গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান : আব্দুল মালেক বিন দীনারের একটি স্বপ্ন

“মালেক বিন দীনার ছিলেন ইরাকের বিখ্যাত একআলেম। একবার তিনি বিশাল এক মাহফিলেভক্তব্য দিতে দাঁড়াতেই এক শ্রোতা বললেন, আপনার ভক্তব্য শুরু করার আগে একটি প্রশ্নের জবাব দিন।

মালেক বিন দীনার প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন।বয়স্ক শ্রোতা বললেন প্রায় দশ
বছর আগেআপনাকে মাতাল অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখেছি।আপনি সে অবস্হা থেকে
কিভাবে ফিরে এলেন? এবং ওয়াজ করার জন্য এখানে এলেন ? মালেক বিন দীনার কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন। তারপরবললেন। ঠিক বলেছেন, আমিই সেই ব্যক্তি। শুনুন তাহলে আমারকাহিনী-
এক কদরের রাতে মদের দোকান বন্ধছিলো । দোকানীকে অনুরোধ করে এক বোতলমদ
কিনলাম বাসায় খাবো এই শর্তে। বাসায়ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি আমার স্ত্রী নামায পড়ছে।
আমি আমারঘরে চলে গেলাম। টেবিলে বোতলটা রাখলাম।আমার তিন বছরের শিশু মেয়েটা
দৌড়ে এলো। টেবিলেসাথে ধাক্কা খেলো আর মদের বোতলটি পড়েভেঙে
গেলো। অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতেলাগলো।

ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সেরাতে আর মদখাওয়া হলোনা। পরের
বছর আবার লাইলাতুল ক্বদর এলো। আমি আবার মদ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।বোতলটা
টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলের দিকেতাকাতেই বুক ভেঙে কান্না এলো। তিন মাস হলো
আমার শিশু কন্যাটি মারা গেছে । বোতলটা বাইরে ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
স্বপ্নে দেখছি একবিরাট সাপ আমায় তাড়া করছে। এতো বড়ো মোটা সাপ আমি জীবনে
দেখিনি। আমি ভয়ে দৌড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। বৃদ্ধ
বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারবোনা। তুমিএই
পাহাড়ের ডানে উঠে যাও। পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউদাউ আগুনজলছে। আর পেছনেই
এগিয়ে আসছে সাপ।
বৃদ্ধেরকথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর একবাগান। বাচ্চারা
খেলছে। গেটে দারোয়ান।দারোয়ান বললো, বাচ্চারা দেখতো এ লোকটিকে? একে সাপটা
খেয়ে ফেলবে নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটেএলো।
তার মাঝে আমার মেয়েটাও আছে। মেয়েটাআমায় ডান হাত জড়িয়ে রেখে তার বাম
হাতে সাপটাকেথাপ্পর দিলো। অমনি সাপ চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, মা তুমি
কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমায় ভয় পায়? মেয়ে বললো, আমি জান্নাতি মেয়ে,
জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়।
বাবাঐ সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো?
আমি বললাম না মা। আমার মেয়ে বললো বাবা ওতো তোমার নফস। নফসকে এতো বেশী
খাবার দিয়েছো যে সে এমন বড় আর শক্তিশালীহয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম
পর্যন্ত তাড়িয়ে এনেছে। বললাম, পথে এক
দুর্বল বৃদ্ধ তোমাকেএখানে আসার পথ বলে দিয়েছে। সে কে? মেয়ে বললো, তাকেও
চেনোনি? সে তোমার রুহ। তাকেতো কোনদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বলহয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে। আমার ঘুম ভেঙে গেলো।

সেইদিন থেকে আমার রূহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি আর নফসের খাদ্য একদম বন্ধ করে
দিয়েছি। চোখবুঝলেই নফসের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই।আরদেখি রূহকে।
আহা কতো দুর্বল হাঁটতে পারেনা।ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন মালিক বিন দীনার ।
তাইআসুন, নিজের নফস কে হেফাজত করি । নয়তো চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন….আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top