দ্বীন আপনার ফেৎরাতগত বিষয়। এটা সকলের মধ্যেই রয়েছে যা কারু সঞ্চালিত হয় আবার কারু বিকৃত হয় আবার কারু তা সীসা ঢালা রুদ্ধদ্বারের মত আবদ্ধ হয়ে যায়। এর অন্যতম দায়বদ্ধ মানুষের পিতা-মাতা। পিতা-মাতা তার সন্তানকে ফেৎরাতের পথ থেকে তাগুতের পথে হাটতে সাহায্য সহযোগীতা করে।
অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন মানুষের জীবনের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে ফিৎরাতের সঞ্চালন তার ক্বালবে নাড়া দেয় এবং তা বেগবান হয়। তখন তারা দ্বীনের পথ তালাশ করে এবং সঠিক দিন খুজে ফিরে। দ্বীন খুজে পাওয়ার পরে কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয়, যেমন- স্বাস্থ্যহানী, অর্থ-সম্পদের ক্ষয়, মানসিক কষ্ট ও পীড়া ডানা বাধে, ঘনিষ্ট সম্পর্কের অবনতি ঘটে, ইত্যাদি।
উপরোক্ত সমস্যা চলাকলিন মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়। কেননা অন্তরের একাংশ তাকে শয়তনের চক্রান্তে পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার আহবান করে। কেননা, শয়তান মানুষকে দারিদ্রতার ভয় দেখায়। উৎকণ্ঠা মানুষ শয়তানের নানা প্রকার চক্রান্তে অতিষ্ট ও অশান্ত হয়ে পড়ে শান্ত অন্তর। এমনও চিন্তার ঊদয় হয় যে, সে পূর্বের স্থানে ফিরে যাবে না-কি?
উপরোক্ত সময়ে দ্বীনে ফেরা মানুষের যা করা উচিৎ তা হ’ল- দ্বীনের ইলম অর্জন করা, যিকির ও ইবাদতে বেশী সময় ব্যয় করা, সর্বাবস্থায় সবুর করা, ভাল বন্ধু গ্রহণ ও অসৎ বন্ধু ত্যাগ করা, নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখতে আখেরাতের কথা বেশী বেশী স্মরণ করা প্রভৃতি।
বর্তমানে আমি নিজেই এমন কিছু মানুষের সাথে মিশেছি এবং তাদের দেখেছি। এমন অবস্থা দেখে তাদেরকে আমি বলেছিলাম।
(১) আল্লাহ আপনার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। আপনি কত বড় মুমিন হয়েছেন!
(২) পরীক্ষা এ কারণে হতে পারে যে, আপনি ঈমানের উপর অবিচল থাকবেন না আবারও ফিরে যাবেন যে পথ থেকে এসেছেন সেই পথে।
(৩) আল্লাহ আপনার ধন-সম্পদ থেকে হারামকে সরিয়ে দিয়ে পবিত্র করতে চাইছেন। এমনকি স্বাস্থ্যহানী ঘটিয়ে আইয়ূব (আঃ)-এর মত পরীক্ষা নিচ্ছেন।
(৪) মানসিক দুঃখ কষ্ট দ্বারা আল্লাহ আপনার ধর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন এবং বিগত পাপের কাফফারা উঠে যাচ্ছে। কেননা, দুঃখ-কষ্ট মানুষের পাপ মোচন করে। আর কষ্টের পরেই সুখ রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তার বান্দাকে দুঃখ-কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে কল্যাণ কামনা করেন।
(৫) মানুষ যখন দ্বীনে ফিরে তখন অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন তার থেকে দূরে সরে যায়। কেননা, তারা তাদের প্রত্যাশা থেকে বিমূখ হয়। এমনকি তারা নানা প্রকার মানসিক কষ্ট দিতে লজ্জাবোধ করে না
দ্বীনের ওপর অবিচল/দৃঢ় থাকার অন্যতম তিনটি শর্ত :
১. সর্বদা দ্বীন শিক্ষা করা, অর্থাৎ- কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অধ্যায়ন এবং সালাফদের বুঝ অনুসারে অনুসরণ করা।
২. দ্বীনের জ্ঞান ও বুঝ অনুসারে আমল করা।
৩. জীবনের সকল ক্ষেত্রে হালাল ও হারামকে আলাদা করে হালালকে গ্রহণ এবং সর্বাবস্থায় হারামকে বর্জন করা।
দুনিয়া নয়, দ্বীনের মোহে পড়ুন :
খসখসে মোটা পোশাক পরিধান করা এবং স্বাদবিহীন খাদ্য খাওয়া পরহেজগারি নয়; বরং প্রকৃত পরহেজগারি হলো দুনিয়ার প্রতি মোহকে খাটো রাখা। আমর ইবনু শু’আয়ব (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। নাবী (সা.) বলেছেন: এ উম্মতের কল্যাণের সূচনা হলো (আল্লাহর ওপর) ইয়াক্বীন বা বিশ্বাস এবং (দুনিয়া) বিমুখতা অবলম্বন করা। আর অনিষ্টতার মূল হলো কৃপণতা ও লোভ-লালসা। (বায়হাকী) হাসান: সিলসিলাতুস সহীহাহ ৩৪২৭, যুহদ লি আহমাদ ১০, শু’আবুল ঈমান ১০৮৪৪।\
ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি। একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, দুনিয়াতে “যুহদ” বা পরহেজগারি কাকে বলে? উত্তরে তিনি বলেন, হালাল উপার্জন এবং আকাঙ্ক্ষা ছোট করা।
আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন তখন তাকে ভালো কাজে নিয়োজিত করেন। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রসূল! কিরূপে তার দ্বারা ভালো কাজ করান? তিনি (সা.) বললেন : মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজ করার তাওফীক দান করেন। (তিরমিযী) সহীহ : তিরমিযী ২১৪২, সহীহুল জামি ৩০৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৩৫৭, মুসনাদে আহমাদ ১২০৫৫, আবু ইয়া’লা ৩৭৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪১, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৪৬৫৬।
হক্বের ওপর অবিচল থাকার দো‘আ :
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.
উচ্চারণ : রাব্বানা লা-তুঝিগ্ ক্বুলূবানা বা‘দা ইয্ হাদায়তানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুন্কা রাহমাতান, ইন্নাকা আন্তাল ওয়াহ্হা-ব।
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তর সমূহকে বক্র করো না। আর তুমি আমাদেরকে তোমার পক্ষ হ’তে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদান করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বাধিক দানকারী’(আলে ইমরান ৩/৮)।
শত প্রচেষ্টার ফলে যা পাই আর যা পাই না, তা তাক্বদীর। মুমিনের উচিৎ অল্পে তুষ্ট থাকা ও না পাওয়ার জন্য ধর্য্য ধারন করা। তবে মানুষ ভুল করে অনেক কিছুই চাই, যা জীবনে অপূরণীয় হয়ে থাকে। দুনিয়াতে তা না পেলে আখিরাতে পাওয়ার কামনা থাকা উচিৎ। হে আল্লাহ! আজ যারা দ্বীনের খাতিরে আমাকে ভালবাসে আমিও তাকে ভালবাসি একমাত্র দ্বীনের জন্য তোমার সম্মানে। তুমি আখিরাতে তাদের সাথে আমার হাশর-নাশর রেখো। তুমি আমাকে অকৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করিও না। আমার জন্য যা কল্যাণকর তুমি তা আমার নছীবে রেখো। আর যা অকল্যাণকর তা আমা থেকে দূরে সরিয়ে রাখো।
পরিশেষে, দ্বীনের উপর অবিচল থাকা অতিব কষ্টকর হলেও তা মেনে নিতে হবে বিনা বাক্যে। কেননা এটা আল্লাহর হুকুম, তার দাসত্ব করা ফরয। অন্ধকার থেকে আলোতে, তাগুত ছেড়ে দ্বীনে, হারাম ছেড়ে হালাল গ্রহণ করা অনেক কঠিন হেতু প্রতিনিহিত আল্লাহর একান্ত সাহায্য কারমনা করা উচিৎ এবং আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে অভিভাবক গ্রহণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে দ্বীন ইসলামের উপর অবিচল থাকার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।