পিওর ও পপুলার

—ড. মুহাম্মাদ  আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি
মাসিক আত-তাহরীক

মানুষের সৃষ্টিকাল থেকেই পিওর ও
পপুলারের দ্বন্দ্ব চলছে। জান্নাতে ইবলীস আদম ও হাওয়াকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের
প্রতি প্রলুব্ধ করেছিল সেখানে তাদের চিরস্থায়ী হওয়ার লোভ দেখিয়ে। সেদিন
ইবলীসের পপুলার প্রস্তাবের কাছে পিওরের অনুসারী আদম ভুলক্রমে পরাজিত হন।
ফলে তাদেরকে জান্নাত থেকে বেরিয়ে আসতে হয় (ত্বোয়াহা ২০/১২০-২৩)
এভাবে সেদিন পিওরের প্রতি প্রথম হিংসা করেছিল ইবলীস। অতঃপর দুনিয়াতে
আদমপুত্র হাবীলের পিওর ঈমানের প্রতি প্রথম হিংসা করেছিল পপুলার বড় ভাই
ক্বাবীল। হাবীল তার মেষপালের সেরাটি আল্লাহর জন্য কুরবানী দিয়েছিল।
অন্যদিকে ক্বাবীল তার কৃষিপণ্যের নিকৃষ্টটি আল্লাহর জন্য ছাদাক্বা দিয়েছিল।
আল্লাহ উভয়ের অন্তরের খবর রাখতেন। তাই তিনি পিওরটি কবুল করলেন। অতঃপর আকাশ
থেকে আগুন এসে সেটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। কিন্তু ক্বাবীলের ছাদাক্বা
দুনিয়াতেই পড়ে রইল (ইবনু কাছীর)। এতে হিংসায় জ্বলে উঠল ক্বাবীল।
অথচ এতে হাবীলের কোন হাত ছিল না এবং তার কোন দোষ ছিল না। তবুও ক্বাবীলের
নিকট হাবীল হত্যাযোগ্য আসামী হয়ে গেল ও তার হাতে হাবীল নিহত হ’ল (মায়েদাহ ২৭-৩০)

নবী-রাসূলগণ
সর্বদা পিওরের প্রতি মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু পপুলারপন্থী লোকেরা
সর্বদা তাদেরকে বাধা দিয়েছে এমনকি তাদের হত্যা করেছে। আজও তারা বাধা
দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিবে। এটাই স্বাভাবিক। তাহ’লে কি পপুলারদের চাপে পিওররা
হারিয়ে যাবে? কখনোই না। পপুলাররা যতই দম্ভ করুক, তারা ভিতর থেকে দুর্বল ও
ভীরু। তারা তাদের মত লোকদের বাহবা পাবে ও গাল ভরে হাসবে। পিওরের বিরুদ্ধে
জান ভরে গালি দিবে, অপবাদ দিবে ও মিথ্যাচার করে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা
করবে। কিন্তু এত করেও তারা অন্তরে সুখ পাবে না। কারণ তারা ভালভাবেই জানে
যে, তারা সত্যের বিরোধী। শত মিথ্যা দিয়েও তারা পিওরের আলোকে নিভাতে পারছে
না। কিন্তু মুখ ফুটে সত্যকে স্বীকার করবে না বা হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করবে
না। এই ভীরুতা ও কপটতাই তাদের কুরে কুরে খাবে। মূসার চাচাতো ভাই কপটনেতা
সামেরীর মত তারা অস্পৃশ্য হয়ে থাকবে। এই অসুখী জীবনই এদের দুনিয়াবী শাস্তি।
অতঃপর কবরের শাস্তি তো থাকবেই।
প্রত্যেক নবী-রাসূলের যুগে পপুলারের
ধরন ও প্রকৃতি ছিল ভিন্ন। তবে মৌলিক ভ্রান্তিগুলি ছিল প্রায় একইরূপ। যেমন
নূহ (আঃ)-এর যুগ থেকেই চালু হয়েছে মূর্তিপূজা। যা আজও আছে। পৌত্তলিকরা
সরাসরি এটা করে। ইহূদী-নাছারারা প্রতীক পূজা করে এবং মুসলমানরা
ছবি-প্রতিকৃতি ও কবরপূজা করে। ধারণা-বিশ্বাস প্রায় সবার একই। ছবি-মূর্তি ও
কবরের মধ্যে তারা প্রাণের কল্পনা করেন ও তাকে শ্রদ্ধা জানান। তার সম্মানে
দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। বেদীতে, মিনারে, কফিনে ও কবরে ফুল দেন। অথচ যাকে
দিচ্ছেন তিনি কিছুই জানতে পারছেন না। এটা যে অযৌক্তিক ও স্রেফ লোক দেখানো
এবং সময় ও অর্থের অপচয়, তা তারা স্বীকার করেন। কিন্তু কখনো প্রথার দোহাই
দিয়ে, কখনো অসার যুক্তির দোহাই দিয়ে তারা এগুলি করে থাকেন। জীবন্ত মানুষকে
মারতে তাদের দিল কাঁপে না। কিন্তু নিষ্প্রাণ ছবি-মূর্তির জন্য তারা হু হু
করে কাঁদেন ও শত শত টাকা ব্যয় করেন। শয়তান এভাবেই তার মিশন চালিয়ে যাচ্ছে
যুগ যুগ ধরে। আর এটাই হ’ল পপুলার। এর বিপরীত হ’ল তাওহীদ বা আল্লাহর
একত্ববাদ, যা পিওর। যিনি অদৃশ্য ও সকল ক্ষমতার উৎস। যিনি চিরঞ্জীব ও
বিশ্বচরাচরের ধারক।
সমাজ পরিচালনার জন্য নেতৃত্বের যোগ্যতা, মেধা ও
সততা আল্লাহর দান। এই অমূল্য নে‘মত যিনি পেয়েছেন, তিনি বড়ই সৌভাগ্যবান।
অন্যদের উচিৎ তাকে বেছে নিয়ে তার হাতেই নেতৃত্ব সোপর্দ করা এবং যোগ্য
ব্যক্তিদের পরামর্শের মাধ্যমে সমাজ পরিচালনা করা। এই বাছাইয়ের মানদন্ড হবে
আল্লাহভীরুতা এবং বাহন হবে আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাহ। এখানে নেতৃত্ব
চেয়ে নেওয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহভীরু ও দূরদর্শী ব্যক্তিরাই এটি নির্বাচন করবেন
নিঃস্বার্থভাবে পরস্পরের পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে নেতা ও পরামর্শদাতা উভয়ে
হবেন আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। এই নেতা হবেন
‘আমীর’। যিনি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী হুকুম দিবেন। যিনি হবেন আল্লাহর নিকট
কৈফিয়ত দানের ভয়ে সদা কম্পমান। কর্মীরা থাকবেন ইমারতের প্রতি আনুগত্যশীল ও
শ্রদ্ধাশীল। থাকবেন পরকালে ছওয়াব পাওয়ার আশায় দৃঢ় আস্থাশীল। নেতা ও
কর্মীদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অটুট বন্ধনে সমাজ হয়ে উঠবে শান্তির
আবাসস্থল। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য হবে অতন্দ্র প্রহরী। কেউ কারু
প্রতি খেয়ানতের আশংকা করবে না। কেউ কাউকে অন্যায় সন্দেহ করবে না। এটাই হ’ল
পিওর সমাজের বাস্তব চিত্র।
এর বিপরীত হ’ল দল ও প্রার্থীভিত্তিক
বর্তমান নির্বাচন প্রথা, যা পপুলার। যার অবশ্যম্ভাবী ফল হ’ল হিংসা ও
প্রতিহিংসার রাজনীতি। দলবদ্ধভাবে দু’হাতে লুটপাট যার স্বাভাবিক পরিণতি।
গুম-খুন-অপহরণ, মিথ্যা মামলা এবং নিরপরাধ নাগরিকদের হয়রানি ও নির্যাতন যার
অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সমাজের প্রতিটি সেক্টর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই
হিংসাত্মক রাজনীতির বিষবাস্পে জর্জরিত। ব্যালট বা বুলেট যেভাবেই হৌক ক্ষমতা
দখল করতেই হবে, এটাই হ’ল এ রাজনীতির লক্ষ্য। জনকল্যাণ স্রেফ ফাঁকা বুলি।
দুর্নীতি হ’ল এর অঘোষিত নীতি। ‘সততাকে ধুয়ে-মুছে ছাফ করে’ এ রাজনীতিতে
ঢুকতে হয়। এখানে গুণীর কদর নেই। সম্মানীর সম্মান নেই। বড়-ছোট ভেদাভেদ নেই।
নারী-পুরুষে স্তরভেদ নেই। কারুর জান-মাল ও ইযযতের গ্যারান্টি নেই। কেবলই
চাই একটা ভোট। অথচ কে না জানে যে, অধিকাংশ মানুষই হুজুগে। এরপরেও এখন তো
ভোটার ছাড়াই ভোটের বাক্স ভরে যায়। লাজ-লজ্জা ও দায়িত্বের অনুভূতি সবই এখন
হারিয়ে গেছে ক্ষমতার মোহে। পিওরের অনুসারীরা কি পারবে এই বিষাক্ত পপুলারের
সাথে আপোষ করতে?
অর্থ-সম্পদ আল্লাহর দান। ধনী-গরীব তাঁরই সৃষ্টি। তা
না হ’লে সমাজের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিঘ্নিত হয়ে পড়ত। মানুষ বিপদে পড়বে
এটাই স্বাভাবিক। তাই পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে নৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা করা
মানবতার দাবী। ডান হাতে দান করলে বাম হাত জানবে না এটাই হ’ল সর্বোচ্চ
মানবতা। এরাই ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়াতলে আশ্রয় পাবে (বুঃ মুঃ)। স্রেফ আল্লাহকে খুশী করার জন্য বান্দাকে ছাদাক্বা করলে সেটি তার কবরের উত্তাপকে নিভিয়ে দেবে (ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)
এরপরেও ছাদাক্বা বা হাদিয়া না দিয়ে প্রয়োজনে কাউকে ঋণ দিলে সেটা হবে লাভ ও
সূদমুক্ত। এক টাকা ঋণ দিয়ে দু’টাকার ব্যবসা করা যাবে না। এটাই হ’ল ‘উত্তম
ঋণ’। যা সমাজে আর্থিক লেনদেনের পিওর নীতি। এর বিপরীত হ’ল ঝুঁকিহীন সূদ ও
কিস্তিতে বেশী নেওয়ার পপুলার নীতি। যা মুসলিম-অমুসলিম সবাই এখন করে যাচ্ছেন
নির্বিবাদে নিঃশংকচিত্তে। এভাবে সূদ-ঘুষের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার সম্পদ
জমিয়ে হাযার টাকা দান করায় কি লাভ হবে? বছর বছর হজ্জ ও ওমরা করে কি ফায়েদা
হবে? হারাম খাদ্যে পুষ্ট দেহ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না (ছহীহাহ হা/২৬০৯)
তাহ’লে সেটি মৃত্যুর পরে কোথায় প্রবেশ করবে? হারামের সুউচ্চ প্রসাদ ছেড়ে
কবরের অন্ধ গহবরে প্রবেশ করার পর যখন এই সম্পদ ক্বিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপ
হয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে বারবার ছোবল মারবে আর বলবে, আমি তোমার মাল আমি তোমার
সঞ্চিত ধন, তখন অবস্থাটা কেমন হবে? (বুখারী হা/১৪০৩)। এগুলি আপনি
বিশ্বাস করেন না। বেশ নিজের আরামের ঘরে শুয়ে যখন ডায়রিয়ায় বারবার টয়লেটে
যান, তখন ঐ জীবন্ত আযাবের প্রতিবিধান কোথায়? সব ঔষধ পাশে রেখে যখন আপনার
প্রাণহীন দেহটা পড়ে থাকবে বিছানায়, তখন আপনার সাহায্যকারী কে হবে? অতএব
দুনিয়ার আযাবকে যখন স্বীকার করেন, তখন কবরের আযাবকে অস্বীকার করেন কেন?
আপনি
দারুণ ধার্মিক। লেবাসে-পোষাকে, টুপীতে-আবাতে আপনি আপাদমস্তক শায়েখ, মুফতী
বা জ্বালাময়ী বক্তা। আপনি ছালাত আদায়ের শুরুতে জায়নামাযের দো‘আ পড়ছেন।
অতঃপর নিয়ত পাঠ করছেন। অতঃপর নাভির নীচে হাত বাঁধছেন। আপনি মুক্তাদী হ’লে
কিছুই না পড়ে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন। অতঃপর টপাটপ রুকূ-সিজদা দিয়ে ৩/৪
মিনিটেই চার রাক‘আত ছালাত শেষ করে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করে উঠে চলে গেলেন।
এটা হ’ল পপুলার ছালাত। পিওর ছালাতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, তোমরা ছালাত আদায় কর, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ (বুখারী হা/৬৩১)
সেখানে প্রচলিত ছালাতের কোন স্থান নেই। আপনি হয়ত সেটা জানেন। কিন্তু মানেন
না। দোহাই দেন মাযহাবের। অথচ মাযহাবের ইমামের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল
‘ছহীহ হাদীছই আমার মাযহাব’ (রাদ্দুল মুহতার ১/৬৭ পৃ.)। ওদিকে আবার
রাসূল (ছাঃ)-এর নামে মীলাদ-ক্বিয়াম ও জশনে জুলূস করে ভক্তির প্রদর্শনী
করেন। একইভাবে ছিয়াম-ক্বিয়াম, ছাদাক্বাতুল ফিৎর, যাকাত-ওশর,
হজ্জ-ওমরাহ-জানাযা, বিবাহ-তালাক সবক্ষেত্রে মাযহাবের প্রাচীর খাড়া করে
মানুষকে ছহীহ হাদীছ থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে কথিত ইসলামী রাজনীতির
দোহাই পেড়ে ‘এটাও ঠিক ওটাও ঠিক’ বলে ভোটারদের খুশী করেন। আবার মিথ্যা
ফাযায়েলের লোভ দেখিয়ে সরল-সিধা মুমিনদের বিশুদ্ধ মাসায়েল ও স্বচ্ছ দ্বীন
থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ মা‘রেফতের ধোঁকা দিয়ে মানুষকে তাদের কাশফ ও
কারামতের গোলাম বানাচ্ছেন। কেউ দ্বীনের নামে বোমাবাজি করে সারা বিশ্বে
ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অথচ এসবের সাথে পিওর ইসলামের কোনই সম্পর্ক নেই।
হ্যাঁ
ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ছালাত আদায়ের জন্য তৈরী জামে মসজিদ এ বছরের রামাযানের
প্রথম জুম‘আতেই ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হ’ল (জীবন নগর, চুয়াডাঙ্গা)।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকেরা এসে বিচার করলেন, তোমরা যার যার ঘরে ছালাত
আদায় কর। মসজিদে আসতে হ’লে সবাই যা করে, তোমাদের তাই করতে হবে’।
আহলেহাদীছের নামে রেজিষ্ট্রি করা জামে মসজিদ হঠাৎ করে একদিন কবরপূজারীরা
এসে দিনে-দুপুরে দখল করে নিল ও তাদের লাল নিশান উড়িয়ে দিল। মুছল্লীদের
পিটিয়ে রক্তাক্ত করল ও তাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে দিল। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা
নীরব। বরং উল্টা ধমক, কেন তোমরা সবার মত চলো না? (মাদারগঞ্জ, জামালপুর)। এ
যে মূসার কওম বনু ইস্রাঈলদের উপর ফেরাঊনী যুলুমের নমুনা (ইউনুস ৮৭; নবীদের কাহিনী ২/৫২)
জী এটা হ’ল যুগে যুগে পপুলারদের ক্ষমতার দম্ভ। কিন্তু এটাই কি শেষকথা? না।
চিরকাল সত্যেরই জয় হয়ে থাকে। মিথ্যার গরম জিলাপী কিছুক্ষণ পরেই নরম হয়ে টক
হয়ে যায় ও পরিত্যক্ত হয়। চিরকাল কিছু ঝগড়াটে মানুষ সাধারণ মানুষকে দ্বীন
থেকে বিচ্যুত করেছে। আল্লাহ নিজ মেহেরবানীতে ঈমানদারগণকে হক-এর পথে
পরিচালিত করেছেন (বাক্বারাহ ২১৩)। মুসলিম উম্মাহর হকপন্থী সেই দলটিই হ’ল যারা প্রকৃত অর্থে ‘আহলুল হাদীছ’ (তিরমিযী হা/২১৯২)। 
এবারে
দেখুন বিপরীত চিত্র। একই পরিবারের ছেলে-ভাতিজারা ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ১২
তাকবীরে ঈদের ছালাত আদায় করবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনূদিত তিরমিযী শরীফ থেকে
তারা প্রমাণ উপস্থাপন করল। সমাজের মুরববী-মাতববররা বৈঠকে বসলেন। তারা
বাপ-দাদার দোহাই দিলেন। ছেলেরা বলল, বাপ-দাদারা ভুল করেছেন বলে কি আমরাও
ভুল করব? তারা না জেনে করেছেন। কিন্তু এখন আমরা ছহীহ হাদীছ জেনেও কিভাবে তা
এড়িয়ে যাব? মুফতীরা মাযহাবের দোহাই দিলেন। কিন্তু ছেলেরা হাদীছের বিরুদ্ধে
মুফতীদের পাত্তা দিল না। অবশেষে মুরববীরা হার মানলেন। সিদ্ধান্ত হ’ল এখন
থেকে আমাদের ঈদগাহে ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ১২ তাকবীরে ঈদের ছালাত হবে এবং
পরদিনই সেটা কার্যকর হ’ল (মীরপুর, কুষ্টিয়া)। কিছু সংখ্যক যুবকের সাহসিকতা ও
ঈমানী দৃঢ়তার কাছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা মাযহাবী প্রাচীর ভেঙ্গে খানখান হয়ে
গেল। এটাই হ’ল সত্যের বিজয়। যার আলো একবার জ্বলে উঠলে মিথ্যার অন্ধকার
দূরীভূত হয়ে যায়। কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হ’ল অভ্রান্ত সত্যের উৎস। এর সামনে
মিথ্যার গাঢ় অন্ধকার কতক্ষণ টিকবে? কেবল প্রয়োজন সত্যসেবীদের ঐক্যবদ্ধ
সংগঠন। আল্লাহ তাদেরকেই ভালবাসেন, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে
সারিবদ্ধভাবে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ (ছফ ৪)। আর জামা‘আতবদ্ধ জীবনের উপর আল্লাহর হাত থাকে’ (তিরমিযী হা/২১৬৬)
হাদীছপন্থীদের
জামা‘আতকে ধ্বংস করার জন্য যুগে যুগে বাতিলপন্থীরা অপচেষ্টা চালিয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহংকারে বুঁদ হয়ে পপুলাররা পিওর ইসলামকে মিটিয়ে দিতে
চেয়েছে। প্রশাসন যেহেতু সর্বদা পপুলারদের পক্ষে থাকে, সেহেতু পিওর ইসলামের
অনুসারীদের সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করে জানবাজি রেখে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত
থাকতে হয়। কোন অবস্থাতেই পপুলার হওয়ার শয়তানী ফাঁদে পা দিয়ে বিভক্ত হওয়া
যাবে না। আল্লাহর গায়েবী মদদে পিওর ইসলাম বিজয়ী হবেই। পপুলার এ জাহেলী সমাজ
পরিবর্তিত হবেই। দূরদর্শী নেতৃত্ব, আনুগত্যশীল কর্মী বাহিনী এবং
সংস্কারধর্মী দাওয়াত ও পরিচর্যার মাধ্যমে সমাজকে সত্যমুখী করতে হবে। এভাবে
সমাজ পরিবর্তন হ’লে সবই পরিবর্তন হবে। দেশে আল্লাহর রহমত নেমে আসবে
ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখা আবশ্যক যে, নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তরবারি দিয়ে
পাঠাননি। বরং তাঁরা সত্য নিয়ে এসেছিলেন। সেই মহাসত্যের নিরন্তর দাওয়াত ও
পরিচর্যার মাধ্যমে তাঁরা প্রকৃত মুমিন তৈরী করেছেন। মানুষ তাদের মধ্যে
নিঃস্বার্থ মানবতা দেখতে পেয়েছে ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। অতঃপর বাধা
এলে এইসব মুমিনরাই তা প্রতিহত করেছেন। কেউ শহীদ হয়েছেন, গাযী হয়েছেন। কেউ
নির্যাতিত হয়েছেন ও হিজরত করেছেন। এটাকে তারা আল্লাহর পরীক্ষা হিসাবে বরণ
করেছেন। কিন্তু প্রচলিত পপুলার নীতির সঙ্গে তারা আপোষ করেননি। এর ফলেই
সমাজে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নবীদের অনেকের জীবদ্দশায় যেটা সম্ভব হয়নি,
মৃত্যুর পরে তাঁদের রেখে যাওয়া শান্তিময় আদর্শ বিশ্বব্যাপী গৃহীত হয়েছে।
অতএব পিওরের অনুসারীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যান বা না যান, পপুলাররা সর্বদা
তাদের প্রতি দুর্বল ও নমনীয় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এমনকি আল্লাহ চাইলে
পপুলারদের হাত দিয়েই ইসলামের কল্যাণ করিয়ে নিতে পারেন। যেমনটি রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসেক-ফাজেরদের মাধ্যমে এই দ্বীনকে সাহায্য
করবেন’ (বুখারী হা/৩০৬২)। অতএব আমাদের দায়িত্ব নিজেরা সাধ্যমত
পিওর হওয়া ও পিওরকে সাহায্য করা এবং সমাজকে উক্ত লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ করা।
কেননা সংগঠনই শক্তি। তাতে সর্বত্র দ্রুত পরিবর্তন আসবে এবং আল্লাহর গায়েবী
মদদ নেমে আসবে। এভাবে পিওর ও পিওরের অনুসারীরা দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বদা
বিজয়ী থাকবে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top