ্বিতীয় লোকটি বললেন, একে যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বললেন, কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললেন, লাবীদ ইবনু আ’সাম। এ ইয়াহূদীদের মিত্র যুরায়ক্ব গোত্রের একজন, সে ছিল মুনাফিক।

প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের মধ্যে যাদু করা হয়েছে? দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তরে বললেন, চিরুনী ও চিরুনী করার সময় উঠে যাওয়া চুলের মধ্যে। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কোথায়? উত্তরে দ্বিতীয়জন বললেন, পুং খেজুর গাছের জুবের মধ্যে রেখে ’যারওয়ান’ কূপের ভিতর পাথরের নীচে রাখা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কূপের নিকট এসে সেগুলো বের করেন এবং বলেন, এইটিই সে কূপ, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। এর পানি মেহদী মিশ্রিত পানির তলানীর মত, আর এ কূপের পার্শ্ববর্তী খেজুর গাছের মাথাগুলো দেখতে শয়তানের মাথার ন্যায়। বর্ণনাকারী বলেন, সেগুলো তিনি সেখান থেকে বের করেন। ’আয়িশাহ বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, না, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য ও শিফা দান করেছেন। আর আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। এরপর তিনি যাদুর দ্রব্যগুলোর ব্যাপারে নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।  (সহীহ বুখারী হা/৫৭৬৫, ৫৭৬৬, মিশকাত হা/৫৮৯৩) ।

জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায় :

রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জাদু করার কারণে তাঁর কাছে কোন কাজ করা না করা নিয়ে সন্দেহ হত। কোন সময় তিনি কোন কাজ না করেই মনে করতেন যে, তিনি তা করেছেন। এটি ছিল শুধুমাত্র তাঁর জাদুকালীন সময়ে। আর তা হয়েছিল রাসূল (সা.) -এর দুনিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে। দীন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে হয়নি। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (সা.) -কে জাদু করার বিষয়টি কেউ কেউ অস্বীকার করে এই যুক্তি দিয়ে যে, এটি তার নুবুওয়্যাতের পরিপন্থী এবং তার মর্যাদার হানী। কিন্তু এ যুক্তিটি একেবারেই বাতিল। কারণ রাসূল (সা.) -কে জাদু করার ঘটনাটি অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এতে সন্দেহ করার কিছু নেই। আর জাদু করার বিষয়টি দুনিয়া সংক্রান্ত। এর সাথে নুবুওয়্যাতের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ নুবুওয়্যাত সংক্রান্ত বিষয়গুলো আল্লাহ বিশেষভাবে হিফাযাত করেছেন। উক্ত ঘটনা থেকে এটিও প্রমাণিত হয় যে, তিনি ছিলেন আমাদের মতোই মাটির মানুষ। এজন্যই তার মাঝে জাদু কাজ করেছে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (সা.) যেসব বিষয়ে ধারণা করতেন সেগুলো হত তাঁর চোখের দেখায়। কিন্তু আকল বা জ্ঞানের মাঝে এর কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। অতএব এটা রাসূল (সা.) -এর দায়িত্বের মাঝে কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক ইয়াহূদী নবী (সা.)-কে বেজোড় সংখ্যক তথা এগারোটি গিট দিয়ে জাদু করে এবং তা কূপে ফেলে দেয়। এতে নবী (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

জাদুর চিকিৎসা করা যাবে কি-না?

রাসূল (সাঃ)-এর যাদুকৃত চুল ও চিরুনীর দাঁত উদ্ধার হওয়ার পর সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হয়। যার ১১টি আয়াতের প্রতিটি আয়াত পাঠের সাথে সাথে জাদুকৃত ১১টি চুলের গিরা পরপর খুলে যায় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হালকা বোধ করেন ও সুস্থ হয়ে যান’ (ইবনু কাসীর)।

وَقَالَ قَتَادَةُ قُلْتُ لِسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ رَجُلٌ بِه„ طِبٌّ أَوْ يُؤَخَّذُ عَنْ امْرَأَتِه„ أَيُحَلُّ عَنْه“ أَوْ يُنَشَّرُ قَالَ لاَ بَأْسَ بِه„ إِنَّمَا يُرِيدُونَ بِهِ الإِصْلاَحَ فَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَلَمْ يُنْهَ عَنْهُ.

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, আমি সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যিব (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, জনৈক ব্যক্তিকে যাদু করা হয়েছে অথবা যাদু ক’রে তার ও তার স্ত্রীর মধ্যে বাঁ      ধা সৃষ্টি করা হয়েছে, এমন ব্যক্তিকে যাদু মুক্ত করা যায় কিনা অথবা তার থেকে যাদুর বন্ধন খুলে দেয়া বৈধ কিনা? সা’ঈদ বললেন, এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তারা এর দ্বারা তাকে ভাল করতে চাইছে। আর যা কল্যাণকর তা নিষিদ্ধ নয়। (সহীহ বুখারী হা/৫৭৬৫) ।

কাতাদা বলেনঃ আমি সাঈদ বিন মুসাইয়্যাবকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে অথবা পুরুষত্ব হীনতার জন্যে কি ঝাড়-ফুঁক করা যাবে? তিনি বললেন, তাতে কোন নিষেধ নেই। কেননা তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ। (ফতহুল বারীঃ ১০/২৩২)

ইবনে কুদামা বলেনঃ যাদুর চিকিৎসক যদি কুরআনের আয়াত অথবা কোন যিকিরের মাধ্যমে অথবা এমন বাক্য দ্বারা চিকিৎসা করে যে, যাতে কোন কুফুরির বিষয় নেই তবে কোন বাধা নেই; কিন্তু তা যদি যাদু দ্বারাই হয়ে থাকে তবে তা হতে ইমাম আহমদ বিমূখ হয়েছেন। (আল-মুগনীঃ ১০/১১৪)

আল্লাহর রাসূল (সা.) শারীরিক প্রফুল্লতার কারণে মনে করতেন যে, তিনি এখন সহবাস করতে সক্ষম। কিন্তু যখন স্ত্রীর নিকটবর্তী হতেন তখন তার মাঝে জাদুর প্রভাব কাজ করত। আর তিনি তাতে সক্ষম হতেন না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

জাদু থেকে রক্ষা পেতে করণীয়  :

জাদু থেকে রক্ষা পেতে করণীয় কিছু আমল এখানে বর্ণনা করা হ’ল। যে সকল ব্যক্তি জাদুতে আক্রান্ত নয় তাদের জন্য কিছু আমল বর্ণনা করা হলো এবং যারা জাদুতে আক্রান্ত তাদের প্রথমে শরীয়ত সম্মতভাবে তা নষ্ট করে ফেলা। এরপরে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতঃ নিম্নোক্ত আমল জারি রাখা।

ক. সকাল-সন্ধ্যায় (বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব) যে সব আমল :

(১) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করা (আবুদাঊদ হা/৫০৮২)

(২) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার এই দো‘আটি পাঠ করা- ‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াযুর্রু মা‘আসমিহী শাইয়ুন ফিল্ আর্যি ওয়া লা ফিসসামা-ই ওয়া হুয়াস সামী‘উল ‘আলীম’ (হাকেম হা/১৯৩৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৬০)

(৩) সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা- ‘আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব’ (মুসলিম হা/২৭০৯, তিরমিযী হা/৩৬০৪)

(৪) বিতাড়িত জিন শয়তান হতে রক্ষা কবয :

() لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ.

উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, বিইয়াদিহিল খায়রু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থ : ‘নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক ও শরীকবিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশীল’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৯৭৫)।

ফযীলত : আব্দুর রহমান ইবনু গানাম (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ছালাতের পর ১০ বার বলবে, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু, বিইয়াদিহিল খায়রু, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু, ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। এমন ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক শব্দের পরিবর্তে ১০টি নেকী লেখা হবে, তার ১০টি গুনাহ মুছে দেয়া হবে, তার ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়াও এ দো‘আটি তার জন্য প্রত্যেক মন্দ কাজ এবং বিতাড়িত শয়তান হ’তেও রক্ষাকবয হবে। এর বদৌলতে কোন গুনাহ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (অর্থাৎ শিরক ব্যতীত) কোন কিছুই তাকে ধ্বংস করতে পারবে না। ঐ ব্যক্তি হবে সমস্ত মানুষ অপেক্ষা উত্তম আমলকারী। তবে যে এর চেয়ে উত্তম কথা বলবে সে অবশ্যই এর চেয়েও উত্তম হবে’(আহমাদ হা/১৮০১৯; মিশকাত হা/৯৭৫; মুছনাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৫৩৬৭)।

(৫) সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করা- ‘আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী আবুদাঊদ হা/৫০৯০; আহমাদ হা/২০৪৩০)

খ. ঘুমানোর পূর্বে যে সব আমল :

(১) ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা (বুখারী হা/২৩১১)

(২) ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে হাতে ফুঁক দিয়ে সর্বাঙ্গে হাত বুলানো। এভাবে ৩ বার করা’ (বুখারী হা/৫০১৭; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫৫৪৪)

গ. দিনে রাতে যে সব আমল :

(১) সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা (বুখারী হা/৫০০৮)

(২) প্রতি ছালাতের পর, ঘুমানোর সময় এবং সকাল-সন্ধ্যায় ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করা। (হাকেম ১/৫৬২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হ/৬৫৮)

(৩) সম্ভব হ’লে ৭টি ‘আজওয়া’ খেজুর সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর দিয়ে সকাল করবে, কোন বিষ বা জাদু সে দিনে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’। (বুখারী হা/৫৪৪৫, ৫৭৬৯; মুসলিম হা/২০৪৭; মিশকাত হা/৪১৯০)

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আজওয়াহ্ খেজুর খেলে বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না, এতে শুধুমাত্র নবী (সা.) দু‘আর বারাকাতের কারণে নচেৎ খেজুরের মধ্যে আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭২)। এ খেজুর খেলে সে জাদু টোনা থেকে সে দিন মুক্ত থাকবে। তবে কেহ জাদুগ্রস্ত হলে তা প্রতিহত করতে ঝাঁড়-ফুঁক প্রয়োজন হবে।

‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মদীনার ‘আজওয়াহ্ খেজুর সকাল বেলায় তার ৭টি ভক্ষণের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। মদীনার ‘আজওয়াহ্ খেজুরের বৈশিষ্ট্য এবং সাত সংখ্যার বৈশিষ্ট্য এমন বিষয় যা শারী‘আত প্রণেতা জানেন আমরা তা জানি না। অতএব তার প্রতি ঈমান আনা এবং তার মর্যাদার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। এটা এমন এক বিষয় যা সালাতের রাক্‘আত সংখ্যা ও যাকাতের নিসাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মতো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হা/২০৪৭)

(ঘ) প্রাকৃতিক ঔষধ :

কিছু উপকারী প্রাকৃতিক চিকিৎসা হ’ল-

(১) মধু : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চল। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে (নাহল ১৬/৬৯)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর হাদীসে বলেনঃ “তিনটি বস্তুতে আরোগ্য রয়েছে, শিঙ্গা, মধু এবং আগুনের ছেক। তবে আমি আমার উম্মাতকে ছেক দিতে নিষেধ করি” (বুখারী হা/৫৬৮০; মুসলিম হা/২২০৫)।

মধু রোগব্যাধির জন্য ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র। মধু বিরেচক এবং পেট থেকে দূষিত পদার্থ অপসারক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে কোন এক সাহাবী তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবী বললেনঃ অসুখ পূর্ববৎ বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এল যে, অসুখে কোন পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন, صَدَقَ اللهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أخِيْكَ  অর্থাৎ আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। যাও তাকে মধু খাইয়ে দাও, তারপর লোকটি গিয়ে মধু খাওয়ানোর পর সে আরোগ্য লাভ করল। (বুখারী হা/৫৭১৬, মুসলিম হা/২২১৭)।  অন্যত্র বলেন, “তিনটি বস্তুতে আরোগ্য রয়েছে, শিঙ্গা, মধু এবং আগুনের ছেক। তবে আমি আমার উম্মাতকে ছেক দিতে নিষেধ করি” বুখারী হা/৫৬৮০, মুসলিম হা/২২০৫)। 

(২) কালো জিরা :  আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فِي الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ» ‘কালোজিরার মধ্যে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর সকল রোগের চিকিৎসা নিহিত আছে। ইবনু শিহাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ’’সাম’’ অর্থ মৃত্যু। আর ’’হাববাতুস্ সাওদা’’ অর্থ শূনীয বা কালোজিরা’।  (বুখারী হা/৫৬৮৭-৮৮; মুসলিম হা/২২১৫; মিশকাত হা/৪৫২০)।

কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন। কখনও তা এককভাবে এবং কখনও অন্য কোন খাবার বা পথ্যের সাথে মিশিয়ে তা ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার বহুমুখী ব্যবহার আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় উষ্ণভাবে ব্যবহার ও উষ্ণতায় বিপরীতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে তা বেশ উপকারী হিসেবে পরীক্ষিত। ইমাম কিরমানীর মতে, সাধারণভাবে তা সকল রোগের মহৌষধ।  (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৮৮)

চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেনঃ কালোজিরা হচ্ছে উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির পথ্য। জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ পেটের আর্দ্রতার সমস্যায় এটি বেশ উপকারী। তা গুঁড়া করে গরম পানির সাথে সেবনে প্রস্রাবের সমস্যা দূরীভূত হয়। কালোজিরার গুঁড়া সুতি কাপড়ে নিয়ে শুকলে সর্দি ও ঠাণ্ডা কাশিতে বেশ উপকার হয়। পানির সাথে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা খেলে হাঁপানি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ভিনেগার (সিরকা)-এর সাথে গরম করে কুলি করলে দাঁতের ব্যথায় বেশ কার্যকর। অন্যান্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালোজিরাকে সাধারণভাবে মৃত্যু বতীত সকল রোগের পথ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আবূ বকর ইবনুল ‘আরাবীর মতে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিকট কালোজিরার মাঝে সকল রোগের আরোগ্যের উপাদান রয়েছে। তবে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতিতে ভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। শায়খ আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ হামযাহ্ বলেছেনঃ আলোচ্য হাদীসের ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন, তবে তা তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত বিষয়। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাই বাস্তব সত্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টি পরীক্ষিত। সমালোচকদের এ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। তারা শুধুমাত্র ধারণাপ্রসূত কথাই বলে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৮)

(৩) যমযম পানি :  জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, -‏ مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ ‏ ‘যমযমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩০৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৫০২)। এজন্য যেকোন রোগ থেকে সুস্থতা কামনা করে দো‘আ পাঠ করা যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ২৬/১৪৪)।

ছাহাবায়ে কেরাম যমযমের পানি পাত্রে রাখতেন। কেউ অসুস্থ হ’লে তার শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হ’ত এবং তাদেরকে পান করানো হ’ত (ছহীহাহ হা/৮৮৩)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,خَيْرُ مَاءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، وَفِيْهِ طَعَامٌ مِنَ الطُّعْمِ، وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ، ‘পৃথিবীর বুকের সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হ’ল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগের প্রতিষেধক’। (ত্বাবারানী, মুজামুল আওসাত্ব হা/৩৯১২, ৮১২৯; মুজামুল কাবীর হা/১১০০৪; ছহীহুল জামে হা/৩৩২২)

যমযমের পানি পিপাসা দূর করে, ক্ষুধা নিবারণ করে এবং মানুষকে সুস্থ রাখতে সহায়ক পানীয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যমযমের পানি যে যেই উদ্দেশ্যে পান করবে তার সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে, তুমি যদি সুস্থতার জন্য পান কর তাহ’লে আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করবেন। তুমি ক্ষুধা নিবারণের জন্য পান করলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা নিবারণ করবেন, তুমি পিপাসা দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন (ছহীহুত তারগীব হা/১১৬৪)।

যমযমের পানি তৃপ্তিদায়ক ও শেফা দানকারী প্রতিষেধক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ وَإِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءٌ سَقَمٌ،  ‘নিশ্চয়ই তা (যমযমের পানি) বরকতপূর্ণ। এটা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগের প্রতিষেধক’। (ত্বাবারানী, মুজামুছ ছগীর হা/২৯৫; ছহীহুল জামে হা/২৪৩৫)

যমযমের পানি পানে মানুষ রোগ মুক্ত হয় এবং স্বাস্থ্য সম্মত বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবু যার গিফারী (রাঃ) যযময কূপের পাশে ত্রিশদিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি কি খেয়েছেন এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জানতে চাইলে তিনি বলেন, مَا كَانَ لِى طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ. فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِى وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِى سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ. ‘যমযমের পানি ব্যতীত আমার অন্য কোন খাদ্য ছিল না। এ পানি পান করেই আমি স্থূলদেহী হয়ে গেছি। এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধায় দুর্বলতা বুঝতে পারিনি। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, এ পানি অতিমাত্রায় বরকতময় ও প্রাচুর্যময় এবং অন্যান্য খাবারের মত পেট পূর্ণ করে দেয়’। (মুসলিম হা/২৪৭৩)

(৪) যয়তুন তেল :  আবূ উসায়দ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «كَلُوا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوا بِهِ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ» ‘তোমরা যায়তূনের তেল খাও এবং তা গায়ে মালিশ করো। কারণ তা একটি কল্যাণময় বৃক্ষ হতে নির্গত। (আহমদ হা/১৬০৫৫; তিরমিযী হা/১৮৫১; সনদ ছহীহ)। এগাছ হতে তেল বের করা হয় তা বারাকাতপূর্ণ গাছ। এখানে বারাকাতপূর্ণ গাছ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অধিক পরিমাণে উপকার পাওয়া। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৫২)

যাদু-টোনা, বশীকরণ, বান মারা তাবিজ করা বা কুফুরী শক্তি প্রয়োগ করাকে কালো যাদু বা ব্ল্যাক মাজিক বলা হয়। এসব হচ্ছে শয়তানের কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা পাঠ করত, তারা তা অনুসরণ করত, মূলত সুলাইমান কুফুরী করেনি বরং শয়তানরাই কুফুরি করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত’ (আল বাকারা, ২/১০২)।

আবূ মূসা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে যাবে না। ১. মদ্যপানকারী ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ৩. যাদুকে বিশ্বাসকারী (মুসতাদরাক আলা আস-ছহীহাইন, হা/৭২৩৪)।

সাতটি বড় বড় ধ্বংসাত্মক পাপের মধ্যে যাদু একটি। আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাকো। জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কি কি? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সাথে কাওকে শরীক করা, যাদু করা…’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯)।

সুতরাং এসব কাজ থেকে দূরে থাকা ফরয। উল্লেখ্য যে, মানুষের প্রতি কালো যাদুর প্রভাব পড়ে থাকে। যেমন রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইহুদী লাবিদ ইবনুল আসাম যাদু করে ছিল। যার প্রভাবে তিনি অনেক বিষয় ভুলে যেতেন। যার প্রেক্ষিতে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হয়ে ছিল (ছহীহ বুখারী, হা/৩০৯৫)।

ইসলামী শরীয়তে যাদুকরের হুকুম

১। ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, ব্যক্তি যাদু করে তার জন্য আল্লাহ তায়ালার এই বাণী প্রযোজ্যঃ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ

অর্থঃ “নিশ্চয় তারা জানে যে, যা তারা ক্রয় করেছে আখেরাতে এর জন্য কোন অংশ নেই।” (সূরা বাকারাঃ ১০২) অতঃপর বলেনঃ আমার অভিমত হল, যাদুকরকে হত্যা করা, যদি সে যাদু কর্ম করে থাকে।

২। ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুকরের শাস্তি হত্যা। আর এই অভিমত পোষণ করেছেন, উমর, উসমান বিন আফফান, ইবনে আমর বিন আব্দুল আযীয, আবু হানীফা এবং ইমাম মালেক।

৩। ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিম মনিষীদের মাঝে মুসলিম যাদুকর ও (অমুসলিম) যিম্মী যাদুকরের শাস্তির ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।

ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, যখন মুসলমান যাদুকর কুফুরি কালামের মাধ্যমে যাদু করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার তাওবা ও গ্রহণীয় হবে না। আর না তাকে তাওবা করতে বলা হবে। কেননা এটা এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা যাদুকে কুফুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ অর্থঃ “তারা যাকেই যাদু বিদ্যা শিখাতো তাকে বলে দিত যে তোমরা (যাদু শিখে) কুফুরি করো না, নিশ্চয়, আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষা।” (সূরা বাকারাঃ ১০২)

আর এই অভিমত পোষণ করেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু সাওর, ইসহাক এবং আবু হানীফা (রাহেমাহুমুল্লাহ)।

৪ । ইমাম ইবনে মুনযির বলেন যখন কোন ব্যক্তি স্বীকার করে যে, সে কুফুরি কালামা দিয়ে যাদু করেছে, তখন তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। যদি সে তাওবা না করে থাকে। এমনিভাবে কারো কুফুরীর যদি প্রমাণ ও বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যায়, তবুও তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। আর যদি তার কথা কুফুরি না হয় তবে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না। আর যদি যাদুকর তার যাদু দ্বারা কাউকে হত্যা করে তবে তাকেও হত্যা করা হবে আর যদি ভুলক্রমে হত্যা করে তবে তাতে দিয়াত দিতে হবে।

৫। হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ মনীষীগণ আল্লাহ তায়ালার নিম্নোল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেছেন যাতে যাদুকর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا

অর্থাৎ “যদি তারা ঈমান আনয়ন করত এবং আল্লাহকে ভয় করত।” সুতরাং এই আয়াত দ্বারা অনেকেই যাদুকরকে কাফের বলে মত পোষণ করেছেন। আবার অনেকেই অভিমত পোষণ করেছেন যে, সে কাফের তো নয় তবে তার শাস্তি শিরচ্ছেদ কেননা ইমাম শাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ), আহমদ বিন হাম্বল (রাহেমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে বলেনঃ বলেছেন যে, তিনি বাজলা বিন আব্দকে বলতে শুনেছেন যে, উমর বিন খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এ মর্মে নির্দেশ জারি করেছেন যে, প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ ও মহিলার শিরচ্ছেদ করে দাও। তিনি বলেন যে, তিনি তিনটি যাদুকর মহিলাকে হত্যা করেছেন। ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, ইমাম বুখারী (রাহেমাহুল্লাহ) এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন। (বুখারীঃ ২/২৫৭)

ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ সহীহ বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে যা হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তাকে তার এক বান্ধবী যাদু করেছেন। অতঃপর তার নির্দেশে যাদুকরকে হত্যা করা হয়েছে।

ইমাম আহমদ থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর তিন সাহাবা থেকে যাদুকরকে হত্যার ফতোয়া রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৪)

মূলকথাঃ পূর্বের আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, ইমাম শাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ) ছাড়া জমহুর উলামা যাদুকরকে হত্যার মত পোষণ করেন, তিনি বলেনঃ যাদুকরের যাদু দ্বারা যদি কেউ মারা যায়, তবে তার (কিসাসের) পরিবর্তে তাকে হত্যা করা হবে।

ইমাম আবু হানীফা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যেহেতু হাদীসে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণী উল্লেখ নেই সেজন্যে অমুসলিম যাদুকরকেও হত্যা করা হবে। এই জন্য যে, যাদু এক এমন অপরাধ যা মুসলিমকে হত্যা করে। অনুরূপ এক অপরাধও অমুসলিমকে হত্যা করা জরুরী করে দেয়। (আল-মুগনীঃ ১০/১১৫)

ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, আহলে কিতাবের যাদুকরকে হত্যা করা যাবে না। তবে যদি তার যাদু দ্বারা কেউ হত্যা হয় তবে তাকে হত্যা করা হবে। আরও বলেনঃ তার যদি দ্বারা যদি কোন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ব্যাপারে ওয়াদা ভঙ্গের অভিযোগ নেই তাকেও হত্যা করা বৈধ।

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লাবীদ বিন আসেমকে হত্যা এজন্য করেননি যে, তিনি নিজের জন্যে কারো প্রতিশোধ নিতেন না। লাবীদ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে যাদু করেছিল। দ্বিতীয়তঃ এজন্যে হত্যা করেননি যে, কোথাও আবার ইয়াহুদী ও মুসলিমদের মাঝে রক্তাক্তরূপ ধারণ না করে। (ফতহুল বারীঃ ১০/২৩৬)

ইমাম ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুকর সে ইয়াহুদী অথবা খ্রিস্টান যেই হোক না কেন কেবলমাত্র যাদুর জন্যে তাকে হত্যা করা হবে

না। যতক্ষণ না সে তার যাদুর মাধ্যমে অন্যকে হত্যা করে। এর প্রমাণ হল যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লাবীদকে হত্যা করেন নি অথচ শিরক যাদু থেকেও বড় পাপ।

তিনি আরো বলেনঃ যত দলীল এসব ব্যাপারে এসেছে সব মুসলিম যাদুকরের ব্যাপারে। কেননা সে তার যাদুর কারণে কাফের হয়ে যায়। (ফতহুল বারীঃ ১০/২৩৬)

ইসলামী শরী‘আতে ঝাড়-ফুঁক বৈধ যদি তা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা করা হয় এবং পদ্ধতি শিরক-বিদ‘আত মুক্ত হয়। বর্তমানে অধিকাংশ ঝাড়-ফুঁককারীই শিরকের মাধ্যমে এসব করে থাকে। তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন- আমীন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top