প্রশিক্ষণের মাস : রামাযান

ভূমিকা : রামাযান প্রশিক্ষণের মাস। কালজয়ী ইসলাম জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রশিক্ষণ সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। রামাযান মাসে ছিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে একজন মুসলমান তার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে তা বাকি এগার মাস ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগায়। নিম্নে এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করা হ’ল।

রামাযান মাসের তাৎপর্য :

রামাযান মাস হ’ল ইবাদতের মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন, আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নৈকট্য হাছিল এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের সুযোগ। মানব জীবনে দু’টি ধারা প্রবাহিত হয় এক. সুপ্রবৃত্তি দুই.কুপ্রবৃত্তি। আমাদের সমাজ জীবনে সম্প্রীতি-মৈত্রী, ঐক্য-সংহতি, নৈতিক সংস্কৃতি দৃঢ়করণের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পথে অবিচল থাকতে বিশেষ ভূমিকা রাখে সুপ্রবৃত্তি। অপরদিকে আমাদের সুষ্ঠু সুশীল সমাজ ব্যবস্থা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনৈক্য-সহিংসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অনৈতিক সংস্কৃতি তথা পাপের পথে আহবান করে কুপ্রবৃত্তি। আর কুপ্রবৃত্তি ভষ্মিভূত করার জন্যই এ দুনিয়ায় মহান আল্লাহ্ রামাযানের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রবর্তন করেছেন, যাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন মুসলমান এ বিশ্বে তার প্রকৃত স্থান নির্দিষ্ট করতে পারে এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। রামাযান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ- ‘সেই ব্যক্তির নাক মাটিতে মিশে যাক, যে রামাযান পেল, অথচ নিজেকে ক্ষমা করে নিতে পারল না’[1]।

রামাযানে বান্দার জন্য মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করেন এবং তাঁর বান্দাকে কুমন্ত্রণা প্রদানকারী শয়তানকে বেঁধে রাখেন। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ- وَفِيْ رِوَايَةٍ: فُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِيْنُ- وَفِيْ رِوَايَةٍ: فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ- ‘যখন রামাযান মাস আগমন করে তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়। অন্যত্র এসেছে, রহমতের দ্বার সমূহ খুলে দেয়া হয়’।[2] তিনি আরও

বলেন, إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِّنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِيْنُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَيُنَادِيْ مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ- ‘যখন রামাযান মাসের প্রথম রাত্রি আসে, তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে শৃঙ্খলিত করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়, অতঃপর উহার কোন দরজাই খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়, অতঃপর উহার কোন দরজাই আর বন্ধ করা হয় না। এ মাসে একজন আহবানকারী আহবান করতে থাকেন, হে কল্যাণের অভিযাত্রীরা! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের অভিসারীরা! বিরত হও। আল্লাহ তা‘আলা এই মাসে বহু ব্যক্তিকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দেন। আর তা (মুক্তি দেয়া) প্রত্যেক রাত্রিতেই হয়ে থাকে’।[3]

প্রশিক্ষণের গুরুত্ব: 

রামাযান হ’ল সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রশিক্ষণ স্বরূপ। এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে বাকি এগার মাস ইসলামী শারঈ বিধি-বিধান মোতাবেক পরিচালিত হয়। এ মাসে ছালাত, ছিয়ামসহ সকল ইবাদতের মধ্য দিয়ে তাক্বওয়া অর্জিত হয়। আর এই তাক্বওয়ার তীক্ষ্ণ ঈমান নিয়ে একজন মুসলিম তার জীবন সুগঠিতভাবে পরিচালিত করে। যেমন একটি ছুরি সর্বোচ্চ যত্ন করেও রেখে দিলে এগারো মাসে তা অবশ্যই মরিচা ধরে যাবে, যার ফলে সেই ছুরি তার তীক্ষ্ণতা হারিয়ে ফেলবে। একজন মুসলিমের ঈমানের প্রখরতা ধরে রাখার পূর্ব শর্ত হ’ল তাক্বওয়া অজর্ন করা। আর তা অর্জিত হয় এই রামাযানে। একজন মানুষের সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে জীবন যাপনের জন্য যে ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, রামাযানের ছিয়াম তার মধ্যে সেই ধরনের গুণ-বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে থাকে।

পৃথিবীতে যত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছে, প্রত্যেকেরই রয়েছে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ। কেননা কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তার নিজ দায়িত্ব পালনে সহজতর করতে সহযোগিতা করা হয়। একজন সৈনিক যখন সেনাবাহিনীতে চাকুরী গ্রহণ করে, তখন তাকে তার নিজ দায়িত্বে সচেষ্ট, কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান ও একাগ্রচিত্তে সহজভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আবার যে কোন ইঞ্জিনিয়ারকে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি হাতে-কলমে ব্যবহারিক বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। মোদ্দা কথা প্রশিক্ষণ ব্যতীত কোন দায়িত্বে কর্মরত থেকে সফল হওয়া অসম্ভব। সুতরাং মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতি বছর এই রামাযান মাসে ছিয়াম পালনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

একজন মুসলিম কিভাবে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবে? কি ভাবে কখন কেমন করে ছালাত, ছিয়াম, যাকাত আদায় করতে হবে? সকল বিষয়ের উপর এই রামাযান মাস প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যে যেমন এই মাসের প্রতি যত্নশীল, পরবর্তী এগারো মাসে সে তেমনি সফল হবে ইনশা-আল্লাহ। এই প্রশিক্ষণের ধরন হ’ল আত্মিক, শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। রামাযান মাসের ছিয়ামের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও শারীরিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভাবগুলো অতিশয় প্রভাব বিস্তার করে। বাদশা-ফকির, আমীর-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, সকলের সুখ-দুঃখের মিলন মেলা এই রামাযান মাস।

১. তাক্বওয়া অর্জন ও ইবাদতের মাধ্যমে তা সুদৃঢ় করণ : 

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সার্বিক তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন, বাহ্যিকভাবে প্রতিফলন ঘটে। রামাযানের ছিয়াম পালন প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সাধনা। তাক্বওয়া লাভের জন্য ছিয়ামের কোন বিকল্প নেই। পাপাচার ও ভীতিপ্রদ মন্দ বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করার নাম তাক্বওয়া। রামাযান মাসে ছিয়ামের মাধ্যমে তাক্বওয়ার অনুশীলন বেশী হয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ – ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে। অবশ্যই তোমরা মুত্তাক্বী হ’তে পারবে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। তাছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছিয়াম পালন করার মাধ্যমেই বান্দা তার কাঙ্খিত পুরস্কার লাভ করতে পারে। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَاعَدَ اللهُ مِنْهُ جَهَنَّمَ مَسِيْرَةَ مِائَةَ عَامٍ ‘যে আললাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ জাহান্নামকে তার নিকট হ’তে একশত বছরের পথ দূরে সরিয়ে দিবেন’।[4]

মহান আল্লাহর যাবতীয় আদেশ বিষয় সমূহ যথাযথ পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন সম্ভব। আর এ মাসে সকল মুসলমান তা যথাযথ পালন করার সঠিক পথ ও পদ্ধতির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আর এই তাক্বওয়ার খুঁটি সুদৃঢ়ভাবে মজবুত রাখার জন্য প্রয়োজন ইবাদত। শিরক মুক্ত খালেছ নিয়তে সকল ইবাদত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার উপর যে সমস্ত ইবাদত ফরয করেছেন, একজন ছায়েমের জন্য সে সমস্ত ইবাদত পালন করা আবশ্যক। আর ঈমান আনয়নের পরে যেসমস্ত ইবাদত ফরয তন্মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হ’ল ছালাত। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন, أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاَةُ فَإِنْ صَلُحَتْ صَلُحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ-  ‘ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব হবে ছালাতের। যার ছালাত ঠিক হবে তার সব আমল সঠিক হবে। আর যার ছালাত বিনষ্ট হবে, তার সব আমল বিনষ্ট হবে’।[5] এ মাসে ছালাতের রুকন, শর্তাবলী ও ওয়াজিব সহ সময়মত মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায় করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ছায়েম বাকি এগার মাস তা সেই মোতাবেক পালন করে। মহান আল্লাহ যুদ্ধরত অবস্থায় ও ভীতির সময়ও জামা‘আতে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন (নিসা ৪/১০২)। জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ছওয়াব বহুগুণ হয়। এসম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, صَلاَةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ عَلَى صَلاَةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِيْنَ دَرَجَةً ‘জামা‘আতে ছালাত আদায় করার ছওয়াব একাকী আদায় করার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশী’।[6] অন্যদিকে জামা‘আত পরিত্যাগ করার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَثْقَلَ صَلاَةٍ عَلَى الْمُنَافِقِيْنَ صَلاَةُ الْعِشَاءِ وَصَلاَةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيُصَلِّىَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِىْ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لاَ يَشْهَدُوْنَ الصَّلاَةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوْتَهُمْ بِالنَّارِ- ‘এশা ও ফজরের ছালাত আদায় করা মুনাফিকদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন। তারা যদি জানতো এ দুই ছালাতের মধ্যে কি (ছওয়াব) আছে, তাহ’লে তারা এ দুই ছালাতের জামা‘আতে হাযির হ’ত হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও। আমার ইচ্ছা হয় ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়ে কাউকে ইমামতি করতে বলি। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ বের হয়ে তাদের কাছে যাই, যারা ছালাতে (জামা‘আতে) উপস্থিত হয় না এবং তাদের ঘর-বাড়ীগুলি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই’।[7] এছাড়াও এ মাসে ক্বিয়াম করা তথা তারাবীহর ছালাত আদায়ের মাধ্যমে পরবর্তী এগার মাসের তাহাজ্জুদের ছালাত আদায়ের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। রামাযান মাসের চাঁদ দেখার পর সর্বপ্রথম যে ইবাদত পালন করা হয়, তা হচ্ছে তারাবীহর ছালাত। প্রত্যেক ছায়েমের জন্য তারাবীহর ছালাত আদায় করা কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উম্মতকে তারাবীহর ছালাত আদায় করার জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও নেকীর আশায় রামাযান মাসে ক্বিয়াম করবে (তারাবীহ পড়বে) তার পূর্বেকার পাপ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে’।[8]

২. কুরআন-সুন্নাহর আনুগত্য ও মর্যাদা রক্ষা করার শপথ : 

একজন মুসলিম পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও ছহীহ সুন্নাহ পঠন করে মর্মার্থ অনুধাবন করে তা ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় থাকে। বিশেষ করে রামাযান মাসে কুরআন নাযিলের জন্যই এত মহিমান্বিত। রামাযান মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার জন্যই এই মাসের তাৎপর্য এত বেশী। এ মাসের গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ বলেন- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ রামাযান মাসই হ’ল সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের ছিয়াম রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরূন আল্লাহ তা‘আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা সবীকার কর’ (বাকারাহ-২/১৮৫)

৩. মুমিনের গুণাবলী অর্জন ও প্রতিপালনের শিক্ষাগ্রহণ : 

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে মুমিনের ১৬টি গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে কুরআনে ১০টি মুমিনের গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। প্রকৃত মুমিন হ’তে গেলে যে দু’টি গুণাবলী অপরিহার্য সেই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوْا وَجَاهَدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُوْنَ– ‘প্রকৃত মুমিন তারাই, ১. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং ২. তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। বস্ত্ততঃপক্ষে তারাই হ’ল সত্যনিষ্ঠ’ (হুজুরাত ৪৯/১৫)। আর সফলকাম মুমিন হ’তে গেলে নিচের গুণাবলীগুলি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে থাকতে হবে এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاَتِهِمْ خَاشِعُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ- إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ- فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ- أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ- الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُوْنَ- ‘সফলকাম হ’ল ঐসব মুমিন’ ৩. ‘যারা তাদের ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’ ৪. ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ ৫. ‘যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে’ ৬. ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ ৭. ‘নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হ’ল সীমালংঘনকারী’ ৮. ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে’ ৯. ‘যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযত করে’। ‘তারাই হ’ল উত্তরাধিকারী’। ‘যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/১-১১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)

অতঃপর মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি গুণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ   ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। (১) সে তার উপর যুলুম করবে না (২) তাকে লজ্জিত করবে না। (৩) আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। (৪) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিনের বিপদ সমূহের একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’।[9] وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’।[10] (৬) যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না ও বড়দের মর্যাদা বুঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।[11]

ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘মানুষের দ্বীনের জন্য চারটি হাদীছ যথেষ্ট : (১) সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।[12] (২) সুন্দর ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হ’ল অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা।[13] (৩) কেউ প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্ত্ত ভালবাসে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে।[14] এবং (৪) হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট। এ দু’য়ের মধ্যে বহু বস্ত্ত রয়েছে অস্পষ্ট। অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত হ’ল সে হারামে পতিত হ’ল’।[15]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, اتَّقِ السَّيِّئَاتِ، وَازْهَدْ، وَدَعْ مَا + لَيْسَ يَعْنِيكَ، وَاعْمَلَنَّ بِنِيَّةْ + عُمْدَةُ الدِّينِ عِنْدَنَا كَلِمَاتٌ + أَرْبَعٌ قَالَهُنَّ خَيْرُ الْبَرِيَّةْ  ‘আমাদের নিকট দ্বীনের উত্তম বস্ত্ত হ’ল চারটি কথা। যা বলেছেন সৃষ্টির সেরা ব্যক্তি (অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) : (১) মন্দ থেকে বেঁচে থাক (২) দুনিয়াত্যাগী হও (৩) অনর্থক বিষয় পরিহার কর এবং (৪) সংকল্পের সাথে কাজ কর’।[16]

৪. পাপের পথ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা : 

ছায়েমের জন্য আবশ্যক হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) কথা ও কর্মের মধ্যে যেসব বিষয় হারাম করেছেন তা পরিত্যাগের মাধ্যমে পাপমুক্ত করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। তন্মধ্যে মিথ্যা বলা, গালমন্দ করা, ঝগড়া বিবাদ করা, গীবত করা, গান বাজনা শোনা, চোগলখোরী করা, প্রতারণা করা ইত্যাদি পাপ কর্ম থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। আর তা একজন ছায়েম এই রামাযান মাসে ওগুলো থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। মিথ্যা হ’ল সবচেয়ে বড় মহাপাপ। সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বলা জঘন্যতম পাপ। আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلاَلٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوْا عَلَى اللهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِيْنَ يَفْتَرُوْنَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُوْنَ، مَتَاعٌ قَلِيْلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ- ‘তোমাদের জিহবা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্য তোমরা বলো না, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না। তাদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (নাহল ১৬/১১৬-১৭)

রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপরে মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান নির্ধারণ করে নিল’।[17] তিনি আরো বলেন,إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِىْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِىْ إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا ‘তোমরা মিথ্যাচার পরিহার কর। কেননা মিথ্যাচার পাপের দিকে ধাবিত করে এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোন লোক অনবরত মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যাচারকে স্বভাবে পরিণত করে। অবশেষে আল্লাহর নিকটে তার নাম মিথ্যাবাদী হিসাবে লিখিত হয়’।[18] আর একজন ছায়েমের জন্য মিথ্যা ও ঝগড়া বিবাদ পরিহার করতে হবে নচেৎ তার ছিয়াম সঠিক হবে না। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো ছিয়ামের দিন হবে সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে ও হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালিগালাজ করে অথবা তার সাথে ঝগড়া করে তাহ’লে সে যেন বলে, আমি ছায়েম’।[19] রামাযান মাসে মিথ্যাচার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِيْ أَنْ يَّدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও তার উপর আমল করা পরিহার করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’।[20] হযরত আলী (রাঃ) বলেন, إن الصيام ليس من الطعام والشراب ولكن من الكذب والباطل واللغو. ‘খাদ্য-পানীয় থেকে বিরত থাকার নামই ছিয়াম নয়; বরং মিথ্যা, মন্দ কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকার নামই ছিয়াম’।[21]

৫. ক্ষমা ও জাহান্নাম হারাম :

মুসলমান হ’ল আত্মসমর্পনকারী জাতি। এ জাতি মহান আল্লাহর নিকটে জান-মালসহ যাবতীয় কিছু সপে দেয়। একজন মুসলমান সর্বদা সচেষ্ট তার গুণাহসমূহ থেকে মহান আল্লাহর নিকটে ক্ষমা পেতে। আর কোন ব্যক্তি যদি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করে তবে তার পিছনের সকল ছোট ছোট গুণাহ মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। এসম্পর্কে হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا  غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-  ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামযান মাসে ছিয়াম পালন করলো, তার পূর্বের ছগীরা গুণাহসমূহ ক্ষমা করা হ’ল’।[22] যে সকল আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়, ছিয়াম তন্মধ্যে সর্বোত্তম। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَعَّدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একদিন ছিয়াম পালন করবে, অল্লাহ জাহান্নামকে তার নিকট হ’তে সত্তর বছরের পথ দূরে করে দিবেন’।[23]  তিনি আরো বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بَاعَدَ اللهُ مِنْهُ جَهَنَّمَ مَسِيْرَةَ مِائَةِ عَامٍ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার নিকট হ’তে জাহান্নামকে একশত বছরের পথ দূরে করে দিবেন’।[24] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ جَعَلَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি গর্ত খনন করবেন, যার ব্যবধান হবে আসমান-যমীনের ব্যবধানের সমান’।[25] ছিয়াম বান্দার জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষার মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, الصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنٌ حَصِيْنٌ مِنَ النَّار  ‘ছিয়াম হচ্ছে ঢাল স্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি স্থায়ী দুর্গ’।[26]

৬. নির্দিষ্ট জান্নাত ও দুটি খুশীর মূহুর্ত :

ছিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, فِي الْجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ، مِنْهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانُ لاَ يَدْخُلُهُ إِلاَّ الصَّائِمُوْنَ- ‘জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তার একটি দরজার নাম ‘রাইয়্যান’। ছিয়ামপালনকারী ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না’।[27]

তিনি আরো বলেন, إنَّ فِي الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوْا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ- وزاد وَمَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا- ‘জান্নাতে এমন একটি দরজা রয়েছে, যাকে ‘রাইয়্যান’ বলা হয়। ক্বিয়ামতের দিন ছিয়াম পালনকারীগণ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ তাতে প্রবেশ করবে না। ছিয়াম পালনকারীগণ প্রবেশ করলে, ঐ দরজা বন্ধ করা হবে। অন্য কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করবে, সে কখনো পিপাসিত হবে না’।[28]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের দশগুণ হ’তে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হয়। আল্লাহ বলেন, কিন্তু ছওম ব্যতীত, কেননা ছওম কেবল আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার পুরস্কার প্রদান করব। সে তার যৌনাকাঙ্খা ও পানাহার কেবল আমার জন্যই পরিত্যাগ করে। ছিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারকালে, অন্যটি তার প্রভুর সাথে দীদারকালে। তার মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকটে মিশকে আম্বরের খোশবুর চেয়েও সুগন্ধিময়। ছিয়াম (অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে) ঢাল স্বরূপ। অতএব যখন তোমরা ছিয়াম পালন করবে, তখন মন্দ কথা বলবে না ও বাজে বকবে না। যদি কেউ গালি দেয় বা লড়াই করতে আসে তখন বলবে, আমি ছায়েম’।[29]

৭. লাইলাতুল ক্বদরে কল্যাণ প্রাপ্ত :

ক্বদরের রাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে একটি সূরা নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা একে নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে। তুমি কি জানো ক্বদরের রাত্রি কি? ক্বদরের রাত্রি হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে অবতরণ করে ফেরেশতাগণ এবং রূহ, তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে এ রাতে কেবলই শান্তি বর্ষণ। যা চলতে থাকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’ (ক্বদর ৯৭/১-৫)

ছিয়াম পালন করলে মানুষের কৃত গোনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে লাইলাতুল ক্বদরের রাতেও ক্ষমার সৌভাগ্য অর্জন করে। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রি ইবাদাতে কাটায় তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’।[30]  إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَلاَ يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلاَّ مَحْرُومٌ‘রামযান মাস শুরু হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের নিকট এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাযার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হ’ল সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হ’ল। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়’।[31]

শুধু লাইলাতুল ক্বদরের রাতে নয়, প্রত্যেক রাতেই মহান আল্লাহ নিমণ আসমানে নেমে আসেন এবং অনেক বান্দাকে ক্ষমা করেন মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ ‘আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করেন এবং ফজর পর্যন্ত বান্দাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আছ কি কোন আহবানকারী, আমি তার আহবানে সাড়া দেব। আছ কি কেউ সাহায্য প্রার্থনাকারী, আমি তাকে তা দিব। আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব’।[32]

৮. ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় করণ: 

রামাযান আগমন করে আমাদের জীবনের পরিশুদ্ধির জন্য। এ মাস আমাদেরকে ধনী ও গরীবের মাঝে সমতা  শিক্ষা দেয়। আমরা সকলে যে একই আদমের সন্তান তা এ মাসে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। এ মাসে আমরা সকলে একে অপরের মধ্যেকার ভেদাভেদ ভুলে ভাই ভাই হয়ে যাই এবং অভাবী দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ায় ও তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। এ মাসে ধনী ব্যক্তি অনুভব করে গরীবের অভূক্ত থাকার কেমন জ্বালা। তাই সকল মুসলমান এই রামাযান মাসে যথাসাধ্য দান-খয়রাত করা প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে। কেননা এ মাসে দান করলে অন্য মাসের চেয়ে সত্তর গুণ ছওয়াব বেশী হয়। সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব ইসলামের ছিয়ামে রয়েছে এক অভাবনীয় শিক্ষা।

 The Cultural History of Islam গ্রন্থে রয়েছে “The fasting of Islam has a wonderful teaching for establishing social unity, brotherhood and equity. It has also an excellent teaching for building a good moral character. ‘সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ছিয়ামে রয়েছে এক অভাবনীয় শিক্ষা। রয়েছে উত্তম নৈতিক চরিত্র গঠনের এক চমৎকার শিক্ষা’।[33] মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْرًا وَّنِسَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِيْ تَسَاءَلُوْنَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا. ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হ’তে সৃষ্টি করেছেন ও তা হ’তে তদীয় সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হ’তে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর সেই আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের যাঞ্ঝা করে থাক এবং আত্মীয়-জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহই  তোমাদের তত্ত্বাবধানকারী’ (নিসা ৪/১)। সকল মানুষ এক আত্মা থেকে জন্ম নিয়েছে ফলে তারা একে অপরের ভাই ভাই এবং এই ভ্রাতৃত্বের বহিঃপ্রকাশের জন্য দীর্ঘ এক বছর পর আমাদের সামনে আগমন করে রামাযান মাস। এই মাসে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে চলে। কোন ভাই বিবাদে লিপ্ত হ’তে চাইলে বলতে হবে আমি ছায়েম। এমর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنِّي صَائِمٌ، إِنِّي صَائِمٌ নিশ্চয় আমি ছায়েম, নিশ্চয় আমি ছায়েম’।[34]

শেষ কথা : সাধারণতঃ মানুষের পরস্পর দু’টি বিরোধী স্বভাব রয়েছে পশুত্ব ও মানবিক। যা  দ্বারা পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তির উপর যদি পশুত্বের প্রভাব বেশী পড়ে, তবে মানুষ পশু সুলভ হয়। পক্ষান্তরে মানবিক দিকের প্রভাব বেশী প্রাধান্য পেলে সে আদর্শবান, নিষ্ঠাবান, সৎ, ধার্মিক হয়। রামাযানে এক মাস ছিয়াম সাধনা মানুষের মনের সকল প্রকার পশুত্বকে ভস্মীভূত করে এবং মানবিক দিক সমূহ উন্মোচিত করে। যার কারণে মানুষ আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় এবং আদর্শবান, সৎ ও ধার্মিক মানুষ হিসাবে গড়ে উঠে। তাই আসুন! আমরা পবিত্র রামাযান মাসে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং তদানুযায়ী সার্বিক জীবন পরিচালনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফিক্ব দান করুন।- আমীন!

 [লেখক : যশপুর,তানোররাজশাহী] 

[1]তিরমিযীমিশকাত হা/৯২৭ ছালাত অধ্যায়

[2]মুত্তাফাক্ব আলাইহমিশকাত হা/১৯৫৬ ছওম অধ্যায়

[3]তিরমিযীইবনু মাজাহশুআবুল ঈমান হা/৩৫৯৮মিশকাত হা/১৯৬০

[4]সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭/২৫৬৫

[5]তাবারানীআল-আওসাত্বসিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮

[6]নাসাঈ হা/৮৩৭ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৭৮৬

[7]বুখারী হা/৬২৬মুসলিম হা/৬৫১/১৫২ (১৩৮২ জামাআতে ছালাতের ফযীলত অনুচ্ছেদ

[8]বুখারী হা/৩৫মুসলিম হা/৭৬০

[9]বুখারীমিশকাত হা/৪৯৫৮ শিষ্টাচার অধ্যায়সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ অনুচ্ছেদ

[10].  মুসলিমমিশকাত হা/২০৪

[11].  তিরমিযী হা/১৯২০আবু দাউদ হা/৪৯৪৩

[12].  বুখারী হা/৬৯৫৩

[13].  ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৬

[14]বুখারী হা/১৩

[15]বুখারী হা/৫২ (দ্রঃ ভূমিকা)আওনুল মাবূদ শারহ সুনানে আবুদাঊদ

[16]মিরক্বাত ভূমিকা অংশ ২৪ পৃঃদরসে কুরআন : মুমিনের গুণাবলীপ্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবমাসিক আত-তাহরীক১৭তম বর্ষ১ম সংখ্যাঅক্টোবর ২০১৩

[17]বুখারী হা/১২৯১মুসলিম হা/৪ মিথ্যা হতে সতর্কতা অনুচ্ছেদ

[18]মুসলিম হা/২৬০৭ (১০৫)আবুদাউদ হা/৪৯৮৯ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৯৩

[19]মুসলিমহা/৩০৩তিরমিযী হা/৯৮১মিশকাত হা/৪৮২৩

[20]বুখারী হা/২১১নাসাঈ হা/২০৪২আবুদাউদ হা/১৯  

[21]শুআবুল ঈমান ৩/৩১৭হা/৩৬৪৮

[22]ছহীহ তারগীব হা/৯৮২, বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৮৫।

[23]সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭২৫৬৫

[24]সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৭,২৫৬৫

[25]সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৬৮

[26]আত-তারগীব হা/১৩৮২

[27]বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৯৫৭

[28]আত-তারগীব হা/১৩৮০

[29]বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৯৫৯

[30]বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৯৫৮

[31]হাসান ছহীহছহীহ তারগীব হা/৯৮৯৯৯০

[32]বুখারী হা/১১৪৫মুসলিম হা/৭৫৮মিশকাত হা/১২২৩

[33]মাহে রামাযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য- ড. মুহাম্মাদ আলীআত-তাহরীক (১৩তম বর্ষ১১তম সংখ্যাআগষ্ট-২০১০)

[34]বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৯৫৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top