দান-ছাদাক্বাহর গুরুত্ব ও ফযীলত

মানুষের সৃষ্টিগত একটি অভ্যাস হলো কৃপণতা এবং ক্রোধ ও প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে ওঠা, এ সবই শায়ত্বনী কর্মকান্ডের অন্তর্গত। তাই যাতে করে ঐ মানুষটি তার এই খারাপ অভ্যাস থেকে পুরোপুরি বিরত থেকে বদান্যতা ও সৌহার্দ্যের গুণে গুণান্বিত হয়। ছাদাক্বাহ এমনই এক ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয় এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لِيَقِ أَحَدُكُمْ وَجْهَهُ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ‘তোমরা একটি খেজুরের টুকরা দান করে হ’লেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো’ (তিরমিযী হা/২৯৫৩, ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৪৭)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (বাকারাহ ২/২৭১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘আল্লাহকে করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ দাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ মুছে দেব’ (মায়েদা ৫/১২)। অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দেবেন, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ (কারো কাজের) অতি মর্যাদাদানকারী, সহনশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)। তিনি আরো বলেন, ‘আর আল্লাহকে ঋণ দাও উত্তম ঋণ। তোমরা যা কিছু কল্যাণ নিজেদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর নিকট (সঞ্চিত) পাবে, তাই উত্তম এবং পুরস্কার হিসেবে খুব বড়। তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু’ (মুযাম্মেল ৭৩/২০)।

দান হলো দয়ার শামিল : 

দান ছাদাকাহ দয়ার স্তর। জমিনবাসীর প্রতি দয়া করা। আর এর ফলে আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত প্রাপ্ত হওয়া। হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, خير الناس أنفعهم للناس ‘সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী’ (ছহীহুল জামি‘ হা/৩২৮৯)।

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে লোক মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়ালু হোন না’ (মিশকাত হা/৪৯৪৭)। অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহর রহমত তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দান করেন। আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাদের দয়া করে থাকেন’(বুখারী হা/৫৬৫৫)

দান কখনো বিফলে যায় না :

দান-ছাদাক্বাহ আল্লাহর ক্রোধকে নিভিয়ে দেয়। স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় কম-বেশী দান-ছাদাক্বাহ করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,صَنَائِعُ الْمَعْرُوفِ تَقِي مَصَارِعَ السُّوءِ، وَصَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ، وَصِلَةُ الرَّحِمِ تَزِيدُ فِي الْعُمُرِ- ‘সৎকর্ম সমূহ মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা করে। গোপন ছাদাক্বা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে বয়স বৃদ্ধি পায়’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮০১৪, ছহীহুত তারগীব হা/৮৮৯)।

মানব কল্যাণে দান ছাদাক্বাহ করা উচিৎ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “একটি লোক বলল, ‘(আজ রাতে) আমি অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং সে আপন সাদকার বস্তু নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। লোকেরা সকালে উঠে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক চোরের হাতে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’

সাদকাকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা! (আজ রাতে) অবশ্যই আবার সাদকা করব।’ সুতরাং সে নিজ সাদকা নিয়ে বের হল এবং (অজান্তে) এক বেশ্যার হাতে তা দিয়ে দিল। সকাল বেলায় লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক বেশ্যাকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সে তা শুনে আবার বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা যে, বেশ্যাকে সাদকা করা হল। আজ রাতে পুনরায় অবশ্যই সাদকাহ করব।’

সুতরাং তার সাদকা নিয়ে বের হয়ে গেল এবং (অজান্তে) এক ধনী ব্যক্তির হাতে সাদকা দিল। সকাল বেলায় লোকেরা আবার বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ এক ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ লোকটি শুনে বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রসংশা যে, চোর, বেশ্যা তথা ধনী ব্যক্তিকে সাদকা করা হয়েছে।’

সুতরাং তাকে বলা হল যে, ‘(তোমার সাদকা ব্যর্থ যায়নি; বরং) তোমার যে সাদকা চোরের হাতে পড়েছে তার দরুন হয়তো চোর তার চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ ক’রে দেবে। বেশ্যা হয়তো তার দরুন তার বেশ্যাবৃত্তি ত্যাগ করবে। আর ধনী; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে এবং সে তার আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে” (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৭৬)।

দান-ছাদাক্বাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেয় :

দান করা, মিসকীন ও পথিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, নিজ রোযগার থেকে খাওয়া এবং তা থেকে পরিবারের জন্য খরচ করার ফাযীলাত। দানের মাধ্যমে যে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জনৈক ব্যক্তি মাঠে কাজ করছিল। এমন সময় সে মেঘের মধ্যে একটা শব্দ শুনতে পেল ‘অমুকের বাগানে বর্ষণ কর’। অতঃপর মেঘটি সে দিকে যেতে লাগল এবং এক প্রস্তরময় স্থানে পানি বর্ষাল। দেখা গেল যে, সেখানকার একটি নালা সমস্ত পানি তার মধ্যে নিয়ে নিল। তখন ঐ ব্যক্তি মেঘটির অনুসরণে সেখানে পৌঁছে দেখল যে, একজন ব্যক্তি তার বাগানে পানি সেঁচ দিচ্ছে। তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক। যে নাম সে মেঘের মধ্যে শুনেছিল। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞেস করলে? সে বলল, যে মেঘের এই পানি সেই মেঘের মধ্য থেকে আমি একটি শব্দ শুনেছি, যেখানে তোমার নাম করে বলা হয়েছে যে, অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর! অতএব (হে আল্লাহর বান্দা!) তুমি বল, পানি দিয়ে কি কাজ কর? সে বলল, যখন তুমি তা জিজ্ঞেস করলে তখন শোন, ‘বাগানে যা ফল হয়, তা আমি তিন ভাগ করি। এক ভাগ ছাদাক্বা করি, এক ভাগ আমি ও আমার পরিবার খাই এবং অপর ভাগ জমিতে বীজ হিসাবে লাগাই’ (মুসলিম হা/২৯৮৪; মিশকাত হা/১৮৭৭; আহমাদ হা/৭৮৮১)।

সদাক্বাহ্ ব্যক্তির সম্পদে কোন ঘাটতি আনে না’ এর অর্থ হচ্ছে সদাক্বার কারণে সম্পদের কোনই কমতি আসে না বরং তা আরো বৃদ্ধি পায় এভাবে যে, দুনিয়াতে অদৃশ্য বারাকাত ও পূর্ণ বিনিময় দেয়া এবং আখিরাতে পূর্ণ সাওয়াব দানের মাধ্যমে তার ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হয়। আপাত দৃষ্টিতে ছাদাক্বায় সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পেলেও মূলত সম্পদ কমে না। আল্লাহ এমন উৎস থেকে বান্দাকে দান করতে থাকেন যে সম্পর্কে বান্দার কোন ধারণাই থাকে না। সেকারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِّنْ مَّالٍ، ‘ছাদাক্বায় সম্পদ হ্রাস পায় না’ (মুসলিম হা/২৫৮৮; মিশকাত হা/১৮৮৯)। 

আল্লামা ত্বীবী বলেন, ‘মানুষের সৃষ্টিগত একটি অভ্যাস হলো কৃপণতা এবং ক্রোধ ও প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে ওঠা, এ সবই শায়ত্বনী কর্মকান্ডের অন্তর্গত। তাই যাতে করে ঐ মানুষটি তার এই খারাপ অভ্যাস থেকে পুরোপুরি বিরত থেকে বদান্যতা ও সৌহার্দ্যের গুণে গুণান্বিত হয় সে লক্ষ্যে অত্র হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাগ্রে তাকে ‘সদাক্বাহ্ করার প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছেন।

হালাল ও উত্তম ছাদাক্বাহ আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে গ্রহণ করেন :

হালাল ও উত্তম সম্পদ ছাদাক্বা করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা হালাল, পবিত্র ও প্রিয় বস্ত্ত ছাদাক্বাহ না করলে ছওয়াব পাওয়া যায় না। আল্লাহ বলেন, لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ ‘তোমরা কখনোই কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে’ (আলে ইমরান ৩/৯২)। তিনি আরো বলেন,وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ غَنِيٌّ حَمِيْدٌ- ‘আর সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার সংকল্প কর না, যা তোমরা নিজেরা গ্রহণ কর না চোখ বন্ধ করা ব্যতীত। জেনে রেখ আল্লাহ অভাবমু্ক্ত ও চির প্রশংসিত’ (বাক্বরাহ ২/২৬৭)

হাদীছে এসেছে, আওফ ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন,  ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে আমাদের নিকটে প্রবেশ করলেন, তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। মসজিদে আমাদের এক ব্যক্তি নিকৃষ্ট মানের এক গুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ঐ খেজুর গুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন, এর ছাদাকাক্বারী ইচ্ছে করলে এর চাইতে উত্তমটি ছাদাক্বা করতে পারত। তিনি আরো বলেন, ‘এর ছাদাকাক্বারীকে ক্বিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে’(বূ দাউদ হা/১৬০৮; নাসাঈ হা/২৪৯২, ‘যাকাত’ অধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/১৮২১ ‘যাকাত’ অধ্যায়, সনদ হাসান)।

হালাল উপার্জিত সম্পদ থেকে ব্যয় করা দান ছাদাকাহ আল্লাহ তাআলা ডান হাতে গ্রহণ করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ- ‘যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের সমপরিমাণ দান করল, আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত কবুল করেন না, আল্লাহ তা নিজ ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর দানকারীর জন্য তা বৃদ্ধি করতে থাকেন, যেভাবে তোমাদের কেউ ঘোড়ার বাচ্চা পালন করে তা বৃদ্ধি করতে থাক, এমনকি তা পাহাড় সমান হয়ে যায়’ (বুখারী হা/১৪১০; মুসলিম হা/১০১৪; মিশকাত হা/১৮৮৮)।

ছাদাক্বাহ পাপকে মিটিয়ে দেয় :

রাবী মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ، ‘ছাদাক্বা গোনাহকে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়’(আহমাদ হা/১৫৩১৯; তিরমিযী হা/৬১৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২১০; মিশকাত হা/২৯, ছহীহাহ হা/১১২২।)। তিনি আরো বলেন,إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُورِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلِّ صَدَقَتِهِ،…حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ- ‘নিশ্চয় ছাদাক্বা কবরের উত্তাপ নিভিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে… মানুষের মধ্যে বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৮৮, ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩১০; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)।

মিসকীনকে খালি হাতে ফেরত না দিয়ে হচ্ছে সামান্য কিছু হলেও দিতে বলেছেন। উম্মু বুজায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মিসকীন আমার দরজায় এসে দাঁড়ালে (এবং আমার কাছে কিছু চায়) তখন আমি খুবই লজ্জা পাই, কারণ তাকে দেবার মতো আমার ঘরে কিছু পাই না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার হাতে কিছু দিও, যদি তা আগুনে ঝলসানো একটি খুরও হয়। (আবূ দাঊদ হা/১৬৬৭, আত্ তিরমিযী হা/৬৬৫, নাসায়ী হা/২৫৭৪, মিশকাত হা/১৮৭৯)

কেউ এ ব্যাপারে বলেছেন যে, পোড়া খোরও তাদের নিকট মূল্যায়িত ছিল। আল্লামা বাজী বলেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস দ্বারা মিসকীনকে মুক্ত হস্তে ফেরত না দিয়ে সামান্য কিছু হলেও (যেমন পোড়া খোর) হাতে দিয়ে বিদায় করতে মানুষদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে রাসূল (সা.) ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন যে কসম করে কিছু চায়। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিকে আমি কি তোমাদেরকে চিনাব? সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, জী হ্যাঁ, আল্লাহর রসূল! অবশ্যই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে কেউ কিছু চায়, আর সে তাকে কিছু দেয় না (সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট) (আহমাদ ২৯২৭, মিশকাত হা/১৮৮১)।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেছেন, যখন কোন সওয়ালকারী একজন ধনবান ব্যক্তিকে তার দিকে আকৃষ্ট করে কিছু পাওয়ার জন্য আল্লাহর কসম করে আল্লাহর নামে কিছু চাইবে এবং ধনবান ব্যক্তি সওয়ালকারীর দুরাবস্থার কথা জানে আর সে দান করতে সক্ষম, এরপরও ঐ ব্যক্তিকে কিছু না দিলে সে হবে সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি। এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন তা হলো সাওয়ালকারীকে কিছু না দেয়া যেমন ঠিক নয়, অনুরূপ আল্লাহর নাম নিয়ে কিছু চাওয়াও সঠিক নয়।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করতঃ সমার্থ্য অনুযায়ী দান সাদাকাহ করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top