(ফযীলতপূর্ণ দো‘আ ও যিকির’ বই থেকে নেয়া)
মানুষ খুব দ্রুতই তার আমলনামার সাথে মিলিত হবে। সুতরাং সময় থাকতে আমলের বোঝা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করুন। তাহাজ্জুদের ছালাত শ্রেষ্ঠ্য আমলগুলোর অন্যতম। এ ছালাত সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا () نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا () أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا ‘রাত জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত । রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে কিছুটা কম। অথবা তদপেক্ষা বেশী। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে’ (মুযযাম্মিল : ৭৩/২-৪)।
১. তাহাজ্জুদ ছালাত কবূলের দো‘আ :
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، وَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ.
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ‘লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ। ওয়া রাব্বিগ ফিরলী।
অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই জন্য প্রশংসা, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান, আমি আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহ্র সাহায্য ব্যতীত আমার কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো’ (বুখারী, মিশকাত হা/১২১৩)।
২. তাহাজ্জুদ ছালাতের ফযীলত :
(১) ওবাদা বিন ছামিত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
مَنْ تَعَارَّ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ثُمَّ قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ أَوْ قَالَ ثُمَّ دَعَا اسْتُجِيْبَ لَهُ فَإِنْ تَوَضَّأَ وَصَلَّى قُبِلَتْ صَلَاتُهُ.
‘যে ব্যক্তি রাতে জেগে বলে, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ‘লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হ। ওয়া রাব্বিগ ফিরলী। অতঃপর কোন প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তার সে প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং সে যদি ওযূ করে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তার সে ছালাত কবূল করেন’(বুখারী হা/১১৫৪; মিশকাত হা/১২১৩)।
(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى ثُمَّ أَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِيْ وَجْهِهَا الْمَاءَ وَرَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ ثُمَّ أَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلَّى فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ. ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন যে ব্যক্তি রাতে উঠে ছালাত আদায় করে, স্বীয় স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহ’লে তার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়। অনুরূপ আল্লাহ দয়া করেন সেই স্ত্রী লোকের প্রতি যে রাতে উঠে ছালাত আদায় করে। নিজের স্বামীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহ’লে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়’ (আবূদাঊদ হা/১৪৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৩৩৬; মিশকাত হা/১২৩০; আহমাদ হা/৭৪০৪; সনদ হাসান)।
(৩) আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِيْنَ قَبْلَكُمْ وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ. ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহ্র সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফ্ফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক’ (তিরমিযী হা/৩৫৪৯; মিশকাত হা/১২২৭; ছহীহুল জামি‘ হা/৪০৭৯; ইরওয়া হা/৪৫২)।
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْبَاقِي يَهْبِطُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، ثُمَّ يَفْتَحُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ، ثُمَّ يَبْسُطُ يَدَهُ فَيَقُولُ: هَلْ مِنْ سَائِلٍ يُعْطَى سُؤْلَهُ؟ وَلَا يَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يَسْطَعَ الْفَجْرُ. ‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তিনি (আল্লাহ) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তারপর তিনি স্বীয় হাত প্রসারিত করে বলতে থাকেন, আছে কি কোন প্রার্থনাকারী? তার দাবী অনুযায়ী তাকে তা প্রদান করা হবে। আর ফজরের আভা স্পষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটা চলতে থাকে’ (আহমাদ হা/৩৬৭৩; ইরওয়া ২/১৯৯, হা/৬)।
(৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ يَدْعُونِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ. ‘কে আছে আমাকে আহ্বান করবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিবো। কে আছে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিবো। আমার কাছে কে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো’ (বুখারী হা/১১৪৫; আবূদাঊদ হা/১৩১৫; মিশকাত হা/১২২৩)।
(৬) রাসূল (ছাঃ) বলেন, تُفْتَحُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ نِصْفَ اللَّيْلِ فَيُنَادِي مُنَادٍ: هَلْ مِنْ دَاعٍ فَيُسْتَجَابَ لَهُ؟ هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَيُعْطَى؟ هَلْ مِنْ مَكْرُوبٍ فَيُفَرَّجَ عَنْهُ؟ فَلَا يَبْقَى مُسْلِمٌ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ إِلَّا اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ إِلَّا زَانِيَةٌ تَسْعَى بِفَرْجِهَا أَوْ عَشَّارٌ. ‘মধ্যরাত্রিতে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন। কোন আহ্বানকারী আছে কি? তার সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে। কোন যাচ্ঞাকারী আছে কি? তাকে প্রদান করা হবে। আছে কি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি? তার বিপদ দূর করে দেওয়া হবে। এই সময় কোন মুসলিম বান্দা যে দো‘আ করে, আল্লাহ তার সে দো‘আ কবূল করেন। তবে সেই যিনাকারিণীর দো‘আ কবূল করা হয় না, যে তার লজ্জাস্থানকে ব্যভিচারে নিয়োজিত রাখে এবং যে ব্যক্তি অপরের মাল আত্মসাৎ করে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৭৩; ছহীহুল জামি‘ হা/২৯৭১; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩৯১)।