দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হোন!

দুনিয়া ভোগ বিলাসের স্থান নয়। এটা পরীক্ষাগার মাত্র। এখানে আমরা সবায় মুসাফীর। একজন মুসাফীরের জীবন যেমন হওয়া উচিৎ ঠিক তেমনি হতে হবে। আর দুনিয়ার কর্মফল ভোগ করব আখিরাতে। তাই সাবধান! দুনিয়া হলো একটি অভিশপ্ত স্থান। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় দুনিয়া অভিশপ্ত, তন্মধ্যে আল্লাহর যিকির ও আল্লাহ যা কিছু ভালোবাসেন এবং জ্ঞানী ও জ্ঞান অনুসন্ধানকারী ব্যতীত সব কিছুই অভিশপ্ত। (হাসান : তিরমিযী ২৩২২)।

.অন্যত্র এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) একটি চাটাইয়ে ঘুমিয়েছিলেন, তা হতে উঠলে তাঁর দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যায়। তখন ইবনু মাসউদ (রাঃ) আরয করলেন: হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি আমাদেরকে আদেশ দিতেন তবে আমরা আপনার জন্য একখানা বিছানা তৈরি করে বিছিয়ে দিতাম। তিনি (সা.) বললেন: দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? মূলত আমার ও দুনিয়ার উপমা হলো একজন ঐ আরোহীর ন্যায়, যে একটি গাছের নীচে ছায়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিলো, অতঃপর বৃক্ষটিকে ছেড়ে চলে যায়। (সহীহ : তিরমিযী ২৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১০৯)।

দুনিয়ার মূল্য অতিব ক্ষীণ। এখানে সব কিছুতে বড়ত্ব দেখানোর প্রতিযোগীতা আহাম্মকী মাত্র।সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ তা’আলার কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য পরিমাণ হত তাহলে তিনি কোন কাফিরকে দুনিয়াতে এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। (সহীহ : মুসনাদে আহমাদ , তিরমিযী ২৩২০)।

সর্বদা সম্পদ আহরণে সর্তক থাকতে হবে। নতুবা আমরা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে পারি। আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা বাগ-বাগিচা ও ক্ষেত-খামার (আগ্রহের সাথে) গ্রহণ করো না। ফলে তোমরা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। (সহীহ: তিরমিযী ২৩২৮, শুআবুল ঈমান ১০৩৯১)।

দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ব্যক্তি আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর আখিরাতের প্রতি আসক্ত ব্যক্তি দুনিয়াতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি (যে পরিমাণ) ইহকাল ভালোবাসে সে (সে পরিমাণ) তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, পক্ষান্তরে যে পরকালকে মুহাব্বাত করে, সে সেই পরিমাণ ইহকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতএব যা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে তার উপর তাকে প্রাধান্য দাও যা চিরস্থায়ী থাকবে। (সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ১৯৭১২, শুআবুল ঈমান ১০৩৩৭)।

দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং দুনিয়ার মানুষও ভালবাসেন। তাই মানুষের নিকটে যা আছে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট] এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষেরাও আমাকে ভালোবাসবে। তিনি বললেন: দুনিয়া বর্জন করো, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষের নিকট যা আছে তার প্রতি লোভ করো না। তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালোবাসবে। (সহীহ : ইবনু মাজাহ ৪১০২, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৪৪, সহীহুল জামি’ ৯২২)

এই উম্মতের জন্য বড় ফিৎনা হলো দুনিয়ার সম্পদ। এই সম্পদ মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করবে যে, তারা হালাল হারাম না বুঝে সম্পদ অর্জনে প্রতিযোগীতা করবে। কা’ব ইবনু ইয়ায (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সা.) বলেছেন] প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোন একটি ফিতনাহ্ (পরীক্ষামূলক বিষয়) রয়েছে। আর আমার উম্মতের ফিতনাহ্ হলো সম্পদ। (সহীহ তিরমিযী ২৩৩৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫৯৪)।

পরিশেষে, ‘‘দুনিয়াতে অর্জিত সকল সম্পদ আল্লাহর নিকট থেকে ধারে আমরা গ্রহণ করেছি এবং আল্লাহ ইচ্ছা করলে বিনা নোটিশে তা ফেরৎ নিতে পারেন’’। আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া প্রতি অনাসক্ত হয়ে হালাল সম্পদ অর্জন ও ভোগ করার তাওফীক্ব দান করুন এবং সঠিক বুঝ দিয়ে মুমিন হিসেবে কবুল করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top