জান্নাত লাভের কতিপয় উপায়

— ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ভূমিকা : ইহকালীন জীবনে মানুষের কৃতকর্মের মাধ্যমে অর্জিত নেকী
পরকালীন জীবনে পরিত্রাণ লাভের অসীলা হবে
তাই দুনিয়াতে অধিক নেক আমলের দ্বারা বেশী বেশী ছওয়াব লাভের
চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য
কিন্তু পার্থিব জীবনের মায়াময়তায় জড়িয়ে আমলে ছালেহ থেকে
দূরে থাকলে পরকালীন জীবনে কষ্টভোগ করতে হবে
এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, حُلْوَةُ الدُّنْيَا مُرَّةُ الآخِرَةِ وَمُرَّةُ
الدُّنْيَا حُلْوَةُ الآخِرَةِ
পৃথিবীর মিষ্টতা পরকালের তিক্ততাআর পৃথিবীর তিক্ততা পরকালের মিষ্টতা।[1] তাই পরকালীন জীবনে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে গোনাহ পরিহার করতে
হবে এবং অফুরন্ত নে
মত সমৃদ্ধ অমূল্য জান্নাত লাভে নেক আমল বেশী বেশী করতে হবেরাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ خَافَ أَدْلَجَ وَمَنْ
أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ أَلاَ إِنَّ
سِلْعَةَ اللهِ الْجَنَّةُ
যে ব্যক্তি ভয় করেছে, সে পালিয়েছেআর যে পালিয়েছে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেজেনে রাখ আল্লাহর
সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান
, জেনে রাখ আল্লাহর সম্পদ অত্যন্ত মূল্যবান।[2] জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশী ও জান্নাত লাভে আকাঙ্ক্ষী
মুমিন সারারাত ঘুমিয়ে কাটাতে পারে না
এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا رَأَيْتُ مِثْلَ النَّارِ نَامَ هَارِبُهَا وَلَا
مِثْلَ الْجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا
আমি জাহান্নাম থেকে পলায়নকারী ব্যক্তিকে কখনো
ঘুমাতে দেখিনি
, আর জান্নাত অন্বেষণকারীকেও কখনো ঘুমাতে দেখিনি।[3] তাই জান্নাত লাভের জন্য নেকীর কাজ বেশী বেশী করার যথাসাধ্য
চেষ্টা করতে হবে
আর জান্নাত লাভের জন্য বহু নেক আমল রয়েছেতন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় নেক আমল এখানে
উদ্ধৃত হ
, যাতে পাঠক সেসব পালন করার মাধ্যমে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভে সচেষ্ট হ
তে পারেন

১. তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব :
আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি প্রদান ও তদনুযায়ী আমল করা মানুষের জাহান্নাম থেকে
মুক্তি লাভের প্রথম শর্ত
মুআয (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে উফায়র নামক একটি
গাধায় আরোহী ছিলাম
তিনি আমাকে বললেন,
يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِى حَقَّ اللهِ عَلَى عِبَادِهِ
وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ. قُلْتُ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ
فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوْا بِهِ
شَيْئًا، وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ
بِهِ شَيْئًا. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ قَالَ
لاَ تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوْا
হে মুআয! তুমি কি
জান বান্দার উপরে আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর নিকটে বান্দার হক কি
? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
(ছাঃ) অধিক জ্ঞাত
তিনি বললেন, বান্দার উপরে আল্লাহর হক হল সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর
সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না
আর আল্লাহর নিকটে বান্দার হক হচ্ছে আল্লাহ তাকে শাস্তি
দিবেন না
, যে তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে নাআমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি মানুষকে এর সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন, না, তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাহলে তারা এর
উপরেই নির্ভর করবে
।[4] তিনি আরো বলেন, مَنْ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَابْنُ أَمَتِهِ وَكَلِمَتُهُ
أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ وَأَنَّ
النَّارَ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللهُ مِنْ أَىِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ
شَاءَ
. যে ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে
, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও
রাসূল
;
ঈসা তাঁর বান্দা ও তাঁর বান্দীর পুত্র, তাঁর কালিমা (বাক্য) যা তিনি মারিয়ামের প্রতি নিক্ষেপ
করেছেন ও তাঁর পক্ষ থেকে নির্দেশ (রূহ)
, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন
জান্নাতের আটটি দরজার
যে কোনটি দিয়ে ইচ্ছা
।[5] অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ
عَلَى مَا كَانَ مِنْ عَمَلٍ
আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই থাকুক।[6]
২. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা :
আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহর প্রতি ঈমান
আনয়ন করা অত্যাবশ্যক
কেননা ঈমান ব্যতিরেকে মানুষের কোন নেক আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হয় নাতেমনি কারো অন্তরে
অণু পরিমাণ ঈমান থাকলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে
আল্লাহ তাআলা বলেন,وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
যারা ঈমান আনে
ও নেককর্ম করে তারাই জান্নাতের অধিবাসী
, সেখানে তারা
চিরকাল থাকবে
(বাক্বারাহ ২/৮২)অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
নিশ্চয়ই যারা
ঈমান এনেছে ও নেককর্ম করেছে
, জান্নাতুল ফিরদাউসে
তাদের জন্য রয়েছে আপ্যায়ন
(কাহফ ১৮/১০৭)
তিনি আরো বলেন,تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ
تَعْلَمُونَ، يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ
تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ
الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, আর নিজের ধন-মাল ও আত্মার দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করএটাই তোমাদের জন্য
অতীব উত্তম
, যদি তোমরা জানএতে আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং
তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
, যার নিম্নে
ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে এবং চিরকাল বসবাসের জন্য জান্নাতে অতীব উত্তম ঘর দান
করবেন
আর এটাই হচ্ছে বড়
সফলতা
(ছফ ৬১/১১-১২)তিনি আরো বলেন,وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا يُكَفِّرْ
عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
যে ব্যক্তি
ঈমান আনে এবং নেক আমল করে আল্লাহ তার পাপ মুছে ফেলেন এবং তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন
,
যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছেএরা সেখানে চিরকাল
থাকবে
আর এটাই হচ্ছে বড়
সফলতা
(তাগাবূন ৬৪/৯)
তিনি আরো বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ
تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيْرُ

নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমানআর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা (বুরূজ ৮৫/১১)
তিনি আরো বলেন, وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ
مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيْمٌ
যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে তাদের প্রতি আল্লাহর ওয়াদা
এই যে
,
আল্লাহ তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন এবং
তাদের বড় প্রতিফল দিবেন
(মায়েদাহ ৫/৯)
৩. তাক্বওয়া অর্জন করা :
জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাক্বওয়াশীল হওয়াআল্লাহ তাআলা বলেন,وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান (আর-রহমান ৫৫/৪৬)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ
تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ
النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ
তোমরা কি জান
কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়
? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্রতোমরা কি জান মানুষকে
সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস
? তিনি বললেন, মুখমন্ডল ও লজ্জাস্থান।[7] তিনি আরো বলেন,لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ
بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ وَلاَ يَجْتَمِعُ
غُبَارٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ
. যে ব্যক্তি
আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তার জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব
, দুধ যেমন গাভীর ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভবআর আল্লাহর পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া
কখনো একত্রিত হবে না
।[8]
৪. রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা :
জান্নাত লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ ও আনুগত্য করা যরূরীতাঁর অনুসরণ ব্যতীত
যেমন কোন আমল কবুল হয় না
, তেমনি তাঁর আনুগত্য ব্যতিরেকে জান্নাত লাভ করাও
যায় না
আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ
وَرَسُوْلَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَالِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ، وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ
وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ
عَذَابٌ مُّهِيْنٌ
যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মান্য করে চলে তিনি তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিততারা সেখানে চিরকাল
থাকবে
এ হল বিরাট সাফল্যআর যে কেউ আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ
করাবেন
সেখানে সে চিরকাল
থাকবে
তার জন্য রয়েছে
অপমানজনক শাস্তি
(নিসা ৪/১৩-১৪)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبى، قَالُوا:
يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبى؟ قَالَ: مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ
وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى
আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, একমাত্র তারা ব্যতীত, যারা (যেতে)
অস্বীকার করে
ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কারা অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যারা আমার
আনুগত্য করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
, আর যারা আমার
অবাধ্যতা করবে তারাই অস্বীকার করে
।[9]
৫. ছালাত আদায় করা :
ছালাত আদায় করা ইসলামের রুকন, যা জান্নাত লাভের
অন্যতম উপায়
রাসূল (ছাঃ) বলেন,الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ،
وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّراتٌ لِمَا
بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ
পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাত
,
এক জুমআ হতে অপর জুমআ পর্যন্ত, এক রামাযান হতে অপর
রামাযান পর্যন্ত কাফফারা হয় সে সমস্ত গুনাহের
, যা এর
মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত হয়
যখন সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।[10] তিনি আরো বলেন, مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ لاَ يَسْهُو فِيْهِمَا غَفَرَ
اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যে ব্যক্তি
কোন ভুল না করে মনোযোগ সহকারে দু
রাকআত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার
অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন
।[11]
ফরয ছালাতের পাশাপাশি সুন্নাত-নফল ছালাতও জান্নাত লাভের উপায়যেমন রাসূল (ছাঃ)
বলেন
,
مَنْ صَلَّى اِثْنَتَا عَشْرَةَ رَكْعَةً فِيْ يَوْمٍ
وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ
اَلظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ اَلْمَغْرِبِ،
وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ
যে ব্যক্তি দিন-রাতে বার রাকআত নফল ছালাত
আদায় করবে
, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবেচার রাকআত যোহরের
পূর্বে
,
দুই রাকআত যোহরের পরে, দুই রাকআত মাগরিবের পরে, দুই রাকআত এশার পরে
এবং দুই রাক
আত ফজরের পূর্বে।[12] তিনি আরো বলেন, مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ
رَكَعَاتٍ قَبْلَ اَلظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اَللهُ عَلَى
اَلنَّارِ
যে ব্যক্তি বরাবর যোহরের পূর্বে চার রাকআত এবং যোহরের
পরে চার রাক
আত ছালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের প্রতি হারাম
করে দিবেন
।[13]
৬. ছিয়াম পালন করা :
যে সকল আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়, ছিয়াম
তন্মধ্যে সর্বোত্তম
যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ
النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا
যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একদিন ছিয়াম পালন
করবে
,
আল্লাহ জাহান্নামকে তার নিকট হতে সত্তর
বছরের পথ দূরে করে দিবেন
।[14] তিনি আরো বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بَاعَدَ اللهُ مِنْهُ جَهَنَّمَ مَسِيْرَةَ مِائَةِ
عَامٍ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম
পালন করবে
, আল্লাহ তার নিকট হতে
জাহান্নামকে একশত বছরের পথ দূরে করে দিবেন
।[15] অন্যত্র তিনি
বলেন
,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ جَعَلَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ
السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম
পালন করবে
, আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি
গর্ত খনন করবেন
, যার ব্যবধান হবে আসমান-যমীনের ব্যবধানের সমান।[16]
ছিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা থাকবেরাসূল (ছাঃ) বলেন,فِي الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ
أَبْوَابٍ، مِنْهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانُ لاَ يَدْخُلُهُ إِلاَّ
الصَّائِمُوْنَ
জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছেতার একটি দরজার নাম রাইয়ানছিয়ামপালনকারী ব্যতীত
ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না
।[17]  তিনি আরো বলেন,
إنَّ فِي الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ،
يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ
غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوْا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ- وزاد
وَمَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا
–  
জান্নাতে এমন একটি দরজা রয়েছে, যাকে রাইয়্যান বলা হয়ক্বিয়ামতের দিন ছিয়াম পালনকারীগণ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেঅন্য কেউ তাতে প্রবেশ
করবে না
ছিয়াম পালনকারীগণ
প্রবেশ করলে
, ঐ দরজা বন্ধ করা হবেঅন্য কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে নাঅন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি
সেখানে প্রবেশ করবে
, সে কখনো পিপাসিত হবে না।[18]
ছিয়াম পালন করলে মানুষের কৃত গোনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করেযেমন রাসূল (ছাঃ)
বলেন
,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ
لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا
وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ
الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের
আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে
, তার পূর্বের গুনাহ
সমূহ মাফ করে দেয়া হয়
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার
পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়
আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় কদরের রাত্রি
ইবাদাতে কাটায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়
।[19]
এছাড়া ছিয়াম বান্দার জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষার মাধ্যমরাসূল (ছাঃ) বলেন, الصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنٌ
حَصِيْنٌ مِنَ النَّار،
ছিয়াম হচ্ছে ঢাল স্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি
স্থায়ী দুর্গ
।[20]
৭. যাকাত আদায় করা :
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ফরযের মধ্যে যাকাত অন্যতমনিছাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিকে যাকাত
আদায় করতে হয়
এর ফলে জান্নাত লাভ
করা যায়
রাসূল (ছাঃ) বলেন,اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ
وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ
وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ
তোমরা তোমাদের
প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর, তোমাদের সম্পদের
যাকাত প্রদান কর
, তোমাদের নেতাদের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করবে।[21] অপর একটি হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি
বলল
,
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি আমলের
কথা বলুন
, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেলোকেরা বলল, তার কি হয়েছে? তার কি হয়েছে? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَرَبٌ مَالَهُ، فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم
تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى
الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ
তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছেঅতঃপর তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না; ছালাত কায়েম
করবে
,
যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
করবে
।[22]
৮. হজ্জব্রত পালন করা :
হজ্জ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদতঅর্থিক সচ্ছলতা ও দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা ফরযকবুল হজ্জের প্রতিদান
একমাত্র জান্নাত
হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোন আমল শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেলেন,إِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ قِيْلَ: ثُمَّ مَاذَا
قَالَ: الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ: ثُمَّ مَاذَا قَالَ: حَجٌّ مَبْرُوْرٌ
আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলকে বিশ্বাস করা
অতঃপর জিজ্ঞেস করা হ, তারপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাপুনরায় জিজ্ঞেস করা হ, তারপর কি? তিনি বললেন, কবুল হজ্জ।[23] তিনি আরো বলেন, الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ
كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ
إِلاَّ الْجَنَّةُ
এক ওমরা অপর ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারা
 স্বরূপ  এবং  কবুল  হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া
অন্য কিছু নয়।[24]
৯. দান-ছাদাক্বাহ করা :
ছাদাক্বাহ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যমযার দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ مِنْ شَيْءٍ مِنْ
الْأَشْيَاءِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ دُعِيَ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ وَلِلْجَنَّةِ
أَبْوَابٌ فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلَاةِ
وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الْجِهَادِ وَمَنْ كَانَ
مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ
الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ
যে ব্যক্তি কোন জিনিসের এক জোড়া
আল্লাহর রাস্তায় দান করে তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের সকল দরজা হ
তে আহবান করা
হবে
,
অথচ জান্নাতের দরজা অনেক (আটটি)সুতরাং যে ব্যক্তি
ছালাত আদায়কারী হবে তাকে ছালাতের দরজা হ
তে আহবান করা হবে এবং যে ব্যক্তি দানকারী হবে
তাকে দানের দরজা হ
তে আহবান করা হবে।[25] তিনি আরো বলেন,إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ
عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُوْرِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ
নিশ্চয়ই দান কবরের শাস্তিকে মিটিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন
মুমিন তার দানের ছায়াতলে ছায়া গ্রহণ করবে
।[26] অন্যত্র তিনি
আরো বলেন
, صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِيُ غَضَبَ الرَّبِّগোপন দান
প্রতিপালকের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়
।[27]
১০. কুরআন তেলাওয়াত করা :
কুরআন তেলাওয়াত করলে বহু ছওয়াব অর্জিত হয় এবং জান্নাত লাভ করা যায়রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ
اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ
مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا
ক্বিয়ামতের
দিন কুরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক
অক্ষর অক্ষর ও শব্দ
শব্দ স্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাক
, যেভাবে দুনিয়াতে
স্পষ্টভাবে পাঠ করছিলে
কেননা তোমার জন্য জান্নাতে বসবাসের স্থান হচ্ছে তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াতের
নিকট
।[28]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ
وَالَّذِيْ يَقْرَؤُهُ يَتَتَعْتَعُ فِيْهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ
কুরআন পাঠে
দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের সাথে থাকবেন
আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া
তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয় তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে
।[29]
(ক) সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান পাঠ করা :
সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান তার তেলাওয়াতকারীর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেরাসূল (ছাঃ) বলেন,يُؤْتَى يَوْمَ القِيَامَةِ
بِالقُرْآنِ وَأَهْلِهِ الَّذِيْنَ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ بِهِ فِي الدُّنْيَا
تَقْدُمُهُ سُوْرَةُ البَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ، تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا
ক্বিয়ামতের
দিন কুরআনকে এবং যারা দুনিয়াতে কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে আনা হবে
কুরআনের আগে আগে
থাকবে সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান
আর এ সূরা দুটি তাদের তেলাওয়াতকারীদের পক্ষ থেকে জবাবদিহি
করবে
।[30] তিনি আরো বলেন,
اقْرَءُوْا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِيْ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِأَصْحَابِهِ اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ
وَسُوْرَةَ آلِ عِمْرَانَ فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا
فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا اقْرَءُوْا
سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ وَلاَ
تَسْتَطِيْعُهَا الْبَطَلَةُ
তোমরা কুরআন তেলাওয়াত করকেননা কুরআন
ক্বিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করতে আসবে
তোমরা দুই উজ্জ্বল সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান
তেলাওয়াত কর
কেননা ক্বিয়ামতের দিন
সূরা দু
টি দুটি মেঘখন্ড অথবা দুটি সামিয়ানা অথবা দুটি পাখা
প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে এবং পাঠকদের পক্ষে আল্লাহর সামনে জোরাল দাবী জানাবে
বিশেষভাবে তোমরা সূরা
বাক্বারাহ পড়
কারণ সূরা বাক্বারাহ
পড়ার বিনিময় হচ্ছে বরকত আর না পড়ার পরিণাম হচ্ছে আক্ষেপ
অলস ব্যক্তিরাই এ সূরা পড়তে অক্ষম।[31]
(খ) আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
নিয়মিত আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَرَأَ آيَةَ اَلْكُرْسِيِّ
دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ اَلْجَنَّةِ إِلاَّ
اَلْمَوْتُ
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু
প্রতিবন্ধক থাকবে না
।[32] অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنْ قَرَأَ آيَةَ اَلْكُرْسِيِّ
دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ لَمْ يُحِلْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ إَلاَّ
الْمَوْتُ
  যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ব্যতিরেকে কোন প্রতিবন্ধক
থাকবে না
।[33] অন্য বর্ণনায়
প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে উল্লিখিত হয়েছে
।[34]
(গ) সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা :
সূরা কাহফ তেলাওয়াত করলে জ্যোতি লাভ হয় এবং দাজ্জালের ফেৎনা থেকে মুক্তি পাওয়া
যায়
নবী করীম (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ الْكَهْفِ
فِىْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ النُّوْرُ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
যে ব্যক্তি
জুম
আর দিন সূরা কাহফ পড়বে তার ঈমানী আলো এক জুমআ হতে অপর জুমআ পর্যন্ত
চমকিতে থাকবে
।[35] তিনি আরো বলেন, مَنْ قَرَأَ ثَلاَثَ آيَاتٍ مِنْ
أَوَّلِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ
যে ব্যক্তি
সূরা কাহফের প্রথম তিন আয়াত পড়বে তাকে দাজ্জালের ফেতনা হ
তে নিরাপদে
রাখা হবে
।[36] অন্যত্র তিনি বলেন,  مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ
أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ
যে ব্যক্তি
সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জাল হ
তে নিরাপদে
রাখা হবে
।[37]
(ঘ) সূরা মুলক পাঠ করা :
সূরা মুলক তেলাওয়াতকারীর জন্য সে সুপারিশ করে এবং এ সূরা তেলাওয়াতকারী কবরের
আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভ করে
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ سُوْرَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُوْنَ آيَةً
شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ
الْمُلْكُ
কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছিল ফলে তাকে মাফ করা হয়েছেসে সূরাটি হচ্ছে তাবারাকাল্লাযী
বিয়াদিহিল মুলক
।[38] তিনি আরো বলেন,
مَنْ قَرَأَ {تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ}
كُلَّ لَيْلَةٍ مَنَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهَا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ،
وَكُنَّا فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ نُسَمِّيْهَا الْمَانِعَةَ، وَإنَّهَا فِيْ
كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ سُوْرَةٌ مَنْ قَرَأَ بِهَا فِيْ لَيْلَةٍ فَقَدْ
أَكْثَرَ وَأَطَابَ
যে ব্যক্তি প্রতি রাতে
তাবারাকাল্লাযী অর্থাৎ সূরা মুলক পড়বে
, এর জন্য
আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন
আর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর আমলে একে (কবর আযাব) প্রতিরোধকারী
বলে অভিহিত করতাম
নিশ্চয়ই আল্লাহর
কিতাবে (কুরআনে)  একটি  সূরা  আছে
,  যে ব্যক্তি রাতে তা
পাঠ করল, সে অধিক করল ও উত্তম কাজ করল।[39]
(ঙ) সূরা ইখলাছ পাঠ করা :
সূরা ইখলাছ পাঠ করা এবং তার সাথে মহববত রাখা জান্নাত লাভের মাধ্যমআয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার নবী করীম (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে এক সেনাদলের সেনাপতি করে
পাঠালেন
সে তার সঙ্গীদের
ছালাত আদায় করাত এবং ক্বিরাআত শেষে সূরা ইখলাছ পড়ত
যখন তারা মদীনায় ফিরলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট বিষয়টি পেশ করলেনরাসূল (ছাঃ) বললেন, سَلُوْهُ لِأَيِّ شَيْءٍ
يَصْنَعُ ذَلِكَ فَسَأَلُوْهُ فَقَالَ لِأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمَنِ وَأَنَا
أُحِبُّ أَنْ أَقْرَأَ بِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
أَخْبِرُوْهُ أَنَّ اللهَ يُحِبُّهُ
তোমরা তাকে জিজ্ঞেস কর সে কি কারণে এরূপ করেতারা তাকে জিজ্ঞেস
করল
সে বলল, এই সূরাতে আল্লাহর গুণাবলী আছেআর আমি আল্লাহর গুণাবলী পাঠ করতে ভালবাসিতখন নবী করীম (ছাঃ)
বললেন
,
তোমরা তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন।[40] আনাস (রাঃ)
বলেন
,
একদা এক ব্যক্তি বলল,يَا رَسُولَ اللهِ إنِّيْ
أُحِبُّ هذِهِ السُّوْرَةَ {قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ} قَالَ: إنَّ حُبَّاكَ
اِيَّاهَا أدْخَلَكَ الجَنَّةَ
হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই সূরা কুল
হুওয়াল্লাহু আহাদ
ভালবাসিরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার প্রতি তোমার ভালবাসা তোমাকে
জান্নাতে পৌঁছে দেবে
।[41]
১১. উত্তমরূপে ওযূ করা :
ওযূর গুরুত্ব ও ফযীলত অনেকএটাও জান্নাত লাভকারী আমলরাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ألاَ أَدُّلُكُمْ عَلَى مَا
يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوْا بَلَى يَا
رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ : إسْبَاغُ الوُضُوْءِ عَلَى المَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ
الخُطَا إِلَى المَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ؛
فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
আমি কি
তোমাদের বলে দিব না যে কিসের দ্বারা আল্লাহ মানুষের গুনাহ মুছে দেন এবং মর্যাদা
বৃদ্ধি করে দেন
? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণভাবে ওযূ করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক ছালাত শেষ হওয়ার পর আর
এক ছালাতের প্রতীক্ষায় থাকা
আর এটাই হচ্ছে রিবাত বা প্রস্ত্ততি (তিনবার তিনি একথা
বললেন)
।[42]
তিনি আরো বলেন,مَنْ تَوَضَّأ فَأَحْسَنَ الوُضُوْءَ، خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ
جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ
যে ওযূ করে
এবং সুন্দর করে ওযূ করে
, তার গুনাহ সমূহ তার শরীর হতে বের হয়ে
যায়
এমনকি তার নখের নীচ হতেও বের হয়ে
যায়
।[43] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِذَا تَوَضَّأ العَبْدُ الْمُسْلِمُ، أَوِ الْمُؤْمِنُ
فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا
بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذا غَسَلَ
يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ
الْمَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ
كُلُّ خَطِيْئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ
آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ
الذُّنُوْبِ
যখন কোন মুসলমান অথবা মুমিন
বান্দা ওযূ করে এবং মুখমন্ডল ধৌত করে তখন তার মুখমন্ডল হ
তে পানির সাথে
অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়
, যা তার দুচোখের মাধ্যমে হয়েছেআর যখন সে দুহাত ধৌত করে তখন পানির সাথে কিংবা পানির শেষ
বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়
, যা তার দুহাত দ্বারা
অর্জিত হয়েছে
যখন সে পা ধৌত করে
তখন পানির সাথে কিংবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়
, যা করতে তার পা অগ্রসর হয়েছেএমনকি সে গুনাহ হতে পাক-পবিত্র, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।[44]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إنَّ أُمَّتِيْ يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِيْنَ
مِنْ آثَارِ الوُضُوْءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أنْ يُطِيْلَ غُرَّتَهُ
فَلْيَفْعَلْ
ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে তাদের
ওযূর বিশেষ চিহ্ন দেখে যা হবে অতীব উজ্জ্বল ধবধবে সাদা
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার
উজ্জ্বলতাকে দীর্ঘ করতে চায় সে যেন তা করে
।[45]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করবে অতঃপর বলবে, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُوْلُهُ
আমি ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত
কোন মা
বূদ নেই এবং আমি আরও ঘোষণা করছি যে মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূলএমন ব্যক্তির জন্য
জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে
, সে
ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে
।[46]
[1]. মুসনাদে আহমাদ, ছহীহাহ
হা/১৮১৭
; ছহীহুল জামে হা/৩১৫৫
[2]. তিরমিযী হা/২৪৫০; ছহীহাহ হা/৯৫৪, ২৩৩৫; ছহীহুল জামে হা/৬২২২
[3]. তিরমিযী হা/২৬০১; ছহীহাহ হা/৯৫৩; ছহীহুল জামে হা/৫৬২২
[4]. বুখারী হা/২৮৫৬; মুসলিম হা/৩০; মিশকাত হা/২৪
[5]. মুসলিম হা/২৮
[6]. মুসলিম হা/২৮; ছহীহুল জামে হা/৬৩২০
[7]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ
[8]. তিরমিযী হা/১৬৩৩; নাসাঈ হা/৩১০৮; ছহীহ তারগীব
হা/১২৬৯
, ৩৩২৪; মিশকাত হা/৩৮২৮
[9]. বুখারী হা/৬৭৩৭, কুরআন-সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা অধ্যায়
[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪
[11]. আহমাদ, মিশকাত হা/৫৭৭, হাদীছ ছহীহ
[12]. তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৫৯, হাদীছ ছহীহ
[13]. আহমাদ, মিশকাত হা/১১৬৭, হাদীছ ছহীহ
[14]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭, ২৫৬৫
[15]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭,২৫৬৫
[16]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৮
[17]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৭
[18]. আত-তারগীব হা/১৩৮০
[19]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৮
[20]. আত-তারগীব হা/১৩৮২
[21]. তিরমিযী হা/৬১৬; ইবুন হিববান হা/৭৯৫
[22]. বুখারী হা/৫৯৫৩; মুসলিম হা/১১
[23]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৬
[24]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৮
[25]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৯৭
[26]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮১৬/৩৪৮৪
[27]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৪০
[28]. আহমাদ, মিশকাত হা/২১৩৪, হাদীছ ছাহীহ
[29]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১২
[30]. মুসলিম হা/৮০৫; মিশকাত হা/২১২১
[31]. মুসলিম, মিশকাত হা/২১২০
[32]. ছহীহুল জামে হা/৬৪৬৪; মিশকাত হা/৯৭৪
[33]. ছহীহাহ হা/৯৭২
[34]. ছহীহুল জামে হা/৬৪৬৪
[35]. বায়হাকবী, মিশকাত হা/২১৭৫, হাদীছ ছহীহ
[36]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৪৬, হাদীছ ছহীহ
[37]. মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৬
[38]. আহমাদ, মিশকাত হা/২১৫৩, হাদীছ ছহীহ
[39]. হাকেম, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৮৯, সনদ হাসান
[40]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৮
[41]. বুখারী হা/৩১৩০
[42]. মুসলিম হা/২৫৩; মিশকাত হা/২৮২
[43]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৪
[44]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৫
[45]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০
[46]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৯
১২. মসজিদে গমন করা : মসজিদে গমন ছওয়াব লাভের অন্যতম মাধ্যমমসজিদে গমনকারীর জন্য ফিরিশতারা আল্লাহর নিকটে
ক্ষমা প্রার্থনা করে
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ أَعَدَّ اللهُ لَهُ نُزُلَهُ
مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ
যে সকাল-সন্ধ্যায়
মসজিদে যাবে আল্লাহ তার জন্য তার প্রত্যেক বারের পরিবর্তে একটি করে
মেহমানদারী-আপ্যায়ন প্রস্ত্তত করে রাখবেন
।[1] তিনি আরো বলেন,
صَلاَةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى
صَلاَتِهِ فِيْ بَيْتِهِ وَفِيْ سُوْقِهِ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ ضِعْفًا وَذَلِكَ
أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ
لاَ يُخْرِجُهُ إِلاَّ الصَّلاَةُ لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَهُ
بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةٌ فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ
الْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّيْ عَلَيْهِ مَا دَامَ فِيْ مُصَلَّاَهُ اللَّهُمَّ صَلِّ
عَلَيْهِ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ وَلاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلاَةٍ مَا
انْتَظَرَ الصَّلاَةَ وَفِيْ رِوَايَةٍ فِيْ دُعَاءِ الْمَلاَئِكَةِ: اللَّهُمَّ
اغْفِرْلَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَالَمْ يُؤْذِيْ فِيْهِ مَالَمْ يُحْدِثْ
فِيْهِ
কোন ব্যক্তির মসজিদে জামাআতে ছালাত
আদায়ের নেকী তার ঘরে বা বাজারে ছালাত আদায় অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশী
আর এই নেকী তখনই হয়
যখন সে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ করে আর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়
এমতাবস্থায় সে যত
পদক্ষেপ রাখে প্রত্যেক পদক্ষেপের দরুণ তার একটা করে স্তর উন্নত করা হয় এবং একটা
করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়
অতঃপর যখন সে ছালাত আদায় করতে থাকে ফিরিশতাগণ তার জন্য দোআ করতে থাকেনতারা বলেন, اللهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ
اللهُمَّ ارْحَمْهُ اللهُمَّ اغْفِرْلَهُ اللهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ
হে আল্লাহ!
তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ কর
, হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল করআর এভাবে তারা বলতে থাকে যে পর্যন্ত সে ছালাত আদায়ের স্থানে
থাকে
যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট
না দেয় এবং ওযূ ভঙ্গ না করে
।[2] তিনি আরো বলেন,بَشِّرِ الْمَشَّائِيْنَ فِي
الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّوْرِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যারা অন্ধকারে
মসজিদে যায় তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন তাদের পূর্ণ জ্যোতির  সুসংবাদ
দাও।[3]
১৩. মসজিদ নির্মাণ করা : মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ
করেন
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا
بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
যে ব্যক্তি
একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে
, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন।[4]
১৪. আযান দেওয়া : আযান দেওয়ার বিনিময় জাহান্নাম হতে মুক্তি ও
জান্নাত লাভ
ক্বিয়ামতের দিন
মুওয়াযযিন অতীব সম্মানিত হবে
মানুষ, জিন ও পৃথিবীর সকল
বস্ত্ত ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনের জন্য কল্যাণের সাক্ষী দিবে
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ
الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ، وَلاَ إنْسٌ، وَلاَ شَيْءٌ، إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ
القِيَامَةِ
যে কোন মানুষ ও জিন অথবা যে কোন বস্ত্ত মুওয়াযযিনের কণ্ঠ
শুনবে সে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে
।[5]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ مَدَّ صَوْتِهِ وَيَشْهَدُ لَهُ كُلُّ رَطْبٍ
وَيَابِسٍ وَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ صَلَّى وَشَاهِدُ الصَّلَاةِ يُكْتَبُ لَهُ
خَمْسٌ وَّعِشْرُوْنَ صَلَاةً وَيُكَفَّرُ عَنْهُ مَا بَيْنَهُمَا
মুওয়াযযিনের
কণ্ঠের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হবে এবং (ক্বিয়ামতের দিন) তার কল্যাণের
জন্য প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত সাক্ষ্য দিবে এবং এই আযান শুনে যত লোক ছালাত
আদায় করবে সবার সমপরিমাণ নেকী মুওয়াযযিনের হবে
আর যে ব্যক্তি ছালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হবে
তার জন্য পঁচিশ ছালাতের নেকী লেখা হবে এবং তার দুই ছালাতের মদ্যকার গুনাহ ক্ষমা
করা হবে
।[6]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَذَّنَ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِيْنِهِ فِيْ كُلِّ مَرَّةٍ سِتُّوْنَ حَسَنَةً
وَبِإِقَامَتِهِ ثَلاَثُوْنَ حَسَنَةً
যে বার বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়
এবং তার প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে ষাট নেকী এবং এক্বামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকী
অতিরিক্ত লেখা হয়
।[7] উল্লেখ্য, সাত বছর আযান দিলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে মর্মে বর্ণিত
হাদীছটি যঈফ
।[8]
১৫. আযানের উত্তর দেওয়া : আযানের উত্তর দেওয়া ও তৎপরবর্তী দোআ করলে রাসূল
(ছাঃ)-এর শাফা
আত অবধারিত হয়ে যায়তেমনি পরকালে জান্নাত লাভ করা যায়রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ
فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى
عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ عَزَّ
وَجَلَّ لِي الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِيْ
إِلاَّ لِعَبْدٍ مِّنْ عِبَادِ اللهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ
فَمَنْ سَأَلَ اللهَ لِي الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ
যখন তোমরা
মুওয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে
, তখন তার জওয়াবে বল
মুওয়াযযিন যা বলে
অতঃপর আমার উপর দরূদ
পড়
কেননা যে আমার উপর
একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন
তারপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ওয়াসীলা চাওআর তা হচ্ছে
জান্নাতের একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান
যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মাত্র একজন বান্দার জন্য উপযোগীআমি আশা করি আমিই সেই
বান্দা
যে ব্যক্তি আমার জন্য
ওয়াসীলা চাইবে তার জন্য আমার শাফাআত যরূরী হয়ে যাবে।[9] তিনি আরো বলেন,
إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ
أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمْ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ
أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ
قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا
رَّسُوْلُ اللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ
قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ لاَ حَوْلَ
وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ قَالَ
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ قَالَ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
যখন মুওয়াযযিন বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার যদি তোমাদের কেউ বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, অতঃপর যখন মুওয়াযযিন বলে আশহাদু আল্লা
ইলা-হা ইল্লাল্লাহ
সেও বলে আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, মুওয়াযযিন বলে
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ সেও বলে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, এরপর
মুওয়াযযিন বলে
, হাইয়া আলাছ ছালাহ সে বলে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, পুনরায় যখন
মুওয়াযযিন বলে
হাইয়া আলাল ফালাহ সে বলে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, পরে যখন
মুওয়াযযিন বলে
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার সেও বলে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবারঅতঃপর যখন মুওয়াযযিন
বলে
লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ সেও বলে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহআর এই বাক্যগুলি
মনে-প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে বলে তাহ
লে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[10]
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, এক লোক বলল,إِنَّ الْمُؤَذِّنِيْنَ
يَفْضُلُوْنَنَا بِأَذَانِهِمْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قُلْ كَمَا يَقُوْلُوْنَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَ
হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! মুওয়াযযিনগণ আমাদের চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করছেন
রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমিও বল যেরূপ তারা বলে এবং যখন আযানের জওয়াব দেয়া শেষ হবে
তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর
, তাহলে তোমাকেও
প্রদান করা হবে
।[11]
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম তখন বেলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন
যখন বেলাল (রাঃ) আযান
শেষ করলেন
, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا
يَقِيْنًا دَخَلَ الْجَنَّةَ
যে অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে এর অনুরূপ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[12]
আবু ইয়ালা আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন রাসূল (ছাঃ) এক রাত্রি যাপন করলেনতখন বেলাল আযান দিলেনরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন
,مَنْ قَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ،
وَشَهِدَ مِثْلَ شَهَادَتِهِ فَلَهُ الْجَنَّةُ
. যে ব্যক্তি
তার (বেলালের) কথার অনুরূপ বলবে এবং তার সাক্ষ্য দানের মত সাক্ষ্য দিবে তার জন্য
জান্নাত
।[13]
১৬. দোআ ও তাসবীহ-তাহলীল :
তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার, পাপ মোচন, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যমতাই মুমিনকে ছহীহ
হাদীছে বর্ণিত দো
, যিকর-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হবেনিম্নে কিছু দো, তাসবীহ ফযীলত সহ উল্লেখ করা হ।-
(ক) সকল গোনাহ মাফ হয় : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ
وَبِحَمْدِهِ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ
مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, সুবহানাল্লাহি
ওয়া বিহামদিহী
অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়।[14] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سَبَّحَ الله فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثاً
وَّثَلاثِيْنَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلاَثاً وَّثَلاَثِيْنَ، وَكَبَّرَ الله ثَلاَثاً
وَّثَلاَثِيْنَ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَّتِسْعُوْنَ وقال تَمَامَ المِئَةِ : لاَ
إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ،
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإنْ كَانَتْ مِثْلَ
زَبَدِ البَحْرِ
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলল, তা হচ্ছে মোট ৯৯ বারঅতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলল,لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ
لاَ شَريْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيْرٌ،  
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেইতাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা
এবং তিনি হ
লেন সর্বশক্তিমানঐ ব্যক্তির সমস্ত
গুনাহ মাফ করা হবে
, তার গুনাহের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনার সমান হলেও।[15]
(খ) জান্নাতের ভান্ডার : আবু মূসা আশআরী (রাঃ)
বলেন
,
আমরা এক সফরে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলামলোকেরা উচ্চৈঃস্বরে
তাকবীর বলতে লাগল
তখন রাসূল (ছাঃ)
বললেন
,
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি রহম কর এবং
নীরবে তাকবীর পাঠ কর
তোমরা বধিরকে ডাকছ না এবং অনুপস্থিতকেও ডাকছ না, তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে, তিনি তোমাদের
সাথে আছেন
যাকে তোমরা ডাকছ তিনি
তোমাদের বাহনের ঘাড় অপেক্ষাও তোমাদের অধিক নিকটে আছেন
আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তখন রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম, লা হাওলা
ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ
অর্থাৎ আমার কোন উপায়
নেই
,
কোন শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ব্যতীততখন রাসূল (ছাঃ)
বললেন
,
يَا عَبْدَ اللهِ
بْنَ قَيْسٍ، ألاَ أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مَّنْ كُنُوْزِ الجَنَّةِ؟ قُلْتُ بَلَى
يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ
. হে আব্দুল্লাহ
ইবনু কায়েস! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সমূহের একটি ভান্ডারের সন্ধান দিব না
? আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর
রাসূল! তিনি বললেন
, তা হচ্ছে- লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।[16]
(গ) জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ : জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ
غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ
যে ব্যক্তি বলবে সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি অর্থাৎ মহান
আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ
রোপণ করা হবে
।[17]
(ঘ) ছওয়াব লাভ, মর্যাদা বৃদ্ধি ও জান্নাতে গৃহ লাভ : আবদুর রহমান ইবনু
গানাম (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
, তিনি বলেন,
مَنْ قَالَ قَبْلَ أَنْ يَنْصَرِفَ وَيَثْنِىَ رِجْلَهُ
مِنْ صَلاةِ الْمَغْرِبِ وَالصُّبْحِ،
 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ
وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ،
يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ،
 عَشْرَ مَرَّاتٍ كُتِبَ لَهُ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ،
وَمُحِىَ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ، وَرُفِعَ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ، وَكَانَتْ
حِرْزًا مِّنْ كُلِّ مَكْرُوْهٍ، وَحِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، وَلَمْ
يَحِلَّ لِذَنْبٍ يُدْرِكُهُ إِلاَّ الشِّرْكَ، وَكَانَ مِنْ أَفْضَلِ النَّاسِ
إِلاَّ رَجُلاً يَقُوْلُ أَفْضَلَ مِمَّا قَالَ
যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের
ছালাতের পর দশবার বলবে
, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكُ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ
وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তারই রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত
প্রশংসা
, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ, তিনি সকলকে জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবানএমন ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক শব্দের পরিবর্তে দশটি নেকী লেখা
হবে
,
তার দশটি গুনাহ মুছে দেয়া হবে, তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবেএছাড়াও এ দোআটি তার জন্য প্রত্যেক মন্দ কাজ হতে রক্ষক হবে
এবং বিতাড়িত শয়তান হ
তেও রক্ষাকবয হবেএর বদৌলতে কোন গুনাহ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (অর্থাৎ শিরক ব্যতীত)
কোন কিছুই তাকে ধ্বংস করতে পারবে না
ঐ ব্যক্তি হবে সমস্ত মানুষ অপেক্ষা উত্তম আমলকারীতবে যে এর চেয়েও
উত্তম কথা বলবে সে অবশ্য এর চেয়ে উত্তম হবে
।[18]
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكُ لَهُ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ
بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
 كَتَبَ اللهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا
عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ
.
যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে
বলবে
,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللهُ وَحْدَهُ … شَىْءٍ قَدِيرٌ
(আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরতিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেনতিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেইতাঁর হাতেই সকল কল্যাণতিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)আল্লাহ তার জন্য দশ
লক্ষ নেকী লিখবেন
, দশ লক্ষ গোনাহ মোচন করবেন এবং তার দশ লক্ষ
মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন
।[19] অন্যত্র তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
বাজারে গিয়ে বলবে
,لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ
وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
(আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরতিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেনতিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেইতাঁর হাতেই সকল কল্যাণতিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)আল্লাহ তার জন্য দশ
লক্ষ নেকী লিখবেন
, দশ লক্ষ গোনাহ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তার
জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন
।[20]
১৭. জিহাদ করা :
জিহাদের অশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছেএর বিনিময় জান্নাতআল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ
عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ، تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ
ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، يَغْفِرْ لَكُمْ
ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
হে ঈমানাদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে
এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব না
, যা তোমাদেরকে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে
? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতিআর তোমাদের ধন-সম্পদ
ও তোমাদের জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে
এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতেএর ফলে তিনি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং
তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
যার নিম্নদেশ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত এবং তা এমন মনোরম
আবাসগৃহ যা অনন্তকাল বসবাসের জন্য
, এটাই মহা
সাফল্য
(ছফ ৬১/১০-১২)
আল্লাহ আরো বলেন,وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ
যারা আল্লাহর
রাস্তায় নিহত হয়
, তাদেরকে মৃত ভেবো নাবরং তারা জীবিততারা তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে
জীবিকাপ্রাপ্ত হয়
(আলে ইমরান ৩/১৬৯)অন্যত্র তিনি আরো বলেন,
إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي
التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيْلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللهِ
فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ
الْعَظِيْمُ
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট
থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করে
  নিয়েছেন জান্নাতের
বিনিময়ে
তারা আল্লাহর রাস্তায়
যুদ্ধ করে
অতঃপর তারা হত্যা করে
অথবা নিহত হয়
এর বিনিময়ে তাদের
জন্য (জান্নাত লাভের) সত্য ওয়াদা করা হয়েছে তওরাত
, ইনজীল ও কুরআনেআর আল্লাহর চাইতে নিজের অঙ্গীকার অধিক পূরণকারী আর কে আছে? অতএব তোমরা এই ক্রয়-বিক্রয়ের বিনিময়ে (জান্নাতের) সুসংবাদ
গ্রহণ কর যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ
আর এটাই হল মহান সফলতা (তওবা ৯/১১১)
জিহাদের গুরুত্ব ও ফযীলত এবং মুজাহিদ ও শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) থেকে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে
তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ এখানে উল্লেখ করা হ।-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ آمَنَ بِاللهِ
وَبِرَسُوْلِهِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ
أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ جَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ جَلَسَ فِيْ
أَرْضِهِ الَّتِيْ وُلِدَ فِيْهَا فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا
نُبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ
لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ
السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوْهُ الْفِرْدَوْسَ
فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ
الرَّحْمَنِ وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন
,
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, ছালাত আদায় করল ও রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করল, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মস্থানে বসে
থাকুক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়
ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে
জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা
আলা জান্নাতে ১০০টি মর্যাদার স্তর প্রস্ত্তত রেখেছেনদুটি স্তরের
ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান
তোমরা আল্লাহর নিকট চাইলে জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবেকেননা এটাই হল সর্বোত্তম ও
সর্বোচ্চ জান্নাত
এর উপরিভাগে করুণাময়
আল্লাহর আরশ
সে স্থান হতে জান্নাতের
নদী সমূহ প্রবাহিত হচ্ছে
।[21] তিনি আরো বলেন,
مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ
يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَإِنَّ لَهُ مَا عَلَى الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ
الشَّهِيْدُ فَإِنَّهُ يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَيُقْتَلَ عَشْرَ
مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الْكَرَامَةِ
কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার
পর পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না
, যদিও পৃথিবীর
যাবতীয় সম্পদ তাকে প্রদান করা হয়
, একমাত্র শহীদ ব্যতীতশহীদগণ শাহাদত বরণের
মর্যাদা দেখে আবার দুনিয়াতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে
, যাতে সে আরো দশ বার শহীদ হতে পারে।[22]
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, বারার কন্যা
রুবাইয়্যা যিনি হারেছা ইবনু সুরাকার মাতা হিসাবে পরিচিত (আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর
ফুফু) তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে এসে বললেন
,
يَا نَبِيَّ اللهِ أَلاَ تُحَدِّثُنِيْ عَنْ حَارِثَةَ
وَكَانَ قُتِلَ يَوْمَ بَدْرٍ أَصَابَهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَإِنْ كَانَ فِي
الْجَنَّةِ صَبَرْتُ وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ اجْتَهَدْتُ عَلَيْهِ فِي
الْبُكَاءِ قَالَ يَا أُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِي الْجَنَّةِ وَإِنَّ
ابْنَكِ أَصَابَ الْفِرْدَوْسَ الْأَعْلَى
হে আল্লাহর নবী! আপনি হারেছা
সম্পর্কে কিছু বলুন
হারেছা বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছেএক অদৃশ্য তীর এসে তার শরীরে বিঁধেছিলসুতরাং সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তাহলে আমি
ধৈর্যধারণ করব
অন্যথা তার জন্য অঝোরে
কাঁদতে থাকব
উত্তরে নবী করীম
(ছাঃ) বললেন
, হে হারেছার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছেতোমার পুত্র সেখানে
সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে
।[23]
শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছেযেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لِلشَّهِيْدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ
فِيْ أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ
الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ
الْوَقَارِ الْيَاقُوْتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
وَيُزَوِّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِنْ الْحُوْرِ الْعِيْنِ
وَيُشَفَّعُ فِيْ سَبْعِيْنَ مِنْ أَقَارِبِهِ
আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি
বিশেষ পুরস্কার রয়েছে
। (১) শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা ঝরতেই তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং প্রাণ বের
হওয়ার প্রাক্কালে জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থানের জায়গাটি চাক্ষুষ দেখানো হবে
। (২) কবরের আযাব হতে তাকে
নিরাপদে রাখা হবে
। (৩) ক্বিয়ামতের
দিনের ভয়াবহতা হ
তে তাকে নিরাপদে রাখা হবে। (৪) তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো
হবে
তার একটি ইয়াকূত
দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু হ
তে উত্তম। (৫) জান্নাতের বাহাত্তর জন হূরের সাথে তার বিবাহ
দেওয়া হবে
। (৬) তার
নিকটাত্মীয়দের মধ্য হ
তে ৭০ জনের জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে।[24] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
لَيْسَ شَيْءٌ أحَبَّ إِلَى اللهِ تَعَالَى مِنْ
قَطْرَتَيْنِ وَأثَرَيْنِ قَطْرَةُ دُمُوْعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطْرَةُ دَمٍ
تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ. وَأَمَّا الأَثَرَانِ فَأَثَرٌ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ تَعَالَى، وَأَثَرٌ فِيْ فَريْضَةٍ مِّنْ فَرَائِضِ الله تَعَالَى
আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের
চাইতে কোন জিনিস এত প্রিয়তম নেই
দুটি ফোঁটার একটি হল আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে চক্ষু হতে নির্গত
অশ্রুর ফোঁটা
আর দ্বিতীয়টি হল আল্লাহর পথে
প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা
আর চিহ্ন দুটির একটি হল আল্লাহর রাস্তায় শরীরে আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন
এবং দ্বিতীয়টি হ
ল আল্লাহর ফরয সমূহের কোন একটি ফরয আদায় করার চিহ্ন।[25] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু মূসা
(রাঃ) হ
তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوْفِ
فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ، فَقَالَ يَا أَبَا مُوْسَى أأنْتَ سَمِعْتَ
رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ هَذَا؟ قَالَ نَعَمْ، فَرَجَعَ إِلَى أصْحَابِهِ، فَقَالَ
أقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلاَمَ، ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَألْقَاهُ، ثُمَّ
مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى العَدُوِّ فَضَربَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ
জান্নাতের দরজা সমূহ মুজাহিদের
তলোয়ারের ছায়াতলে রয়েছে
এ কথা শুনে একজন জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আবু মূসা! আপনি কি রাসূল (ছাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন? আবু মূসা উত্তরে বললেন, হ্যাঁঅতঃপর লোকটি তার
সাথীদের নিকট এসে বলল
, আমি তোমাদেরকে শেষ সালাম জানাচ্ছিএ কথা বলে সে
তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেলল এবং তলোয়ার নিয়ে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হ
তা দ্বারা অনেক
শত্রুকে হত্যা করল এবং শেষে নিজেও শত্রুদের আঘাতে শহীদ হ
।[26]
১৮. আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া :
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়ার অত্যধিক গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছেএর জন্য অশেষ ছওয়াব
রয়েছে এবং এর সর্বোচ্চ বিনিময় হ
ল জান্নাতরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,رِبَاطُ يَوْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ
الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারা দেওয়া সমস্ত দুনিয়া ও তার
উপরের সমস্ত সম্পদ হ
তে উত্তম।[27] তিনি আরো বলেন,لَغَدْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
আল্লাহর পথে
একটা সকাল কিংবা একটা সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সমস্ত কিছু হ
তে উত্তম।[28]
আল্লাহর রাস্তার প্রহরীর আমল মৃত্যুর পরও বৃদ্ধি পেতে থাকেরাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى
عَمَلِهِ إِلاَّ الَّذِيْ مَاتَ مُرَابِطًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَإِنَّهُ يُنْمَى
لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَيَأْمَنُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ
মৃত্যুর সঙ্গে
সঙ্গেই প্রত্যেক ব্যক্তির আমলের সমাপ্তি ঘটে
কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত
অর্থাৎ দ্বীন হিফাযতের দায়িত্বে নিয়োজিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে ক্বিয়ামত সংঘটিত
হওয়া পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের ফিৎনা হ
তেও সে
নিরাপদে থাকবে
।[29]  
কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় প্রহরারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে, সে জাহান্নামে যাবে নারাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ما اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ
فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ
যে ব্যক্তির
পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হয়
, তাকে জাহান্নামের
আগুন স্পর্শ করবে না
।[30] তিনি আরো বলেন,
لاَ يَلِجُ النَّارَ مَنْ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ
حَتَّى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ، وَفِي أخْرَى فِي مَنْخِرَيْ مُسْلِمٍ أَبَدًا وَفِي
أُخْرَى فِيْ جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا وَلَا يَجْتَمِعُ الشُّحُّ وَالْإِيْمَانُ
فِيْ قَلْبِ عَبْدٍ أَبَدًا
আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে ক্রন্দনকারী
জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না
, যতক্ষণ
দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ঢুকে না যায়
অর্থাৎ দোহনকৃত দুধ যেমন তার পালানে ঢুকানো অসম্ভব তেমনি
আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব
আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালি এবং জাহান্নামের
ধোঁয়া একত্রিত হ
তে পারে নাঅর্থাৎ মুজাহিদ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।[31] অন্য বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালি ও জাহান্নামের ধোঁয়া
কোন মুসলমানের নাকের ছিদ্রের মধ্যে কখনো একত্র হবে না
অপর এক বর্ণনায় আছে, ঐ দুটি জিনিস কোন মুসলিমের পেটের মধ্যে একত্র হতে পারে নাঅনুরূপভাবে কৃপণতা ও
ঈমান কখনো কোন বান্দার অন্তরের মধ্যে একত্র হ
তে পারে না।[32]
১৯. ছবর বা ধৈর্যধারণ করা :
রোগ-ব্যাধি, বিপদাপদ, দুঃখ-শোক
প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা অশেষ ছওয়াব ও জান্নাত লাভের মাধ্যম
তবে বিপদের প্রথম
পর্যায়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে
নিম্নে ছবরের কয়েকটি ক্ষেত্র ফযীলত সহ উল্লেখ করা হলো।-
(ক) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ : কোন মুসলিম ব্যক্তির
শিশু সন্তান-সন্ততি মারা গেলে সে যদি ধৈর্যধারণ করে তাহ
লে ঐ ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে
রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَمُوْتُ لِمُسْلِمٍ ثَلاَثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ، فَيَلِجُ
النَّارَ
যে কোন মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।[33] অপর এক হাদীছে এসেছে, একদিন রাসূল
(ছাঃ) কতক আনছারী মহিলাকে বললেন
,لَا يَمُوْتُ لِإِحْدَاكُنَّ ثَلَاثَةٌ مِنْ الْوَلَدِ
فَتَحْتَسِبَهُ إِلَّا دَخَلَتِ الْجَنَّةَ فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ أَوْ
اثْنَيْنِ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَوْ اثْنَيْنِ
তোমাদের মধ্যে
যার তিনটি সন্তান মারা যাবে আর সে ধৈর্যধারণ করবে এবং নেকীর আশা রাখবে নিশ্চয়ই সে
জান্নাতে যাবে
এসময় তাদের মধ্যেকার
একজন মহিলা বলল
, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুইজন মারা যায়? রাসূল (ছাঃ) বললেন, দুজন মারা গেলেও
সে জান্নাতে যাবে
।[34]
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছেতার জন্য আমি অত্যন্ত শোকার্ত হয়ে পড়েছিআপনি কি আপনার দোস্ত
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন
, যা আমাদের
মৃতব্যক্তিদের সম্পর্কে আমাদের সান্ত্বনা হ
তে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,صِغَارُهُمْ دَعَامِيْصُ الْجَنَّةِ يَلْقَى أَحَدُهُمْ
أَبَاهُ فَيَأْخُذُ بِنَاحِيَةِ ثَوْبِهِ فَلاَ يُفَارِقُهُ حَتَّى يُدْخِلَهُ
الْجَنَّةَ
মুসলমানদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতি হবেতাদের কেউ যখন তার
পিতাকে পাবে
, তখন তার কাপড়ের পাশ ধরে টানতে থাকবে এবং তাকে
জান্নাতে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে পৃথক হবে না
।[35]
অন্য এক হাদীছে এসেছে, একদা জনৈক মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পুরুষরা আপনার নিকট থেকে হাদীছ
শুনার সুযোগ লাভ করেছে
আমাদের জন্যও আপনার পক্ষ হতে একটি দিন নির্ধারিত করে দিন, যেদিন আমরা আপনার নিকট আসতে পারি এবং যা আল্লাহ আপনাকে
শিক্ষা দিয়েছেন তা আমাদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন
তখন তিনি বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুক স্থানে সমবেত হওসুতরাং তারা সমবেত হলেনঅতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের নিকট উপস্থিত হলেন এবং
তাদেরকে শিক্ষা দিলেন
, যা তাকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেনঅতঃপর বললেন,
مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمُ بَيْنَ يَدَيْهَا
مِنْ وَلَدِهَا ثَلَاثَةً إِلَّا كَانَ لَهَا حِجَابًا مِّنَ النَّارِ فَقَالَتِ
امْرَأَةٌ مِّنْهُنَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَوْ اثْنَيْنِ قَالَ فَأَعَادَتْهَا
مَرَّتَيْنِ ثُمَّ قَالَ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ
তোমাদের মধ্যকার যে মহিলা তার
সন্তানদের মধ্য হ
তে তিনটি সন্তান আল্লাহর নিকট পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশে প্রতিবন্ধক হবে (অর্থাৎ তারা
তাকে জাহান্নামে যেতে দিবে না)
এ সময় একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! কেউ যদি দু
জন সন্তান পাঠায়? সে বাক্যটি দুবার বলল, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, দুজন পাঠালেও, দুজন পাঠালেও দুজন পাঠালেও।[36]
অন্য হাদীছে এসেছে, কুররা আল-মুযানী হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসত এবং তার সাথে তার একটি
ছেলেও থাকত
একদিন নবী করীম (ছাঃ)
তাকে জিজ্ঞেস করলেন
, তুমি কি তাকে (ছেলেকে) ভালবাস? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল!
আল্লাহর পর আপনাকে ভালবাসার মতই আমি তাকে ভালবাসি
অতঃপর একদিন নবী করীম (ছাঃ) ছেলেটিকে দেখতে
পেলেন না
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুকের ছেলেটি কোথায় গেল? ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে মারা গেছেতখন তার পিতাকে রাসূল
(ছাঃ) বললেন
,أَمَا تُحِبُّ أَنْ لاَّ تَأْتِيَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ
إِلاَّ وَجَدْتَهُ يَنْتَظِرُكَ فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَهُ
خَاصَّةً أَمْ لِكُلِّنَا قَالَ بَلْ لِكُلِّكُمْ
ওহে তুমি কি
এটা ভালবাস না যে
, তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে যাও না কেন, সেখানে তাকে (ছেলেকে) তোমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখবে? এসময় এক ব্যক্তি বলল, এই সুযোগ শুধু
তার জন্য
, না আমাদের সকলের জন্য? রাসূল (ছাঃ) বললেন, বরং তোমাদের
সকলের জন্য
।[37] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন
,
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ
لِمَلَائِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِيْ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ
قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ مَاذَا قَالَ
عَبْدِيْ فَيَقُوْلُوْنَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ فَيَقُوْلُ اللهُ ابْنُوْا
لِعَبْدِيْ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوْهُ بَيْتَ الْحَمْدِ
যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তাআলা তাঁর ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে উঠিয়ে নিলে? তারা বলেন, হ্যাঁআল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিলে? তারা বলেন, হ্যাঁআল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা কি বলল? ফিরিশতারা বলেন, তখন তারা বলল, الْحَمْدُ للهِ এবং إِنَّا للهِ وَإِنَّ إِلَيْهِ
رَاجِعُوْنَ
তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নাম
রাখ বায়তুল হাম্দ
।[38]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَمُوْتُ لَهُمَا ثَلاَثَةٌ مِّنَ الْوَلَدِ
لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلاَّ أَدْخَلَهُمَا الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ
إِيَّاهُمْ
কোন মুসলমানের সন্তান যুবক হওয়ার পূর্বে মারা  গেলে
 আল্লাহ  তার  বিশেষ  রহমতের  মাধ্যমে তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।[39]
(খ) বিপদে ধৈর্যধারণ :
বিপদে ছবর করা অত্যন্ত কঠিনঅথচ বিপদে ধৈর্যধারণ করাই প্রকৃত ধৈর্যএর পুরস্কারও অগণিতরাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عَجَبٌ لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أصَابَهُ خَيْرٌ حَمِدَ
اللهَ وَشَكَرَ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيْبَةٌ حَمِدَ اللهَ وَصَبَرَ،
فَالْمُؤْمِنُ يُؤْجَرُ فِيْ كُلِّ أَمْرِهِ حَتَّى يُؤْجَرَ فِيْ اللُّقْمَةِ
يَرْفَعُهَا إِلَى فِيْ امْرَأَتِهِ
মুমিনদের বিষয় আশ্চর্যজনক, যদি তার প্রতি কোন কল্যাণ বর্তায় সে আল্লাহর প্রশংসা করে ও
শুকরিয়া জ্ঞাপন করে
আর যদি কোন বিপদ আপতিত হয়, তবুও সে আল্লাহর
প্রশংসা করে এবং ধৈর্যধারণ করে
সুতরাং মুমিন তার প্রত্যেক কাজেই নেকী অর্জন করেএমনকি স্ত্রীর মুখে
খাদ্যের লোকমা তুলে দিলেও নেকী পায়
।[40]
(গ) রোগ-ব্যাধিতে ধৈর্যধারণ :
অসুখ-বিসুখে ধৈর্যধারণ করলে অশেষ ছওয়াব লাভ করা যায় এবং গোনাহসমূহ আল্লাহ
ক্ষমা করে দেন
উম্মুল আলা (রাঃ)
বলেন
,
আমি একদা অসুস্থ হলে নবী করীম
(ছাঃ) আমাকে দেখার জন্য আসলেন এবং বললেন
,أَبْشِرِيْ يَا أُمَّ الْعَلَاءِ فَإِنْ مَرِضَ
الْمُسْلِمُ يُذْهِبُ اللهُ بِهِ خَطَايَاهُ كَمَا تُذْهِبُ النَّارُ خَبَثَ
الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ
হে উম্মুল আলা! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ করকেননা কোন মুসলিম
অসুস্থ হ
লে আল্লাহ তার দ্বারা তার গুনাহ দূর করে দেন যেমন আগুন
সোনা-রূপার মরিচা দূর করে দেয়
।[41]
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মু সায়েব অথবা উম্মুল
মুসাইয়েতের নিকটে প্রবেশ করে বললেন
, হে সায়েব বা
মুসাইয়েবের মা! তোমার কি হয়েছে
, কাঁপছ কেন? তিনি বললেন, জ্বর হয়েছে, আল্লাহ তার ভাল না করুনএতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لاَ تَسُبِّي الْحُمَّى
فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيْرُ خَبَثَ
الْحَدِيْدِ
জ্বরকে গালি দিও নাকারণ সে আদম সন্তানের গোনাহ সমূহকে দূর করে দেয়, যেমন হাপর লোহার মরিচা দূর করে।[42]
বান্দাকে অসুখ দিয়ে আল্লাহ তার গোনাহ মাফের ব্যবস্থা করেনরাসূল (ছাঃ) বলেন,اِنَّ اللهَ لَيَبْتَلِىَ
عَبْدَهُ بِالسَّقْمِ حَتَّى يُكَفِّرَ عَنْهُ ذَلِكَ كُلَّ ذَنْبٍ
নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেন
এভাবে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ
মুছে দেন।[43]
বিপদগ্রস্ত কোন মুমিন ভাইকে সান্ত্বনা দিলে অশেষ ছওয়াব অর্জিত হয়রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَزِّيْ
أَخَاهُ بِمُصِيْبَةٍ إِلَّا كَسَاهُ اللهُ مِنْ حُلَلِ الْكَرَامَةِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
কোন মুমিন যদি কোন বিপদগ্রস্ত মুমিনকে সান্ত্বনা দেয়, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সম্মানিত পোশাক পরাবেন।[44]
উল্লেখ্য যে, বিপদের প্রথম অবস্থাতেই ধৈর্যধারণ করতে হবেনবী করীম (ছাঃ)
বলেছেন
,
আল্লাহ তাআলা বলেন, ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ
الصَّدْمَةِ الْأُوْلَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةِ
হে আদম
সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথমেই ধৈর্যধারণ কর এবং নেকীর আশা রাখ
, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন নেকীতে সন্তুষ্ট হব
না
।[45]
(ঘ) চোখ হারিয়ে ধৈর্যধারণ :
মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখএ চোখ বিনষ্ট হলে কিংবা এতে দৃষ্টি শক্তি না
থাকলে মানুষ দুনিয়ার কোন কিছুই দেখতে পায় না
পার্থক্য করতে পারে না ভাল-মন্দকাজেই এ চোখ মানুষের
জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অনুপম নে
মতএ চোখ কারো বিনষ্ট হলে এবং সে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তাকে জান্নাত
দান করবেন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন
,قَالَ اللهُ تَعَالى إِذَا
قَبَضْتُ مِنْ عَبْدِيْ كَرِيْمَتَهُ وَهُوَ بِهَا ضَنِيْنٌ لَمْ أَرْضَ لَهُ
ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةَ
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দা থেকে
তার সম্মানিত বস্ত্ত তথা চোখ কেড়ে নিলে যদি সে তাতে ধৈর্যধারণ করে
, তাহলে আমি তাকে একমাত্র জান্নাত দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু প্রদানে
সন্তুষ্ট নই
।[46]
২০. আল্লাহর নাম মুখস্থ করা :
নবী করীম জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নামসমূহ মুখস্থ করার কথা বলেছেনতিনি বলেন,لِلَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُوْنَ
اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدَةً لاَ يَحْفَظُهَا أَحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ
–  আল্লাহর
নিরানববইটি এক কম একশতটি নাম রয়েছে
যে তা মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে
।[47]
২১. উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া :
চরিত্রবান লোক সকলের নিকটে সম্মানিত ও সমাদৃততিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তিরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنْ أَخْيَرِكُمْ
أَحْسَنَكُمْ خُلُقًا
তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম।[48] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ
خُلُقًا
পূর্ণ মুমিন সে, যার চরিত্র
উত্তম
।[49] তিনি আরো বলেন, إنَّ أثْقَلَ شَيْئٍ يُوْضَعُ فِيْ مِيْزَانِ
الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ
. ক্বিয়ামতের
দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশী ভারি হবে তা হচ্ছে উত্তম চরিত্র
।[50]
উত্তম চরিত্রের অধিকারী লোকই অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করবেরাসূল (ছাঃ) বলেন,أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا
يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ،
أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ
وَالْفَرْجُ
তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে
প্রবেশ করায়
? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম
চরিত্র
তোমরা কি জান মানুষকে
সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস
? একটি হচ্ছে
মুখ ও অপরটি লজ্জাস্থান
।[51]
[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৮
[2]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০২
[3]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৭২১, হাদীছ ছাহীহ
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৭
[5]. বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬
[6]. আবু দাউদ হা/৫১৫, নাসাঈ হা/৬৬৭, সনদ ছহীহ
[7]. ইবনু মাজাহ, হাদীছ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৭২৭
[8]. তিরমিযী হা/২০৬; ইবনু মাজাহ হা/৭২৭; মিশকাত হা/৬৬৪; যঈফা হা/৮৫০
[9]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭
[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮
[11]. আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৬৭৩, হাদীছ ছাহীহ
[12]. নাসাঈ, মিশকাত হা/৬৭৬, হাদীছ ছহীহ
[13]. আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান
[14]. বুখারী হা/৬৪০৫, মুসলিম হা/৫৯৭; মিশকাত
হা/২২৯৬
।  
[15]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭
[16]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০৩
[17]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩০৪ হাদীছ ছহীহ
[18]. তিরমিযী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৪৭৭; মিশকাত হা/৯৭৫
[19]. তিরমিযী হা/৩৪২৮; সনদ ছহীহ
[20]. তিরমিযী হা/৩৪২৯; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত
হা/২৪৩১
, সনদ ছহীহ
[21]. বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭
[22]. বুখারী হা/২৮১৭; মুসলিম হা/১৮৭৭
[23]. বুখারী হা/২৮০৯; তিরমিযী হা/৩১৭৪; মিশকাত
হা/৩৮০৯
[24]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত
হা/৩৮৩৪
; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৩২১৩
[25]. তিরমিযী হা/১৬৬৯; মিশকাত হা/৩৮৩৭, সনদ ছহীহ
[26]. মুসলিম হা/১৯০২; মিশকাত হা/৩৮৫২
[27]. বুখারী হা/২৮৯২; মুসলিম হা/১৯১৩; মিশকাত
হা/৩৭৯১
[28]. বুখারী হা/২৭৯২; মুসলিম হা/১৮৮০; মিশকাত
হা/৩৭৯২
[29]. তিরমিযী হা/১৬২১; ছহীহুল জামে হা/৪৫৬২; মিশকাত হা/৩৮২৩
[30]. বুখারী হা/২৮১১; মিশকাত হা/৩৭৯৪
[31]. নাসাঈ হা/৩১১০; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ
[32]. নাসাঈ হা/৩১১০-১২; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ
[33]. বুখারী হা/১২৫১; মুসলিম হা/২৬৩২; মিশকাত
হা/১৭২৯
[34]. মুসলিম হা/২৬৩২; মিশকাত হা/১৭৩০
[35]. মুসলিম হা/২৬৩৫; মিশকাত হা/১৭৫২
[36]. বুখারী হা/৭৩১০; মুসলিম হা/২৬৩৩; মিশকাত হা/১৭৫৩
[37]. আহমাদ, মিশকাত হা/১৭৫৬; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/৩৪১৬
[38]. তিরমিযী হা/১০২১, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪০৮
[39].বুখারী হা/১০২; মুসলিম হা/২৬৩৪; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/৩৩০৬
[40]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/১৭৩৩; ছহীহুল জামে হা/৩৯৮৬
[41]. আবু দাউদ হা/৩০৯২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২১৪/৭১৪
[42]. মুসলিম হা/২৫৭৫
[43]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১২৮৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৯৩
[44]. ইবনু মাজাহ হা/১৬০১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩০৫/১৯৫; ইরওয়া হা/৭৬৪
[45]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৯৭; মিশকাত হা/১৭৫৮; ছহীহুল জামে হা/৮১৪৩
[46]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০১০
[47]. বুখারী হা/৬৪১০; মুসলিম হা/২৬৭৭; মিশকাত
হা/২২৮৭
[48]. বুখারী হা/৩৫৫৯
[49]. আবুদাউদ হা/৪৬৮২; তিরমিযী হা/১১৬২;মিশকাত হা/৫১০১; সনদ হাসান ছহীহ
[50]. তিরমিযী হা/২০০২; মিশকাত হা/৫০৮১; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/৮৭৬
; সনদ হাসান
[51]. তিরমিযী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৬; মিশকাত
হা/৪৬২১
, সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৯৭৭
২২. পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা :
পিতা-মাতার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াতে আসেতাই তাদের প্রতি
সদাচরণ করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয়
এটা আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পসন্দনীয় আমলও বটেএর বিনিময় হচ্ছে
জান্নাত
আবদুল্লাহ ইবনু আমর
(রাঃ) বলেন
, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল!
أَيُّ الْعَمَلِ
أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ
ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ، قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পসন্দনীয় আমল কি? রাসূল (ছাঃ)
বললেন
,
সময়মত ছালাত আদায় করাআবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করাআবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।[1]
অন্যত্র তিনি বলেন,رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ
أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ قِيْلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ
أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ
الْجَنَّةَ
–  তার নাক ধূলায় মলিন হোক (একথা তিনি তিনবার বললেন)বলা হ, সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অথবা দুজনের একজনকে
পেল (তাদের সেবা-যত্নের মাধ্যমে) অথবা সে জান্নাত লাভ করতে পারল না
।[2]
পিতামাতার সেবা করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার
চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ
মুআবিয়া ইবনু জাহিমা হতে বর্ণিত একদা আমার পিতা জাহিমা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে
বললেন
,
يَا رَسُولَ اللهِ
أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ
نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুকআমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছিতখন রাসূল (ছাঃ)
জিজ্ঞেস করলেন
, তোমার মাতা আছেন কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁরাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাঁর সেবা কর, তাঁর পায়ের
নিকটে জান্নাত রয়েছে
।[3]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে
হাযির হয়ে বললেন
,يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ
هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, তারা উভয়
তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম
।[4]
২৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা :
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশ
করার অন্যতম মাধ্যম
আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, জনৈক ছাহাবী
নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন
,أَخْبِرْنِىْ بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِى الْجَنَّةَ. قَالَ مَا لَهُ مَا
لَهُ وَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ، تَعْبُدُ اللهَ،
وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى الزَّكَاةَ،
وَتَصِلُ الرَّحِمَ
. আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন
,
তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেন, তার দরকার
রয়েছে তো
তুমি আল্লাহর ইবাদত
করবে
,
তাঁর সঙ্গে অপর কোন কিছুকে শরীক করবে নাছালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে।[5]
আবূ আইঊব আনছারী (রাঃ) বলেন, জনৈক বেদুঈন নবী করীম (ছাঃ)-এর এক ভ্রমণকালে তাঁর খেদমতে
উপস্থিত হয়ে আরয করল
,أَخْبِرْنِيْ مَا يُقَرِّبُنِيْ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُبَاعِدُنِيْ
مِنَ النَّارِ؟ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ وَلا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ
الصَّلاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِم
যা আমাকে
জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম হ
তে দূরবর্তী করবে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুনতিনি বললেন, ইবাদত করবে
আল্লাহর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না
ছালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায়
রাখবে
।[6]
২৪. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা :
প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করার জন্য রাসূল
(ছাঃ) বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন
তিনি বলেন, জিবরীল (আঃ) এসেই
আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দেন
মনে হচ্ছিল তিনি যেন প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে
দিবেন
মানুষ অধিকহারে নফল
ছালাত-ছিয়াম আদায় ও দান-ছাদাক্বা করেও যদি প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করে তাহ
লে সে
জান্নাতে যেতে পারবে না
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক
ব্যক্তি বলল
,
يَا رَسُوْلَ اللهِ
إِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلاَتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا
غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ،
قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا
وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ
وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ
করেছে
তবে সে নিজের মুখের
দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়
তিনি বললেন, সে জাহান্নামীলোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি
আছে যে
,
সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করেতার দানের পরিমাণ হল পনীরের
টুকরা বিশেষ
কিন্তু সে নিজের মুখ
দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না
তিনি বললেন, সে জান্নাতী।[7]
প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী ব্যক্তি মুমিন নয় বলে
রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করেছেন
তিনি বলেন, واللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ
قِيلَ : مَنْ يَا رَسُول الله؟ قَالَ الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
আল্লাহর কসম!
সে ঈমানদার নয়
আল্লাহর কসম! সে
ঈমানদার নয়
আল্লাহর কসম! সে
ঈমানদার নয়
জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! সে কে
? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী
তার অনিষ্ট হ
তে নিরাপদ নয়।[8] এ ধরনের লোক
জান্নাতে প্রবেশ করবে না
তিনি বলেন, لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُসে ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে না
, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট হতে নিরাপদ নয়।[9]
২৫. ইয়াতীম প্রতিপালন করা :
সমাজের অনাথ-ইয়াতীম শিশুরা হয়ে থাকে অবহেলিততাদের দেখা-শুনা ও
প্রতিপালনের কেউ থাকে না
ফলে তারা হয়ে ওঠে দুষ্টু চরিত্রেরবখাটেপনা তাদের পেয়ে বসেএদের দ্বারা সমাজ কলুষিত হয়রাসূল (ছাঃ) এদের
রক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন
তাদের প্রতিপালনে অশেষ ছওয়াবের কথাও উল্লেখ করেছেনসেই সাথে আরেক শ্রেণী
আছে স্বামীহীনা বিধবা মহিলা
তাদের ভরণ-পোষণ, জৈবিক চাহিদা
পূরণ এবং অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণেরও ব্যবস্থা থাকে না
এ শ্রেণীর মানুষকে
রক্ষার জন্য রাসূল (ছাঃ) বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন
এদের দেখাশুনায়ও অনেক ছওয়াব রয়েছেতিনি বলেন,السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ
وَالْمِسْكِيْنِ كَالسَّاعِيْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَأحْسِبُهُ قَالَ
كَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ النَّهَارِ لاَ يُفْطِرُ
বিধবা ও
মিসকীনের তত্ত্বাবধানকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মত
রাবী বলেন, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এটাও বলেছেন, রাত্রি জাগরণকারী যে অলসতা করে না এবং ঐ ছিয়াম পালনকারীর মত
যে কখনও ছিয়াম ভঙ্গ করে না
।[10]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ
كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ. وَقَرَنَ بَيْنَ أُصْبُعَيْهِ الْوُسْطَى وَالَّتِى
تَلِى الإِبْهَامَ
আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এদুটির মত থাকবআর তিনি স্বীয় মধ্যমা
ও বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী (শাহাদত) আঙ্গুলি একত্র করলেন
।[11] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ
فِى الْجَنَّةِ
নিজের অথবা অন্যের ইয়াতীমের প্রতিপালক ও আমি
জান্নাতে এ দু
টির মত থাকববর্ণনাকারী মালেক
বলেন
,
তিনি মধ্যমা ও শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা
করলেন
।[12]
২৬. কন্যা সন্তান প্রতিপালন করা :
কন্যা সন্তানকে সমাজে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়অথচ কন্যা সন্তান
প্রতিপালন করা জান্নাত লাভের উপায়
রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ. وَضَمَّ أَصَابِعَهُ
. যে ব্যক্তি দুটি কন্যাকে
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে
, আমি ও সে
ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন এভাবে থাকব
এটা বলে তিনি স্বীয় আঙ্গুল একত্রিত করলেন।[13] তিনি আরো বলেন, مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ دَخَلْتُ أَنَا وَهُوَ
الْجَنَّةَ كَهَاتَيْنِ. وَأَشَارَ بِأَصْبُعَيْهِ
. যে ব্যক্তি দুটি কন্যাকে প্রতিপালন
করে
,
আমি ও সে ব্যক্তি জান্নাতে এ দুটির মত থাকবআর তিনি স্বীয় দুআঙ্গুল দ্বারা
ইশারা করলেন
।[14]
২৭. আল্লাহর জন্য ভালবাসা স্থাপন
করা :
সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে
ওঠে
একে অপরের সাথে
সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়
এই সম্পর্ক যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মানসে হয়ে থাকে তাহলে তার বিনিময়
হচ্ছে জান্নাত
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ اللهُ
تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتِىْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِىَّ، وَالْمُتَجَالِسِيْنَ
فِىَّ وَالْمُتَزَاوِرِيْنَ فِىَّ، وَالْمُتَبَاذِلِيْنَ فِىَّ
.
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পরকে
ভালবাসে
, আমার উদ্দেশ্যে সমাবেশে মিলিত হয়, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই
নিজেদের মাল-সম্পদ ব্যয় করে
, আমার ভালবাসা তাদের
জন্য অবধারিত
।[15] তিনি আরো বলেন, إِنَّ اللهَ يَقُوْلُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلاَلِىْ؟ اَلْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِىْ
ظِلِّىْ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّىْ
. ক্বিয়ামতের
দিন আল্লাহ তা
আলা বলবেন, আমার সুমহান ইয্যতের
খাতিরে যারা পরস্পরে ভালবাসা স্থাপন করেছে
, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় স্থান দিবআজ আমার ছায়া ব্যতীত
আর কোন ছায়া নেই
।[16]
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হতে বর্ণনা
করেন
,
أَنَّ رَجُلاً
زَارَ أَخًا لَّهُ فِىْ قَرْيَةٍ أُخْرَى، فَأََرْصَدَ اللهُ لَهُ عَلَى
مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَي عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ؟ قَالَ
أُرِيْدُ أَخًا لِّىْ فِىْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ، قَالَ: هَلْ لَّكَ عَلَيْهِ مِنْ
نِّعْمَةٍ تَرُبُّهَا؟ قَالَ: لاَ غَيْرَ أَنِّىْ أَحْبَبْتُهُ فِى اللهِ قَالَ
فَإِنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا
أَحْبَبْتَهُ فِيْهِ
এক ব্যক্তি অন্য এক গ্রামে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হআল্লাহ তাআলা তার গমন
পথে একজন অপেক্ষমান ফেরেশতা বসিয়ে রাখলেন
লোকটি যখন সেখানে পৌঁছল, তখন ফেরেশতা
তাকে জিজ্ঞেস করলেন
, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ঐ গ্রামে একজন ভাই
আছে
,
তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিফেরেশতা জিজ্ঞেস
করলেন
,
তার কাছে তোমার কোন অনুগ্রহ আছে কি, যার বিনিময় লাভের জন্য তুমি যাচ্ছ? সে বলল, না, আমি তাকে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে
ভালবাসি
তখন ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে এই সংবাদ দেওয়ার
জন্য প্রেরিত হয়েছি যে
, আল্লাহ তোমাকে অনুরূপ ভালবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাকে ভালবাস।[17] তিনি আরো বলেন,
إِنَّ مِنْ عِبَادِ
اللهِ لَأُنَاسًا مَّا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلاَشُهَدَاءَ، يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ
وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِّنَ اللهِ. قَالُوْا:
يَارَسُوْلَ اللهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ؟ قَالَ: هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوْا
بِرَوْحِ اللهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ، وَلاَ أَمْوَالٍ
يَّتَعَاطَوْنَهَا، فَوَاللهِ إِنَّ وُجُوْهَهُمْ لَنُوْرٌ وَّإِنَّهُمْ لَعَلَى
نُوْرٍ، لاَيَخَافُوْنَ إِذَا خَافَ النَّاسُ، وَلاَيَحْزَنُوْنَ إِذَا حَزِنَ
النَّاسُ، وَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ: أَلاَ إِنَّ أَوْلِيْاءَ اللهِ لاَ خَوْفٌ
عَلَيْهِمْ وَلاَهُمْ يَحْزَنُوْنَ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীও নন এবং শহীদও ননকিন্তু ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে
তাদের মর্যাদা দেখে নবী-শহীদগণও ঈর্ষা করবেন
ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা শুধু আল্লাহর রূহ (কুরআনের
সম্পর্ক) দ্বারা পরস্পরকে ভালবাসে
অথচ তাদের মধ্যে কোন প্রকার আত্মীয়তা নেই এবং তাদের পরস্পরে
মাল-সম্পদের লেনদেনও নেই
আল্লাহর কসম! তাদের চেহারা হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা উপবিষ্ট হবেন নূরের উপরতারা ভীত-সন্ত্রস্ত
হবে না
,
যখন সমস্ত মানুষ ভীত থাকবেতারা
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না
, যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন থাকবেঅতঃপর তিনি কুরআনের
এই আয়াত তেলাওয়াত করেন
, জেনে রাখ! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা
দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না
।[18]
২৮. মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দূরীভূত করা :
দুনিয়াতে মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা
বা তার কোন কষ্ট লাঘব করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করার মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
এরশাদ করেন
, وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ،
وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُّسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ
كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
. যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা তার অভাব মোচনে সাহায্য করবেনযে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদ সমূহের কোন একটি বড় বিপদ দূর
করে দিবেন
আর যে ব্যক্তি কোন
মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে
, আল্লাহ তাআলা
ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন
।[19]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি
কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে
, আল্লাহ ক্বিয়ামতে
তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন
যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেনযে ব্যক্তি কোন
মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে
, আল্লাহ দুনিয়া ও
আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন
আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।[20]
তিনি আরো বলেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ
الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ

যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে
দিবেন
।[21]
২৯. ছয়টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া :
ছয়টি এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কোন ব্যক্তি সেগুলির অধিকার হলে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন
তিনি বলেন,
اضْمَنُوْا لِيْ
سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، وَأَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا
حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ،
وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ
.
তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয় তা আদায়
করবে
। (৪) নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে
। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে
(অন্যায় কাজ হ
তে) বিরত রাখবে।[22]
৩০. মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা :
মুসলিম মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা
জান্নাত লাভের মাধ্যম
হুছায়েন ইবনে মেহছান তার ফুফু আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তার ফুফু একদা তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলেনরাসূল (ছাঃ) তার
প্রয়োজন পূর্ণ করলেন
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ
قَالَتْ مَا أَلُوْهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أُنْظُرِيْ
أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّهُ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ
তোমার স্বামী
আছে কি
?
সে বলল, হ্যাঁ আছেরাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার কেমন স্ত্রী? সে বলল, আমি তার খিদমত করতে কম করি না, তবে যদি আমি তার ব্যাপারে অপারগ হইরাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি যা বলছ, সে ব্যাপারে
চিন্তা কর
, তুমি তার থেকে কোথায় যাবে? নিশ্চয়ই সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম।[23] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا
وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ
الْجَنَّةِ شَاءَتْ
কোন মহিলা যখন তার প্রতি নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায়
করে
,
রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ও স্বামীর অনুগত থাকে, তখন সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।[24]
৩১. ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেওয়া :
ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে
দিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، وَكَانَ يَقُوْلُ
لِفَتَاهُ: إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، لَعَلَّ اللهَ أنْ
يَّتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ
এক ব্যক্তি
লোকদেরকে ঋণ দিত
সে তার কর্মচারীকে
বলত
,
কোন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধে অক্ষম দেখলে তাকে
ক্ষমা করে দিও
হয়তো এ কাজের বিনিময়ে
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন
রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি
মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট পৌঁছলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন
।[25] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ
الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ
যে ব্যক্তি এ
কামনা করে যে আল্লাহ তা
আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দেন, সে যেন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন
করে কিংবা মাফ করে দেয়
।[26] তিনি আরো বলেন,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ
وَضَعَ لَهُ، أَنْجَاهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيامَةِ
–  যে ব্যক্তি ঋণ
পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণ ক্ষমা করে দিবে
, আল্লাহ তাকে ক্বিযামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি
দিবেন
।[27] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا، أَوْ
وَضَعَ عَنْ مُعْسِرٍ أَظَلَّهُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ
যে ব্যক্তি ঋণ
পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে
, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন রহমতের এক বিশেষ ছায়া দান করবেন।[28]
৩২. গোলাম আযাদ করা :
কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করলে তা জাহান্নাম থেকে
পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসাবে গণ্য হয়
নবী করীম (ছাঃ) বলেন, أَيُّمَا اِمْرِئٍ مُسْلِمٍ أَعْتَقَ اِمْرَأً
مُسْلِمًا كَانَ فِكَاكُهُ مِنَ النَّارِ
যে কোন
মুসলমান দাসকে মুক্ত করবে
, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।[29]
তিনি আরো বলেন,أَيُّمَا رَجُلٍ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا
اسْتَنْقَذَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ

যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মুক্ত করবে, আযাদ ব্যক্তির
প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন
।[30]
৩৩. তওবা করা :
যে ব্যক্তি অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা
চায় সে আল্লাহর ভালবাসা লাভ করে
এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি তত খুশী হন নানবী করীম (ছাঃ) বলেন, كُلُّ بَنِيْ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ اَلْخَطَّائِيْنَ
اَلتَّوَّابُوْنَ
প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধীউত্তম অপরাধী তারাই যারা তওবা করে।[31] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,
قَالَ يَا
عِبَادِيْ إِنِّيْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِيْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ
مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوْا، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ
هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ
مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِيْ أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ
عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِيْ أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِيْ
إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ
جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ
হে আমার বান্দারা! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা
হারাম করেছি
সুতরাং তোমরা পরস্পর
যুলুম করো না
হে আমার বান্দাগণ!
তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই
সুতরাং তোমরা আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাওআমি তোমাদেরকে পথ
দেখাব
হে আমার বান্দাগণ!
তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই
অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাওআমি তোমাদেরকে খাদ্য
দিব
হে আমার বান্দাগণ!
তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই
সুতরাং তোমরা আমার
নিকট পোশাক চাও
আমি তোমাদেরকে পরিধান
করাব
হে আমার বান্দাগণ!
তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন
, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ
করে দেই
সুতরাং তোমরা আমার
নিকট ক্ষমা চাও
, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব।[32]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, والَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ،
لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا، لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ، وَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ،
فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهُ تَعَالَى، فَيَغْفِرُ لَهُمْ
ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে
আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে
আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত
আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।[33]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا
اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
যখন বান্দা
গুনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন
।[34]
বান্দা পাপ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা
প্রার্থনা করলে তিনি অতি খুশি হন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
اَللَّهُ أَشَدُّ
فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ
عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ
وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِيْ ظِلِّهَا قَدْ
أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِهَا قَائِمَةٌ
عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ
أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তাঁর নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যার বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার
নিকট হ
তে ছুটে পালায় যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিলএতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে
পড়ে
সে তার বাহন সম্পর্কে
সম্পূর্ণ নিরাশ
এমতাবস্থায় সে হঠাৎ
দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে
সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রতিপালক! সে
ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে
।[35] অন্য হাদীছে
এসেছে
,
তিনি বলেন,
إِنَّ عَبْدًا
أَصَاب ذَنْبًا، وَرُبَّمَا قَالَ، أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ
وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَبْتُ فَاغْفِرْ لِيْ فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ
أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ
مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا، أَوْ أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ:
رَبِّ أَذْنَبْتُ، أَوْ أَصَبْتُ آَخَرَ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ
أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ
مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَابَ ذَنْبًا
قَالَ: قَالَ رَبِّ أَصَبْتُ أَوْ أَذْنَبْتُ آخَرَ فَاغْفِرْهُ لِيْ فَقَالَ:
أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ
لِعَبْدِيْ ثَلاَثًا فَلْيَعْمَلْ مَا شَاءَ
কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার
প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি
, তুমি তা ক্ষমা করতখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফেরেশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন
প্রতিপালক আছেন
, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে
শাস্তি দিবেন
? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলামঅতঃপর আল্লাহ যতদিন
চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল
আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার
প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি
, তুমি আমাকে ক্ষমা করতখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দিবেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলামঅতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ
চাইলেন
আবার অপরাধ করল এবং
বলল
,
হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আর এক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করতখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা
কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন
, যিনি অপরাধ
ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন
? আমি তাকে
ক্ষমা করে দিলাম
সে যা ইচ্ছা করুক।[36]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ দোআ হল তোমার এরূপ
বলা-
اللَّهُمَّ أَنْتَ
رَبِّيْ لاَ إلهَ إلاَّ أنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأنَا عَلَى عَهْدِكَ
وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ
بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وأبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ، فَإنَّهُ لاَ
يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ. مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوْقِناً
بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ،
وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ، وَهُوَ مُوْقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أنْ
يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ
হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত
কোন মাবূদ নেই
, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছআমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর আছিআমি আমার কৃতকর্মের
মন্দ পরিণাম হ
তে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছিআমার প্রতি তোমার অনুগ্রহকে আমি স্বীকার করি
এবং আমার অপরাধকে স্বীকার করি
সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করকেননা তুমি ব্যতীত অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেইঅতঃপর রাসূল (ছাঃ)
বললেন
,
যে ব্যক্তি এ দোআর প্রতি বিশ্বাস রেখে দিনে বলবে
আর সন্ধ্যার আগে মারা যাবে
, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবেআর যে বিশ্বাস করে
রাতে বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে
।[37]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ الله
تَعَالَى يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ
عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ
ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ.
يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ
لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন
তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব
, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেনআমি কারো পরওয়া করি নাআদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও
পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব
আমি ক্ষমা করার
ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না
আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে
উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস
, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।[38] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ لَزِمَ
الاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجاً، وَمِنْ كُلِّ
هَمٍّ فَرَجاً، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ
যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য
প্রত্যেক সংকীর্ণতা হ
তে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে
মুক্তি দেন
আর তাকে অকল্পনীয় উৎস
তে রিযিক দান করেন।[39]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি
বলল
,
أسْتَغْفِرُ اللهَ
الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُوْمُ وَأتُوْبُ إلَيْهِ، غُفِرَتْ
ذُنُوْبُهُ، وإنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ
– (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইযিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেইযিনি চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নিকট
তওবাকারী
।) আল্লাহ তাকে
ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের মাঠ হ
তে পালিয়ে গিয়ে থাকে।[40]
উপরে বর্ণিত আমলগুলি কোন মুমিন পূর্ণ একনিষ্ঠতা
সহকারে যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে সে অবশ্যই জান্নাত লাভ করতে পারবে
আল্লাহর উপরে অবিচল
আস্থা-বিশ্বাস ও তাঁর রহমত লাভের আশা নিয়ে এসব আমলের পাশাপাশি আরো যেসব আমলে
আল্লাহ রাযী-খুশি ও সন্তুষ্ট হন সেগুলি সম্পাদন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য
করণীয়
আল্লাহ আমাদের সকলকে
জান্নাতী আমলসমূহ সম্পাদন করে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার তাওফীক দান
করুন-আমীন!
[1]. বুখারী ২/৮৮২; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৮ ছালাত অধ্যায়
[2]. মুসলিম হা/২৫৫১; মিশকাত হা/৪৯১২, শিষ্টাচার অধ্যায়
[3]. আহমাদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; ছহীহুল জামে হা/১২৪৯
[4]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪
[5]. বুখারী হা/১৩৯৬
[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ
হা/৪৯
; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৫০৮
[7]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৯৯২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত
তারহীব হা/২৫৬০
[8]. বুখারী হা/৬০১৬; মিশকাত হা/৪৯৬২
[9]. মুসলিম হা/৪৬; মিশকাত হা/৪৯৬৩
[10].বুখারী হা/৬০০৭; নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৫১
[11]. আবু দাউদ হা/৫১৫০, সনদ ছহীহ
[12]. মুসলিম হা/২৯৮৩
[13]. মুসলিম হা/২৬৩১; মিশকাত হা/৪৯৫০
[14]. তিরমিযী হা/১৯১৪; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/২৯৭
[15]. মুওয়াত্তা মালেক, মিশকাত, হা/৫০১১, সনদ ছহীহ
[16]. মুসলিম হা/২৫৬৬, মিশকাত, হা/৫০০৬
[17]. মুসলিম, হা/২৫৬৭; মিশকাত, হা/৫০০৭
[18]. আবুদাঊদ হা/৩৫২৭, মিশকাত, হা/৫০১২, ছহীহ লি-গায়রিহি
[19]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৮
[20]. মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৬
[21]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪
[22]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/১৪৭০
; ছহীহুল জামে হা/১০১৮
[23]. মিশকাত হা/৪৯৪১; সিলসিলা ছহীহা
হা/২৬১২
, ১৯৩৪
[24]. আবু নুআইম, মিশকাত হা/৩২৫৪, হাদীছ ছহীহ
[25]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০১
[26]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০২
[27]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০৩
[28]. মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/২২৭৮
[29]. ইবনু মাজাহ হা/২৫২২; তিরমিযী হা/১৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৮২৮
[30]. বুখারী হা/২৫১৭; মুসলিম হা/১৫০৯
[31]. আবু দাউদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৪০
[32]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬
[33]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৮
[34]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০
[35]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩২
[36]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩
[37]. বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫
[38]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬
[39]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৩৩৯
[40]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৫৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top