নিউজ : রাসূলুল্লাহ (ছা:) আইএস নিয়েই কি সতর্ক করেছিলেন?

মধ্যপ্রাচ্যের বড় একটি অংশ দখলে নিয়ে
ইসলামিক স্টেট নামের একটি উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী যখন আতঙ্ক আর বিদ্বেষ
ছড়াচ্ছে, পশ্চিমের পাশাপাশি সৌদি আরব, ইরানের মতো দেশ যখন ওই গোষ্ঠীর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, ঠিক তখনই ইসলামের ভেতর থেকে একটি প্রশ্নের
উত্তর খুঁজেছেন একজন তরুণ মুসলিম লেখক। পকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক কাশিফ এন চৌধুরী হাফিংটন পোস্টে
প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রশ্ন রেখেছেন, মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ
(সা.) কি প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এই আইএস-এর বিষয়েই সতর্ক করেছিলেন?     
“তিনি
(নবী) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন এক সময় আসবে যখন নাম ছাড়া ইসলামের আর
কিছু থাকবে না, অক্ষর ছাড়া কোরআনের কিছু থাকবে না এবং অনেক ‘মসজিদ জাকজমকে
পূর্ণ থাকবে, কিন্তু সত্য পথের নির্দেশনা সেখানে থাকবে না’।”
হাদিস
সংকলন ‘মিশকাতুল মাসাবীহ’ থেকে উদ্ধৃত করে কাশিফ লিখেছেন, ‘সেই দিনগুলোতে’
ইসলামের আধ্যাত্মিক মর্ম ‘হারিয়ে যাবে’ এবং অধিকাংশের কাছে ধর্ম ‘সীমাবদ্ধ
থাকবে’ কেবল আচারের মধ্যে। ওই সময়ে ইমামরা ‘দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’ হবেন,
পরিণত হবেন ‘তত্ত্বীয় বিবাদের কেন্দ্রে’।
এই একুশ শতকে হযরত মুহাম্মদের (সা.) সেই ‘ভবিষ্যদ্বাণীর’ সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন কাশিফ।
“মুসলিম
বিশ্বের একটি উগ্রপন্থি অংশের নেতাদের ক্ষেত্রে এটা কি অদ্ভূত রকম সত্য,
যারা এই মিম্বর ব্যবহার করে ছড়াচ্ছেন বিভক্তি আর বিদ্বেষের বাণী।”

চলতি বছর এপ্রিলে মিশরীয় খ্রিস্টানদের হত্যার পর ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। ছবি রয়টার্স

আর এই বিভক্তি-বিদ্বেষের চিত্র দেখাতে গিয়ে আমেরিকার মুসলিম রাইটার্স
গিল্ডের সভাপতি কাশিফ এন চৌধুরী তার নিবন্ধের সূচনাতেই রোজার মধ্যে আইএস-এর
হামলায় তিউনিসিয়ার একটি সৈকতে ৩৯ জন এবং কুয়েতে একটি শিয়া মসজিদে প্রায় ৩০
জনকে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেছেন।“কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই তাদের
প্রতি খড়্গহস্ত হওয়ার এক কঠোর মনোভাব দেখিয়ে চলেছে আইএস। তারা ইয়াজিদি ও
খ্রিস্টানদের জবাই করছে, কিন্তু তাদের হত্যা-নির্যাতনে শিকার মানুষের একটি
বড় অংশই মুসলমান, যারা তাদের কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করেছে; প্রতিরোধ
গড়েছে।
“যে সুন্নি ইমামরা নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশে অস্বীকার করছেন
এবং যে মুসলিম নারীরা তাদের বিশ্ববিক্ষা মানতে চাননি, তাদেরও হত্যা করছে
আইএস।”
কাশিফের দৃষ্টিতে, ইসলামের নামে কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীই আসলে এভাবে চলছে। মুসলমানরাই তালেবান হামলায় সবচেয়ে বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে নিহত হয়েছেন শত শত শিয়া মুসলমান।
পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং আমেরিকাতেও
আহমাদিয়াদের উপর একই ধরনের হামলা হয়েছে।

নিবন্ধের লেখক কাশিফ এন চৌধুরী পেশায় একজন চিকিৎসক।

“কোরআনের নিবিড় পাঠে এটা স্পষ্ট যে, আইএস-এর মতো দলগুলোর কর্মকাণ্ড ইসলামের
বিধি-বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কোরআনে একটি হত্যাকাণ্ডকে ‘পুরো
মানবজাতিকে নির্মূল করার’ সমতুল্য বলা হয়েছে (সুরা মায়েদাহ) এবং ফিৎনাকে
(নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা) বিবেচনা করা হয়েছে হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ হিসেবে
(সুরা বাকারা)।“ইসলামে শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের উপর
গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিবেকের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার
পাশাপাশি ধর্মত্যাগ ও ধর্মনিন্দার (ব্লাসফেমি) জন্য ইহজাগতিক শাস্তি
নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
মহানবী আজকের আইএস-এর বিষয়েই সতর্ক করেছিলেন
কি-না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিম থেকে কাশিফ
লিখেছেন, “তিনি (মহানবী) এটাও বলেছিলেন, আইএস-এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো
ইসলামের বিশ্বাসকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘একদল তরুণের
আবির্ভাব ঘটবে, যারা চিন্তায় হবে অপরিণত’। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে,
কিন্তু করবে সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ। তারা এত বেশি ধর্ম পালন করবে, যার কাছে
মুসলমানদের ইবাদত তুচ্ছ বলে মনে হবে।
“তারা মানুষকে কোরআনের কথা
বলবে, কিন্তু তা হবে কেবল তাদের মুখের কথা। অর্থাৎ, তারা এর মর্মার্থ বুঝবে
না, কেবল বেছে বেছে কিছু অংশ আওড়াতে থাকবে। মহানবী তাদের ‘সৃষ্টির সবচেয়ে
নিকৃষ্ট’ বলেছেন।”
আজকের পৃথিবীতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে
যারা চোখ রাখেন, তাদের অনেকেই হয়তো কাশিফের বলা সেই ‘অপরিপক্ক তরুণদের’
অপরিণামদর্শী আচরণের অজস্র নজির দেখেছেন। এদের ছড়ানো বিদ্বেষের বিষ
পৃথিবীকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা ভেবেও হয়তো শঙ্কিত হয়েছেন।

আইএস-এর খলিফা আবু বকর আল বাগদাদী। ছবি রয়টার্স

কাশিফ লিখেছেন, “এতক্ষণের আলোচনায় বিষয়টি যদি পুরোপুরি স্পষ্ট না হয়, তাহলে
কিতাব আল ফিতানে মহানবীর চতুর্থ উত্তরসূরি খলিফা আলীর বর্ণিত আরেকটি
হাদিসের কথা বলা যায়। সেখানে এদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘কালো পতাকাধারী  দীর্ঘ
চুলের পুরুষ’ হিসেবে। বলা হয়েছে, তাদের ‘অন্তর হবে লোহার মতো শক্ত’ এবং
তারা একটি রাজ্যের (আসাব উল দাউলা) প্রতিনিধিত্ব করবে। মজার বিষয় হল, আইএস
নিজেদের ইসলামিক স্টেট বা দাউলা হিসেবেই পরিচয় দেয়।“হাদিসে আরও
বলা আছে, তারা তাদের করা চুক্তি লঙ্ঘন করবে, অসত্য বলবে এবং নিজেদের নামের
সঙ্গে যুক্ত করবে শহরের নাম। এ প্রসঙ্গে আইএস-এর খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর
নাম মনে আসে।”
কাশিফ আশা করছেন, বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা হযরত মুহম্মদের (স.) বিচক্ষণতা দেখবেন এবং ‘মুর্খতা ও উগ্রবাদের’ বিরুদ্ধে একজোট হবেন।
[পেশায়
চিকিৎসক কাশিফ চৌধুরী বস্টনে কার্ডিওলোজিতে ফেলোশিপ করছেন। আন্তর্জাতিক
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট এর একজন সদস্য তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে নিয়মিত তার লেখা প্রকাশিত
হয়।]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top