দাওয়াত ও তাবলীগে নারীদের ভূমিকা

শরীফা বিনতে আব্দুল মতীন
যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় নারী জাতি নানাভাবে উপেক্ষিত, নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হয়ে এসেছেপুরুষরা নারীকে
বাদ দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ও বাস্তবায়ন করেছে
চাই সমাজে শান্তি
আসুক বা না আসুক
সতেরশ শতাব্দীতে রোম শহরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যে বৈঠকের নাম ছিল Council of the wise জ্ঞানীদের অধিবেশনউক্ত অধিবেশনে জ্ঞানীরা
ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে
,
Women has no soul নারীদের আত্মা নেইনারীদের ব্যাপারে যখন
রোমের জ্ঞানীদের এই ধারণা
, তখন বোঝাই যায়
সাধারণ মানুষ তাদের সাথে কি আচরণ করত! ইহুদী ধর্মে নারীকে
পুরুষের প্রতারক বলা হয়েছেইউরোপীয়রা নারীকে শয়তানের অঙ্গ মনে করতগ্রীক সমাজের প্রাণপুরুষ বিশ্বখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসও মনে করতেন- Women
is the greatest source of choose and disruption in the world পৃথিবীতে বিশৃংখলা ও বিভেদের সর্ববৃহৎ উৎস হল নারী
কিন্তু ইসলাম সম্পূর্ণ এর বিপরীতইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা কিনা পুরুষের সাথে সব কাজেই নারীকে
অন্তর্ভুক্ত করেছে
আল্লাহ বলেন,وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
 মুমিন ও মুমিনা একে অপরের বন্ধুতারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং
মন্দ কাজে বাধা দেয়
 (তওবা ৭১)ওমর (রাঃ) বলেনكُنَّا
فِى الْجَاهِلِيَّةِ لاَ نَعُدُّ النِّسَاءَ شَيْئًا، فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلاَمُ
وَذَكَرَهُنَّ اللهُ، رَأَيْنَا لَهُنَّ بِذَلِكَ عَلَيْنَا حَقًّا-
 আমরা জাহেলী যুগে
নারীদেরকে কোন হিসাবেই ধরতাম না
অতঃপর যখন ইসলাম আসল এবং (কুরআনে) আল্লাহ তাদের (মর্যাদার)
কথা উল্লেখ করলেন
, তাতে আমরা দেখলাম
যে
, আমাদের উপর তাদের হক আছে[1] শরীআতের সব বিধানেই
নারী শামিল রয়েছে
দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষদের থেকে বিচ্ছিনণ
নয়
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর যুগে এক্ষেত্রে নারীদের উল্লেখযোগ্য পদচারণা ছিল
নিম্নে এ প্রসঙ্গে আলোচনা
উপস্থাপন করা হ

দাওয়াত ও তাবলীগের গুরুত্ব :
ইসলামকে সর্বত্র পৌঁছে দিতে দাওয়াত ও তাবলীগের বিকল্প নেইপ্রচারের কাজটি যত
সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়
, প্রসারের কাজটিও
তত সহজ হয়
কুরআন ও হাদীছে এ বিষয়ে ব্যাপক তাকীদ দেয়া হয়েছেযেমন আল্লাহ বলেন,
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ
يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ
الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা প্রয়োজন,
যারা
(মানুষকে) কল্যাণের পথে ডাকবে
, সৎকাজের আদেশ দিবে
এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে
বস্ত্ততঃ তারাই হবে সফলকাম (আলে ইমরান ১০৪)অন্যত্র আল্লাহ বলেনيَا
أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ وَإِنْ لَّمْ
تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ
اللهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِيْنَ.
 হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার নিকট যা নাযিল
হয়েছে তা পৌঁছে দিন
আপনি যদি এরূপ না করেন, তাহলে আপনি রিসালাতের বাণী পৌঁছালেন নাআল্লাহ আপনাকে মানুষের
নিকট থেকে রক্ষা করবেন
নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের পথ দেখান না (মায়েদা ৬৭)
যারা জানে অথচ মানুষকে জানায় না তাদের উপর আল্লাহ লানত করেছেনআল্লাহ বলেনإِنَّ
الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ
بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَـئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ.
আমি যে সমস্ত সুস্পষ্ট
বিষয় ও হেদায়াতের বাণী মানুষের জন্য নাযিল করেছি
, কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার পরও যারা (মানুষ থেকে)
গোপন রাখে তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত
 (বাক্বারাহ ১৫৯)
এ ব্যাপারে হাদীছেও বিভিন্নভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনاَلدِّيْنُ
اَلنَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمَنْ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ
وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ-
 দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা বা উপদেশ দেয়ার নামআমরা (ছাহাবীরা)
জিজ্ঞেস করলাম
, কার জন্য? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ,
তাঁর
রাসূল
, মুসলিম নেতৃবর্গ এবং
সাধারণ মানুষের জন্য
[2]
উল্লেখ্য, আল্লাহর কল্যাণ
কামনা দ্বারা তাঁর প্রতি খালেছ ঈমান আনা ও ইবাদত করা বুঝায়
রাসূলের কল্যাণ কামনার
অর্থ হ
ল রাসূলের আনুগত্য করামুসলমান নেতাদের কল্যাণ কামনার মাধ্যমে ভাল কাজে তাদের
আনুগত্য করা ও তাদের বিদ্রোহ না করা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ কামনা দ্বারা তাদের
উপদেশ দেয়া বুঝায়
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ
اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالسَّمْعِ
وَالطَّاعَةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ-
জারীর বিন আব্দিল্লাহ (রাঃ) বলেন,
আমরা
রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট ছালাত প্রতিষ্ঠার
,
যাকাত
প্রদানের
, নেতার আদেশ শোনার ও তাঁর
আনুগত্য করার এবং প্রত্যেক মুসলমানকে উপদেশ দেয়ার শপথ গ্রহণ করলাম
[3]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন
بَلِّغُوْا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ
وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ
مِنَ النَّارِ-
 একটি আয়াত হলেও তোমরা আমার
পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও
বনী ইসরাঈলের নিকট থেকে বর্ণনা কর, কোন দোষ নেইকিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছা
করে আমার উপরে মিথ্যা আরোপ করবে
, সে যেন তার ঠিকানা
জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল
[4] হাদীছটিতে
দাওয়াতের গুরুত্ব ফুটে ওঠেছে
সেই সাথে এ বিষয়েও সাবধান করা হয়েছে যে, তাতে যেন মিথ্যার লেশমাত্র না থাকেনতুবা তাকে
জাহান্নামে যেতে হবে
বিদায় হজ্জের ভাষণেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একই নির্দেশ প্রদান করেছেনأَلَا
لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ
উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়[5]
অতএব দ্বীনকে চির জাগ্রত রাখার জন্য দাওয়াত দান অত্যাবশ্যকনারী-পুরুষ
নির্বিশেষে সকলকেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে
দাওয়াত ও তাবলীগের ফযীলত :
আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দানের বহুবিধ ফযীলত রয়েছেযেগুলো পড়লে বা শুনলে
মুমিন হৃদয় দাওয়াত দানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে
, শত ঝঞ্ঝাট উপেক্ষা করেও দাওয়াতী ময়দানে অগ্রণী ভূমিকা পালন
করতে উদ্বুদ্ধ হয়
দাওয়াতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনمَنْ
دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
 কোন ব্যক্তি যদি ভালো কাজের পথ দেখায়, সে ঐ পরিমাণ নেকী পাবে, যতটুক নেকী পাবে
ঐ কাজ সম্পাদনকারী নিজে[6]
খায়বার যুদ্ধের সেনাপতি আলী বিন আবু তালিবকে নছীহতের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন
فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ
مِنْ حُمُرِ النَّعَمِ
 আল্লাহর কসম!
তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একজন লোককেও হেদায়াত দান করেন
, তবে সেটা তোমার জন্য লাল উটের (কুরবানীর)
চেয়েও উত্তম হবে
[7]
উট ছিল আরব মরুর উৎকৃষ্ট বাহন ও উত্তম সম্পদতন্মধ্যে লাল উট ছিল আরো
মূল্যবান
এজন্য হাদীছে লাল উটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى، كَانَ
لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ
أُجُوْرِهِمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ
الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ
شَيْئاً.
যে ব্যক্তি হেদায়াতের দিকে মানুষকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ ছওয়াব পাবে তাকে অনুসরণকারীগণএতে
অনুসরণকারীগণের ছওয়াব সামান্যতম কমবে না
আর যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার পথে কাউকে ডাকবে সে
ঠিক ঐ পরিমাণ গোনাহ পাবে
, যে পরিমাণ গোনাহ
পাবে তাকে অনুসরণকারীগণ
এতে অনুসরণকারীদের গুনাহ সামান্যতম হরাস করা হবে না[8]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلاَمِ
سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ
غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلاَمِ
سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا، وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ
بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ-
যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল নিয়মের প্রচলন করল, সে তার নেকী পাবে এবং পরে যারা এরূপ আমল করবে তাদের
সমপরিমাণ নেকীও সে পাবে
কিন্তু তাদের (অনুসরণকারীদের) নেকী কিছুমাত্র কম হবে নাআর যে ব্যক্তি
ইসলামে কোন মন্দ নিয়ম চালু করবে
, সে তার গোনাহ পাবে
এবং পরবর্তীতে যারা এরূপ আমল করবে
,
তাদের
সম পরিমাণ গোনাহও সে পাবে
কিন্তু তাদের গোনাহ বিন্দুমাত্র কম করা হবে না[9]
আলোচ্য হাদীছে যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল নিয়মের প্রচলন করে দ্বারা বিদআতে হাসানা বুঝানো হয়নিকেউ কেউ এটা দিয়ে বিদআতে হাসানার দলীল
দিয়ে থাকেন
অথচ বিদআতের কোন প্রকারভেদই নেইমন্দের আবার ভাল হয় কি করে? রাসূল (ছাঃ) সকল বিদআতকেই ভ্রষ্টতা বলেছেন[10] দ্বিতীয়তঃ  এই হাদীছের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আগে থেকেই
প্রমাণিত ছহীহ দলীলভিত্তিক কোন আমল নতুনভাবে চালু করা
যেমন মাগরিবের পূর্বে দুরাকআত সুন্নাত
ছালাতের কথা আজ মানুষ ভুলতে বসেছে
কেউ যদি উক্ত ছালাতের শিক্ষা কাউকে দিয়ে থাকে, তাহলে আমলকারীর অনুরূপ ছওয়াব ঐ ব্যক্তি পাবেহাদীছের উদ্দেশ্য
এটাই
দাওয়াত ও তাবলীগে মহিলাদের ভূমিকা :
ভাল কাজে অংশগ্রহণ মুমিন নারীদের স্বভাবের অন্তর্ভুক্তএজন্য দেখা যায়, তারা নিজ অঞ্চলে থেকে বিভিন্নভাবে দ্বীনের
সহযোগিতা করেছেন
মোট কথা, দাওয়াত ও তাবলীগে
পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ভূমিকাও অপরিসীম
নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত
করা হ
।-
ক. নারীদের দাওয়াত দানের প্রয়োজনীয়তা :
নারী জাতির ফিতনা সম্পর্কে বহু দলীল-প্রমাণ রয়েছেবহু জাতি নারীর কূটকৌশল ও
মায়াজালে পড়ে ধ্বংস হয়েছে
সুতরাং পুরুষের আকর্ষণের প্রধান হাতিয়ার এই নারীকে সংযত ও
নিরাপদ রাখার মধ্যে রয়েছে পুরো জাতির কল্যাণ
মন্দ চরিত্রের নারীদের
ক্ষতিকর বিষয় সমূহ থেকে পুরুষদেরকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনمَا
تَرَكْتُ بَعْدِيْ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ.
 আমি পুরুষদের জন্য নারীদের
চেয়ে ক্ষতিকর জিনিস আর কিছু রেখে যাইনি
[11] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)
বলেন
,
إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ
خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيْهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ
تَعْمَلُوْنَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ؛ فَإِنَّ أَوَّلَ
فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ-
দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট সবুজ স্থানআল্লাহ তোমাদেরকে এখানে প্রতিনিধি করেছেন যেন
তিনি দেখতে পারেন
, তোমরা কেমন আমল করসুতরাং তোমরা
দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীদের ভয় কর (সতর্ক হও)
কারণ বনী ইসরাঈলের প্রথম
ফিতনা নারীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল
[12]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,  اَلشُّؤْمُ فِي الْمَرْأَةِ وَالدَّارِ وَالْفَرَسِ অকল্যাণ রয়েছে নারীতে, বাসস্থানে ও ঘোড়ায়[13]
স্বয়ং আল্লাহ বলেনإِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيْمٌ নিশ্চয়ই তোমাদের ষড়যন্ত্র বড়ই কঠিন (ইউসুফ ২৮)
উপরে উল্লিখিত বাণীগুলোতে নারীদের যে অনিষ্টের কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা শরীআত অমান্যকারী নারী
উদ্দেশ্য
যাদের সংসার দেখাশুনা করার, বাচ্চা
প্রতিপালনের যোগ্যতা নেই
সামান্য কথায় ঝগড়া করেপুরুষের সাথে কাঁধ মিলিয়ে
সমঅধিকার চায়
যারা ঘরের বধূ হওয়ার চেয়ে অফিসের ম্যাডাম হওয়াকে বেশি আকর্ষণীয় মনে করে
তবে মুমিন নারীদের হতাশার কিছু নেইসৎ নারীদের রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৃথিবীর সর্বোত্তম
সম্পদ
বলেছেন[14] ছাহাবীগণ বললেন, যদি আমরা জানতে পারতাম কোন সম্পদ উত্তম, তবে তা আমরা জমা করতামরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের কারো সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হল আল্লাহর
যিকরকারী জিহবা
, কৃতজ্ঞ অন্তর ও
মুমিনা স্ত্রী
, যে তার (স্বামীর)
ঈমানের ব্যাপারে সাহায্য করে
[15] নেককার নারী
স্বভাবে এত উন্নত হয় যে
, স্বয়ং আল্লাহ
তাদেরকে সালাম পাঠান
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, (হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকার দিনগুলিতে) একদিন জিবরীল (আঃ)
নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন
يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذِهِ خَدِيْجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ
فِيْهِ إِدَامٌ أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ، فَإِذَا هِىَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ
عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّيْ، وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِى
الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيْهِ وَلاَ نَصَبَ- 
 হে আল্লাহর রাসূল! এই যে
খাদীজা একটি পাত্র নিয়ে আসছেন
তাতে তরকারী ও খাদ্যদ্রব্য রয়েছেতিনি যখন আপনার নিকট আসবেন, তখন আপনি তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে
এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতের মধ্যে মুক্তাখচিত এমন একটি
প্রাসাদের সুসংবাদ দিবেন
, যেখানে হৈ-হুল্লোড়
নেই
, নেই কোন কষ্ট[16] এমনিভাবে মা আয়েশা
(রাঃ) কেও জিবরীল (আঃ) সালাম জানিয়েছেন
জবাবে তিনিও জিবরীল (আঃ)-কে সালাম জানান[17] সুতরাং নেককার
নারীরা তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজে থাকবে মাথা উঁচু করে
সমাজ দেখবে হাদীছে যে
সমস্ত নারীকে তিরষ্কার করা হয়েছে
, তারা সেই সব নারী
নয়
তারা আমলে, আক্বীদায়, যোগ্যতায় অনেক পুরুষের চেয়েও উত্তম
এজন্য নারীরা তাদের অবস্থানে থেকে মন্দ নারীদের ভয়াবহ পরিণতি তাদের নিকট তুলে
ধরবে
তারা যেন পুরো জাতির চরিত্র নষ্টের কারণ না হয়, তাদের মাধ্যমে যেন যেনা ছড়িয়ে না পড়ে, যুব চরিত্র ধ্বংস না হয়- তা বুঝিয়ে বলবেতাই নারীদের
দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী
পাশাপাশি নেককার নারীদের যে সম্মান, নিরাপত্তা, প্রশান্তি সর্বশেষে জান্নাতের সুসংবাদ ঘোষিত হয়েছে তা
শুনিয়ে নারীদেরকে সেদিকে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে
খ. নারীদের দাওয়াত দানের প্রথম মারকায পরিবার :
পরিবার হল জাতির প্রথম ভিত্তিএজন্য কুরআন ও হাদীছে প্রথমে পরিবারের মাধ্যমে দাওয়াত
প্রদানে জোর দেয়া হয়েছে
প্রতিটি পরিবারের প্রধান যদি নিজ পরিবারকে ভাল কাজের আদেশ, মন্দ কাজে নিষেধ করত, তবে সমাজ আজ অধঃপতনের অতল তলে হারিয়ে যেত নাদুষ্ট ও নষ্ট
সন্তানের ক্রমবৃদ্ধি ঘটতো না
সুসন্তানের সংখ্যা বেড়ে যেতপরিবারে ও সমাজে শান্তি
নেমে আসতো
সেকারণ সব সন্তানেরই প্রথমে পরিবার থেকে উপদেশ পাওয়া উচিতআল্লাহ বলেনيَا
أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا 
 হে ঈমানদারগণ! তোমরা
নিজেদেরকে এবং পরিবারকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর
 (তাহরীম ৬)অন্যত্র আল্লাহ বলেনوَأَنْذِرْ
عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ
 আপনি আপনার পরিবার
ও নিকটাত্মীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন করুন
 (শুআরা ২৬)রাসূল (ছাঃ) বলেন,مُرُوْا
أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ، وَاضْرِبُوْهُمْ
عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ.
 সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তোমরা তোমাদের
সন্তানদেরকে ছালাতের নির্দেশ দাও
দশ বছরে উপনীত হলে তাদেরকে (ছালাতের অভ্যাস না হয়ে থাকলে)
প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও
[18] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
অন্যত্র বলেন
,
كُلُّكُمْ رَاعٍ فَمَسْئُوْلٌ
عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالْأَمِيْرُ الَّذِيْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ
عَنْهُمْ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْهُمْ،
وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُوْلَةٌ
عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْهُ،
أَلاَ فَكُلُّكمْ رَاعٍ وَكُلُّكمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ-
তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার এ রক্ষণাবেক্ষণের
দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে
ইমাম একজন রক্ষকতার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
করা হবে
ব্যক্তি তার পরিবারের দায়িত্বশীলতাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবেস্ত্রী তার
স্বামীর সংসারের ও সন্তানের দায়িত্বশীল
তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হবেখাদেম তার মনিবের
মালের দায়িত্বশীল
সে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেতোমাদের সবাই
দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে
[19]
কোন মানুষ তার দায়িত্ব সম্পর্কে জওয়াবদিহি না করে পার পাবে নাযে যতটুকু দায়িত্ব
নিয়ে আছে
, সে তার মেধা, যোগ্যতা ও কর্মের হিসাব ততটুকুই দিবেনারীকে তার
পরিবারের সন্তানাদি
, স্বামীর খেদমত, তার সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট
হিসাব পেশ করতে হবে
এই জওয়াব দানের চিন্তা-ভাবনা যদি সে করে তবে দুনিয়াতেই সে
নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করবে এবং হিসাবের জন্য নিজেকে প্রস্ত্তত করতে সক্ষম হবে
সুতরাং নারীকে
জেগে ওঠতে হবে
নেপোলিয়ানের বিখ্যাত উক্তি সবারই জানাতিনি বলেছেন, Give me a good mother, I will give you a good nation. তুমি আমাকে একজন
ভাল মা দাও
, আমি তোমাকে একটি ভাল জাতি
উপহার দিব
আরবের কবি হাফিয ইবরাহীম বলেন,
اَلْأُمُّ مَدْرَسَةٌ إِذَا أَعْدَدْتَهَا *
أَعْدَدْتَ شَعْبًا طَيِّبَ الْأَ عْرَاقِ
মা হল মাদরাসার ন্যায়যদি তুমি তাকে যত্ন সহকারে গড়ে তোল, তবে তুমি তো এক মহান পবিত্র জাতিকে গড়ে তুললে
সুতরাং একজন নারী একটি জাতি গঠনে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, একজন পুরুষের পক্ষে তা কখনোই সম্ভব নয়সুতরাং শিক্ষিত
নারীর জন্য উচিত তাদের দোষ শুধরে দিয়ে
,
ভাল
কাজের উপদেশ দিয়ে পুরো পরিবারকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়া
গ. নারীর দাওয়াত দানের পদ্ধতি :
ঘর হল নারীদের বিচরণ ক্ষেত্রতাকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেনوَقَرْنَ
فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُوْلَى
 তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান
কর
প্রাচীন জাহেলী
যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রকাশ করো না
 (আহযাব ৩৩)
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন
اَلْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا
الشَّيْطَانُ
নারী হল গোপনীয়তার বিষয়সুতরাং যখন সে বের হয় তখন শয়তান চোখ তুলে তাকায়[20] শয়তান চোখ তুলে
তাকায়
এর অর্থ হল- শয়তান নারীকে
পুরুষের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে অথবা নারীর রূপ-সৌন্দর্য পুরুষের নিকট প্রকাশ
করতে শয়তান নারীকে উসকে দেয়
এর অর্থ এই নয় যে, নারীরা ঘর থেকে
বের হ
তে পারবে না, পুরুষকেই তার
যাবতীয় প্রয়োজন সেরে দিতে হবে
হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার পর ওমর (রাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে
বাইরে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন
বিষয়টি সাওদা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জানানঅতঃপর কিছুদিন পর
অহী নাযিল হয়
রাসূল (ছাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে ডেকে বলেনإِنَّهُ قَدْ أُذِنَ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَاجَتِكُنَّ প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাড়ির
বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দেয়া হয়েছে
[21]
উম্মে আতিইয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি
আমি পুরুষদের পিছনে থাকতাম এবং তাদের জন্য
খাদ্য প্রস্ত্তত করতাম
রোগী ও আহতদের সেবা করতাম[22]
অন্য হাদীছে এসেছে, জাবির বিন আব্দুল্লাহ
(রাঃ) বলেন
طُلِّقَتْ خَالَتِيْ فَأَرَادَتْ أَنْ تَجُدَّ نَخْلَهَا
فَزَجَرَهَا رَجُلٌ أَنْ تَخْرُجَ فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَقَالَ بَلَى فَجُدِّيْ نَخْلَكِ فَإِنَّكِ عَسَى أَنْ تَصَدَّقِيْ
أَوْ تَفْعَلِيْ مَعْرُوْفًا-
আমার খালাম্মা তালাকপ্রাপ্তা হলে (ইদ্দতের সময়সীমার মধ্যে) তিনি গাছ থেকে খেজুর কেটে আনতে
চাইলেন
কিন্তু জনৈক ব্যক্তি তাকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করলেনতিনি (খালা) রাসূল
(ছাঃ)-এর নিকট আসলেন
রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, অবশ্যই তুমি খেজুর কাটতে পারআর তুমি তো এগুলো দান করবে
এবং কল্যাণকর কাজে ব্যবহার করবে
[23]
উল্লেখিত হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে,
কোন
উপার্জনকারী না থাকলে নারী জীবিকার জন্যও বাইরে যেতে পারে
সুতরাং খুব বেশী প্রয়োজনেও
বাহিরে বের না হওয়া এবং সামান্য কিছুতেই ঘন ঘন বাহিরে যাওয়া এই দু
টির মাঝের
অবস্থাটি ইসলাম অনুমোদন করে
ইসলাম নারীকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও প্রচারের কাজে বাইরে বের হতে বাধা দেয় নাসে নিরাপদ স্থানে
থেকে নারীদের মাঝে দাওয়াত দেবে
নারী কর্মী গড়ে তোলার লক্ষে তাদের মধ্যে অধিক যোগ্য
ব্যক্তির বাড়িতে অন্যান্য নারী কর্মীরা আসবে
তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ
নেবে
, পরামর্শ নেবে এতে কোন বাধা
নেই

যেমন
মা আয়েশা ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীনের কাছে নারীরা যাতায়াত করতেন
তবে আজকাল সংগঠনের
নামে মেয়েরা যেভাবে এক থানা থেকে অন্য থানা
,
এক
যেলা থেকে অন্য যেলায় পুরুষদের মত অবলীলায় যাতায়াত শুরু করেছে
, তা কাম্য নয়দীর্ঘ সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে
কোথাও তার ঘন ঘন ও নিয়মিত যাতায়াত তার হিজাবের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে
এমন দূরবর্তী
স্থানে সে মাহরামের সাথে যাবে নতুবা পুরুষ দাঈ সেখানে দাওয়াত দিবে
নারী যখন বের হবে তখন সে নিজেকে হিজাব দ্বারা আবৃত করে নিবেআল্লাহ বলেন,يَا
أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ
يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ
فَلاَ يُؤْذَيْنَ-
 হে নবী! আপনি
আপনার স্ত্রীদেরকে
, কন্যাদেরকে ও
মুমিনা নারীদেরকে বলুন
, তারা যেন নিজেদের
চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবেফলে তাদেরকে
উত্ত্যক্ত করা হবে না
 (আহযাব ৫৯)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনإِنِِ اتَّقَيْتُنَّ فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ
الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ
 যদি তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর
, তবে কোমল কণ্ঠে
কথা বলো না
নতুবা যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা লোভ করে বসবে (আহযাব ৩২)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনوَإِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوْهُنَّ مِنْ وَرَاءِ
حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ
যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু
চাইবে
, তখন পর্দার আড়াল থেকে
চাইবে
এটা তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের
জন্য অধিকতর পবিত্র
 (আহযাব ৩৩)আয়াত ৩টিতে
নারীদের পর্দা ও পুরুষদের সাথে আদান-প্রদানের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে
উল্লিখিত বিষয়গুলো মেনে পূর্ণ হিজাব অবলম্বন করে নারী ইসলাম অনুমোদিত স্থানে
যেতে পারবে এবং স্ব স্ব অবস্থানে থেকে বা মুহরিম পুরুষের সাথে প্রয়োজনে নিকটতম
দূরত্বে গিয়েও মহিলাদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করতে পারবে
ঘ. দ্বীন প্রচারে উম্মাহাতুল মুমিনীনের অংশগ্রহণ :
উম্মাহাতুল মুমিনীন সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী রাখার চেষ্টা করেছেনঅহী নাযিলের
সূচনালগ্নে খাদীজা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে যে অভয় বাণী এবং সান্তবনা দিয়েছিলেন
, তা নারী জাতির দৃঢ়তা বাড়িয়ে দেয়বৃদ্ধি করে নারী
হিসাবে তার সাহস ও শক্তিকে
পুরুষের প্রচন্ড বিপদের সময় নারী যে তার নিরাপদ সহায়, তাকে সান্ত্বনা দানকারী, ইসলামের ইতিহাস সে কথাই প্রমাণ করে
(১) হেরা গুহায় যখন অহী নাযিল শুরু হয় তখন জিবরীল আমীন এসে রাসূল
(ছাঃ)-কে জড়িয়ে ধরে পর পর তিনবার খুব জোরে চাপ দেন
এতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
ভীষণ ব্যথা অনুভব করেন
তৃতীয়বার ছেড়ে দিয়ে বলেন, পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেনএভাবে ৫টি আয়াত
নাযিল করে ফেরেশতা চলে যান
এ ঘটনায় রাসূল (ছাঃ) ভয়ে তটস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেনঘরে এসে মমতাময়ী
স্ত্রী খাদীজাকে বললেন
زَمِّلُوْنِيْ زَمِّلُوْنِيْআমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাওঅতঃপর তাকে চাদর
দিয়ে ঢেকে দেয়ার পর খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন
এটাও বললেনلَقَدْ
خَشِيْتُ عَلَى نَفْسِيْ
 আমি আমার জীবনের
উপর আশংকা করছি
খাদীজা (রাঃ) সান্তবনা দিয়ে বললেনكَلاَّ وَاللهِ مَا يُخْزِيْكَ اللهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ
الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ
وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ-
 কখনোই নয়, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনোই অপমানিত
করবেন না
আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করেনঅসহায় মানুষের দায়িত্ব বহন করেননিঃস্বকে সাহায্য
করেন
মেহমানের আপ্যায়ন করেনহক্বের পথের বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিদেরকে সহযোগিতা করেন[24]
কি চমৎকার সান্ত্বনা! ভীতি দূরকারী কতই না কার্যকর ভাষা! আশংকা লাঘবকারী কি
আদরমাখা অভয়! আসলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই চরম মুহূর্তে মা খাদীজা (রাঃ)-এর মত
একজন বয়ষ্কা মহিলার বড়ই প্রয়োজন ছিল
মা খাদীজা প্রসঙ্গে ইবনে হিশাম বলেন, খাদীজা সর্বপ্রথম নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর ঈমান
আনেন
নবী করীম (ছাঃ)-কে লোকেরা প্রত্যাখান করত, তাকে মিথ্যা বলতএতে তিনি মনঃকষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে ঘরে আসার
পর খাদীজা (রাঃ) তার নবুঅতের স্বীকৃতি দিতেন
তার দুঃখকে হালকা করতেন[25]
(২) ইসলাম প্রচারে
হাদীছের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রাঃ)-এর
অবদান সবচেয়ে বেশী
প্রসিদ্ধ ছয়জন হাদীছ বর্ণনাকারীর মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতমতিনি ২২১০টি হাদীছ
বর্ণনা করেছেন
দ্বীনী জ্ঞানের পাশাপাশি তিনি দুনিয়াবী জ্ঞানেও ছিলেন ঈর্ষণীয় অবস্থানেতিনি উচ্চ ভাষা
জ্ঞানের অধিকারিনী ছিলেন
তিনি তাফসীর,
ফারায়েয, বংশবিদ্যা, কবিতা, চিকিৎসা, আরবদের ইতিহাস, আরবী সাহিত্য ও বক্তব্যে সমান পারদর্শী ছিলেনতার জ্ঞানের কথা
স্বীকার করে ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন
لو جمع علم عائشة إلى علم جميع أزواج النبي صلى الله عليه وسلم وعلم
جميع النساء لكان علم عائشة أفضل-
 যদি আয়েশা
(রাঃ)-এর ইলম ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্যান্য স্ত্রী ও সমস্ত নারীদের ইলম একত্রিত
করা হয়
, তবে আয়েশা (রাঃ)-এর ইলম
উত্তম হবে
[26]
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) বলেনما رأيت أحدا من الناس أعلم بالقرآن ولا بفريضة ولا بحلال وحرام ولا
بشعر ولا بحديث العرب ولا النسب من عائشة رضي الله عنها.
 আল-কুরআনের ফরয বিষয়,
হালাল-হারাম, আরবদের কাহিনী, বংশবিদ্যা সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) অপেক্ষা অধিক জানে এমন কাউকে
দেখিনি
[27]
রাসূল (ছাঃ) ছিলেন কুমারী মেয়ের চেয়েও বেশী লজ্জাশীল[28] অথচ সমাজের
গুরুত্বপূর্ণ অংশ নারী
তাদের হায়েয,
নিফাস, স্বামী সহবাস, তাহারাত ইত্যাদি ঘরোয়া ও খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ
আবশ্যক একটি বিষয়
রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে উম্মাহাতুল মুমিনীন এ ধরনের
যাবতীয় মাসআলার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গেছেন
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক আনছারী মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে হায়েযের
গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গোসলের নিয়ম বলে দিয়ে বললেনخُذِيْ
فِرْصَةً مِنْ مِسْكٍ فَتَطَهَّرِيْ بِهَا
 তুমি এক টুকরা কাপড়ে সুগন্ধি লাগিয়ে পবিত্রতা অর্জন করমহিলা বললكَيْفَ
اَتَطَهَّرُ
কিভাবে পবিত্রতা হাছিল করব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন
تَطَهَّرِىْ بِهَا এটা দিয়ে পবিত্রতা
অর্জন কর
মহিলা বললكَيْفَ কিভাবে? রাসূল (ছাঃ) (লজ্জায় অবাক হয়ে) বললেনسُبْحَانَ
اللهِ تَطَهَّرِىْ
 সুবহানাল্লাহ, পবিত্রতা অর্জন করআয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি মহিলাকে টেনে আমার দিকে নিয়ে আসলাম
এবং বললাম
, তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন
ভালভাবে মুছে ফেল
[29]
নারীদের একেবারে গোপনীয় কথা, যা রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) নিজের মুখে আনতে পারেন না
, এমন কথা স্ত্রী
ছাড়া কে বুঝিয়ে বলবে নারী সমাজকে
? তাদের মাধ্যমে
পারিবারিক জীবনের যাবতীয় বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে
তৎকালীন যুগে বিজ্ঞ ছাহাবীদের হাদীছ প্রচারের কেন্দ্র ছিলমা আয়েশা
(রাঃ)-এরও হাদীছের দারস প্রদানের কেন্দ্র ছিল
তার কেন্দ্রের নাম মসজিদে
নববী
বড় বড় ছাহাবী, তাবেঈগণ এ
কেন্দ্রে উপস্থিত হ
তেন, হাদীছের জ্ঞান
অর্জনের জন্য
এ বিষয়ে আবূ মূসা আশআরী (রাঃ)-এর কথাটি উল্লেখযোগ্যতিনি বলেন,
مَا أَشْكَلَ عَلَيْنَا
أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيْثٌ قَطُّ
فَسَأَلْنَا عَائِشَةَ إِلَّا وَجَدْنَا عِنْدَهَا مِنْهُ عِلْمًا-
আমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের নিকট কোন হাদীছের অর্থ বুঝা কষ্টকর হলে (খটকা লাগলে)
আমরা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করতাম এবং তার কাছে উহার সমাধান পেয়ে যেতাম
[30]
এভাবে উম্মাহাতুল মুমিনীন দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছেনতারা রাসূল
(ছাঃ)-কে পরামর্শ ও মতামত দিয়ে সাহস যুগিয়েছেন
মূলতঃ দ্বীন কায়েম ও
প্রচারে নারীর এ ধরনের ভূমিকা পুরুষের বিরাট পাথেয়
কবি কাজী নজরুল ইসলাম
সত্যই বলেছেন
,
কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী
সমাপনী :
পরিশেষে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে,
দাওয়াত
ও তাবলীগে নারীদের ভূমিকা অপরিসীম
বরং নারী অঙ্গনে পুরুষদের চেয়ে নারীদের দাওয়াতই অধিক
কার্যকর
কেননা নারী দাঈরাই অপরাপর নারীদের দ্বীনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি হাতে কলমে
শিক্ষা দিতে পারে
যা পুরুষদের পক্ষে অসম্ভবঅনুরূপভাবে পুরুষদের
দাওয়াতী কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানের মাধ্যমেও নারী দ্বীন প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা
রাখতে পারে
বরং বলা যায় দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের কাজটি নারী ব্যতীত অপূর্ণই থেকে যাবেসে তার মতামত, চিন্তা-ভাবনা, লেখনী, বক্তব্য, পরামর্শ দিয়ে যেমন দ্বীন প্রচারের কাজে অংশ
নিতে পারে
, তেমনি নিজে নিকটস্থ নিরাপদ
স্থানে উপস্থিত হয়েও মা বোনদের মাঝে দ্বীন শিক্ষাদানের জন্য বৈঠক করতে পারে
একটি কথা নারীকে
ঘর থেকে বের হওয়ার আগে চিন্তা করতে হবে যে
,
সে
যেখানে যাবে
, তাতে আল্লাহ
কতটুকু সন্তুষ্ট আছেন
তার তাক্বওয়া নির্দ্বিধায় তাকে অনুমতি দিলে তবেই সে বের হতে পারবে

[1]বুখারী হা/৫৮৪৩
[2]মুসলিম হা/১৯৬; আহমাদ হা/১৬৯৪; তিরমিযী হা/১৯২৬
[3]বুখারী হা/৫৭, ঈমান অধ্যায়; মুসলিম হা/১৯৯;
আহমাদ হা/১৯১৯১
[4]বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া হা/৩৪৬১; আহমাদ হা/৬৪৮৬
[5]বুখারী হা/৬৫, ৪০৫৪, ৫১২৪, ৬৮৯৩
[6]মুসলিম, নেতৃত্ব অধ্যায়, হা/৪৮৯৯;
রিয়াযুছ ছালেহীন (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ২০০০) ১/১৪৯, হা/১৭৩
[7]মুত্তাফাক্ব আলাইহ, রিয়ায, হা/১৭৫
[8]মুসলিম হা/৬৮০৪; রিয়ায, ১/১৪৯, হা/১৭৪
[9]মুসলিম, ইলম অধ্যায়, হা/৬৮০০,
রিয়ায, ১/১৪৭, হা/১৭১
[10]মুসলিম; মিশকাত হা/১৪১
[11]মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯৫১
[12]মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯৫২, ৬/১৪৩
[13]মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯৫৩, ৬/১৪৪
[14]মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/২৯৪৯, ৬/১৪২
[15]আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২১৭০; তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/২২৭৭, সনদ ছহীহ
[16]মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৯২৫, ১১/১৮৯
[17]মুত্তাফাক্ব, বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৯২৭, ১১/১৯০
[18]আবূদাঊদ হা/৪১৮, সনদ ছহীহ; রিয়ায, হা/৩০১
[19]মুত্তাফাক্ব আলাইহ, রিয়ায, হা/৩০০, ১/২২৭
[20]তাহক্বীক্ব
তিরমিযী
, হা/১১৭৩; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৩১০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/২৯৭৫, ৬/১৫৩, সনদ ছহীহ
[21]বুখারী হা/৪৭৯৫
[22]মুসলিম, হা/১৪৮৩ জিহাদ ও ভ্রমণ অধ্যায়
[23]মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩২৭
[24]বুখারী, হা/৩
[25]সীরাতু ইবনু হিশাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২০৬
[26]আবুবকর জাবির
আল-জাযায়েরী
, আল-ইলম ওয়াল ওলামা, পৃ. ২৬৬
[27] .
[28]বুখারী, হা/৩৫৬২
[29]বুখারী হা/৩১৪, ৩১৫ হায়েয
অধ্যায়
[30]তাহক্বীক্ব
তিরমিযী হা/৩৮৮৩
; মিশকাত হা/৬১৬৫, সনদ ছহীহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top