মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপন করা উচিৎ

লিলবর আল-বারাদী
ক. মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিৎ

এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আজকের মুসলিম নিজেদের মধ্যেই অসংখ্য
ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। আর তার চাইতেও দুঃখজনক হলো এই বিভক্তি খোদ ইসলামের
দ্বারা আদৌ স্বীকৃত নয়। ইসলাম বিশ্বাস করে তার অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য এবং
একতার লালন করতে। জ্যোতির্ময়ী কুরআন বলছেঃ- ”তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না৷ ” (সূরা আল-ইমরান-৪: ১০৩)
এ আয়াতে যে রজ্জুর কাথা বলা হয়েছে সে রজ্জু কি বা কোন রজ্জু?
জ্যোতীর্ময় কুরআন, মহাবিজ্ঞান আল কুরআনই সেই আল্লাহর রজ্জু যা সকল
মুসলিমের সম্মিলিতভাবে ধরে রাখা উচিত। ঐক্যের ব্যাপারে দ্বিগুন গুরুত্ব
দেয় হয়েছে। অর্থাৎ সবাই মিলে শক্ত করে ধরো বলার সাথে সাথেই বলা হয়েছে
বিভক্ত হয়ো না। কুরআন আরো বলছেঃ-
”আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের। ” (সূরা আল-ইমরান-৪: ৫৯)
সকল মুসলিমের কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদূসসমূহ অনুসরণ করা কর্তব্য এবং নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হওয়া উচিত নয়।
খ. ফের্কাবাজী ও বিভক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ-
কুরআন-মাজিদ বলছেঃ –
“যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে
পড়েছে তাদের সাথে তোমার এতটুকু সম্পর্ক নেই। তাদের এসব ব্যাপার আল্লাহ
কাছে ন্যাস্ত। অবশেষে তাদেরকে তিনি বলে দেবেন সেই সব সম্পর্কে যেসব কাজ
তারা করছিল। ” (সূরা আনআমঃ ১৫৯)
এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু কেউ যখন কোনো মুসলিমকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? সাধারণ উত্তর হলো, আমি
একজন সুন্নি অধবা আমি শিয়া। অনেকেই নিজেদেরকে হানাফী অথবা শা’ফী অথবা
মালেকী অথবা হাম্বলী ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হতে গর্ববোধ করেন। কেউ আবার
দেওবন্দী। কেউ ব্রেলোভী।
গ. আমাদের রাসূল ছিলেন একজন ‘মুসলিম’-
এ ধরনের একজন মুসলিমকে কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের প্রিয় নবী (صلى الله
عليه و سلم) কি ছিলেন? তিনি কি একজন হানাফী অথবা শাফী অথাবা হাম্বলী ছিলেন?
না! তিনি ছিলেন একজন মুসলিম। তাঁর পূর্বে আগত আল্লাহর সকল নবী ও রাসূলগণের
মতো।
যেমন সূরা নিসা ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-ঈসা (আ) ছিলেন একজন মুসলিম। ৬৭ আয়াতে বলা হয়েছে-
”ইব্রাহীম না ইহুদী ছিল না খ্রীষ্টান, সে ছিল একজন মুসলিম।” সূরা নিসা ৫২ : ৬৭
ঘ. কুরআন বলছে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দাও-
কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তার বলা উচিত আমি একজন মুসলিম-না হানাফী না শাফী-
”আর কে হতে পারে বক্তব্যে তার চাইতে উত্তম? যে (মানুষকে) আল্লাহর পথে
আহ্বান করে আর যাবতীয় জীবন কর্ম যেভাবে আল্লাহ করতে বলেছেন সেভাবে করে এবং
বলে আমি তো আল্লাহতে সমর্পিতদের একজন। (মুসলিম)” (সুরা ফুসিলাত-৪১: ৩৩)
কুরআন বলে আমি তাদেরই একজন যারা আল্লাহতে সমর্পিত। অন্য কথায় বলো, আমি একজন মুসলিম।
২. রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে
ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই সব চিঠিতে তিনি সুরা আলে
ইমরানের এই আয়াত উল্লেখ করেছিলেন-
“তাহলে বলে দিন ওদেরকে তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা আত্মসর্ম্পনকারী ‘মুসলিম’।” (সূরা আল-ইমরান-৩: ৬৪)
ঙ. ইসলামের মহান ইমামগণের প্রতি শ্রদ্দা ও সম্মান-
ইসলামের ইতিহাসে মহান ইমাম ও আলেমগনের প্রতি আমাদের সম্মানবোধ আন্তরিক হতে
হবে। তাঁদের জীবন নিংড়ানো জ্ঞান সাধনা মুসলিম জাতিকে জ্ঞান সম্পদে
সম্পদশালী করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে তাঁরা পুরুষকৃত হবেন। সাধারণের
মধ্যে কিউ যদি বিশেষ কোনো ইমামের রীতি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, সেটা অবশ্যই
দোষের কিছু নয়। কিন্তু পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের কারো নাম জড়িয়ে পরিচয়
দেয়া এক ধরনের সংকীর্ণতার প্রকাশ। যেমনটা করতে তাঁরা কেউ বলে যাননি। নবী
রাসূলগনের মতো তাঁরাও ছিলেন শুধুমাত্র আল্লাহতে সমর্পিত মুসলিম। কাজেই
তাঁদের কারো অনুসারী হলেই পরিচয় বদলে যায় না। মুসলিমদের পরিচয় একটাই
তারা মুসলিম।
অনেকেই হয়তো তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংকীর্ণ মানসিকতাকে
চাপা দেবার জন্য সুনানে আবু দাউদে বর্নিত ৪৫৭৯ নং হাদীসখানি নিয়ে তর্কে
লাফিয়ে পড়বেন। যা রাসূল (صلى الله عليه و سلم) বলেছেন, ”আমার উম্মত ৭৩টি
ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে।”
কিন্তু এ হাদীসখানি রাসূল (صلى الله عليه و
سلم) তাঁর উম্মতের অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যেসব বিকৃতি দেখা দেবে তারই
অন্যতম একটি আগাম বার্তা বহন করছে। তিনি তো একথা বলেননি। যে মুসলিমরা এভাবে
ফের্কায় ফের্কায় ভাগ হয়ে যেতে হবে।কুরআন যেখানে আমাদেরকে আদেশ করছে
কোনো বিভক্তির সৃষ্টি করা যাবে না। অতএব যারা কুরআন ও শুদ্ধ হাদিস সমূহের
একনিষ্ঠ অনুসারী এবং কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতার না কারণ হয় না কাউকে উৎসাহিত
করে তারাই সঠিক পথে রয়েছেন।তিরমিযির ১৭১ নং হাদীসে বলা হয়েছে রাসূল (صلى
الله عليه و سلم) বলেছেনঃ-
”আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর
মধ্যে শুধু একটি ছাড়া বাদ বাকি সব জাহান্নামী হবে। সাহবায়ে কেরাম জানতে
চাইলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সেই শুদ্ধ দল কোনটি হবে? রাসূল (صلى الله عليه و
سلم) বললেন, “যাদের কাছে আমি এবং আমার সঙ্গী সাথীরা অনুসরণীয় হবো।”
”আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের”
কুরআনের বহু জায়গায় এই একটি কথা মুসলিমদের মনের মধ্যে স্থায়ী ভাবে
বসিয়ে দেবার জন্য নানান ভাবে বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই একজন মুসলিমের
অনুস্মরনীয় আদর্শ হচ্ছে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। তারপর এ দুয়ের নির্দেশনা
সমূহকে অনুশীলনীর পদ্ধতি হিসেবে সে যদি কোনো বিশেষ আলেমকে অনুসরণ করতে চায়
তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তা যদি আবার কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে খোদ
কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তা যত বড় বিশেষজ্ঞ আলেমই হোকনা
কেন দুই কড়ি মূল্য রাখেন না।
প্রতিটি মুসলিম যদি তার সামর্থ অনুযায়ী
কুরআন বুঝে পড়ার অনুশীলনী করে এবং সেখান থেকে পাওয়া মূলনীতিসমূহ খোদ
রাসূল (صلى الله عليه و سلم) এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী বাস্তবায়নের
চেষ্টা করে তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন এই বিভক্তি দূর হয়ে যাবে এবং আমরা
ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী এক ‘উম্মাহ’ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে সমক্ষ হবো।
(সংকলিত)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top