‘কুরায়েশ’

এ বিষয়ে একবার মু‘আবিয়া (রাঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন‘ একটি সামুদ্রিক প্রাণীর কারণে, যা সমুদ্রের সকল প্রাণীর চাইতে অধিক শক্তিশালী, যাকে ‘ক্বিরশ’ বলা হয়। যে অন্যকে ধরে খায়। কিন্তু তাকে কেউ খেতে পারে না। সে বিজয়ী হয়। কিন্তু পরাজিত হয় না’ (কুরতুবী)।

উপমহাদেশের খ্যাতনামা জীবনীকার ও রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনচরিত ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’-এর স্বনামধন্য লেখক ক্বাযী সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী (মৃ:১৩৪৯/১৯৩০ খৃ:) বলেন, ‘কুরায়েশ’ অর্থ সাগরের তিমি মাছ। ইয়ামনের বাদশাহ হাসসান একবার মক্কা আক্রমণ করে কা‘বা গৃহ উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রাসূল (ছাঃ)-এর ঊর্ধ্বতন দ্বাদশ পিতামহ ফিহ্র বিন মালেক তাকে যুদ্ধে হারিয়ে তিন বছর বন্দী করে রাখেন। অতঃপর মুক্তি দেন। হাসসান ইয়ামনে ফেরার পথে রাস্তায় মারা যায়। এই বীরত্বপূর্ণ ঘটনার পর থেকে ফিহর ‘আরবের কুরায়েশ’ বলে খ্যাতি লাভ করেন’। (সুলায়মান মানছূরপুরী, রহমাতুলি−ল ‘আলামীন (দিল্লী : ১ম সংস্করণ, ১৯৮০ খৃ:), ২/৫৯ পৃঃ।)

‘কুরায়েশ’ বলা হয় সম্মানের কারণে (ইবনু জারীর, তানতাভী)। প্রচলিত অর্থে নাযার বিন কিনানাহ-এর বংশধরগণকে ‘কুরায়শী’ বলা হয়। নাযার ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর ঊর্ধ্বতন চৌদ্দতম পিতামহ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,‘আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তানগণের মধ্য হ’তে বনু কিনানাহকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর বনু কিনানাহ থেকে কুরায়েশকে বেছে নিয়েছেন।

অতঃপর কুরায়েশ থেকে বনু হাশেমকে বেছে নিয়েছেন এবং আমাকে বেছে নিয়েছেন বনু হাশেম থেকে’।(মুসলিম হা/২২৭৬, মিশকাত হা/৫৭৪০ ওয়াছেলা ইবনুল আসক্বা‘ হ’তে।) [সূত্র : তাফসীরুল কুরআন (৩০তম পারা) : ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব প্রণিত, পৃষ্ঠা নং- ৪৯৪]

কুরায়েশদের মর্যাদা :

উম্মে হানী বিনতে আবু ত্বালেব হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কুরায়েশদের সাতটি বিষয়ে মর্যাদা দান করেছেন। ১- আমি তাদের মধ্যকার ২- নবুঅত তাদের মধ্যে এসেছে ৩- কা‘বাগৃহের তত্ত্বাবধান ৪- হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন ৫-আল্লাহ তাদেরকে হস্তীওয়ালাদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন ৬- উক্ত ঘটনার পর কুরায়েশরা দশ বছর যাবৎ আল্লাহ ব্যতীত কারু ইবাদত করেনি ৭- আল্লাহ তাদের বিষয়ে কুরআনে পৃথক একটি সূরা নাযিল করেছেন। অতঃপর তিনি অত্র সূরাটি তেলাওয়াত করেন বিসমিল্লাহ সহ।(বায়হাক্বী, আল-খিলাফিয়াত (الخلافيات) ; হাকেম আল-মুস্তাদরাক ২/৫৩৬, হা/৩৯৭৫; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪২০৯।)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বংশ পরিচয় :

রাসূল (ছাঃ)-এর বংশধারাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। ১ম ভাগে মুহাম্মাদ (ছাঃ) হ’তে ঊর্ধ্বতন পুরুষ আদনান পর্যন্ত ২২টি স্তর। যে ব্যাপারে কারু কোন মতভেদ নেই। এর উপরে ২য় ভাগে আদনান থেকে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত ৪১টি স্তর এবং তার উপরে তৃতীয় ভাগে ইবরাহীম (আঃ) হ’তে আদম (আঃ) পর্যন্ত ১৯টি স্তর। যেখানে নাম ও স্তরের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এখানে আদনান পর্যন্ত বংশধারা উল্লেখ করা হ’ল, যাতে সবাই একমত।- (১) মুহাম্মাদ বিন (২) আব্দুল্লাহ বিন (৩) আব্দুল মুত্ত্বালিব বিন (৪) হাশেম বিন (৫) আবদে মানাফ বিন (৬) কুছাই বিন (৭) কিলাব বিন (৮) মুররাহ বিন (৯) কা‘ব বিন (১০) লুওয়াই বিন (১১) গালিব বিন (১২) ফিহর (লকব কুরায়েশ) বিন (১৩) মালেক বিন (১৪) নাযার বিন (১৫) কিনানাহ বিন (১৬) খুযায়মা বিন (১৭) মুদরেকাহ বিন (১৮) ইলিয়াস বিন (১৯) মুযার বিন (২০) নাযার বিন (২১) মা‘দ বিন (২২) আদনান (বুখারী, মানাক্বিবুল আনছার অধ্যায়, ২৮ অনুচ্ছেদ)। এর মধ্যে পরদাদা হাশেম-এর নামে হাশেমী গোত্র এবং দ্বাদশতম পুরুষ ফিহর যার উপাধি ছিল কুরায়েশ, তার নামানুসারে কুরায়েশ বংশ প্রসিদ্ধি লাভ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় বংশ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ ইবরাহীমের সন্তানগণের মধ্য থেকে ইসমাঈলকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর ইসমাঈলের সন্তানগণের মধ্য থেকে বনু কিনানাহকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর বনু কিনানাহ থেকে কুরায়েশ বংশকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর কুরায়েশ থেকে বনু হাশেমকে এবং বনু হাশেম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন (মুসলিম হা/২২৭৬, মিশকাত হা/৫৭৪০)।  এ পর্যন্তই সহীহ সূত্রে বর্ণিত। আদনান-এর উপরের বংশ তালিকা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top