ছালাতে গুণাহ ক্ষমা হয়

সালাত আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ্য ইবাদত। ছালাত আদায়ের সময় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গুণাহ ক্ষমা করে থাকেন। মূলত সারা ছালাতই দোআ। আর দোআর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করে ক্ষমার প্রত্যাশা করে মুছল্লী। তিন স্থানে ক্ষমা হয় মূলত। যথা-

আমীন বলার সময় :

ইমাম, মুছল্লী ও ফেরেশতাদের আমীন একত্রে হলে বান্দার গুণাহ ক্ষমা করা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘ইমাম যখন আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা যার আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক হয়ে যায়, তার পূর্বের গুনাহ্সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’(বুখারী হা/৭৮০; মুসলিম হা/৪১০; আবূদাঊদ হা/৯৩৬; তিরমিযী হা/২৫০; নাসাঈ হা/৯২৮; ইবনু মাজাহ হা/৯২৮; মুয়াত্ত্বা মালিক হা/২৮৮; মিশকাত হা/৮২৫; জামি‘আছ ছাগীর হা/৩৯৬।)।


ব্যাখ্যা: ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলবে। ইমাম বুখারী দলীল পেশ করলেন যে, ইমাম ‘আমীন’ সজোরে বলবে। মুক্তাদীও সাথে সাথে ‘আমীন’ বলবে। ইমাম শাফি‘ঈ ও জমহূরদের অভিমত ‘আমীন’ সজোরে বলা সুন্নাত, এটাই বেশী প্রণিধানযোগ্য। ‘আমীন’ বলার মধ্যে মালায়িকাহ্’র সমান সমান হওয়ার বিভিন্ন অর্থ হতে পারে যা নিম্নরূপ।
(১) মালায়িকাহ্ যখন ‘আমীন’ বলে সে ওয়াক্ত বা সময়ে তোমরাও ‘আমীন’ বলো। আর এটাই অধিকাংশের মতে সহীহ অর্থ।

(২) কারো মতে তারা যেরূপ নিষ্ঠা ও বিনয়ের সাথে ‘আমীন’ বলে থাকেন তোমরাও অনুরূপভাবে বলো।

(৩) আবার কারো অভিমত তারা যেভাবে ‘আমীন’ বলেন তোমরাও তাই করো, তাহলে মালায়িকার সাথে সমান সমান হবে।
অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবেঃ এখানে গুনাহ অর্থ সগীরাহ্, অর্থাৎ- ছোট গুনাহ। আল্লাহ স্বীয় কালামেই ঘোষণা দিয়েছেন; নেক ‘আমলের দ্বারা সগীরাহ্ গুনাহ মার্জনা হয়ে যায়। কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও মার্জনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেননা সালাতের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর সালাত হলো ‘ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম। এতদভিন্ন নিঃস্বার্থ আল্লাহর মালায়িকাহ্’ও ‘আমীন’ বলে বান্দার জন্যে দু‘আ করেন। কাজেই কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও মাফ হতে পারে।

কওমা দেয়ার সময় :

বান্দা যখন ছালাতের মধ্যে রুকু থেকে উঠে কওমা দেন তখন গুণাহ ক্ষমা করা হয়। হযরত রিফা‘আহ বিন রাফি‘ আয-যুরাক্বী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করছিলাম। যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে বললেন, سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’, তখন তাঁর পিছন থেকে এক ব্যক্তি বলে উঠল, رَبَّنَا وَلَكَ الحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ অর্থাৎ,‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়’ । অতঃপর সালাম ফিরানোর পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই বাক্য কে বলল? লোকটি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি বলেছি। তখন তিনি বললেন, ‘আমি ত্রিশের অধিক ফেরেশতাকে দেখলাম যে, তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে, কে এই দো‘আ পাঠকারীর নেকী আগে লিখবে’(বুখারী হা/৭৯৯; নাসাঈ হা/১০৬২; আবূদাউদ হা/৭৭০; মিশকাত হা/৮৭৭)।

সিজদা দেওয়ার সময় :

ঊবাদা ইবনে ছামিত (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلاَّ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً وَمَحَا عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَرَفَعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً فَاسْتَكْثِرُوا مِنَ السُّجُودِ. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব তোমরা বেশী বেশী সিজদা করো’ (ইবনু মাজাহ হা/১৪২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-২০১)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ. ‘সিজদারত অবস্থায় বান্দা তার রবের সবচাইতে অধিক নিকটবর্তী হয়। সুতরাং তোমরা (সিজদায়) বেশী বেশী দো‘আ করবে’ (মুসলিম হা/৪৮২; আবূদাঊদ হা/৮৭৫; আহমাদ হা/৯৪৪২; মিশকাত হা/৮৯৪)।
ব্যাখ্যা: সাজদার মাধ্যমে সবচাইতে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার যুক্তি হলো সে আল্লাহকে আহবানকারী, কেননা আল্লাহ তা‘আলা আহবানকারীর অতি নিকটবর্তী, যেমন আল্লাহ বলেন- وَاِذَا سَأَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
‘‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্ত্তত আমি রয়েছি অতি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবূল করেনি যখন তারা আমার নিকট প্রার্থনা করে।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৬)
কেননা সিজদা্ হলো বিনয় প্রকাশ, নিজকে তুচ্ছ বা অতি নগণ্য ও চেহারাকে ধূসরিত করার চূড়ান্ত নমুনা। আর বান্দার এ অবস্থাটা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়।
ত্ববারানী তাঁর ‘কাবীর’ গ্রন্থে ভালো সানাদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করার পর প্রথম আদেশের বিষয় ছিল সিজদা্র মাধ্যমে যারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার হাসিল করে নিয়েছে। কিন্তু ইবলীসের বিরোধিতা করে আল্লাহর সাথে প্রথম নাফরমানী করেছে।

বান্দা যে পরিমাণ নিজকে দূরে রাখে সাজদার মাধ্যমে সে তার রবের নিকট তার চেয়ে আরো বেশী নিকটবর্তী হয়। আর সিজদা্ হলো বিনয় ভাব প্রকাশের ও অহংকার মুক্ত এবং নিজকে তুচ্ছ ভাবার এক চূড়ান্ত নমুনা।
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ নৈকট্য সম্মান মর্যাদা ও অবস্থানের দৃষ্টিকোণ থেকে দূরত্ব বা পরিমাপের সাথে সংশ্লিষ্ট না।

(فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ) তোমরা সাজদায় বেশি বেশি দু‘আ করো। কেননা এটা আল্লাহর অতি কাছাকাছি হওয়ার স্থান আর এ অবস্থায় দু‘আ কবূল হয়। কেননা মুনীব তার দাসকে তখনই বেশি ভালোবাসে যখন তার আনুগত্য করে এবং তার জন্য বিনয়ী হয়। আর তখন দাস মুনীবের কাছে যা আবেদন করে তাই তিনি মঞ্জর করে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং ছালাতে যথাযথ সুন্নতী পন্থায় দো‘আ করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top