— লিলবর আল-বারাদী
ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজ ও সামাজিকতার বলয়ে বসবাসে মানুষ অভ্যস্ত। ফলে জামা‘আতী যিন্দেগীর বাস্তব ও অকৃত্রিম বন্ধনে পরস্পর পরস্পরে জড়িয়ে রয়েছে। জামা‘আতের শাব্দিক উৎস সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, الْجَمَاعَةُ هِيَ الِاجْتِمَاعُ وَضِدُّهَا الْفُرْقَةُ؛ وَإِنْ كَانَ لَفْظُ الْجَمَاعَةِ قَدْ صَارَ اسْمًا لِنَفْسِ الْقَوْمِ الْمُجْتَمِعِينَ ‘জামা‘আত হ’ল সমাজবদ্ধতা। এর বিপরীত হ’ল বিচ্ছিন্নতা। যদিও জামা‘আত শব্দটি স্বয়ং ঐক্যবদ্ধ জাতির নামে পরিণত হয়েছে’।[1] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেছেন, وَتَفْسِيرُ الْجَمَاعَةِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ هُمْ أَهْلُ الْفِقْهِ وَالْعِلْمِ وَالْحَدِيثِ ‘বিদ্বানগণের নিকটে জামা‘আতের ব্যাখ্যা হ’ল তারা হ’লেন আহলুল ফিক্হ, আহলুল ইলম ও আহলুল হাদীছ’।[2]
জামা‘আত হ’ল বিশেষত ছাহাবায়ে কেরাম। এ কথার ভিত্তিতে জামা‘আত শব্দটি অন্য একটি বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যশীল। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِى ‘জামা‘আত হ’ল আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যার উপরে রয়েছি’।[3] খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ অর্থ কি- একথা জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, اَلْجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَإِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ ‘হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও’।[4]
মোটকথা হ’ল, জামা‘আত শব্দের ব্যাখ্যায় দু’টি অর্থই গ্রহণযোগ্য। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ ‘তোমাদের উপর আবশ্যক হ’ল জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাস করা’।[5] এর অর্থ সম্পর্কে বলেন, এখানে দু’টি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহ যখন কোন কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হবে, তখন পরবর্তীদের জন্য অন্য আরেকটি মতামত আবিস্কার করা জায়েয হবে না। দ্বিতীয় অর্থ হ’ল- তারা যখন কোন ইমামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবে, তখন তার সাথে বিবাদ করা বা তার বিরোধিতা করা বৈধ হবে না।
নিম্নে দ্বিতীয় অর্থটির আলোকে জামা‘আতবদ্ধ থাকার সুফলগুলো আলোচনা করা হ’ল।
১. আল্লাহর আদেশ প্রতিপালন করা : মহান আল্লাহ যা আদেশ ও নিষেধ করেছেন তা মান্য করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপরিহার্য। যেমন আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের’ (নিসা-৪/৫৯)। আবার আল্লাহর আদেশ অমান্য করে কোন সৃষ্টির কথাকে প্রাধান্য দেয়া সমীচীন নয়। এ বিষয়ে রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেন, ‘স্রষ্টার (আল্লাহর) অবাধ্যে সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই’।[6] মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে ভয় করা উচিত এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)।
ক. আল্লাহর রজ্জু দৃঢ় ভাবে ধারণ করা : জামা‘আতবদ্ধতা মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলামে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। জামা‘আতবদ্ধভাবে জীবন যাপনের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ‘তোমরা সকলে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নে‘মতের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তর সমূহে মহববত পয়দা করে দিলেন। তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা অগ্নি গহবরের কিনারায় অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় আয়াতসমূহ ব্যাখ্যা করেন, যাতে তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হও’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)।
এখানে حَبْلُ اللهِ বা আল্লাহর রজ্জু বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَلاَ وَإِنِّى تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَحَدُهُمَا كِتَابُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ هُوَ حَبْلُ اللهِ مَنِ اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الْهُدَى وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى ضَلاَلَةٍ ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। এর একটি আল্লাহর কিতাব, যেটি ‘হাবলুল্লাহ’ বা আল্লাহর রজ্জু। যে এর অনুসরণ করবে, সে হেদায়াতের উপর থাকবে; আর যে একে ছেড়ে দিবে, সে পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে’।[7] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلاَثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوْهُ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَلاَ تَفَرَّقُوْا، وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পসন্দ করেন এবং তিনটি জিনিস অপসন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পসন্দ করেন যে, ১. তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। ২. তোমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করবে ও ৩. পরস্পর বিভক্ত হবে না। আর তিনি তোমাদের জন্য অপসন্দ করেন ১. কারো সমালোচনা করা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. অর্থ-সম্পদ নষ্ট করা’ (সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয় করা)।[8]
খ. পরস্পর মতভেদ না করা : ইহুদী-নাছারাদের মত বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ততা থেকে সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ، يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوْهٌ ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে ও পরস্পর মতভেদে লিপ্ত রয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। সেদিন কতগুলি মুখমন্ডল হবে শ্বেতবর্ণ এবং কতক মুখমন্ডল হবে কৃষ্ণবর্ণ’ (আলে ইমরান ৩/১০৫-১০৬)।
ইবনু জারীর (রহঃ) তার সনদে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণী সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে ও পরস্পরে মতভেদে লিপ্ত রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১০৫)। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে জামা‘আত আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত ও পরস্পর মতভেদে লিপ্ত হ’তে নিষেধ করেছেন। তিনি তাদেরকে এ সংবাদও দিয়েছেন যে, তাদের পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যাপারে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।[9] ইবনু কাছীর (রহঃ) আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর ব্যাপারে ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوْهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوْهٌ ‘সেদিন কতগুলি মুখমন্ডল হবে শ্বেতবর্ণ এবং কতক মুখমন্ডল হবে কৃষ্ণবর্ণ’ (আলে ইমরান ৩/১০৫)। তিনি বলেন, অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল এবং বিদ‘আতী ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত ব্যক্তিদের মুখমন্ডল হবে কালো।[10]
যারা বিভেদ করেছে তাদের জন্যে কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। অতঃপর তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন’ (আন‘আম ৬/১৫৯)।
গ. বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকা : জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কুরআনের দলীলসমূহ অভিন্ন হয়েছে। ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ) তার সনদে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে নিম্নের আয়াতের ব্যাপারে বর্ণনা করেন যে, وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَلاَ تَفَرَّقُوْا ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। এর অর্থ জামা‘আত’।[11]
আল্লাহ তা‘আলার নিম্নের বাণীর ব্যাপারে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেছেন, وَلاَ تَفَرَّقُوْا ‘তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩) ‘তিনি তাদেরকে জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাসের নির্দেশ দিয়েছেন এবং দলে দলে বিভক্ত হ’তে নিষেধ করেছেন’।[12]
২. রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করা : মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল’…… (নিসা ৪/৮০) অন্যত্র বলেন,وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ‘আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদেরকে অনুগ্রহ করা যায়’ (আলে ইমরান ৩/১৩২)। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ ‘আর রাসূল তোমাদের যা দান করেন তোমরা তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু নিষেধ করেন, তোমরা তা থেকে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)।
ক. ইমারতের আনুগত্য করা : আমীর, মা‘মূর ও বায়‘আতের মাধ্যমে গঠিত হয় শারঈ ইমারত। আর এই শারঈ ইমারতের আনুগত্য করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ জামা‘আত থেকে বের হয়ে যাওয়া অর্থাৎ ইমারতকে লাঞ্ছিত করা। আর সে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে লাজওয়াব অবস্থায়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَاسْتَذَلَّ الْإِمَارَةَ لَقِيَ اللهَ وَلَا حُجَّةَ لَهُ عِنْدَهُ ‘যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হ’ল এবং ইমারতকে লাঞ্ছিত করল, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে তার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ থাকবে না’।[13]
খ. জামা‘আতবদ্ধ জীবনে আমীরের আনুগত্যশীল থাকা : জামা‘আতের আমীর এমন ব্যক্তি হবেন, যিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা লোকদের পরিচালনা করবেন। আল্লাহর আনুগত্য যেমন, অনুরূপ রাসূলের ও আমীরের আনুগত্য করা যরূরী। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর। আনুগত্য কর রাসূলের ও আমীরের’ (নিসা-৪/৫৯)। আমীরের অবাধ্যতা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ أَطَاعَ أَمِيرِى فَقَدْ أَطَاعَنِى وَمَنْ عَصَى أَمِيرِى فَقَدْ عَصَانِى ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। যে আমার আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমার আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমার অবাধ্যতা করল’।[14] আমীর যদিও নিম্নস্তরের ব্যক্তি হোন তবুও তঁার আনুগত্য করতে হবে। হাদীছে এসেছে, উম্মুল হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ أَسْوَدُ يَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللهِ تَعَالَى فَاسْمَعُوْا لَهُ وَأَطِيعُوْا ‘যদি তোমাদের উপর একজন নাক-কান কাটা কৃষ্ণকায় গোলামকেও আমীর নিযুক্ত করা হয়, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করেন, তোমরা তার কথা শোন এবং আনুগত্য কর’।[15]
আমীর বিহীন বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করা নিষিদ্ধ। এমনকি তিনজন মুসলিম সফরে বের হলে তাদের একজনকে আমীর নির্ধারণ করা যরূরী। এ মর্মে রাসূল ছাঃ) বলেন, عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ فِى سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوا أَحَدَهُمْ ‘যখন তিনজন একত্রে সফরে বের হবে তখন তাদের মধ্যে একজনকে যেন তারা ‘আমীর’ নিযুক্ত করে নেয়’।[16] অন্যত্র এসেছে আমীর ব্যতীত কোথাও অবস্থান করা হালাল নয়। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَحِلُّ لِثَلاَثَةِ نَفَرٍ يَكُونُونَ بِأَرْضِ فَلاَةٍ إِلاَّ أَمَّرُوا عَلَيْهِمْ أَحَدَهُمْ ‘কোন তিনজন ব্যক্তির জন্যেও কোন নির্জন ভূমিতে অবস্থান করা হালাল নয় তাদের মধ্যে একজনকে ‘আমীর’ নিযুক্ত না করা পর্যন্ত’।[17]
জামা‘আত যেমন যরূরী ঠিক তেমনি আমীর বা নেতা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَإِمَامَهُمْ ‘তোমরা মুসলমানদের জামা‘আতকে এবং তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে’।[18] আমীরের দোষ দিয়ে জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হুঁশিয়ার করে বলেন,مَنْ رَاىَ مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ فَإِنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ يُفَارِقُ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَيَمُوْتُ إِلاَّ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে তার আমীরের মধ্যে অপসন্দনীয় কোন কিছু লক্ষ্য করে, তাহ’লে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হ’ল, সে জাহেলিয়াতের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল’।[19] ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা প্রমাণিত হয়েছে।[20] এর ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, তাদের মৃত্যু হবে ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের মানুষদের ন্যায় ভ্রষ্টতার উপরে যাদের কোন অনুসরণীয় নেতা ছিল না। কেননা তারা নেতৃত্ব সম্পর্কে জানত না। এর অর্থ এই নয় যে, তারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। বরং তারা আল্লাহর অবাধ্য অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। এখানে জাহেলী অবস্থার সাথে তুলনা করাটা ধমকি দেওয়া অর্থেও হ’তে পারে ।[21]
ইমাম নববী (রহঃ) ছহীহ মুসলিমে এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহের অধ্যায় রচনা করেছেন এভাবে باب وجوب ملازمة جماعة المسلمين عند ظهور الفتن وفي كل حال وتحريم الخروج من الطاعة ومفارقة الجماعة ‘ফিৎনার আবির্ভাব ও সর্বাবস্থায় মুসলমানদের জামা‘আত আঁকড়ে ধরার আবশ্যকতা এবং আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম’ প্রসঙ্গে অনুচ্ছেদ।[22]
গ. জামা‘আতবদ্ধ জীবনে বায়‘আত গ্রহণ করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِى عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এমন অবস্থায় যে, তার গর্দানে (আমীরের আনুগত্যের) বায়‘আত নেই। সে জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল’।[23] রাসূল (ছাঃ) কোন সফরে তিনজন একত্রিত হলেও যেখানে একজন আমীর নিয়োগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন,[24] সেখানে ইসলামে সংঘবদ্ধতার রূপ ও প্রকৃতি অনুধাবনে মোটেও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। শায়খ উছায়মীন যথার্থই বলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করেন যে, আজকের দিনে মুসলমানদের কোন ইমামও নেই, বায়‘আতও নেই। জানি না তারা কি চান যে, মানুষ বিশৃংখলভাবে চলুক এবং তাদের কোন নেতা না থাকুক? নাকি তারা চান যে এটা বলা হোক- প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের আমীর বা নেতা? [25]
ঘ. জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের গুরুত্বারোপ : অন্যত্র তিনি বলেন, اَلْجَمَاعَةُ رَحْمَةٌ وَالْفُرْقَةُ عَذَابٌ ‘নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাস রহমত স্বরূপ এবং বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস আযাব স্বরূপ’।[26] মুসলমান জাতি সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং সেই ঐক্যবদ্ধ জামা‘আতের ওপর আল্লাহর হাত এবং বিছিন্নতাবাদীদের জন্যে জাহান্নাম রয়েছে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ لاَ يَجْمَعُ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم عَلَى ضَلاَلَةٍ، وَيَدُ اللهِ عَلَي الْجَمَاعَةِ، وَمَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّارِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে গোমরাহীর উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আর জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে। যে ব্যক্তি (মুসলিম জামা‘আত হ’তে) বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, সে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জাহান্নামে গেল’।[27]
নাঈম ইবনু আবী হিন্দ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, একদা আবু মাসঊদ কূফা নগরী হ’তে বের হয়ে বললেন, عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ لِيَجْمَعَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ عَلَى ضَلاَلَةٍ ‘তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল জামা‘আতবদ্ধভাবে জীবন যাপন করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে কখনো গোমরাহীর উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না’।[28]
যারা জামা‘আতবদ্ধভাবে জীবন যাপন করে তারা আল্লাহর বিশেষ রহমতের মধ্যে থাকেন। এ সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يَدُ اللهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ ‘জামা‘আতের উপরে আল্লাহর হাত রয়েছে’।[29]
ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ ‘তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল যে, জামা‘আতবদ্ধ থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে দূরে থাকবে’ ।[30]
ঙ. জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনে জান্নাতের মধ্যস্থলে বসবাস : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জামা‘আতবদ্ধ হয়ে বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা জান্নাতের মধ্যখানে বসবাসের প্রত্যাশা করে, তারা যেন জামা‘আতবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এমর্মে হাদীছে এসেছে, عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ، اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلم قَالَ: عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ وَهُوَ مِنَ الِاثْنَيْنِ أَبْعَدُ، وَمَنْ أَرَادَ بُحْبُوْحَةَ الْجَنَّةِ فَعَلَيْهِ بِالْجَمَاعَةِ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে বসবাস করবে এবং বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। কারণ শয়তান একজনের সাথে থাকে এবং দু’জন থেকে সে অনেক দূরে থাকে। যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন অবশ্যই জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করে’।[31]
৩. জামা‘আতবদ্ধতা একটি সামাজিক শক্তি : জামা‘আতবদ্ধতা একটি দেহের মত, যদি সেখানে মুমিন বান্দা সমাবেত থাকেন। আর এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِى تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى ‘তুমি মুমিনদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন সমস্ত শরীর নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’।[32] তিনি আরও বলেন, الْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ- ‘সকল মুমিন এক ব্যক্তির ন্যায়, যখন তার মাথা অসুস্থ হয় তখন তার সমস্ত দেহ অসুস্থ হয় এবং যখন তার চোখ অসুস্থ হয় তখন সমস্ত দেহ অসুস্থ হয়’ ।[33]
মুমিন বান্দা পরস্পর সহযাত্রী হয়ে একটি গৃহের মত সুদৃঢ় থাকবে মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ثُمَّ شَبَّكَ بَيْنَ أَصَابَعِهِ. ‘একজন মুমিন আর একজন মুমিনের জন্য এক গৃহের মত, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলগুলির মধ্যে প্রবিষ্ট করালেন’।[34]
জামা‘আতবদ্ধ সকল মুসলমান পরস্পর পরস্পরের ভাই ভাই। সুতরাং সে অপর ভাইয়ের নিকটে সুরক্ষিত থাকবে। এই মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَيَظْلِمُهُ، وَلاَيَخْذُلُهُ، وَلاَيَحْقِرُهُ، اَلتَّقْوَى هَهُنَا وَيُشِيْرُ إِلىَ صَدْرِهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ بِحَسْبِ امْرِءٍ مِّنَ الشَّرِّ أَنْ يُّحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ : دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। কাজেই সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে লজ্জিত করবে না এবং তাকে হীন মনে করবে না। ‘তাক্বওয়া’ (আল্লাহভীতি) এখানে। একথা বলে তিনি তিনবার নিজের বক্ষের দিকে ইংগিত করলেন। তিনি আরো বলেন, কোন ব্যক্তির মনদ কাজ করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে নিজের কোন মুসলমান ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। বস্ত্ততঃ একজন মুসলমানের সবকিছুই অপর মুসলমানের জন্য হারাম। তার জান, মাল ও সম্মান’।[35]
আর এই মুমিন ভাইদের কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ মুমিন বান্দারা একতা ও জামা‘আতবদ্ধতার ওপর অবিচল থাকবে। কিন্তু কোন বান্দা গোমরাহীর উপর ঐক্যবদ্ধ হ’তে পারবে না। সুতরাং সকল প্রকার গোমরাহীর উপরে উম্মাতে মুহাম্মাদী তথা আহলুল হাদীছগণ জামা‘আতবদ্ধ থাকবেন। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, হাকেম এবং তিরমিযীতে ইবনু ওমর থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এই উম্মত কখনো গোমরাহীর উপর ঐক্যবদ্ধ হবে না’।
অতঃপর হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ইয়াসীর ইবনু আমর হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমরা আবু মাসঊদকে (আনছারী) বিদায় জানানোর জন্য তার সাথে বের হ’লাম। তিনি কংকরময় পথ ধরে চলা শুরু করলেন। এরপর তিনি এক বাগানে প্রবেশ করে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করলেন। অতঃপর তিনি ওযূ করে মোজার উপরে মাসাহ করলেন এবং বাগান থেকে এমন অবস্থায় বের হ’লেন যে, তার দঁাড়ি থেকে পানি ঝরছিল। আমরা তাকে বললাম, আমাদের কিছু উপদেশ দিন। কারণ লোকেরা ফিতনায় পতিত হয়েছে। আমরা জানি না আপনার সাথে আর সাক্ষাৎ হবে কিনা? তখন তিনি বললেন, اتَّقُوا اللهَ وَاصْبِرُوْا، حَتَّى يَسْتَرِيْحَ بِرٌّ، أَوْ يُسْتَرَاحَ مِنْ فَاجِرٍ، وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ، فَإِنَّ اللهَ لاَ يَجْمَعُ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ عَلَى ضَلاَلَةٍ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ না সৎ ব্যক্তিগণ বিশ্রাম পায় অথবা তারা পাপাচারী থেকে রক্ষা পায়। আর তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল জামা‘আতবদ্ধ যাপন করা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে গোমরাহীর উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না’।[36] ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) বলেছেন, وَالصَّوَابُ أَنَّ الْمُرَادَ مِنَ الْخَبَرِ لُزُومُ الْجَمَاعَةِ الَّذِينَ فِي طَاعَةِ مَنِ اجْتَمَعُوا عَلَى تَأْمِيرِهِ فَمَنْ نَكَثَ بَيْعَتَهُ خَرَجَ عَنِ الْجَمَاعَةِ ‘সঠিক হচ্ছে হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল ঐ জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরা, যারা তাদের সর্বসম্মত আমীরের আনুগত্যে রয়েছে। যে তার বায়‘আত ভঙ্গ করল, সে জামা‘আত থেকে বের হয়ে গেল’।[37] (ক্রমশঃ)
——————————————-
[1]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ৩/১৫৭।
[2] .তিরমিযী হা/২১৬৭-এর আলোচনা।
[3]. তিরমিযী হা/২৬৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৪৩; ছহীহাহ হা/২০৪, ১৩৪৮।
[4]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব, সনদ ছহীহ; হাশিয়া মিশকাত আলবানী হা/১৭৩।
[5]. তিরমিযী হা/২১৬৫।
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৯৬।
[7]. মুসলিম হা/২৪০৮; মিশকাত হা/৬১৩১।
[8]. আহমাদ হা/৮৭৮৫; মুসলিম হা/১৭১৫; ইবনু হিববান হা/৩৩৮৮; মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৬৩২; আবু আ‘ওয়ানা হা/৬৩৬৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৪২; ছহীহাহ হা/৬৮৫।
[9]. তাফসীর ইবনে জারীর তাবারী ৩/৩৯।
[10]. তাফসীর ইবনে কাছীর ২/৭৬।
[11]. তাফসীর ইবনে জারীর ৩/৩০।
[12]. তাফসীর ইবনে কাছীর ২/৭৪।
[13]. হাকেম হা/৪০৯; আহমাদ হা/২৩৩৩১; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/ ৯১২৮, এ হাদীছের সনদ ছহীহ। হাকেম ও আলস্নামা যাহাবী বলেন, হাদীছ ছহীহ। শু‘আইব আরনাউত বলেন, হাসান।
[14]. মুসলিম হা/৪৮৫৪; মিশকাত হা/৩৬৬১।
[15]. মুসলিম হা/১৮৩৮; মিশকাত হা/৩৬৬২।
[16]. আবুদাঊদ হা/২৬০৮; নায়লুল আওত্বার হা/৩৮৭৩, ‘আক্বযিয়াহ ও আহকাম’ অধ্যায়, সনদ ছহীহ।
[17]. আহমাদ হা/৬৬৪৭, হাদীছ হাসান।
[18]. বুখারী হা/৩৬০৬;১৮৪৭; মিশকাত হা/৫৩৮২।
[19]. বুখারী হা/৭০৫৩; মুসলিম হা/১৮৪৯; মিশকাত হা/৩৬৬৮।
[20]. আহমাদ হা/৬১৬৬; ইবনু হিববান হা/৪৫৭৮; মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৫১১; আবু আ‘ওয়ানা হা/৭১৫৫, সনদ ছহীহ।
[21]. ইবনু হাজার, ফাৎহুলবারী ৭০৫৩ নং হাদীছের ব্যাখ্যা।
[22]. শারহ ছহীহ মুসলিম ১২/২৩৬।
[23]. মুসলিম হা/১৮৫১; মিশকাত হা/৩৬৭৪।
[24]. আহমাদ হা/৬৬৪৭, হাদীছ হাসান।
[25]. ইবনুল উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ৮/৯।
[26]. ছহীহাহ হা/৬৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১০৯; আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৯৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৯১১৯; হাদীছটি হাসান পর্যায়ের।
[27]. তিরমিযী হা/২১৬৭; হাকেম হা/৩৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫০; মিশকাত হা/১৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৪৮; যিলালুল জান্নাহ হা/৮৫; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫১৭, হাদীছটি হাসান পর্যায়ের। দ্রঃ তারাজু‘আতে আলবানী হা/৮৫।
[28]. আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৮৫; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫১৭; ইবনু আবী শায়বা হা/৩৮৭৭০; ইবনু আবী আছেম হা/৭৩; আত-তালখীছুল হাবীর ৩/১৪১।
[29]. তিরমিযী হা/২১৬৫; হাকেম হা/৩৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৪৮; শু‘আবুল ঈমান হা/৭৫১৭; মিশকাত হা/১৭৩; হাদীছ ছহীহ।
[30]. তিরমিযী হা/২১৬৫; হাকেম হা/৩৮৭; আহমাদ হা/১১৪; ইবনু হিববান হা/৪৫৭৬; ছহীহাহ হা/৪৩০।
[31]. তিরমিযী হা/২১৬৫; হাকেম হা/৩৮৭; আহমাদ হা/১১৪; ইবনু হিববান হা/৪৫৭৬; ছহীহাহ হা/৪৩০; হাদীছ ছহীহ।
[32]. বুখারী হা/৬০১১; মিশকাত হা/৪৯৫৩
[33]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৪; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৭৩৭।
[34]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৫ ।
[35]. মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৯।
[36]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৭১৯২; শু‘আবুল ঈমান হা/৭১১১; হাকেম হা/৬৬৬৪, সনদ ছহীহ। দ্র. সিলসিলাতুল আছারিছ ছহীহাহ হা/৮৫।
[37]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী ১৩/৩৭।