নিউটনের তৃতীয় সূত্র হ’ল, ’’প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’’ । অর্থাৎ, যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে, তখন সেই বস্তুটিও প্রথম বস্তুটির ওপর বিপরীত দিকে সমান বল প্রয়োগ করে।
ব্যাখ্যা : নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্র থেকে জানা যায় যে প্রকৃতিতে একক বিচ্ছিন্ন বল বলে কিছু নেই। বল সর্বদা দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া রূপে বর্তমান থাকে। যখন বলা হয় যে একটি বল ক্রিয়া করে তখন আসলে দুটি ক্রিয়াশীল বলের মধ্যে একটির কথাই বলা হয়। একটি বল হল অন্যটির পূরক এবং ওরা একসঙ্গেই ক্রিয়া করে। ক্রিয়া যতক্ষণ স্থায়ী হয় প্রতিক্রিয়াও ততক্ষণ স্থায়ী হয়, ক্রিয়া বন্ধ হলে প্রতিক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
উদাহরণ : ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার বিষয়টা টের পাবে এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায় লাফ দিতে গেলে। লাফানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রথম নৌকাটা খানিকটা পিছিয়ে যাবে।
মূল কথা হ’ল, সংগঠনের সমস্ত ভাই-বোনের জানা ও বুঝা উচিৎ আমরা যা করব তার একটি সবল প্রতিক্রিয়া আসবে। হোক তা ভালো কিংবা মন্দ। শিক্ষার শেষ নেই, অবশানও নেই। যে সকল ব্যক্তি সার্বিক জীবনে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়তে চেয়েছেন বা গড়ে যাচ্ছেন। তাদের জীবনের পর্যালোচনা করে দেখেন কোন না কোনদিন তারা হক্ব বলা ও মানার ক্ষেত্রে বাধা পেয়েছেন। হক্ব বলা ও মানার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বোত্তম সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। নয়তো আমরা ধ্বংস প্রাপ্ত হবো।
দ্বীনের দাওয়াত দানকারীদের মধ্যে সেই উত্তম যে অন্যের নিকট থেকে দুঃখ-কষ্ট পেয়েও দ্বীনের দাওয়াত প্রদানে ছবর করে এবং অনঢ় থাকে। কখনও কোন অবস্থাতে অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে না, হেয় প্রতিপন্ন করে না, বৈষ্যয়িক বিষয়ে বাড়াবাড়ী করে না, মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ইত্যাদি গুণ বিদ্যমান কেবল তারাই সফলকাম।
দ্বীনের দাওয়াত বা উপদেশ প্রদানের সময় তাদের নিকট থেকে বাঁধা ও বিপত্তি আসতে পারে। আর সে সময় নিজেকে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনাদর্শের মানদন্ডে ওযন করে অতীব সূক্ষ্মভাবে ধৈর্য্যধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং দাওয়াতের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।
হক্বের দাওয়াত বা উপদেশ প্রদানের সময় যে বাঁধা-বিপত্তি আসবে, সেখানে ছবরের সাথে অবিচল থাকতে হবে। এটা মহৎ গুণ। সবায় এ গুণ অর্জন করতে সক্ষম নয়। তবে প্রত্যেক মুমিনের এই গুণ অবশ্যই অর্জন করতে হবে, নতুবা সে পরাজিত হবে। সফলতা তারাই অর্জন করেছে যারা ছবর করেছেন। এটা ঈমানের পরীক্ষাও হ’তে পারে এবং সেখানে সর্বদা ধর্য্যধারণ করতে হবে। তাই তো বাঁধা না থাকলে দ্বীনের দাঈ অনুভব করতে পারবে না যে, তার দাওয়াত কতটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে। প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনে এমনটি ঘটেছে। বর্তমানে এটা স্বাভাবিক। আর এর ফলাফল হবে অতীব সুস্বাদু। শুধু মাত্র ধৈর্য্যধারণ করতে হবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা বৈ কিছুই নয়।
আপনার ভাল কথা মানুষের অন্তরে যেমন দাগ কাটে ঠিক তেমনই মন্দ কথা ঘৃণার জন্ম দেয়। আপনি সংগঠক হোন বা না হোন আপনার উচিৎ সর্বদা ভাল কথা বলা এবং এর ওপর অবিচল থাকা। হয়ত বা আপনাকে সাধারণ মানুষ অনুসরণ করেন, আপনার প্রদান করা জ্ঞানগর্ভ তথ্য তারা সাদরে গ্রহণ করেন। আপনার সেই ভক্ত জনগণ আপনার মন্দ কথায় কষ্ট পাবেন, তাই চিন্তা ভাবনা করে কথা বলা উচিৎ, যেন তারা কষ্ট না পায়। শুধু তাই নয়, অন্য মানুষ আপনাকে কষ্ট দিয়ে কথা বললে তারা ভিষণ কষ্টও পায়। অতএব আপনার উচিৎ সর্বদা মন্দ বা রসিকতার ছলে মিথ্যা তথ্যবহুল আলোচনা এড়িয়ে চলা এবং কুরআন-সুন্নাহ সম্মত সঠিক তথ্যবহুল আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।
পরিশেষে, আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ পালন করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ প্রদান করে বলেন, أَلَا لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ ‘উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়’(বুখারী হা/৪৪০৬, ৫৫৫০; মুসলিম হা/১৬৭৯; ইবনু মাজাহ হা/২৩৪; ছহীহ হাদীছ)। এই কথার ব্যাখ্যা হ’ল, কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত যত আদেশ-নিষেধ ও নির্দেশনা রয়েছে তা প্রচার করা। কুরআন-সুন্নাহর বাহিরে গেলেই আপনি ধরাশায়ি হবেন। সুতরাং ভুল বলা থেকে বিরত হোন। এছাড়াও এই দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে আপনার ইখলাছ পরিশুদ্ধ করুন এবং সর্বদা উত্তম ব্যবহার করুন। মানুষ আপনার উত্তম আচরণে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবেন, ইনশাআল্লাহ। আর অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকে বিরত হোন! কেননা, এটা নিজের দিকেও প্রত্যাবর্তন করতে পারে। আর জ্ঞানীরাই সঠিক উপদেশ গ্রহণ করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন এবং সকলকে ক্ষমা করুন, আমীন।