ছবি ও মূর্তি

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتٌ رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً
عِنْدَ اللهِ الْمُصَوِّرُوْنَ، متفق عليه-
১. অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন
, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে
, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত
লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ
[1]
২. ব্যাখ্যাঃ হাদীছে تَصَاوِيْرُ، تَمَاثِيْلُ، تَصَالِيْبُ তিনটি বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছেযেগুলির একবচনের অর্থ হলঃ যথাক্রমে
ছবি
,
মূর্তি ও ক্রুশযুক্ত ছবিতবে ছবি বলতে
সবগুলিকেই বুঝায়
মূর্তি বলতে মাটি, পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী মূর্তি, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও কাপড়ে বুনা চিত্র কিংবা নকশাকে
বুঝায়
হাফেয ইবনু
হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন
, সাধারণ ছবির চাইতে
ক্রুশযুক্ত ছবি অধিকতর নিষিদ্ধ
কেননা ক্রুশ ঐসকল বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত, যাকে পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়েপক্ষান্তরে সকল ছবি পূজা করা হয় না[2]
তিনি বলেন, যেসব বস্ত্ত পূজিত
হয়
,
সে সবের ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন
সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত হবে
এগুলি ব্যতীত অন্যগুলির ছবি প্রস্ত্ততকারীও গোনাহগার হবেতবে তাদের শাস্তি
তুলনামূলকভাবে কম হবে
কুরতুবী বলেন, জাহেলী আরবের লোকেরা সবকিছুর মূর্তি তৈরী করতএমনকি তাদের কেউ
কেউ মূল্যবান
আজওয়া খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতোতারপর ক্ষুধার্ত হলে তা খেয়ে
নিত
[3] এ যুগে যারা বিভিন্ন প্রাণী ও
ফল-ফুলের আকারে কেক বা মিষ্টান্ন তৈরী করে ভক্ষণ করেন
, তারা উক্ত জাহেলী রীতির বিষয়টি অনুধাবন করুনঅমনিভাবে যারা
খৃষ্টানদের পূজ্য ক্রুশ-এর অনুকরণে গলায় টাই ঝুলাতে ভালবাসেন
, আশূরার দিন হোসায়েন (রাঃ)-এর নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে তাকে
বরকত মনে করে ভক্ষণ করেন কিংবা খৃষ্টানদের অনুকরণে কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন ও
বিভিন্ন শুভ কাজের উদ্বোধন করেন
, তারাও বিষয়টি ভেবে
দেখবেন
ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন যে, হাদীছে ছবি অংকন বলতে প্রাণীর ছবির কথা বলা হয়েছে যা
আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং যা দেওয়ালে বা পর্দার কাপড়ে থাকে
[4]

তিনি বলেন, আমাদের (হানাফী)
মাযহাবের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন যে
, প্রাণীর ছবি অংকন করা কঠিনতম হারাম ও কবীরা গোনাহের
অন্তর্ভুক্ত
চাই সেটা
কাপড়ে হৌক
, বিছানায় হৌক, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুতে হৌকতবে যদি তা বালিশে, বিছানায় বা অনুরূপ হীনকর কোন বস্ত্ততে হয়, তবে তা হারাম নয় এবং ঐ অবস্থায় ঐ ঘরে ফেরেশতা আসতে বাধা নেইঅনুরূপভাবে শিকারী
কুকুর
,
ফসল ও বাড়ী পাহারাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর
ব্যতীত অন্য কুকুর থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না
যারা ঐ বাড়ীর উপরে
আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে এবং বাড়ীওয়ালার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে
অবশ্য এরা ঐসকল
ফেরেশতা নয়
, যারা সর্বাবস্থায় বান্দার সাথে থাকে তার
হেফাযতকারী হিসাবে
[5] ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ছবি-মূর্তি ওয়ালা ঘরে কেবল ফেরেশতাই প্রবেশ
করে না
বরং নবীগণ ও
তাঁদের সনিষ্ট অনুসারী আল্লাহর নেক বান্দাগণও প্রবেশ করেন না
[6]ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, প্রাণীর হৌক বা বস্ত্তর হৌক, ছবি অংকন বিষয়টিই
মকরূহ বা শরী
আতে অপসন্দনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্তকেননা এগুলি মানুষকে অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখেউপরন্তু ছবি-মূর্তির
শাস্তি কঠিন হওয়ার প্রধানতম কারণ হ
ল এই যে, এতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,… আল্লাহকে বাদ দিয়ে
অন্যকে উপাসনা করার বিষয়টি যদি প্রাণী ছাড়াও সূর্য-চন্দ্র বা অন্য কোন জড় বস্ত্ত
হয়
,
তাহলে সেই সব ছবি-মূর্তিও হারাম হবে[7]
উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনায় ছবি ও মূর্তিকে একই শিরোনামে বর্ণনা করার কারণ এই যে, দুটির হুকুম একই এবং দুটির ব্যবহারিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া একইবরং কোন কোন
ক্ষেত্রে মূর্তির চাইতে ছবি
, চিত্র, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র ও
চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়া আরও বেশী মারাত্মক হয়
সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপযেলার
বাড়াইশ গ্রামের জনৈকা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা গৃহবধু বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিবেশিত একটি
প্রেমমূলক নাটক দেখার পরদিনই ব্যর্থ প্রেমিকার অনুকরণে নিজের দেহে কেরোসিন ঢেলে
আত্মহত্যা করেছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে
[8]
পিতা ও মাতা উভয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একমাত্র পুত্রকে ঘরে
রেখে যান টিভি চালু করে দিয়ে
ফিরে এসে ডাকাডাকি করেও ছেলের সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে দরজা
ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখা গেল কিশোর ছেলেটির লাশ মায়ের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের নীচে
ঝুলছে
সামনে
টিভিতে তখন ভারতীয় ছবি চলছে
সেখানে দেখানো ফাঁসির দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পিতা-মাতার
একমাত্র সন্তান হারিয়ে গেল চিরদিনের মত
ঢাকা মহানগরীর এই ঘটনাটি ২০০৮ সালেরছবির নীল দংশনে এরূপ মর্মান্তিক ঘটনা
শহরে-গ্রামে সর্বত্র হরহামেশা ঘটছে
, যার কোন হিসাব নেই
আমেরিকায় টিভির ব্যবহার ও প্রভাব বিষয়ক সেদেশের একটি
রিপোর্টে জানা যায় যে
, সেদেশের ৯৬% পরিবারে অন্তত একটি টিভি সেট
রয়েছে
সেদেশের ৩
থেকে ৫ বছরের শিশুরা সপ্তাহে গড়ে ৫০ ঘণ্টা টিভি দেখে
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ বিদ্যালয়
পর্যন্ত ছাত্ররা টিভির সামনে বসে পার করে দেয় ২২০০০ ঘণ্টারও বেশী সময়
অথচ স্কুলে সময়
কাটায় মাত্র ১১০০০ ঘণ্টা
টিভিতে অধিকহারে সন্ত্রাস দেখানোর ফলে তারাও সন্ত্রাসী ও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে[9]
বিগত যুগে মানুষ নিজ হাতে মৃত সৎ লোকের মূর্তি বানিয়ে তার
উপাসনা করত
বর্তমান
বৈজ্ঞানিক উন্নতির যুগে ঐসব মানুষের ছবি
, চিত্র বা তৈলচিত্রকে একই রূপ সম্মান দেখানো হচ্ছেবিগত যুগে কাঠ, মাটি বা পাথরের তৈরী মূর্তির সম্মুখে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হআজকের যুগেও তার
সম্মানে একইভাবে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হচ্ছে
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি ঘরে
ঘরে শোভা পাচ্ছে
আল্লাহর
অমূল্য নে
মত তরতাজা ফুলগুলিকে ছিঁড়ে এনে মালা বানিয়ে তা ছবিতে পরানো
হচ্ছে
তার চিত্রে
বা কবরে এমনকি কবরবিহীনভাবে নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে
, স্মৃতিসৌধে ও স্তম্ভে শিখা অনির্বাণ শিখা চিরন্তন নামীয় অগ্নিশিখার পাদদেশে অগ্নিপূজকদের ন্যায়
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হচ্ছে
এমনকি পীর-ফকীর ও অলি-আউলিয়া উপাধিধারী লোকদের কবরে ও তাদের
ছবি ও তৈলচিত্রে রীতিমত সিজদা ও তার কাছে প্রার্থনা নিবেদন করা হচ্ছে
শীআ নামধারী
কিছু বিভ্রান্ত মুসলমান
তাযিয়ার নামে হুসায়েন (রাঃ)-এর ভূয়া কবর বানিয়ে পূজা করছেআলেম নামধারী একদল
দুষ্টমতি লোক পীর-আউলিয়াদের নামে উদ্ভট গল্প সমূহ রচনা করে বই লিখছে ও প্রবন্ধ
রচনা করে পত্রিকায় ছাপছে
রেডিও-টিভিতে ও বিভিন্ন ধর্মীয় জালসায় ওয়াযের নামে ভিত্তিহীন গাল-গল্প বলছেযাতে এইসব শিরকের
আড্ডাখানা গুলিতে লোক সমাগম বৃদ্ধি পায় ও নযর-নেয়াযের নামে সেখানে অর্থের পাহাড়
গড়ে ওঠে
কবর ও স্থান পূজা
সম্পর্কে হুঁশিয়ারী
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: إِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِىْ أُمَّتِىْ لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى
يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلاَتَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ
اُمَّتِىْ بَالْمُشْرِكِيْنَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ اُمَّتِى
الْأَوْثَانَ وَأَنَّهُ سَيَكُوْنُ فِىْ أُمَّتِىْ كَذَّابُوْنَ ثَلثُوْنَ
كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىُّ اللهِ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ
لاَنَبِىَّ بَعْدِىْ وَلاَتَزَالُ طَائِفَةٌ مِّنْ اُمَّتِىْ عَلَى الْحَقِّ
ظَاهِرِيْنَ لاَيَضُرُّ هُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَاْتِىَ أَمْرُ اللهِ، رواه
ابوداؤد والترمذى-
আমার
উম্মতের মধ্যে যখন একবার তরবারী চালিত হবে
, তখন আর তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে নাআর ক্বিয়ামত সেই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে না, যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে
এবং যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মূর্তি বা স্থানপূজা করবে
 অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে, যাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর নবী হওয়ার দাবী করবেঅথচ বাস্তব কথা এই
যে
,
আমিই শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী নেইআমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল সত্যের উপরে অবিচল থাকবেবিরোধিতাকারীগণ
তাদের কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না
এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে[10]
(২)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুর মাত্র পাঁচদিন পূর্বে অন্তিম শয়নে স্বীয় উম্মতকে
হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন
,
أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ
قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ، أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا
الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَالِكَ، رواه مسلم-
জেনে রাখ!
তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবর সমূহকে সিজদা বা উপাসনার
স্থল হিসাবে গ্রহণ করেছিল
সাবধান! তোমরা যেন কবর সমূহকে সিজদার স্থান হিসাবে গ্রহণ
করো না
আমি
তোমাদেরকে এ বিষয়ে নিষেধ করে যাচ্ছি
[11]
(৩) তিনি
বলেন
 لا تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ وَثَناً يُّعْبَدُ… رواه فى المؤطا و
احمد-
 তোমরা আমার
কবরকে মূর্তিতে (
وَثَناً) পরিণত করো না, যাকে পূজা করা হয়[12]
(৪) অন্য বর্ণনায় এসেছে,,وَلاَتَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا… رواه النسائى
وابوداؤد
  তোমরা আমার
কবরকে তীর্থ কেন্দ্রে (
عِيْدًا ) পরিণত করো না[13]
(৫) জাবের (রাঃ) বলেন, نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صّلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُّقْعَدَ عَلَيْهِ
وَأَنْ يُّبْنَى عَلَيْهِ، رواه مسلم-
 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন কবর পাকা
করতে
,
সেখানে বসতে ও তার উপরে সৌধ নির্মাণ করতে[14]
(৬) তিনি সাবধান করে বলেন, لَأَنْ يَّجْلِسَ أَحَدُكُمْ
عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ، فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ، خَيْرٌ لَهُ
مِنْ أَنْ يَّجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ، رواه مسلم-
 তোমাদের কেউ জ্বলন্ত অঙ্গারের উপরে বসুক ও
তার কাপড় পুড়ে গায়ের চামড়া ঝলসে যাক
, সেটাও তার জন্য উত্তম হল কবরে বসার চাইতে[15]
(৭) তিনি বলেন, لاَتُصَلُّوْا إِلَى
الْقُبُوْرِ وَلاَتَجْلِسُوْا عَلَيْهَا، رواه مسلم-
 তোমরা কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করো না ও
তার উপরে বসো না
[16]
(৮) হজ্জ থেকে ফেরার পথে একটি মসজিদে মুছললীদের ভিড় দেখে ওমর
(রাঃ) কারণ জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন যে
, এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার ছালাত আদায় করেছিলেনতখন ওমর ফারূক বললেন, এভাবে ইহুদী-নাছারারা ধ্বংস হয়েছেতারা তাদের নবীদের স্মৃতি চিহ্ন সমূহকে
তীর্থস্থানে পরিণত করেছে
অতএব ছালাতের সময় না হলে তোমরা এখানে কোনরূপ ছালাত আদায় করবে না[17]
(৯) ওমর (রাঃ)-এর নিকটে খবর পৌঁছলো যে, (হোদায়বিয়ার) যে বৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়ে ছাহাবায়ে কেরাম
আল্লাহর নবীর হাতে হাত রেখে মৃত্যুর বায়
আত করেছিলেন, যা বায়আতুর রেযওয়ান নামে খ্যাত, লোকেরা ঐ বৃক্ষের নিকটে যাচ্ছে (বরকত মনে করে), তখন ওমর (রাঃ) ওটাকে কেটে ফেলার নির্দেশ দেন[18]
(১০) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ
وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ، متفق عليه-
 ইয়াহূদ-নাছারাদের
উপরে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন
, তারা তাদের নবীদের কবরগুককে
উপাসনার কেন্দ্রে পরিণত করেছে
[19]
(১১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্তিম অসুখে আক্রান্ত হলেন, তখন একদিন তাঁর জনৈকা স্ত্রী হাবশার মারিয়াহ গীর্জার কথা
আলোচনা করছিলেন
এছাড়া উম্মে
সালামা ও উম্মে হাবীবাহ যাঁরা ইতিপূর্বে হাবশা গিয়েছিলেন
, তাঁরাও সেখানকার ঐ গীর্জার সৌন্দর্য ও সেখানে রক্ষিত ছবি ও
চিত্র সমূহের কথা বর্ণনা করলেন
এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথা উঠিয়ে বললেন, ওরা এমন একটি সম্প্রদায় যখন ওদের মধ্যকার কোন সৎ লোক মারা
যেত
,
তারা তার কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করততারপর সেখানে ঐ
সবের ছবি বা চিত্র অংকন করত
  ক্বিয়ামতের দিন এরা হল আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি (اولئك شرار خلق الله) [20]
বর্তমান যুগেও তাই করা হচ্ছেব্যক্তির ছবি বা তৈলচিত্র এখন ভক্তদের ঘরে
ঘরে সুন্দরভাবে ও সসম্মানে শোভা পাচ্ছে
তাদের কবরে মসজিদ ও সৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে ও সেখানে
বৎসরান্তে কিংবা বিশেষ বিশেষ সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে
এমনকি ঘর হতে বের হবার
সময় ঐ ব্যক্তির কিংবা তার মাযারের টাঙানো ছবির দিকে তাকিয়ে তার সাহায্য চাওয়া
হচ্ছে ও তার অসীলায় বিপদ মুক্তি কামনা করা হচ্ছে
বলা বাহুল্য যে, কবর পূজা, মূর্তি পূজা, স্থান পূজা ও ছবিপূজার মধ্যে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে কোন
পার্থক্য নেই
মূর্তি
কিংবা ছবি মানব মনের উপরে অতি দ্রুত ও গভীরভাবে রেখাপাত করে বিধায় ইসলাম এ বিষয়ে
কঠোর বিধান প্রদান করেছে
এক্ষণে ছবি ও মূর্তি বিষয়ে শারঈ বিধান সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা
পাব ইনশাআল্লাহ
ছবি ও মূর্তি
সম্পর্কে শারঈ বিধান
১. (ক) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَ اللهُ تَعَالى وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ
كَخَلْقِىْ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً أَوِلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْشَعِيْرَةً،
متفق عليه-
আমার
সৃষ্টির মত করে যে ব্যক্তি (কোন প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়
, তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে? পারলে তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা বা একটি যব সৃষ্টি করুক
তো দেখি
?[21]
(খ) আবু যুরআ বলেন, আমি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদীনার (উমাইয়া গবর্ণর
মারওয়ান ইবনুল হিকাম-এর) একটি বাড়ীতে গেলাম
সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে, বাড়ীর উপরিভাগে জনৈক শিল্পী ছবি অংকন করছেতখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির ন্যায়
সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে
তাহলে সৃষ্টি করুক একটি শস্যদানা বা একটি পিপীলিকা…[22]
(২) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন
,
إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ، متفق عليه-
যে সমস্ত
লোক এইসব ছবি তৈরী করে
, তারা ক্বিয়ামতের দিন আযাব প্রাপ্ত হবেতাদেরকে বলা হবে তোমরা যা
সৃষ্টি করেছিলে
, তা জীবিত কর[23]
(৩) আবু
জুহায়ফা (রাঃ) বলেন
,
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ
ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِىِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَوا
وَمُوْكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ، رواه البخارىُّ-
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) নিষেধ করেছেন রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে
, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য নিতে, যৌন উপার্জন নিতে
এবং তিনি লা
নত করেছেন সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, (হাতে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে)
উল্কিকারিনী ও উল্কি প্রার্থিনী মহিলা এবং ছবি অংকন বা প্রস্ত্ততকারী ব্যক্তির
উপরে
[24]
(৪)
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন
,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ:
… وَمَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَّنْفُخَ فِيْهَا وَلَيْسَ
بِنَافِخٍ، رواه البخارىُّ-
আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি
, …যে ব্যক্তি দুনিয়াতে একটি ছবি তৈরী করবে, তাকে আযাব দেওয়া হবে এবং তাকে চাপ দেওয়া হবে তাতে রূহ প্রদানের জন্যঅথচ সে তা পারবে না[25]
(৫) সাঈদ বিন
আবুল হাসান বলেন
, জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস
(রাঃ)-এর নিকটে এসে বলল
, আমার পেশা হল ছবি তৈরী করাএখন এ বিষয়ে আপনি
আমাকে ফৎওয়া দিন
তখন ইবনু
আববাস তাকে কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললেন
, আমি তোমাকে ঐটুকু অবহিত করতে পারি, যা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট হতে শ্রবণ
করেছি
আমি তাঁকে
বলতে শুনেছি
,
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُوْلُ: كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ
صَوَّرَهَا نَفْسًا فَيُعَذِّبُهُ فِىْ جَهَنَّمَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنْ
كُنْتَ لاَبُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ رُوْحَ فِيْهِ، متفق
عليه-
প্রত্যেক
ছবি প্রস্ত্ততকারী জাহান্নামী
তার প্রস্ত্ততকৃত প্রতিটি ছবিতে (ক্বিয়ামতের দিন) রূহ
প্রদান করা হবে এবং জাহান্নামে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে
অতঃপর ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি তুমি একান্তই ছবি তৈরী করতে চাও, তাহলে বৃক্ষ-লতা বা এমন বস্ত্তর ছবি তৈরী কর, যার মধ্যে প্রাণ নেই[26]
৬. (ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন,
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ
يَتْرُكُ فِىْ بَيْتِهِ شَيْئاً فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاَّ نَقَضَهُ، رواه
البخارىُّ-
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) স্বীয় গৃহে (প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন জিনিষই রাখতেন না
দেখলেই ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন[27]
(খ) আয়েশা
(রাঃ) বলেন
, একবার তিনি গদি বা আসন খরিদ করলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিলতখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গৃহে প্রবেশের সময়
দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন
ঘরে প্রবেশ করলেন নাআমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করলামতখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকটে তওবা করছিহে রাসূল! আমি কি গুনাহ করেছি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এই গদিটি কেন? আমি বললাম, আপনার বসার জন্য ও বিছানা হিসাবে ব্যবহার
করার জন্য আমি ওটি খরিদ করেছি
তখন তিনি বললেন, এই সমস্ত ছবি যারা তৈরী করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের আযাব দেওয়া হবে ও তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা বানিয়েছ, তাতে জীবন দাওঅতঃপর তিনি
বললেন
,
ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে (প্রাণীর) ছবি থাকে[28] ছহীহ মুসলিমে বর্ধিত বর্ণনায় এসেছে আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি ঐটি নিলাম ও তাকে দুটুকরা করে
ছোট বালিশ বানালাম ও ঘরের ব্যবহার্য অন্য কাজে লাগালাম
[29]
(গ) আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, একবার তিনি ঘরের জানালায় একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিলরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দাটিকে ছিঁড়ে ফেললেনতখন আয়েশা (রাঃ)
সেই কাপড়ের টুকরা দিয়ে বালিশ তৈরী করেন
, যা ঘরেই থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাতে হেলান দিয়ে বসতেন[30]
(ঘ) আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা এক সফর থেকে ঘরে ফেরেনঐ সময় আমি দরজায়
একটি ঝালরওয়ালা পশমী কাপড়ের পর্দা টাঙিয়েছিলাম
যাতে ডানাওয়ালা ঘোড়ার ছবি ছিলঅতঃপর তিনি আমাকে
নির্দেশ দিলেন ও আমি পর্দাটিকে হটিয়ে দিলাম
অন্য
বর্ণনায় এসেছে
, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত পর্দাটিকে টেনে ছিঁড়ে
ফেলেন এবং বলেন
, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই নির্দেশ দেননি যে, আমরা পাথর, মাটি বা ইটকে কাপড় পরিধান করাই আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা ওটা কেটে দুটি বালিশ বানাই ও তাতে ঝালর লাগাইএতে তিনি আমাকে
দোষারোপ করেননি
[31]
যারা কবরে গেলাফ লাগান ও তাকে অতি পবিত্র মনে করেনএমনকি ঐ গেলাফ বা
তার টুকরা এনে ঘরে বা অন্য কোন স্থানে রাখেন ও বরকত মনে করে তার সামনে শ্রদ্ধায়
দাঁড়িয়ে থাকেন
, কিছু কামনা করেন এবং সেখানে ধূপ-ধুনা-আগরবাতি
ও নযর-নেয়ায দেন
, তারা হাদীছটি লক্ষ্য করুন
(ঙ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, তাঁর ছবিযুক্ত একটি কাপড় ছিল, যা তাঁর কক্ষের
জানালায় ছিল
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ঐদিকে ফিরে ছালাত আদায় করার সময় বললেন
, কাপড়টি সরিয়ে দাওতখন আমি কাপড়টিকে ছিঁড়ে কয়েকটি বালিশ বানাই[32]
(চ) আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমাদের ঘরের সম্মুখে পাখির ছবিযুক্ত পর্দা ঝুলানো ছিলরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আয়েশা! ওটিকে সরিয়ে ফেলকেননা ঘরে প্রবেশকালে ওটা দেখলে আমার দুনিয়ার
কথা স্মরণ হয়
আয়েশা বলেন, আমাদের একটি কাপড় ছিল, যাতে নকশা ছিলসেটি পরিধান
করতাম
কিন্তু তা
কর্তন করিনি
[33]
৭. (ক) আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন
 لاَتَدْخُلُ الْمَلآئِكَتُ
بَيْتاً فِيْهِ كَلْبٌ وَّ لاَتَصَاوِيْرُ، متفق عليه-
 ঐ ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কুকুর থাকে বা (প্রাণীর) ছবি থাকে[34] অবশ্য এর মধ্যে ঐসব ফেরেশতা
অন্তর্ভুক্ত নন
, যারা মানুষের দৈনন্দিন আমলের হিসাব লিপিবদ্ধ
করেন কিংবা মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত থাকেন অথবা বান্দার রূহ কবয করার জন্য আসেন
অনুরূপভাবে কুকুর
বলতে স্রেফ খেলা ও বিলাসিতার জন্য যেগুলি রাখা হয়
নইলে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারা দেওয়ার কুকুর, যুদ্ধ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত কুকুর
উক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়
উক্ত মর্মে পৃথকভাবে হাদীছ সমূহ বর্ণিত হয়েছে[35]
(খ) বুখারী ও মুসলিম বুস্র বিন সাঈদ হতে, তিনি যায়েদ বিন খালেদ আল-জুহানী হতে, তিনি ছাহাবী আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেন
,
তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি থাকেবুস্র বলেন, অতঃপর যায়েদ পীড়িত হলে আমরা তাঁকে সেবা করার জন্য গেলামতখন তাঁর ঘরের
দরজায় ছবিযুক্ত পর্দা দেখলাম
আমি রাসূলের স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ)-এর পূর্ব স্বামীর পুত্র
ওবায়দুল্লাহ আল-খাওলানীকে জিজ্ঞেস করলাম
, যায়েদ কি ইতিপূর্বে আমাদেরকে ছবির নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে খবর দেননি? জবাবে ওবায়দুল্লাহ বললেন, আপনি কি তাঁকে একথা বলতে শোনেননি যে, কাপড়ে অংকিত ছবি ব্যতীত (إلاَّ
رَقْمًا فِىْ ثَوْبٍ)
 আমি বললাম, নাতিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি একথা বলেছেন[36]
(গ) ওবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ একদা অসুস্থ আবু ত্বালহা
আনছারীকে দেখতে তাঁর বাড়ীতে যান
সেখানে তিনি সাহ্ল বিন হুনাইফকে পানতখন আবু ত্বালহা জনৈক ব্যক্তিকে বিছানার
চাদরটি হটিয়ে দিতে বললেন
সাহ্ল বললেন, আপনি কেন এটি সরিয়ে দিচ্ছেন? আবু ত্বালহা বললেন, ওতে ছবি রয়েছে এবং এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা বলেছেন, তা আপনি জানেনসাহ্ল বললেন, কিন্তু তিনি কি বলেননি যে, কাপড়ে অংকিত ছবি ব্যতীতআবু ত্বালহা
বললেন
,
হ্যাঁ, বলেছেনকিন্তু এটি
আমার হৃদয়ের অধিকতর প্রশান্তির জন্য
 ( وَلَكِنَّهُ أَطْيَبُ لِنَفْسِىْ ) [37]
৮. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, একদিন জিব্রীল (আঃ) আমার নিকটে এসে বলেন, আমি গতরাতে আপনার কাছে এসেছিলামকিন্তু ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে আমাকে যে
জিনিষ বিরত রেখেছিল
, তা হল আপনার গৃহদ্বারের ছবিগুলিকেননা ঘরের দরজায়
একটি পাতলা পর্দা ঝুলানো ছিল
, যাতে প্রাণীর অনেকগুলি
ছবি ছিল
তাছাড়া ঘরে
একটি কুকুর ছিল
অতএব আপনি ঐ
ছবিগুলির মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিন
, যা ঘরের দরজার পর্দায় ঝুলানো রয়েছেফলে তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে যাবেআর পর্দাটি সম্বন্ধে নির্দেশ দিন, যেন সেটি কেটে ফেলে দুটি বালিশ বা বিছানা বানিয়ে নেওয়া হয়, যা পড়ে থাকবে ও পায়ে দলিত হবেআর কুকুর সম্বন্ধে নির্দেশ দিন, যেন তা বের করে দেওয়া হয়হাসান অথবা হোসায়েন কুকুরের বাচ্চাটি খেলার
জন্য মাল-সামানের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল
নির্দেশ পেয়ে তা বের করে দেয়[38]
৯. (ক) আবু হাইয়াজ আল-আসাদী বলেন, আমাকে একদিন আলী (রাঃ) বললেন,
ألاَ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن لاَّ تَدَعْ تِمْثَالاً إِلاَّطَمَسْتَهُ
وَلاَ قَبْرًا مُّشَرَّفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ، رواه مسلم-
আমি কি
তোমাকে এমন একটি কাজে পাঠাবো না
, যে কাজে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন
? সেটি এই যে, তুমি এমন কোন ছবি ছাড়বে না, যাকে নিশ্চিহ্ন না
করবে এবং এমন কোন উঁচু কবর দেখবে না
, যাকে সমান না করে দেবে[39] আবু হাইয়াজ খলীফা আলী (রাঃ)-এর পুলিশ প্রধান ছিলেনআলবানী বলেন যে, এই আদেশ কেবল আলী নয় খলীফা ওছমানের আমলেও জারি ছিল[40]
(খ) আলী
(রাঃ) হ
তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি খাদ্য প্রস্ত্তত করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দাওয়াত দিলামতিনি আসলেন ও গৃহে
প্রবেশ করলেন
অতঃপর একটি
পর্দা দেখলেন
, যা ছবিযুক্ত ছিলতখন তিনি বেরিয়ে গেলেন এবং বললেন, إنَّ الملائكتَ لاتدخلُ بيتاً فيه تصاويرُ رواه النسائيُّ নিশ্চয়ই ঐ
বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না
, যে বাড়ীতে ছবি থাকে[41]
১০. (ক) জাবের (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের সময় যখন আমরা নিকটবর্তী বাত্বহা উপত্যকায় ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে
নির্দেশ দেন যেন কা
বা গৃহের সকল ছবি (মূর্তি) নিশ্চিহ্ন করে দেনঅতঃপর উক্ত ছবি
সমূহ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা
বা গৃহে
প্রবেশ করলেন না
[42]
(খ) উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে কাবা গৃহে
প্রবেশ করলাম
তিনি সেখানে
ছবি সমূহ দেখে বালতিতে পানি আনার জন্য বললেন
আমি পানি নিয়ে এলে তিনি তা দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে
ঐগুলি মুছতে থাকলেন ও বললেন
, قَاتَلَ اللهُ قَوْمًا يُصَوِّرُوْنَ مَالاَ
يَخْلُقُوْنَ-
 আল্লাহ ঐ জাতিকে ধ্বংস করুন, যারা ছবি তৈরী করেঅথচ সেগুলিকে তারা সৃষ্টি করতে পারে না[43]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতের ধনুক দ্বারা প্রথমে কাবা গৃহের
বাইরে রক্ষিত ৩৬০টি মূর্তিকে আঘাত করে ফেলে দেন
অতঃপর কাবা গৃহে প্রবেশ করেনসেখানে তিনি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের প্রতিকৃতি
দেখতে পান
যাদের হাতে
ভাগ্য গণনার তীর ছিল
এটা দেখে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, قاتَلَهُمُ اللهُ ، واللهِِ ما
اسْتَقْسَما بها قَطُّ
  আল্লাহ ওদের
ধ্বংস করুন! আল্লাহর কসম! এই নবীদ্বয় কখনোই তীর দ্বারা ভাগ্য গণনা করতেন না
অতঃপর তিনি সেখানে একটি কবুতরীর কাঠের প্রতিকৃতি দেখেন এবং
নিজ হাতে তা ভেঙ্গে ফেলেন
অতঃপর হুকুম দেন সকল ছবি-মূর্তি নিশ্চিহ্ন করার জন্য[44]
আলোচনা:
ছবি ও মূর্তি সম্পর্কে উপরে বর্ণিত হাদীছ সমূহ ছাড়াও বহু
হাদীছ রয়েছে
, যেগুলিতে শাব্দিক পার্থক্য ব্যতীত প্রায়
সমস্ত বর্ণনার সারমর্ম এই যে
, সকল ধরনের প্রাণীর
ছবি হারাম এবং তা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত
যার জন্য জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করা হয়েছেএখানে ছবি যেকোন
ধরনের হ
তে পারেচাই সে ছবি ছায়াযুক্ত হৌক বা না হৌকচাই সে ছবি দেওয়ালে বা পাত্রে, কাপড়ে, বিছানায়, মুদ্রায় বা কাগজী নোটে থাকুক বা অন্য কিছুতে থাকুককেননা নবী করীম
(ছাঃ) ছবির নিষেধাজ্ঞা বর্ণনার সময় পৃথক পৃথক হুকুম বর্ণনা করেননি
বরং তিনি সাধারণভাবে
সকল ছবি প্রস্ত্ততকারীকে লা
নত করেছেন ও খবর দিয়েছেন যে, ক্বিয়ামতের দিন ছবি
প্রস্ত্ততকারীগণ কঠিনতর আযাবে পতিত হবে এবং প্রত্যেক ছবি প্রস্ত্ততকারী জাহান্নামী
তাদেরকে বলা হবে যে, তোমরা যেসব ছবি তৈরী করেছিলে, তাতে জীবন দাওএই সকল ধমকি সব
ধরনের ছবিকে শামিল করে
এক্ষণে আবু ত্বালহা ও সাহ্ল বিন হুনাইফ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে কাপড়ে অংকিত
যে ছবি
র কথা বলা হয়েছে, সেটি বালিশ বা বিছানার চাদর সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা পদদলিত ও হীন করা হয়যেগুলিকে টাঙিয়ে রাখা হয় না বা সম্মান দেখানো হয় না এবং
যেগুলির কারণে গৃহে ফেরেশতা প্রবেশে বাধা হয় না
তবুও আবু ত্বালহা (রাঃ) ঐ বিছানার চাদরটি
সরিয়ে দিয়েছিলেন হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য
, যা উক্ত হাদীছেই বর্ণিত হয়েছেঅতএব বিষয়টি নিঃসন্দেহে তাক্বওয়া বিরোধীউক্ত হাদীছকে
ছবিযুক্ত কাপড় টাঙানোর পক্ষে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যাবে না
কেননা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ সমূহে
ছবিযুক্ত পর্দা টাঙানোর নিষেধাজ্ঞা ও তাকে সরিয়ে দেওয়া বা ছিঁড়ে ফেলা সম্পর্কে
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এই সকল পর্দা ফেরেশতা প্রবেশে বাধা হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে
, যতক্ষণ না সেগুলিকে বিছানো হবে বা হীনকর কাজে
ব্যবহার করা হবে বা মাথা কেটে ফেলে বৃক্ষে রূপান্তরিত করা হবে
এই হাদীছ সমূহে
পরষ্পরে কোন বিরোধ নেই
বরং একটি আরেকটির সত্যয়নকারী
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন দেশে নেতা বা ভক্তিভাজন ব্যক্তিদের মাথা সহ দেহের উপরাংশের ছবি গৃহে
বা অফিস কক্ষে টাঙিয়ে রাখা হয় এবং ধারণা করা হয় যে
, এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি প্রাণহীন হওয়ার কারণে উক্ত ধরনের ছবি তৈরী বা টাঙানো
জায়েয আছে
এটি
সম্পূর্ণ ভুল ধারণা
ইতিপূর্বে বর্ণিত (৩৮ টীকার) হাদীছে যার নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে
বিদ্বানগণের বক্তব্য:
ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী
(রহঃ) ফাৎহুল বারীর মধ্যে
ছবি বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহের মধ্যকার সমন্বয় প্রসঙ্গে
বিদ্বানগণের বক্তব্য সমূহ উদ্ধৃত করেছেন
যা নিম্নরূপ:
(১) আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছায়াহীন ছবিযুক্ত কাপড় যা পদদলিত করা হয় বা বালিশ, বিছানা ইত্যাদি হীনকর কাজে ব্যবহার করা হয়, এগুলি জায়েয আছেইমাম নববী বলেন, এটাই অভিমত হল ইমাম ছওরী, আবু হানীফা, মালেক, শাফেঈ প্রমুখ বিদ্বানেরএতে ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য নেইযদি ছবি দেওয়ালে
টাঙানো থাকে বা পরিহিত অবস্থায় থাকে বা পাগড়ী বা অনুরূপ বস্ত্ততে থাকে
, যাকে হীনকর গণ্য করা হয় না, তবে সে ছবি হারাম। …ইবনু আবী শায়বা ইকরিমা হতে বর্ণনা করেন যে, ছাহাবী ও তাবেঈগণ ঐসব ছবির বিষয়ে ছাড় দিতেন, যা বিছানায় বা বালিশে থাকত এবং পদদলিত হত বা হীনকর কাজে ব্যবহৃত হতাঁরা ঐসব ছবিকে
অপসন্দ করতেন
, যা টাঙানো বা স্থাপন করা হওরওয়া বলেন যে, ইকরিমা ঐসব বালিশে ঠেস দিয়ে বসতেন, যাতে পাখি বা মানুষের ছবি থাকত[45]
ইবনু হাজার বলেন, ছবি প্রস্ত্ততকারী ও ব্যবহারকারী দুজনেই গোনাহগারতবে ছবি ব্যবহারকারী ব্যক্তি অধিক গোনাহগার[46]
ইবনুল আরাবী মালেকী বলেন, ছবি বিষয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, দেহযুক্ত সকল (প্রাণীর) ছবি সর্বসম্মতভাবে হারামযদি কাপড়ে অংকিত হয়, তবে সে সম্পর্কে চার ধরনের বক্তব্য রয়েছে: ১- এগুলি
সাধারণভাবে জায়েয ২- এগুলি সাধারণভাবেই হারাম ৩- প্রাণীর পূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট ছবি
হারাম
কিন্তু যদি
মাথা কেটে ফেলা হয় এবং অঙ্গাদি পৃথক করে ফেলা হয়
, তাহলে জায়েযতিনি বলেন, এটিই সর্বাধিক
বিশুদ্ধ মত
৪- যদি ছবি
হীনকর কাজে ব্যবহৃত হয়
, তাহলে জায়েযকিন্তু যদি টাঙানো হয়, তাহলে নাজায়েয[47]
ইমাম নববী বলেন[48] যায়েদ বিন খালেদ আল-জুহানী কর্তৃক ছাহাবী আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হতে বর্ণিত
হাদীছে
[49] যেখানে ছবিযুক্ত
পোষাক
জায়েয বলা হয়েছে এবং আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত ছবি নিষিদ্ধের
হাদীছের মধ্যে সমন্বয়ের পথ এই যে
, আবু ত্বালহা বর্ণিত
হাদীছ দ্বারা প্রাণী নয় এমন বস্ত্ত বা বৃক্ষ-লতা ইত্যাদির ছবি বুঝানো হয়েছে
তাছাড়া এমনও হতে পারে যে, প্রাণীর ছবিযুক্ত পর্দা টাঙানো নিষিদ্ধের হাদীছ তাঁর নিকটে পৌঁছেনিতবে আবু হুরায়রা
বর্ণিত হাদীছের
[50] ব্যাখ্যায় যে সমন্বয় পেশ করা হয়েছে[51] সেটিই অধিক উত্তম[52] অর্থাৎ গবর্ণর মারওয়ানের বাড়ীর প্রবেশমুখে দেওয়ালের উপরে অংকিত ছবির বিরোধিতা
করে তিনি একে
আল্লাহর সৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল বলে রাসূলের
যে নিষেধাজ্ঞামূলক
 (২১ নং টীকার) হাদীছ বর্ণনা করেন, সেখানে ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন, প্রাণী বা প্রাণহীন
সকল প্রকার ছবিকে শামিল করা হয়েছে
[53] সেকারণ সকল প্রকারের ছবিই হারাম
(২) ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, যে ছবির কারণে গৃহে ফেরেশতা প্রবেশ করে না এবং যা প্রস্ত্তত করা ও সংরক্ষণ করা
নিষিদ্ধ
, তা হল ঐসব ছবি যাতে প্রাণ রয়েছে, যার মাথা কাটা হয়নি অথবা যা হীনকরভাবে ব্যবহার করা হয়নিতিনি বলেন, কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ছবি প্রস্ত্ততকারীর জন্যকেননা ছবি পূজিত
হয়ে থাকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে
, ছবির দিকে দৃষ্টি
দিলে মানুষ ফিৎনায় পতিত হয় এবং কোন কোন হৃদয় ঐদিকে প্রণত হয়ে পড়ে
[54]
(৩) ছহীহ মুসলিমের বিশ্ববিশ্রুত ভাষ্যকার ইমাম নবভী (রহঃ)
অনুরূপ মর্মে মুসলিম শরীফের অধ্যায় রচনা করেছেন নিম্নোক্ত ভাষায়-
بابُ تحريمِ تصويرِ صورةِ الحيوانِ وتحريمِ اتخاذِ ما فيه صورةٌ
غيرُ مُمْتَهَنَةٍ بالفَرْشِ و نَحْوِهِ وأنَّ الملآئكةَ عليهِمُ السلامُ لا
يَدْخُلون بيتاً فيه صورةٌ او كلبٌ-
প্রাণীর ছবি
প্রস্ত্তত করা নিষিদ্ধ বিষয়ে
, বিছানা ইত্যাদি
হীনকর কাজে ব্যবহৃত নয় এমন ছবি নিষিদ্ধ বিষয়ে এবং ফেরেশতাগণ ঐসব গৃহে প্রবেশ করেন
না
,
যেখানে ছবি অথবা কুকুর রয়েছে, উক্ত বিষয়ের অনুচ্ছেদ[55]
(৪) ইমাম
নবভী বলেন যে
, আমাদের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ
বলেন
,
প্রাণীর ছবি কঠিনভাবে হারামএটি কবীরা গোনাহের
অন্তর্ভুক্ত
এটি
সর্বাবস্থায় হারাম
কেননা এতে
আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্য করা হয়
চাই সেটা কাপড়ে থাক, বিছানায় থাক, কাগজে বা ধাতব মুদ্রায় থাক, কোন পাত্রে, দেওয়ালগাত্রে বা অন্য কিছুতে থাকতবে বৃক্ষ-লতা বা অন্য কিছুর ছবি যা কোন প্রাণীর ছবি নয়, সেগুলি অংকন বা প্রস্ত্তত করা হারাম নয়[56]
আধুনিক গবেষক সাইয়িদ সাবিক্ব ছবি সম্পর্কিত সমস্ত হাদীছের বক্তব্যকে নিম্নরূপে ভাগ করেছেন:
(১) দেহ বিশিষ্ট সকল প্রাণীর ছবি ও মূর্তি তৈরী করা হারামচাই সেটা মানুষের
হৌক
,
জন্তুর হৌক বা পাখির হৌকএগুলি বাড়ীতে রাখা
ও সংরক্ষণ করা নিষিদ্ধ এবং এগুলি ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব
পক্ষান্তরে যার প্রাণ নেই, তার ছবি বা প্রতিকৃতি জায়েয আছেযেমন বৃক্ষ-লতা, ফল-মূল ইত্যাদি। (২) বাচ্চাদের খেলনা-মূর্তি তৈরী করা ও বেচাকেনা জায়েয। (৩) ছায়াহীন ছবি, যেমন দেওয়ালে, ধাতব পদার্থের গায়ে, কাপড়ে, পর্দায় বা ক্যামেরায় তোলা ছবি সবই জায়েযএগুলি ইসলামের প্রথম অবস্থায় নিষিদ্ধ ছিলপরে অনুমতি দেওয়া
হয়
নিষিদ্ধের
দলীল হিসাবে তিনি আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ সমূহ এবং অনুমতির দলীল হিসাবে আবু
ত্বালহা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ
, যেখানে ছবিযুক্ত
কাপড় পরিধানের অনুমতি রয়েছে
 (মুসলিম) ও আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ পেশ করেছেনযেখানে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) আয়েশাকে ছবিযুক্ত পর্দা সরিয়ে দিতে বলেন
, সেদিকে দৃষ্টি পড়লে দুনিয়া স্মরণ হয় সেকারণে (মুসলিম)এ প্রসঙ্গে তিনি
হানাফী বিদ্বান ইমাম ত্বাহাভীর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন
ত্বাহাভী বলেন, প্রথম দিকে সকল প্রকার ছবি
নিষিদ্ধ ছিল
কেননা তখন
লোকেরা মূর্তিপূজা থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন মুসলমান ছিল
পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবশ্যক বোধে
ছবিযুক্ত কাপড় ব্যবহারের অনুমতি দেন এবং যেগুলি হীনকর কাজে ব্যবহৃত হয়
তবে যেগুলি হীনকর
কাজে ব্যবহার করা হয় না
, সেগুলির উপরে নিষেধাজ্ঞা পূর্বের ন্যায় বহাল
থাকে
[57]
আমরা বলি, সাইয়িদ সাবিক্ব-এর
ছায়াহীন ছবি জায়েয বলার বিষয়টি সর্বাবস্থায় সমর্থনযোগ্য নয়
কেননা রাবী আবু ত্বালহা (রাঃ) নিজে ছবিযুক্ত
বিছানা সরিয়ে দিয়েছেন হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছবিযুক্ত
পর্দা হটিয়েছেন দুনিয়া স্মরণ হওয়া থেকে বাঁচার জন্য
এ থেকে ঢালাওভাবে সর্বাবস্থায় ছবি জায়েয হওয়া
বুঝায় না
কেবলমাত্র
বাধ্যগত অবস্থায় এবং হীনকর কাজে জায়েয হ
তে পারেআর ছবিযুক্ত কাপড় টাঙানো সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ
প্রাণীর খেলনা:
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূক অথবা খায়বার যুদ্ধ হতে বাড়ী ফেরেনতখন বাড়ীর সম্মুখে
দরজায় একটি পর্দা টাঙানো ছিল
বাতাসে তার একপাশ সামান্য সরে গেলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আয়েশা! এসব কি? তিনি বলেন, এসব আমার মেয়েরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেলনাগুলির মাঝখানে একটি
ঘোড়া দেখলেন
, যার দুটি নকশাওয়ালা ডানা রয়েছে এবং বললেন, এদের মাঝে এটা কি দেখছি? আয়েশা বললেন, ঘোড়ারাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এর উপরে এ দুটি কি? তিনি বললেন, ডানারাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঘোড়ার আবার দুটি ডানা? তিনি বললেন, আপনি কি শোনেননি যে, সুলায়মান (আঃ)-এর একটি ঘোড়া ছিল, যার অনেকগুলি ডানা ছিল? আয়েশা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হেসে ফেলেন, তাতে আমি তাঁর মাড়ি দাঁত সমূহ দেখতে পেলাম[58]
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছ দ্বারা মেয়েদের পুতুল খেলা জায়েয সাব্যস্ত হয়
এবং ছবি সম্পর্কে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা থেকে এটিকে খাছ করা হয়
ক্বাযী আয়ায এ বিষয়ে দৃঢ়মত ব্যক্ত করেন ও
এটিকে জমহূর বিদ্বানগণের অভিমত বলে উল্লেখ করেন
তাঁরা মেয়েদের গৃহস্থালী প্রশিক্ষণের জন্য
পুতুল খেলা জায়েয বলেন
কোন কোন বিদ্বান একে মানসূখ বা হুকমরহিত বলেনইবনু বাত্ত্বাল এদিকেই ঝুঁকেছেন।… খাত্ত্বাবী বলেন, মেয়েদের খেলনা-পুতুল ছবি বিষয়ে সাধারণ নিষেধাজ্ঞার বাইরের
বস্ত্ত
তাছাড়া
আয়েশার জন্য অনুমতি এজন্য ছিল যে
, তখন তিনি নাবালিকা
ছিলেন
ইবনু হাজার
বলেন
,
এটি দৃঢ়ভাবে বলা যাবে নাকেননা (৭ম হিজরীতে)
খায়বার যুদ্ধের সময় আয়েশার বয়স ছিল ১৪ এবং (৯ম হিজরীতে) তাবূক যুদ্ধের সময়
নিঃসন্দেহে তার চেয়ে বেশী ছিল
[59]
আধুনিক সঊদী বিদ্বান মুহাম্মাদ বিন জামীল যায়নু বলেন, আয়েশা বাড়ীতে মাটি দিয়ে নিজ হাতে এই পুতুল বানিয়েছিলেনঅতএব এভাবে মাটির পুতুল বানিয়ে তাকে কাপড়
পরানো ও সেবা-যত্ন করার মাধ্যমে মেয়েরা ভবিষ্যতে সন্তান পালনের প্রশিক্ষণ নিতে
পারে
এতে দোষ নেইকিন্তু এই অজুহাতে
বাজার থেকে বিভিন্ন প্রাণীর খেলনা পুতুল কিনে আনা জায়েয নয়
কেননা এটি একে তো অপচয়, দ্বিতীয়ত: যদি বিদেশী কোম্পানীর খেলনা হয়, তবে তা আরো নিষিদ্ধকেননা এই সুযোগে মুসলমানের পয়সা অমুসলিম দেশ সমূহে চলে যায়[60]
সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ আবদুল আযীয বিন
আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন
,খেলনা-পুতুল থেকে বিরত থাকাই উত্তম (الأَحْوَطُ)কেননা এখানে দুটি
সন্দেহযুক্ত বিষয় রয়েছে (১) আয়েশার অনুমতি দেওয়ার ঘটনাটি ছবি-মূর্তি নিষিদ্ধ হওয়ার
এবং এগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার সাধারণ নির্দেশের পূর্বের ঘটনা অথবা (২) এটি
নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত একটি খাছ বিষয়
কেননা পুতুল খেলা এক ধরনের হীনকর কাজদুটিকেই দুদল বিদ্বান সমর্থন করেছেনসেকারণ সন্দেহ থেকে
বাঁচার জন্য এগুলি থেকে বিরত থাকাই উত্তম
কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, دَعْ ما يُرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَيُرِيْبُكَতুমি সন্দিগ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে
ধাবিত হও
[61] তিনি আরও বলেন, وَمَنْ وَقَعَ فِى الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِى
الْحَرَامِ
 যে ব্যক্তি
সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত হ
, সে ব্যক্তি হারামে পতিত হ[62]
অতএব যেসব পিতা-মাতা ও ভাই-বোন বাজার থেকে খেলনা-পুতুল কিনে
এনে বাচ্চাদের উপহার দেন ও শোকেস ভরে রাখেন এবং প্রাণীর মাথা ওয়ালা জামা-গেঞ্জি
কিনে এনে বাচ্চাদের পরান
, তারা সাবধান হৌন! কেননা এর ফলে তিনি বাচ্চার
নিষ্পাপ হৃদয়ে মূর্তির প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে দিলেন
যা তাকে পরবর্তী জীবনে শিরকের প্রতি ঘৃণার
বদলে দুর্বল করে ফেলতে পারে
তখন দায়ী কেবল বাচ্চা হবে না, তার পিতা-মাতাও হবেনএসব ছবিওয়ালা পোষাক প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠানগুলি আরো বেশী দায়ী হবেন
প্রাণীর মাথা বিশিষ্ট ছবি:
হাদীছে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবির মাথা কেটে ফেলে তাকে বৃক্ষে বা অনুরূপ ছবিতে
রূপান্তরিত করতে হবে
এক্ষণে মানবদেহের নীচের অংশ কেটে ফেলে উপরাংশের ছবি তৈরী করা ও তা সসম্মানে
দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা বা দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা নিঃসন্দেহে নাজায়েয এবং তা
নিঃসন্দেহে ফেরেশতা আগমনের প্রতিবন্ধক
অতএব মাথা কাটা ছবি অথবা নিকৃষ্ট অবস্থায় পতিত বা হীনকর
কাজে ব্যবহৃত ছবি ব্যতীত সাধারণ অবস্থায় প্রাণীর কোন ছবি প্রস্ত্তত ও ব্যবহার শরী
আতে নিষিদ্ধএই ছবি ছায়াযুক্ত
হৌক বা না হৌক তাতে কিছুই যায় আসে না
কেননা মূর্তি, প্রতিকৃতি, কাপড়ে বা কাগজে অংকিত ছবি কিংবা ক্যামেরায়
তোলা ছবি সবকিছুরই প্রতিক্রিয়া একই
এই ছবি বা মূর্তি যদি কোন ভক্তিভাজন ব্যক্তির হয়, তাহলে সেটা আরও কঠিন গোনাহের বিষয় হবেঐ ভক্তির চোরাগলি দিয়েই শিরক প্রবেশ করবেযেমন পৃথিবীর আদি
শিরক এভাবেই প্রবেশ করেছিল শ্রদ্ধাভাজন ধর্মনেতা ও সমাজ নেতাদের মূর্তি পূজার
মাধ্যমে হযরত নূহ (আঃ)-এর নবুঅতকালে ও তারপর থেকে সকল নবীর যামানায়
এই সব পরলোকগত ভক্তিভাজন লোকদের মূর্তিতে ভরে গিয়েছিল
পবিত্র কা
বা গৃহশেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এগুলিকে বের করে কাবা গৃহকে
শিরক মুক্ত করেই সেখানে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা দান করেছিলেন
বর্তমানে আমরা ফেলে
আসা জাহেলিয়াতকেই আবার আমাদের ঘরে ও বৈঠকখানায় স্থাপন করছি
অফিস কক্ষে টাঙিয়ে রাখছি ও সম্মানিত সকল
স্থানে ও শোকেসে ভর্তি করছি
ব্যক্তির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অথবা তার বিদেহী আত্মার
সম্মানে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি
বিগত দিনের ফেলে
আসা শিরক বিভিন্নরূপে আমাদের অফিস-আদালতে
, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনকি দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ভবনে ও আইন সভার
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সসম্মানে স্থান করে নিয়েছে
এরপরেও আমাদের দাবী আমরা তাওহীদবাদী মুসলমান
যেসব ছবি অনুমোদন যোগ্য:
১. বৃক্ষ-লতা, প্রাকৃতিক দৃশ্য, কাবা গৃহ, মসজিদে নববী, বায়তুল আক্বছা বা অনুরূপ পবিত্র স্থান সমূহের
ছবি
,
যদি তাতে কোন প্রাণীর ছবি না থাকেযেমন ইবনু আববাস
(রাঃ) জনৈক শিল্পীকে বলেন
, যদি তুমি নিতান্তই ছবি প্রস্ত্তত করতে চাও, তবে বৃক্ষ-লতার ছবি অংকন কর অথবা ঐসব বস্ত্তর ছবি, যাতে প্রাণ নেই[63]
২. মাথা কাটা ছবিজিব্রীল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন[64]
৩. পাসপোর্ট, ভিসা, আইডেন্টিটি কার্ড, লাইসেন্স, পলাতক আসামী ধরার
জন্য
,
গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রাখার জন্য ইত্যাদি
বাধ্যগত ও যরূরী কারণে ছবি তোলা
আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর (তাগাবুন ১৬; বাক্বারাহ ২৩৩, ২৮৬)
ছবি ও মূর্তির
ক্ষতিকর দিক সমূহ:
ইসলাম কোন বস্ত্ত ক্ষতির কারণ ব্যতীত নিষিদ্ধ করেনিযে ক্ষতি ধর্মীয়, চারিত্রিক, আর্থিক বা অন্য
যেকোন দিকের হ
তে পারেতবে সত্যিকারের মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
আদেশ-নিষেধের সম্মুখে বিনা বাক্য ব্যয়ে মাথা নত করবেন এটাই স্বাভাবিক
যদিও তিনি সব সময়
কারণ জানতে পারেন না
এক্ষণে ছবি ও মূর্তির প্রধান প্রধান ক্ষতিকর দিক সমূহ নিম্নে আলোচিত হল:
১. দ্বীন ও আক্বীদাগত ক্ষতি: মানুষ তার বিশ্বাস অনুযায়ী কর্ম
করে থাকে
আর এই
বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারণেই মানব জাতি অসংখ্য ধর্ম ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ে বিভক্ত
হয়েছে
মুসলিম
উম্মাহ তার সার্বিক জীবনে আল্লাহর একক আনুগত্যের উপরে বিশ্বাসী একটি বৃহৎ মানব
সম্প্রদায়ের নাম
তারা
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টির উপাসনা ও তার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য
প্রদর্শন করে না
মুশরিক
সম্প্রদায়ের সাথে তাদের মৌলিক পার্থক্য এখানেই
কিন্তু ছবি ও মূর্তি মুসলমানদের এই আক্বীদার
উপরে আঘাত হানে
হাতে গড়া
ছবি ও মূর্তির দৃশ্যমান সত্তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে সে মহাশক্তিধর
অদৃশ্য সত্তা আল্লাহকে ভুলে যায়
তাঁর স্মরণ ও তাঁর বিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের বিষয়টি
গৌণ হয়ে যায়
আল্লাহর
উপরে তাওয়াক্কুল করার মাধ্যমে যে পবিত্র ও অজেয় মানসিক শক্তি সে অর্জন করত
, তা থেকে সে বঞ্চিত হয়
ইসলামের প্রাথমিক যুগের যুদ্ধ সমূহে সংখ্যাগুরু মুশরিকগণ
পরাজয় বরণ করত সংখ্যালঘু মুসলমানদের অজেয় ঈমানী শক্তির কাছে
, তাদের অস্ত্রশক্তির কাছে নয়বদর বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়া সাল্লাম) তাঁর ক্ষুৎ-পিপাসায় কাতর সাথীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বলে যে
, قُوْمُوْا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأرْضُ এগিয়ে চল
তোমরা জান্নাতের পানে
, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনে পরিব্যপ্ত[65]  অথচ সেই মুসলমানরা ১৯৬৭ সালের
ফিলিস্তীন যুদ্ধে ইহুদীদের বিরুদ্ধে সৈন্য পারিচালনার সময় নির্দেশ দেয়
,سِيْرُوْا لِلْأَمَامِ فَإِنَّ
مَعَكُمُ الْمُطْرِبَةُ فُلاَنَةُ وَفُلاَنَةُ،
 হে সৈন্যরা! তোমরা সম্মুখে এগিয়ে চলতোমাদের সঙ্গে আছে
অমুক অমুক গায়িকা ও নর্তকী
[66] ফলাফল ছিল লজ্জাষ্কর পরাজয়এই পরাজয়ের ফলে ফিলিস্তীন ভূখন্ডের একটি বিরাট অংশ, মিসরের সিনাই উপত্যকা এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরাঈলী
দখলে চলে যায়
যা আজও
রয়েছে
এখনও তারা
মার খেয়েই চলেছে
অথচ এত মার
খেয়েও ফিলিস্তীনের নির্যাতিত মুসলমানেরা ইয়াসির আরাফাতের
, ইরানের মুসলমানেরা খোমেনীর ও ইরাকের মুসলমানেরা সাদ্দামের
ছবি নিয়ে মিছিল করছে
মিসরীয় মুসলমানরা কায়রোর প্রধান ফটকে ফেরাঊনের বিশাল মূর্তি স্থাপন করে তাকে
জাতীয় বীরের মর্যাদা দিচ্ছে ও তার থেকে প্রেরণা হাছিল করছে
[67] আল্লাহর উপরে তারা ভরসা করতে
পারে না
হারানো
ঈমানী শক্তি তারা আজও ফিরে পেল না
বাংলাদেশের মুসলমানেরা তাদের মৃত রাজনৈতিক নেতা বা মারেফতী
পীরদেরকে তাদের প্রেরণার উৎস বলে গর্ব করে
তাদের ছবিকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেনিজ গৃহে, বৈঠকখানায় ও অফিসে টাঙিয়ে রাখেসেখানে সসম্মানে দাঁড়িয়ে থাকে ও তাকে
মাল্যভূষিত করে
ছবি না
থাকলেও তার সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে
বিশেষ বিশেষ সময়ে তাদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলী
নিবেদন করে
সুযোগমত
তাদের ছবি নিয়ে মিছিল করে
ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া বা ভারতের মূর্তি পূজারীদের সাথে আজ বাংলাদেশের কবর
পূজারী
,
ছবি, স্মৃতিস্তম্ভ, ভাষ্কর্য, মিনার, সৌধ ও অগ্নি পূজারী মুসলমানদের কোনই পার্থক্য
নেই
তাদের লালিত
তাওহীদ বিশ্বাসের অজেয় প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে আজ মুশরিকদের পাশব শক্তির কাছে মাথা
নত করেছে
অথচ তারা
জানেনা যে
, প্রয়োজনীয় বৈষয়িক শক্তি অর্জনের পর কেবলমাত্র
নিখাদ ঈমানী শক্তিই তাদেরকে বিজয়ী করতে পারে
২. চারিত্রিক বিপর্যয়ের ক্ষতি: একথা আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট
যে
,
যেকোন দেশের যুব চরিত্র ধ্বংসের অন্যতম
প্রধান কারণ হ
ছবিরাস্তার ধারে, অফিসে-দোকানে, ঘরে-বৈঠকখানায়, পত্র-পত্রিকায়, সিনেমা-টেলিভিশনে, ভিসিপি-ভিসিআরে, সিডি-কম্পিউটারে-মোবাইলে সর্বত্র আজ সাদা ও নীল ছবির ছড়াছড়িবিশেষ করে কল্পনায়
অাঁকা কিংবা বাস্তবে তন্বী নারীদের ও বিখ্যাত নায়িকাদের অর্ধ উলঙ্গ ছবি ও
যৌনোদ্দীপক ভঙ্গিমাসর্বস্ব পোষ্টার ও বিজ্ঞাপন সমূহ আজ উঠতি বয়সের তরুণদের চরিত্র
দ্রুত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে
পুরুষ-নারী নির্বিশেষে ঐসব নোংরা ছবির দংশনে বিষদুষ্ট হয়ে
প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা অসংখ্য পাপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে
যেনা-ব্যভিচার, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছেঅধুনা সেক্সডল (Sex Doll) নামীয় বিশাল ও
পূর্ণাঙ্গ মানবদেহী যৌন পুতুলের সাহায্যে গোপনে যৌনক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা
আবিষ্কৃত হয়েছে
যা
নারী-পুরুষের স্বাস্থ্য ও চরিত্র দুই-ই ধ্বংস করে দিচ্ছে
অথচ এসব কিছুরই মূল উৎস হল ছবি ও
মূর্তি
৩. আর্থিক ক্ষতি: ছবি, মূর্তি, ভাষ্কর্য, স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র, স্থিরচিত্র, চলচ্চিত্র, রঙিন চিত্র ইত্যাদি হরেক রকম চিত্রের আর্থিক
ক্ষতি অকল্পনীয়
এইসব ছবি ও
মূর্তি তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যক্তিগত ও জাতীয় বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় হয়ে
যায় একেবারেই অনর্থক ও বাজে খরচ হিসাবে
অপচয়কারীরা
শয়তানের ভাই
 (ইসরা ১৭/২৭)অথচ শয়তানের
রাস্তায় ব্যয়িত এইসব অপচয় বন্ধ করে যদি দারিদ্র্য বিমোচনে তা ব্যয় করা হ
, তাহলে পৃথিবীর কোন দেশেই দরিদ্র লোকের সন্ধান পাওয়া যেত কি-না
সন্দেহ
৪. সামাজিক ক্ষতি: নেতা-নেত্রীদের ছবি টাঙানো, পোষ্টার লাগানো কিংবা সম্মান-অসম্মান নিয়ে সমাজে প্রায়শঃ হিংসা-হানাহানি ও
মারামারি লেগে আছে
প্রতি বছরে
কেবল ছবির কারণে মারামারিতেই বহু নেতা-কর্মীর জীবনহানি ঘটে
অনেকে চির পঙ্গুত্ব বরণ করেঅনেকে সর্বস্ব
হারিয়ে নিঃস্ব হয়
, অনেকে মিথ্যা মামলা ও জেল-যুলুমের শিকার হয়এমনকি খোদ
নেতা-নেত্রীদের বিশাল মূর্তিও লাঞ্ছিত হয়
রাশিয়ার কম্যুনিষ্ট নেতা লেনিনের ৭২ টন ওযনের পিতলের বিশাল
মূর্তি বিধ্বস্ত হয়েছে তারই জনগণের হাতে
চীনের কম্যুনিষ্ট নেতা মাও সে তুং-য়ের ছবি তার দেশের জনগণ
আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে
রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপিত বহু সম্মানিত ব্যক্তির মূর্তির
মাথায় ও দেহে দৈনিক হাযারো পশু-পক্ষী পেশাব-পায়খানা করছে
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি সমূহ তাদের ভক্ত
ও শত্রুদের মাধ্যমে দৈনিক পূজিত ও পদদলিত হচ্ছে
এভাবে ছবি ও মূর্তির দুর্দশা দেখার পরেও ছবির
সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষতি বুঝতে কারু বাকী থাকার কথা নয়
ছবি ও মূর্তি নিষিদ্ধ বিষয়ে ইসলামের
সিদ্ধান্ত তাই নিঃসন্দেহে দূরদর্শিতাপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক
ছবি ও মূর্তি থেকে বেঁচে থাকার উপকারিতা:
(১) ছবি ও মূর্তি শিরকের বাহনতাই এগুলি থেকে বিরত থাকতে পারলে জাতির একক
ভক্তি ও উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে ও মানুষ শিরকের মহাপাতক হ
তে রক্ষা
পাবে
তার
জান্নাতের রাস্তা খোলাছা হবে
(২) এগুলি তৈরীতে বছরে কোটি কোটি টাকার অপচয় হতে জাতি
বেঁচে যাবে
(৩) নীল ও পর্ণো ছবির আবশ্যিক কুফল হতে মুক্ত
হয়ে যুব চরিত্রের নৈতিক মান উন্নত হবে
ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও যৌনরোগ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যবান
জাতি গঠিত হবে
(৪) দুষ্ট চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে জাতি উন্নত চিন্তায় অভ্যস্ত
হবে
(৫) ভক্তিভাজন ব্যক্তিগণ অসম্মানের  হাত  থেকে
 রেহাই পাবেন ও ভক্তদের অন্তরে তাঁদের স্মৃতি চির জাগরুক হয়ে থাকবে
(৬) পারষ্পরিক হানাহানি ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে সমাজ মুক্তি
পাবে
মূর্তি ও ছবি কি পৃথক বস্ত্ত?
অনেকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মূর্তি ভেঙ্গে ছিলেনঅতএব মূর্তি হারাম হলেও ছবি হারাম নয়তাদের এই যুক্তি ধোপে টিকবে নাপূর্বে বর্ণিত
হাদীছ সমূহ এবং  রাসূলের  মক্কা বিজয়ের দিন কা
বা পরিষ্কার
করার ঘটনা
 (৪৪ টীকা) তার বাস্তব প্রমাণরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেমন মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন, তেমনি ছবিযুক্ত পর্দা ছিঁড়েছিলেন ও পদদলিত করেছিলেনএমনকি আলী (রাঃ)-কে
পাঠিয়েছিলেন মদীনা শহরের সকল ছবি নিশ্চিহ্ন করে দিতে
।  আজও  যদি  দেশের  সরকার
রাস্তায় টাঙানো বড় বড় ছবির বিলবোর্ড
, সিনেমার ল্যাংটা ও মারদাঙ্গা ছবিগুলো ও পর্ণো ছবিওয়ালা বই-পত্রিকাগুলো বন্ধ বা
ধ্বংস করতে পারতেন
, তাহলে অন্ততঃ রাসূলের একটি হুকুম পালন করে তারা
যেমন অশেষ ছওয়াবের অধিকারী হ
তেন, তেমনি জাতি ও সমাজ সাক্ষাৎ ধ্বংসের হাত থেকে
বেঁচে যেত
একা আলী
(রাঃ) যে কাজ করতে পেরেছিলেন
, দেশের গোটা সরকার
কি সে কাজটুকু করার ক্ষমতা রাখেন না
?
কবরবাসী ও ছবি-মূর্তি কি শুনতে পায়?
আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ
الْمَوْتَى وَلاَ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ-
 নিশ্চয়ই
তুমি শুনাতে পারোনা মৃত ব্যক্তিকে এবং তুমি শুনাতে পারো না বধিরকে তোমার আহবান
, যখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে (নমল ২৭/৮০)তিনি আরও বলেন, وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَّنْ
فِي الْقُبُوْرِ
 আর তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে (ফাত্বির ৩৫/২২)ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ،
قَالُوا وَجَدْناَ آبَاءَناَ لَهاَ عَابِدِينَ-
  এই মূর্তিগুলি কি বস্ত্ত, যাদের তোমরা পূজারী হয়েছ? তারা বলল, আমাদের বাপ-দাদাদের
এরূপ পূজা করতে দেখেছি
 (আম্বিয়া
২১/৫২-৫৩)
তিনি বললেন, هَلْ يَسْمَعُوْنَكُمْ إِذْ تَدْعُوْنَ، أَوْ يَنفَعُوْنَكُمْ أَوْ
يَضُرُّوْنَ-
 তোমরা যখন ডাকো, তখন ওরা কি শুনতে পায়? কিংবা তারা
তোমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে কি
? (শোআরা
২৬/৭২-৭৩)
তিনি বললেন, أَتَعْبُدُوْنَ مَا تَنْحِتُوْنَ، وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا
تَعْمَلُوْنَ-
  তোমরা এমন বস্ত্তর পূজা কর, যা তোমরা নিজ হাতে তৈরী কর? অথচ আল্লাহ
তোমাদেরকে ও তোমাদের কর্ম সমূহকে সৃষ্টি করেছেন
 (ছাফফাত ৩৭/৯৫-৯৬)ইবরাহীমের এই হক কথার পরিণতি হয়েছিল  বড়
মর্মান্তিক
পিতা তাঁকে
বাড়ী থেকে বের করে দেন
 (মারিয়াম ১৯/৪৬) এবং দেশের রাজা নমরূদ ধর্ম রক্ষার দোহাই দিয়ে তাঁকে জীবন্ত
পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন
 (আম্বিয়া ২১/৬৮)জান্নাত পিয়াসী ভাই ও বোনেরা উপরের আয়াতগুলি অনুধাবন করবেন
কি
?
বড় পাপী কারা?
(১) ছবি ও মূর্তি শিরকের মাধ্যম জেনেও যেসব আলেম ও দ্বীনদার
ব্যক্তি এসবের বিরোধিতা করেন না
(২) যেসব ব্যক্তি এগুলি দেখে চুপ থাকেন কিংবা দেখেও না দেখার
ভান করেন
(৩) যাদের হাতে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এগুলির প্রতিরোধ করেন
না
(৪) যিনি যতবড় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা, তিনি ততবড় পাপীযদি তিনি নিজে এগুলি করেন, বা করতে উৎসাহ দেন, মেনে নেন বা খুশী হন এবং তার প্রতিবাদ ও
প্রতিরোধ না করেন
সার কথা:
উপরের হাদীছ সমূহ পর্যালোচনা এবং বিদ্বানগণের মতামত সমূহ
পর্যবেক্ষণের পর আমরা নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি
।-
(১) প্রাণীদেহের সবধরনের ছবি, মূর্তি, ভাষ্কর্য সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ
(২) সম্মানের উদ্দেশ্যে অর্ধদেহী বা পূর্ণদেহী সকল প্রকার
প্রাণীর ছবি টাঙানো বা স্থাপন করা নিষিদ্ধ
(৩) অন্য জাতির উপাস্য কোন বস্ত্ত যেমন অগ্নি, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদির
ছবিকে সম্মান করা নিষিদ্ধ
(৪) বৃক্ষ-লতা, প্রাকৃতিক দৃশ্য, মসজিদ ইত্যাদি পবিত্র স্থান সমূহের প্রাণী
বিহীন ছবি সিদ্ধ
(৫) বাধ্যগত কারণে, জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে, রেকর্ড রাখার
স্বার্থে ও হীনকর কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলা চলে
(৬) তবে সবধরনের ছবি থেকে বিরত থাকাই ইসলামী শরীআতের
অন্তর্নিহিত দাবী
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)
 আমাদেরকে ছবি-মূর্তি থেকে নিষেধ করেছেনতাই এসব থেকে দূরে থাকার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে মঙ্গল নিহিত রয়েছেএর বিপরীত করলে তাতে রয়েছে অমঙ্গল ও অকল্যাণআল্লাহ
বলেন
, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ
فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوْا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ
شَدِيْدُ الْعِقَابِ-
 আমার রাসূল
তোমাদেরকে যা নির্দেশ দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন
,
তা হতে বিরত থাকো
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করনিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তি দানকারী (হাশর ৫৯/৭)
অতএব আসুন! আমরা রাসূলের
অনুসারী হই এবং ইহকালীন ও পরকালীন মঙ্গল হাছিল করি
।- আমীন!!



নিবন্ধটি মাসিক আত-তাহরীক সেপ্টেম্বর ২০০২, ৫/১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়বর্তমানে কিছুটা সংযোজিত হয়ে পুস্তকাকারে
মুদ্রিত হ
। –প্রকাশক
[1]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আলবানী, মিশকাত হা/৪৪৯৭ পোষাক অধ্যায় ছবি সমূহ অনুচ্ছেদ; এম, আফলাতুন কায়সার, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ হা/৪২৯৮ (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী
২য় মুদ্রণ ১৯৯৫) ৮/২৫৬ পৃঃ
[2]. বুখারী, ফাৎহুল বারী
হা/৫৯৫২-এর ভাষ্য
, ১০/৩৯৮-৯৯ ও ৪০১ পৃঃ
[3]. বুখারী, ফাৎহুল বারী পোষাক অধ্যায় ৭৭, অনুচ্ছেদ ৮৯, ১০/৩৯৮
[4]. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহে মিশকাত (ঢাকাঃ রশীদিয়া লাইব্রেরী, তাবি) ৮/৩২৫ পৃঃ
[5]. , ৮/৩২৬
[6]. , পৃঃ ৩২৯
[7]. , পৃঃ ৩৩১
[8]. ঢাকাঃ দৈনিক ইনকিলাব ১৬ এপ্রিল ২০০২, পৃঃ ১২
[9]. আব্দুল্লাহ, English for today for H.S.C. students
নভেম্বর ২০০১ পৃঃ ৩৭৪-৭৫
[10]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৪০৬ ফিৎনা সমূহ অধ্যায়; এম,
আফলাতুন কায়সার, বঙ্গানুবাদ মেশকাত হা/৫১৭৩ (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী ৩য়
মুদ্রণ-১
, ১৯৯৮) ১০/১৬ পৃঃ
[11]. মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩ ছালাত অধ্যায়, মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থান সমূহ অনুচ্ছেদ; নূর মোহাম্মদ আজমী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ হা/৬৬০, ২/২৯০ পৃঃ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, সনদ ছহীহ, আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ (কুয়েতঃ জমঈয়াতু এহইয়াইত তুরাছিল ইসলামী, তাবি), পৃঃ ১৪-১৫
[12]. মুওয়াত্ত্বা, আহমাদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৭৫০ মসজিদ সমূহ
ও ছালাতের স্থান সমূহ
অনুচ্ছেদ; , বঙ্গানুবাদ হা/৬৯৪ ২/৩১০ পৃঃ
[13]. নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬ নবীর উপরে দরূদ ও তার ফযীলত অনুচ্ছেদ; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৭৯৬
[14]. মুসলিম, হা/৯৭০ জানায়েয অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩২, হা/৯৪
[15]. মুসলিম, হা/৯৭১ জানায়েয অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩৩, হা/৯৬
[16]. মুসলিম, হা/৯৭২ জানায়েয অধ্যায় ১১, অনুচ্ছেদ ৩৩, হা/৯৮
[17]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, সনদ ছহীহ, আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ৯৩
[18]. প্রাগুক্ত
[19]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭১২; নূর মোহাম্মদ আজমী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফ হা/৬৫৯, ২/২৯০ পৃঃ
[20]. বুখারী ছালাত অধ্যায় গীর্জায় ছালাত আদায় অনুচ্ছেদ
হা/৪২৭
,
৪৩৪; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৫০৮ পোষাক অধ্যায় ছবি সমূহ অনুচ্ছেদ; , বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০৯, ৮/২৬০ পৃঃ
[21]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৬ পোষাক অধ্যায়, ছবিসমূহ অনুচ্ছেদ; ,
বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৭, ৮/২৫৬ পৃঃ
[22]. ফাৎহুল বারী পোষাক অধ্যায় ৭৭, ছবি বিনষ্ট
করা
অনুচ্ছেদ ৯০, ১০/৩৯৮ পৃঃ
[23]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৪৯২; , বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৩, ৮/২৫৪ পৃঃ
[24]. বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬৫ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়; ,
বঙ্গানুবাদ হা/২৬৪৫, ৬/৬ পৃঃ
[25]. বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯৯; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০০, ৮/২৫৬
[26]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯৮, ৪৫০৭; , বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৯, ৪৩০৮
[27]. বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯১; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯২
[28]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯২; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৩
[29]. মুসলিম হা/২১০৭ পোষাক ও
সৌন্দর্য
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ নং ২৬
হা/৯৬
[30]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৩; ,
বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৪
[31]. মুসলিম হা/২১০৭ পোষাক ও সৌন্দর্য অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৮৭; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৪৯৯
[32]. মুসলিম, পোষাক ও সৌন্দর্য অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৯৩; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৭
[33]. ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৬
[34]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৮৯; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯০
[35]. দ্র মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪০৯৮-৪১০১, ,
বঙ্গানুবাদ হা/৩৯২০-২৩
[36]. মুসলিম, হা/২১০৬ পোষাক ও সৌন্দর্য অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ২৬, হা/৮৫-৮৬
[37]. ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪২ ছবি সমূহ অনুচ্ছেদ নং
১১১
[38]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৫০১; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০২; আবুদাঊদ হা/৪১৫৮; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৫৮; তিরমিযী হা/২৯৭০
[39]. আবুদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত তাহক্বীক্ব আলবানী, হা/১৬৯৬ জানাযা অধ্যায়, মৃতের দাফন অনুচ্ছেদ নং ৬; ,
বঙ্গানুবাদ: নূর মোহাম্মদ আজমী হা/১৬০৫, (এমদাদিয়া লাইব্রেরী: ৩য় মুদ্রণ ১৯৮৬), ৪/৯২ পৃঃ
[40]. তাহযীরুস সাজেদ পৃঃ ৯২
[41]. ছহীহ নাসাঈ হা/৪৯৪৪
[42]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৫০২ ছবিসমূহ অনুচ্ছেদ
[43]. মুসনাদে আবূদাঊদ ত্বায়ালেসী, হাফেয ইবনু হাজার বলেন, বর্ণনাটির সনদ জাইয়িদ বা উত্তম; আব্দুল আযীয বিন
আব্দুল আব্দুল্লাহ বিন বায
, ফী হুক্মিত তাছভীর (রিয়াদ: ৪র্থ সংষ্করণ
১৪০১/১৯৮১) পৃঃ ৮
[44]. ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম পৃঃ ৪০৪
[45]. ফাৎহুল বারী পোষাক অধ্যায় ৭৭, অনুচ্ছেদ ৯১, ১০/৪০১-২
[46]. , ১০/৪০৩ পৃঃ
[47]. , অনুচ্ছেদ ৯২, ১০/৪০৫ পৃঃ
[48]. ফাৎহুল বারী পোষাক অধ্যায় ৭৭, হা/৫৯৫৮, অনুচ্ছেদ ৯২, ১০/৪০৫ পৃঃ
[49]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৫৯৫৮
[50]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৫৯৫৩, ১০/৩৯৮
[51]. , ১০/৩৯৯ উক্ত হাদীছের ভাষ্য
[52]. , পৃঃ ৪০৬
[53]. , ১০/৩৯৯, ৪০৬-৪০৯ পৃঃ
[54]. ফাৎহুল বারী, অধ্যায় ৭৭, অনুচ্ছেদ ৮৯, ১০/৩৯৭ পৃঃ
[55]. ছহীহ মুসলিম (বৈরুত: দারুল ফিক্র ১৪০৩/১৯৮৩) পোষাক ও
সৌন্দর্য
অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬
[56]. ছহীহ মুসলিম (ইউ,পি, দেউবন্দ: ১৯৮৬) ২য় খন্ড, ১৯৯ পৃঃ
[57]. সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো: আল-ফাৎহু লিল আলামিল আরাবী, ৫ম সংষ্করণ ১৪১২/১৯৯২) ছবি অধ্যায় ২/৪৪-৪৬ পৃঃ
[58]. ছহীহ আবূদাঊদ হা/৪১২৩ ফিৎনা সমূহ অধ্যায়, ৬২ অনুচ্ছেদ; বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৬১৩০-এর ব্যাখ্যা, শিষ্টাচার অধ্যায় ৭৮, অনুচ্ছেদ ৮১, ১০/৫৪৩
[59]. ফাৎহুল বারী শিষ্টাচার অধ্যায় ৭৮, অনুচ্ছেদ ৮১, ১০/৫৪৪
[60]. মুহাম্মাদ বিন জামীল যায়নু, তাওজীহাত ইসলামিয়াহ (মক্কা মুকাররমা: পরিবর্ধিত ৫ম সংষ্করণ, তাবি) পৃঃ ১১২
[61]. নাসাঈ, তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭৩ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়; ,
বঙ্গানুবাদ হা/২৬৫৩, ৬/১০ পৃঃ
[62]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭৬২ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়; ,
বঙ্গানুবাদ হা/২৬৪১, ৬/৪ পৃঃ; শায়খ বিন বায, ফী হুকমিত তাছভীর পৃঃ ২২-২৩
[63]. মুসলিম হা/২১১০ পোষাক ও
সৌন্দর্য
অধ্যায় ৩৭, অনুচ্ছেদ ২৬ হা/৯৯; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৮; বুখারী, মিশকাত হা/৪৫০৭; , বঙ্গানুবাদ ৪২৯৯, ৪৩০৮
[64]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৫০৪; নাসাঈ, ফাৎহুল বারী ১০/৪০৬
পৃঃ
[65]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮১০ জিহাদ অধ্যায়
[66]. মুহাম্মাদ বিন জামীল যায়নু, তাওজীহাত ইসলামিয়াহ (মক্কা মুকাররমা, ৫ম সংষ্করণ, তারিখ বিহীন) পৃঃ ১০৯
[67]. মুহাম্মাদ সালামাহ জাবার, তারীখুল আম্বিয়া (কুয়েতঃ মাকতাবা ছাহওয়া, ১ম সংস্করণ ১৪১৩/১৯৯৩) ১/১৩৭ পৃঃ
      

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top