ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হ’ল ‘ছালাতুল লায়িল’। ‘ছালাতুল লায়িল’ বলতে রাতের বিশেষ নফল ছালাত তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ বুঝানো হয়েছে। রামাযান মাসে রাতের প্রথমাংশে এশার পরে তারাবীহ এবং রামাযানের বাহিরে রাতের এক তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করা হয়। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিন রাকা‘আত বিতরসহ তাহাজ্জুদ ও তারাবীহর ছালাত মোট এগার রাকা‘আত।১।
১. তাহাজ্জুদ ছালাতের পরিচয় :
‘ছালাতুল লায়িল’ বা রাতের বিশেষ নফল ছালাতকে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ বলা হয়।
তাহাজ্জুদ : মূল ধাতু هُجُوْدٌ (হুজূদুন) অর্থ : রাতে ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠা। সেখান থেকে تَهَجُّدٌ (তাহাজ্জুদুন) পারিভাষিক অর্থে রাত্রিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা বা রাত্রি জেগে ছালাত আদায় করা (আল-মুনজিদ)। রাতের এক তৃতীয়াংশ বা শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠে একাকী তাহাজ্জুদের নফল ছালাত আদায় করতে হয়।
২. তাহাজ্জুদ ছালাত কবূলের দো‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، وَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ.
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ‘লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ। ওয়া রাব্বিগ ফিরলী।
অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই জন্য প্রশংসা, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান, আমি আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহ্র সাহায্য ব্যতীত আমার কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো’।৩।
৩. তাহাজ্জুদ ছালাতের ফযীলত :
(১) ওবাদা বিন ছামিত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ تَعَارَّ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ثُمَّ قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ أَوْ قَالَ ثُمَّ دَعَا اسْتُجِيْبَ لَهُ فَإِنْ تَوَضَّأَ وَصَلَّى قُبِلَتْ صَلَاتُهُ.
‘যে ব্যক্তি রাতে জেগে বলে, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ‘লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ। ওয়া রাব্বিগ ফিরলী। অতঃপর কোন প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তার সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং সে যদি ওযূ করে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তার সে ছালাত কবূল করেন’।৪।
(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى ثُمَّ أَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِيْ وَجْهِهَا الْمَاءَ وَرَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ ثُمَّ أَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلَّى فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ. ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন যে ব্যক্তি রাতে উঠে ছালাত আদায় করে, স্বীয় স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহ’লে তার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়। অনুরূপ আল্লাহ দয়া করেন সেই স্ত্রী লোকের প্রতি যে রাতে উঠে ছালাত আদায় করে। নিজের স্বামীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহ’লে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়’।৫।
(৩) আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِيْنَ قَبْلَكُمْ وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ. ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহ্র সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফ্ফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক’।৬।
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْبَاقِي يَهْبِطُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، ثُمَّ يَفْتَحُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ، ثُمَّ يَبْسُطُ يَدَهُ فَيَقُولُ: هَلْ مِنْ سَائِلٍ يُعْطَى سُؤْلَهُ؟ وَلَا يَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يَسْطَعَ الْفَجْرُ. ‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তিনি (আল্লাহ) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তারপর তিনি স্বীয় হাত প্রসারিত করে বলতে থাকেন, আছে কি কোন প্রার্থনাকারী? তার দাবী অনুযায়ী তাকে তা প্রদান করা হবে। আর ফজরের আভা স্পষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটা চলতে থাকে’।৭।
(৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ يَدْعُونِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ. ‘কে আছে আমাকে আহ্বান করবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। কে আছে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিবো। আমার কাছে কে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো’।৮।
(৬) রাসূল (ছাঃ) বলেন, تُفْتَحُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ نِصْفَ اللَّيْلِ فَيُنَادِي مُنَادٍ: هَلْ مِنْ دَاعٍ فَيُسْتَجَابَ لَهُ؟ هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَيُعْطَى؟ هَلْ مِنْ مَكْرُوبٍ فَيُفَرَّجَ عَنْهُ؟ فَلَا يَبْقَى مُسْلِمٌ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ إِلَّا اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ إِلَّا زَانِيَةٌ تَسْعَى بِفَرْجِهَا أَوْ عَشَّارٌ. ‘মধ্যরাত্রিতে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন। কোন আহ্বানকারী আছে কি? তার সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে। কোন যাচ্ঞাকারী আছে কি? তাকে প্রদান করা হবে। আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি? তার বিপদ দূর করে দেওয়া হবে। এই সময় কোন মুসলিম বান্দা যে দো‘আ করে, আল্লাহ তার সে দো‘আ কবূল করেন। তবে সেই যিনাকারিণীর দো‘আ কবূল করা হয় না, যে তার লজ্জাস্থানকে ব্যভিচারে নিয়োজিত রাখে এবং যে ব্যক্তি অপরের মাল আত্মসাৎ করে’।৯।
৪. তারাবীহ ছালাতের পরিচয় :
তারবীহ (تَرَوِيْحَ) মূল ধাতু رَاحَةٌ (রা-হাতুন) অর্থ : প্রশান্তি। অন্যতম ধাতু رَوْحٌ (রাওহুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতে কোন কাজ করা। সেখান থেকে تَرَوِيْحَةٌ (তারবীহাতুন) অর্থ : সন্ধ্যারাতের প্রশান্তি বা প্রশান্তির বৈঠক; যা রামাযান মাসে তারাবীহ্র ছালাতে প্রতি চার রাক‘আত শেষে করা হয়ে থাকে। বহুবচনে (التَرَوِيْحَ) ‘তারা-বীহ’ অর্থ : প্রশান্তির বৈঠকসমূহ (আল-মুনজিদ)। রামাযানের রাতের প্রথমাংশে যখন জামা‘আতে তারাবীহর ছালাত আদায় করার প্রচলন শুরু হয়, তখন প্রতি চার রাকা‘আত অন্তর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হ’ত। আর সেই কারণেই ‘তারাবীহ’ নামকরণ হয়, (ফাৎহুল বারী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব)।
ক. তারাবীহর ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
আবূ সালামাহ ইবনু আব্দুর রাহমান (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রামাযান মাসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত কেমন ছিল? জওয়াবে আয়েশা (রাঃ) বলেন, مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَزِيدُ فِى رَمَضَانَ وَلاَ فِى غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান বা রামাযানের বাইরে এগার রাক‘আতের বেশী রাতের নফল ছালাত আদায় করতেন না’। বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৩৮; মিশকাত হা/১১৮৮।
হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, ‘ওমর ফারূক (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ-দারী (রাঃ)-কে রামাযানের রাত্রিতে লোকদেরকে সাথে নিয়ে জামা‘আত সহকারে এগারো রাক‘আত ছালাত আদায়ের নির্দেশ দান করেন’।(মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৭৯, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৩০২, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘রামাযানে রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ) এ সময় তাঁরা প্রথম রাত্রিতে ইবাদত করতেন। ওমর (রাঃ) বললেন, نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِى يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِى يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ . ‘কতই না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম, যে অংশে তোমরা ছালাত আদায় করো’। তিনি ইহা দ্বারা শেষ রাত বুঝিয়েছেন। কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা ছালাত আদায় করত।বুখারী হা/২০১০; মুয়াত্তা হা/৩৭৮; মিশকাত হা/১৩০১।
শায়খ আলবানী (রহঃ) (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৮০-তে) বলেন, ইয়াযীদ বিন রূমান কর্তৃক যে বর্ণনাটি এসেছে যে, ‘লোকেরা ওমর ফারূক (রাঃ)-এর যামানায় ২৩ রাক‘আত তারাবীহ পড়ত’ একথাটি ‘যঈফ’। কেননা ইয়াযীদ বিন রূমান ওমর (রাঃ)-এর যামানা পাননি (দ্রঃ আলবানী, মিশকাত, হা/১৩০২ টীকা-২)। অতএব ইজমায়ে ছাহাবা কর্তৃক ওমর, ওছমান ও আলীর যামানা থেকে ২০ রাক‘আত তারাবীহ সাব্যস্ত বলে যে কথা চালু রয়েছে, তার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। একথাটি ‘মুদরাজ’ বা পরবর্তীকালে অনুপ্রবিষ্ট। এতদ্ব্যতীত চার খলীফার কারো থেকেই ছহীহ সনদে ২০ রাক‘আত তারাবীহ প্রমাণিত নয় (হাশিয়া মুওয়াত্ত্বা পৃঃ ৭১-এর হাশিয়া-৭, ‘রামাযানে ছালাত’ অধ্যায়; দ্রঃ তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিয়ী হা/৮০৩-এর ব্যাখ্যা ৩/৫২৬-৩২)। বিশ রাক‘আত তারাবীহ-এর প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটি জাল (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৪৪৫, ২/১৯১ পৃঃ)।
জামা‘আতের সাথে রাতের ছালাত (তারাবীহ) আদায় করা রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত এবং দৈনিক নিয়মিত জামা‘আতে আদায় করা ‘ইজমায়ে ছাহাবা’ হিসাবে প্রমাণিত (মিশকাত হা/১৩০২)। অতএব জামা‘আতে তারাবীহ ছালাত বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
খ. তারাবীহ ছালাতের ফযীলত :
(১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাযানে ক্বিয়ামুল লায়িল অর্থাৎ, তারাবীহর ছালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।১০। অন্যত্র, তিনি বলেন, . فَتُوُفِّىَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِى خِلاَفَةِ أَبِى بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ عَلَى ذَلِكَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ওফাতের পরও তারাবীহর জন্য জামা‘আত নির্দিষ্ট ছিল না। আবূ বকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালেও একই ছিল। হযরত ওমার (রাঃ)-এর খিলাফতের প্রথম দিকে অনুরূপ ছিল। কিন্তু শেষের দিকে তিনি তারাবীহর ছালাতের জন্যে জামা‘আতের প্রচলন করেন।১১।
(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আমি রামাযানের এক রাতে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদে নব্বীতে গিয়ে দেখি লোকেরা বিক্ষিপ্ত ভাবে একাকী ছালাত আদায় করছে। ওমর (রাঃ) বললেন, إِنِّى أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ . ‘আমি এই সকল ব্যক্তিদের যদি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে’। এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে ছালাত আদায় করছিল। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِى يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِى يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ . ‘কতই না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম, যে অংশে তোমরা ছালাত আদায় করো’। তিনি ইহা দ্বারা শেষ রাত বুঝিয়েছেন। কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা ছালাত আদায় করত।১২।
———————————————
১. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৮৮ ‘রাতের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩১।
২ . ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃষ্ঠা-১৭১-৭২।
৩ . বুখারী, মিশকাত হা/১২১৩।
৪ . বুখারী হা/১১৫৪; মিশকাত হা/১২১৩; ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৫৯৬।
৫ . আবূদাঊদ হা/১৪৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৬; মিশকাত হা/১২৩০; আহমাদ হা/৭৪০৪; সনদ হাসান।
৬ . তিরমিযী হা/৩৫৪৯; মিশকাত হা/১২২৭; ছহীহুল জামি‘ হা/৪০৭৯; ইরওয়া হা/৪৫২।
৭ . আহমাদ হা/৩৬৭৩; ইরওয়া ২/১৯৯, হা/৬।
৮ . বুখারী হা/১১৪৫; আবূদাঊদ হা/১৩১৫; মিশকাত হা/১২২৩।
৯ . সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৭৩; ছহীহুল জামি‘ হা/২৯৭১; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩৯১।
১০ . বুখারী হা/২০০৮; নাসাঈ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/৭৮৬৮; ইবনে হিব্বান হা/২৫৪৬।
১১ . মুসলিম হা/৭৫৯; তিরমিযী হা/৮০৮; আবূদাঊদ হা/১২৪১; মিশকাত/১২৯৬।
১২ . বুখারী হা/২০১০; মুয়াত্তা হা/৩৭৮; মিশকাত হা/১৩০১।