❝জিহ্বা পরিস্কার রাখুন! মিথ্যা কথা বলা ও হারাম ভক্ষণ থেকে বিরত থেকে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে যিকির ও ইস্তেগফার পাঠ করুন❞। জিহ্বা দ্বারা মানুষ নানা প্রকার পাপ করে থাকে। যেমন মিথ্যা কথা বলা, হারাম ভক্ষণ করা, গীবত করা, অপবাদ দেয়া, অশালীন বাক্য বলে, মানুষকে মুখের কথায় কষ্ট দেয় ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا یَسۡخَرۡ قَوۡمٌ مِّنۡ قَوۡمٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا خَیۡرًا مِّنۡهُمۡ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنۡ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُنَّ خَیۡرًا مِّنۡهُنَّ ۚ وَ لَا تَلۡمِزُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ ؕ بِئۡسَ الِاسۡمُ الۡفُسُوۡقُ بَعۡدَ الۡاِیۡمَانِ ۚ وَ مَنۡ لَّمۡ یَتُبۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ‘’হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো যালিম’’( হুজুরাত ৪৯/১১)।
মানুষ বুঝে না বুঝে অন্যকে জিহ্বার মাধ্যমে কষ্ট দেয়। কিন্তু সেই কষ্ট দেয়া যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে দুনিয়ার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে। কাউকে তুচ্ছ জ্ঞান করার পরিণাম জাহান্নাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’জন ব্যক্তি ছিলো। তাদের একজন পাপ কাজ করতো এবং অন্যজন সর্বদা ইবাদাতে লিপ্ত থাকতো। যখনই ইবাদাতরত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখত তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করার জন্য বলত।
একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বলল, তুমি এমন কাজ থেকে বিরত থাকো। লোকটি বলল, আমাকে আমার রবের উপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বলল, আল্লাহ্র কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।
অতঃপর দুই জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহ্র নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি (আল্লাহ) ইবাদতকারী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবানী ছিলে? এবং পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করো।
আর অপর ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَوْبَقَتْ دُنْيَاهُ وَآخِرَتَهُ ‘সেই মহান সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার জীবন! সে এমন উক্তি করেছে যার ফলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েই বরবাদ হয়ে গেছে’(আবূ দাউদ হা/৪৯১০; ছহীহ হাদীছ)।
জিহ্বা থেকে যে নিরাপদ সেই প্রকৃত মুমিন মুসলমান। আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ. ‘যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে’ (বুখারী হা/১১)।
জিহ্বার পরিস্কার রাখতে পারলে জান্নাত আপনারই হবে। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জা-স্থান)এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (তিরমিযী হা/১৫২৭)
কত শত কথার বাঁকে আমার সঞ্চিত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। যা কল্পনাতীত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلاَ تُبْطِلُوْا أَعْمَالَكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং স্বীয় আমল বিনষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)। তিনি আরো বলেন, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِيْنَ أَعْمَالاً، الَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا ‘তুমি বলো, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমল করে যাচ্ছে’ (কাহ্ফ ১৮/১০৩-১০৪)।
জিহ্বা থেকে আশ্রয় প্রার্থণার জন্য দোআ : আমরা আল্লাহর নিকটে পান চাই। যেন তিনি আমাদেরকে হেফাযত করেন। নিচের দোআগুলো পাঠ করুন-
দো‘আ – ০১
أَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ وَمِنْ شَرِّ بَصَرِيْ وَمِنْ شَرِّ لِسَانِيْ وَمِنْ شَرِّ قَلْبِيْ وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّيْ ” .
’’হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কানের অশ্লীল শ্রবণ, চোখের কুদৃষ্টি, জিহ্বার কুবাক্য, অন্তরের কপটতা ও কামনার অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই’’ (আবূ দাঊদ হা/১৫৫১)।
দো‘আ – ০২ : আল্লাহ যেন তাঁর বান্দার মধ্যে নূর ঢেলে দেন সেই কামনা করার দোআ :
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لِي فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي لِسَانِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَمِنْ فَوْقِي نُورًا وَمِنْ تَحْتِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ شِمَالِي نُورًا وَمِنْ بَيْنِ يَدَىَّ نُورًا وَمِنْ خَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي نَفْسِي نُورًا وَأَعْظِمْ لِي نُورًا ”
“হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে নূর দিয়ে দিন, আমার জিহ্বায় নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর দিন, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর এবং আমার পিছনে নূর দিন এবং আমার অন্তরে নূর প্রদান করুন এবং আমাকে বিরাট নূর দান করুন” (বুখারী হা/১৬৭০)।