মৃত্যুর পূর্বে আত্মাকে কলুষমুক্ত করার উপায় সমূহ

 – প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا- وَقَدْ خَابَ مَنْ
دَسَّاهَا- (الشمس 9-10
)
সফল হয় সেই
ব্যক্তি যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে
এবং ব্যর্থ হয় সেই ব্যক্তি যে তার আত্মাকে কলুষিত
করে
(শাম্স ৯১/৯-১০)
ইতিপূর্বে বর্ণিত সূর্য, চন্দ্র, দিবস, রাত্রি, আকাশ, পৃথিবী ও মানুষসহ
আটটি সৃষ্টবস্ত্তর শপথ করার পর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ উপরোক্ত কথা বলেছেন
এর দ্বারা তিনি
অত্যন্ত জোরালোভাবে একথা বুঝাতে চেয়েছেন যে
, পবিত্র আত্মার লোকেরাই পৃথিবীতে সফলকাম এবং কলুষিত আত্মার লোকেরা সর্বদা
ব্যর্থকাম
তাদের
বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ যতই পবিত্র হৌক এবং সামাজিক মর্যাদা যতই উন্নত হৌক
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন
, إِنَّ اللهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ
وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
 নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা মালের দিকে দেখেন না
বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে[1]
উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত তাযকিয়া (الةزكية) অর্থ التزكية من الشرك وشوائب المعاصي শিরক ও পাপের কালিমাসমূহ হতে পবিত্র হওয়াযেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى সফলকাম হল সেই ব্যক্তি যে আত্মশুদ্ধি অর্জন করল (লা ৮৭/১৪)মূলতঃ নবী প্রেরণের
উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে পরিশুদ্ধ করা
যেমন আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي
الْأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ
وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي
ضَلاَلٍ مُبِينٍ- وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ وَهُوَ الْعَزِيزُ
الْحَكِيمُ
  তিনিই সেই
সত্তা
,
যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই মধ্য হতে একজনকে
রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন
যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে
পরিশুদ্ধ করেন
আর তিনি
তাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন
যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে ছিলএবং এটা
তাদের জন্যেও যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি
আর আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময় (জুমআহ ৬২/২-৩)
অত্র আয়াতদ্বয়ে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর যুগের ও পরবর্তী যুগে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল আদম
সন্তানের আত্মশুদ্ধির জন্য প্রেরিত হয়েছেন
আর সেই আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহআর তার ভিত্তিতে
যথার্থ ইলম ও আমলের মাধ্যমে বাহ্যিক ও
   আভ্যন্তরীন শুদ্ধিতা অর্জন করা
দ্বিতীয় আয়াতে এর বিপরীত বর্ণনা এসেছে যে, ব্যর্থকাম হল সেই ব্যক্তি যে তার আত্মাকে কলুষিত করেঅর্থাৎ যারা কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে গিয়ে সাফল্য তালাশ করে, তারা শয়তানের খপপরে পড়ে নিজেকে কলুষিত করে ফেলেক্বাতাদাহ ও
অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন
, خاب من دس نفسه في المعاصي ঐ ব্যক্তি
নিরাশ হয়েছে
, যার আত্মা পাপে ডুবে গেছে (কুরতুবী)যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, بَلَى مَنْ كَسَبَ سَيِّئَةً
وَأَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا
خَالِدُونَ
 হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে ও সে পাপ তাকে বেষ্টন করে
ফেলেছে
,
তারাই জাহান্নামের অধিবাসীতারা সেখানে চিরকাল
থাকবে
 (বাক্বারাহ
২/৮১)

আত্মশুদ্ধির উপায় সমূহ :
(১) সর্বাবস্থায়
আল্লাহকে ভয় করা :
 আল্লাহ মানুষের ও বিশ্বচরাচরের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, তিনিই আমাদের রূযীদাতা, রোগ ও আরোগ্যদাতা, জীবন ও মরণদাতা, এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে পোষণ করাতিনি যেমন মহা ক্ষমাশীল, তেমনি দ্রুত প্রতিশোধ গ্রহণকারী, এ আকাংখা ও ভয় সর্বদা লালন করাসাথে সাথে প্রতিটি কর্মের হিসাব আল্লাহর কাছে
দিতে হবে
, সর্বদা এ দায়িত্বানুভূতি জাগরুক থাকাআল্লাহ বলেন, وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ যে ব্যক্তি
আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে
, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত (রহমান ৫৫/৪৬)তিনি বলেন, إِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ
هُمْ مُحْسِنُونَ
 নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন যারা আল্লাহভীরু এবং যারা সৎকর্মশীল
 (নাহল ১৬/১২৮)অর্থাৎ যারাই আল্লাহভীরু তারাই সৎকর্মশীলএর বিপরীত হওয়া
সম্ভব নয়
অত্র আয়াতে
আরেকটি বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে
, আল্লাহভীরুতা
প্রমাণিত হবে কর্মের মাধ্যমে
, কেবল কথার মাধ্যমে
নয়
(২) সকল ক্ষেত্রে
অহি-র বিধান মেনে চলা :
 আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ
عَنْهُ فَانْتَهُوا
রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো (হাশর ৫৯/৭)আর তিনি কোন কথা
বলেন না আল্লাহর
অহি ব্যতীত (নাজম ৫৩/৩-৪)আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল (নিসা ৪/৮০)তাই হাদীছ বাদ দিয়ে কুরআন মান্য করার দাবী স্রেফ
আত্মপ্রতারণা মাত্র
বস্ত্ততঃ তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে আত্মাকে কলুষমুক্ত রাখার
সর্বোত্তম উপায়
কারণ
ইসলামের সকল বিধান আখেরাতে মুক্তির লক্ষ্যে নির্ধারিত
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَيُّهَا النَّاسُ لَيْسَ مِنْ شَيْءٍ يُقَرِّبُكُمْ إِلَى
الْجَنَّةِ، وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ النَّارِ، إِلا قَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ،
وَلَيْسَ شَيْءٌ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ النَّارِ، وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ
إِلا قَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ، وَإِنَّ الرُّوحَ الأَمِينَ نَفَثَ فِي رُوعِي،
أَنَّهُ لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تَمُوتُ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا، فَاتَّقُوا
اللهَ، وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ، وَلا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ
أَنْ تَطْلُبُوهُ بِمَعَاصِي اللهِ، فَإِنَّهُ لا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللهِ إِلا
بِطَاعَتِهِ
 হে জনগণ!
তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে
, এমন সকল বিষয় আমি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছিপক্ষান্তরে তোমাদেরকে
জাহান্নামের নিকটবর্তী করে এবং জান্নাত থেকে দূরে রাখে
, এমন সকল বিষয় আমি তোমাদের নিষেধ করেছিআর আল্লাহ আমার প্রতি অহি করেছেন যে, কোন ব্যক্তি তার রূযী পূর্ণ না করা পর্যন্ত কখনোই মৃত্যুবরণ
করবে না
অতএব
সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুন্দর পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর
আর জীবিকা আসতে
দেরী দেখে আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে তোমরা তা অন্বেষণ করো না
কেননা আল্লাহর
নিকটে যা রয়েছে তা তাঁর আনুগত্য ভিন্ন পাওয়া যায় না
[2]
অত্র হাদীছে একথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবেযেমন
ছালাত-ছিয়াম-হজ্জের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন
, যাকাত আদায় ও আল্লাহর পথে ব্যয়ের মাধ্যমে মালশুদ্ধি অর্জন ও নফল ইবাদত সমূহের
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে হবে
মানুষের মনগড়া ছয় লতীফার যিকর বা ক্বলব ছাফ
করার নামে নানাবিধ মা
রেফতী কলা-কৌশলের মাধ্যমে নয়এগুলি মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের করে
শয়তানের আনুগত্যে বন্দী করে
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ব্যতীত ঐসব বন্দীশালা থেকে মানুষ
বেরিয়ে আসতে পারে না
অতএব ঈমানদারগণ সাবধান!
যদি মানুষ আখেরাতে বিশ্বাসী না হয় এবং আল্লাহর নিকট জওয়াবদিহিকে ভয় না করে, তাহলে তার কাছে মানুষ ও মানবতা নিরাপদ থাকে নাসে হয় স্রেফ
প্রবৃত্তিপূজারী একটি বস্ত্তবাদী জীব মাত্র
আল্লাহ বলেন, فَالَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ
بِالْآخِرَةِ قُلُوْبُهُمْ مُنْكِرَةٌ وَهُمْ مُسْتَكْبِرُوْنَ
 যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর হয় হঠকারী এবং তারা হয় গর্বোদ্ধত (নাহল ১৬/২২)তিনি বলেন, فَأَمَّا مَنْ طَغَى- وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا-
فَإِنَّ الْجَحِيْمَ هِيَ الْمَأْوَى- وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ
وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى- فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
 যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে এবং দুনিয়ার
জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়
জাহান্নাম
তার ঠিকানা হবে
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান
হওয়াকে ভয় করে এবং নিজেকে প্রবৃত্তিপূজা থেকে বিরত রাখে
জান্নাত তার ঠিকানা হবে (নাযেআত ৭৯/৩৭-৪১)
(৩) মন্দ কাজের
শাস্তি সম্পর্কে জানা ও তা সর্বদা স্মরণ করা :
 আল্লাহ বলেন, وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ
خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ
فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ
 তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি করেছেন
এবং তোমাদেরকে একে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন
যাতে তিনি তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন, তাতে পরীক্ষা নিতে পারেননিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি
দানকারী এবং নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান
 (আনআম ৬/১৬৫)
মানুষের অন্তর মন্দপ্রবণআর যে কাজে তাকে নিষেধ করা হয়, সে কাজের প্রতি সে প্রলুব্ধ হয়ফলে সে সর্বদা ছোট-বড় পাপ করতেই থাকেসবল শ্রেণী পাপ
করেও পার পেয়ে যায়
ফলে তারা
আরও পাপে উৎসাহিত হয়
দুর্বল শ্রেণী লঘু পাপে গুরুদন্ড পায়আবার অনেক সময় বিনা পাপে দন্ড ভোগ করেফলে মন্দ কাজের শাস্তি না পেয়ে সবল শ্রেণী
যেমন উদ্ধত হয়
তেমনি বিনা
দোষে শাস্তি পেয়ে দুর্বল শ্রেণী হতাশ হয় এবং প্রায়ই তার ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ ঘটে
তাতে সমাজে হিংসা ও
প্রতিহিংসার আগুন তীব্র আকার ধারণ করে
তাই হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আল্লাহ দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী
জীবনের বিপরীতে আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সুসংবাদ শুনিয়েছেন
যেখানে যালেম তার যথাযথ শাস্তি পাবে এবং
মযলূম তার যথার্থ পুরস্কার পাবে
কিয়ামতের দিন মন্দ কাজের শাস্তি কিরূপ হবে, সে বিষয়ে নমুনা স্বরূপ কয়েকটি হাদীছ নিম্নে উল্লেখিত হ।-
১. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন বললেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? সবাই বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি যার কোন
টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই
তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে ছালাত-ছিয়াম-যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবেসাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারু উপরে অপবাদ দিয়েছে, কারু মাল গ্রাস
করেছে
,
কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছেতখন ঐসব পাওনাদারকে
ঐ ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে
এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবেঅতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে
তিনি বলেন, কিয়ামতের
দিন প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য হক বুঝে দেয়া হবে
[3]
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের প্রতি যুলুম করেছে
তার সম্মান বা অন্য কোন বিষয়ে
, সে যেন আজই তার
নিকট থেকে তা মাফ করিয়ে নেয়
, সেই দিন আসার
পূর্বে
,
যেদিন তার নিকটে দিরহাম ও দীনার কিছুই থাকবে
না
সেদিন যদি
তার কোন নেক আমল থাকে
, তবে তার যুলুম পরিমাণ নেকী সেখান থেকে নিয়ে
নেওয়া হবে
আর যদি তার
কাছে নেকী না থাকে
, তবে মযলূম ব্যক্তির পাপসমূহ তার উপর চাপিয়ে
দেয়া হবে
[4]
২. হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
এরশাদ করেন
, আমার উপরে (মিরাজে বা স্বপ্নে) জাহান্নামকে
হাযির করা হয়
তাতে আমি
বনু ইস্রাঈলের একজন মহিলাকে দেখলাম যাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে
সে বিড়ালটিকে বেঁধে
রেখেছিল
তাকে খেতেও
দেয়নি
,
ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনে বিচরণ করে পোকা-মাকড় ইত্যাদি খেতে পারেঅবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়তাছাড়া আমি সেখানে
আমর ইবনু আমের আল-খুযাঈকে দেখলাম
সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে নিজের নাড়ি-ভুঁড়ি টেনে চলেছেএ ব্যক্তিই
সর্বপ্রথম দেব-দেবীর নামে ষাঁড় ছেড়ে দেয়ার কুপ্রথা চালু করেছিল
[5] ইনি হলেন বনু খুযাআর নেতা আমর
বিন লুহাই বিন আমের
, যিনি প্রথম শাম (সিরিয়া) থেকে হোবল মূর্তি কিনে
এনে কা
বা গৃহে স্থাপন করেন এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর একেশ্বরবাদী
দ্বীনের মধ্যে মূর্তিপূজার শিরকের প্রবর্তন করেন
৩. হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবেঅতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবেযাতে আগুনে পুড়ে
তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং গাধা যেমন গম পেষার সময় ঘানির চারপাশে ঘুরতে থাকে
, অনুরূপভাবে সেও তার নাড়ি-ভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবেএ সময় জাহান্নামবাসীরা
সেখানে জমা হয়ে জিজ্ঞেস করবে
, হে অমুক! তোমার
ব্যাপার কি
? তুমি না আমাদের সৎকাজের আদেশ করতে ও অন্যায়
কাজে নিষেধ করতে
? জবাবে সে বলবে, আমি তোমাদের সৎকাজের আদেশ করতামকিন্তু আমি নিজে তা করতাম নাআর তোমাদেরকে অন্যায় কাজে নিষেধ করতামকিন্তু আমি নিজে তা
করতাম
[6]
৪. হযরত জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
,مَثَلُ الْعَالِمِ الَّذِي يُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَيَنْسَى
نَفْسَهُ كَمَثَلِ السِّرَاجِ يُضِيءُ لِلنَّاسِ وَيَحْرَقُ نَفْسَهُ
 যে আলেম মানুষকে সৎকর্ম শিক্ষা দেয় এবং নিজে সেটা ভুলে যায়, তার তুলনা ঐ প্রদীপের মত যা মানুষকে আলো দেয়, অথচ নিজে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়[7] অর্থাৎ আমলহীন আলেম জাহান্নামী
হবে
৫. হযরত সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেনএকদিন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আজ কেউ স্বপ্ন দেখেছ কি? কেননা আমাদের কেউ এরূপ দেখে থাকলে তা বর্ণনা করত এবং তিনি
আল্লাহ যা চাইতেন সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে দিতেন
যথারীতি একদিন (ফজর ছালাত শেষে) তিনি আমাদের
জিজ্ঞেস করলেন
, তোমাদের কেউ আজ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা বললাম, নাতিনি বললেন, কিন্তু আমি দেখেছি যে, দুজন ব্যক্তি আমার নিকটে আসলঅতঃপর তারা আমাকে পবিত্র ভূমির (শাম বা
বায়তুল মুক্বাদ্দাসের) দিকে নিয়ে গেল
সেখানে গিয়ে দেখলাম (১) একজন ব্যক্তি বসে আছে এবং অপর
ব্যক্তি একমুখ বাঁকানো ধারালো লোহার সাঁড়াশী হাতে দাঁড়িয়ে আছে
সে উক্ত বসা
ব্যক্তির গালের এক পাশ দিয়ে ওটা ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে
অতঃপর গালের অপর
পার্শ্ব দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়ের পিছন পর্যন্ত চিরে দিচ্ছে
ইতিমধ্যে গালের প্রথমাংশটি ভাল হয়ে যায়তখন আবার সে তাই-ই
করে (এই ভাবে একবার এগাল একবার ওগাল চিরতে থাকে)
আমি বললাম এটা কি? তারা দুজন বলল, সামনে চল। (২) অতঃপর আমরা এমন
এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছলাম
, যে চিৎ হয়ে শুয়ে
আছে
অপর ব্যক্তি
একটা ভারি পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে
সে ঐ পাথর ছুঁড়ে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ
করে দিচ্ছে
অতঃপর
পাথরটি দূরে গড়িয়ে যায়
তখন লোকটি পাথরটি কুড়িয়ে আনতে যায়ইতিমধ্যে তার মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায়তখন পুনরায় সে পাথর
ছুঁড়ে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল
(৩) আমরা সামনের দিকে চললামঅবশেষে একটা গর্তের নিকটে এলামযা ছিল বড় একটা
চুলার মত
যার উপরাংশ
সংকীর্ণ এবং নীচের অংশ প্রশস্ত
যার তলদেশে আগুন জ্বলছিলআগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা আছে, তারাও উপরের দিকে উঠে আসত এবং তারা গর্ত থেকে বাইরে ছিটকে পড়ার উপক্রম হআবার যখন আগুন নীচে
নামত
,
তখন তারাও নীচে নেমে যেতএর মধ্যে ছিল একদল
উলঙ্গ নারী ও পুরুষ
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল
(৪) অতঃপর আমরা অগ্রসর হয়ে একটা রক্তের নদীর কিনারে এসে
পৌঁছলাম
দেখলাম নদীর
মাঝখানে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে ও নদীর কিনারে একজন দাঁড়িয়ে
যার সামনে রয়েছে একটি পাথরের খন্ডঅতঃপর নদীর মধ্যের
লোকটি যখনই তীরে ওঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে
, তখনই তীরে দাঁড়ানো লোকটি তার চেহারা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছেফলে লোকটি আবার
সেখানে ফিরে যাচ্ছে
, যেখানে সে পূর্বে ছিলএভাবে যখনই লোকটি তীরের দিকে আসার চেষ্টা করে, তখনই কিনারে দাঁড়ানো লোকটি তার মুখের উপর পাথর মেরে তাকে
পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল
আমি বললাম, এটা কি? তারা বলল, সামনে চল
অতঃপর তারা আমাকে ব্যাখ্যা দিল যে, (১) প্রথম ব্যক্তি যাকে সাঁড়াশী দিয়ে গাল চেরা হচ্ছিল, ওটা হল মিথ্যাবাদীতার কাছ থেকে মিথ্যা রটনা করা হএমনকি তা সর্বত্র
পৌঁছে যেত
ফলে তার
সাথে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে
, যা তুমি দেখেছ। (২) যে
ব্যক্তির মাথা পাথর ছুঁড়ে চূর্ণ করা হচ্ছে
, ওটা হল সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেনঅতঃপর সে কুরআন থেকে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও সে
অনুযায়ী আমল করত না
অতএব তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) ঐরূপ আচরণ করা হবে, যা তুমি দেখেছ। (৩) আগুনের চুলার গর্তে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হল যেনাকারআর (৪) রক্তের নদীর মধ্যে তুমি যাদের দেখেছ, ওরা হল সূদখোর। … আর আমি হলাম জিবরীল
এবং ইনি হ
লেন মীকাঈল[8]
৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, পিতা-মাতার অবাধ্য (অর্থাৎ তাদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী)
সন্তান
,
জুয়াড়ি, উপকার করে খোঁটা দানকারী ও নিয়মিত মদ্যপানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
না
[9] তাদেরকে ত্বীনাতুল খাবাল নামক জাহান্নামীদের দেহনিঃসৃত রক্ত ও পুঁজের
দুর্গন্ধময় নদী থেকে পান করানো হবে
[10]
৩. ছগীরা গোনাহ সমূহ পরিত্যাগ করা :
ছগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকরকিন্তু এটা করলে তা পরিত্যাগ করা আবশ্যককেননা ছগীরা গোনাহ
মানুষকে কবীরা গোনাহের দিকে ধাবিত করে
বিশেষ করে যৌন বিষয়ে, নেশাকর বস্ত্ত বিষয়ে এবং অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন বিষয়ে এক পা বাড়ালেই তা
চুম্বকের মত মানুষকে দ্রুত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে
অতএব এসবের সামান্যতম সুড়সুড়ি পেলেই ওটাকে
শয়তানী ধোঁকা মনে করে বাম দিকে তিনবার থুক মেরে
 আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রজীম বলে ছুটে পালাতে হবেযুক্তি-তর্কের কবলে
পড়লেই শয়তানের ফাঁদে আটকে যেতে হবে
অতএব খালেছ তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে ও সকল
ব্যাপারে তাঁর উপরেই ভরসা করতে হবে
নিজেকে পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে সঁপে দিতে হবেনিশ্চয়ই আল্লাহ
কখনোই তাঁর উপরে নির্ভরশীল বান্দার কোন অমঙ্গল করেন না
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হন (তালাক ৬৫/৩)
মনে রাখতে হবে, ছগীরা গোনাহ বারবার করলে তা কবীরা গোনাহে পরিণত হয়ে যায়যা তওবা ব্যতীত মাফ
হয় না
বলা হয়ে থাকেلا صغيرة مع إصرار، ولا كبيرة مع استغفار ছগীরা গোনাহ বারবার করলে তা ছগীরা থাকে না এবং তওবা করলে আর কবীরা থাকে নাকবি ইবনুল মুতায বলেনلاَ تُحْقِرَنَّ صَغِيْرَةً + إِنَّ الْجِبَالَ
مِنَ الْحَصَى
 ছোট গোনাহকে তুচ্ছ মনে করো নানিশ্চয়ই পাহাড় গড়ে কংকর দ্বারারাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনيَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ
وَمُحَقِّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِباً
 হে আয়েশা! তুচ্ছ গোনাহ থেকেও বেঁচে থাকোকেননা উক্ত পাপগুলির খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহর
পক্ষ হ
তে অনুসন্ধানকারী (ফেরেশতা) নিযুক্ত রয়েছে[11] হযরত আনাস (রাঃ) বলেন,إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أَعْمَالاً هِىَ أَدَقُّ فِى
أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ، كُنَّا نَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ صلى الله
عليه وسلم مِنَ الْمُوبِقَاتِ
 (হে লোকসকল!) তোমরা এমনামন কাজ করে থাক, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চাইতে সূক্ষ্মঅথচ রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর যামানায় আমরা সেগুলিকে ধ্বংসাত্মক মনে করতাম
[12]
৪. সর্বদা কবর ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করা :
(ক) হযরত ওছমান গণী (রাঃ) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতেনতাতে তাঁর দাড়ি
ভিজে যেত
তাঁকে বলা হ, জান্নাত ও জাহান্নামের স্মরণে আপনি কাঁদেন নাঅথচ এ থেকে কাঁদেনজবাবে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الآخِرَةِ فَإِنْ نَجَا مِنْهُ
فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ
مِنْهُ-
 قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صـ مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ
إِلاَّ وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ
 নিশ্চয়ই কবর
ল আখেরাতের মনযিল সমূহের প্রথম মনযিলযদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহলে পরবর্তীগুলি তার জন্য অধিকতর সহজ হয়ে যাবেআর যদি এখানে
মুক্তি না পায়
, তাহলে এর পরেরগুলি অধিকতর কঠিন হবেতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন
,
আমি কবরের চাইতে ভয়ংকর কোন দৃশ্য দেখিনি[13]
(খ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
এরশাদ করেন
, أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِতোমরা
স্বাদসমূহ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করো
[14]
(গ) আল্লাহ বলেন, وَإِنْ مِنْكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا
كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا- ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِيْنَ اتَّقَوْا
وَنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে ওটা (পুলছিরাত)
অতিক্রম করবে না
আর এটি
তোমার প্রতিপালকের অমোঘ সিদ্ধান্ত
অতঃপর আমরা মুত্তাক্বীদের সেখান থেকে উদ্ধার
করব এবং যালেমদের নতজানু অবস্থায় তার মধ্যে রেখে দেব
 (মারিয়াম ১৯/৭১-৭২)হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
, জাহান্নামের উপর পুলছিলাত স্থাপন করা হবেঅতঃপর আমিই
রাসূলগণের মধ্যে প্রথম যিনি তার উম্মতকে নিয়ে পুলছিরাত অতিক্রম করবেন
আর সেদিন নবীগণ
ব্যতীত কেউ কথা বলবেন না
তারা কেবল বলবেন, হে আল্লাহ! রক্ষা কর! রক্ষা কর! সাদান কাঁটার
ন্যায় জাহান্নামের আংটাসমূহ থাকবে
সেগুলি যে কত বড় বড় তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন নাঐ আংটাগুলি মানুষকে
ধরে নিবে তাদের আমল অনুযায়ী
অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ ধ্বংস হবে, কেউ শাস্তিতে পিষ্ট হবেঅতঃপর মুক্তি পাবে[15] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন
, মানুষ জাহান্নামের কিনারায় আসবেঅতঃপর সেখান থেকে
তাদের আমল অনুযায়ী মুক্তি পাবে
কেউ চোখের পলকে পুলছিরাত পার হয়ে যাবেকেউ বাতাসের গতিতে বেরিয়ে যাবেকেউ ঘোড়দৌড়ের গতিতে, কেউ সাধারণ আরোহীর গতিতেকেউ পায়ে চলার গতিতে অতিক্রম করবে[16]
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একদা খারেজী নেতা নাফে বিন আযরাক্বকে বলেন, আমি ও তুমি অবশ্যই পুলছিরাতে হাযির হবঅতঃপর আল্লাহ আমাকে সেখান থেকে নাজাত দিবেনকিন্তু তুমি! আমি
বিশ্বাস করি না যে
, আল্লাহ তোমাকে নাজাত দিবেনকেননা তুমি এটা
মিথ্যা মনে করে থাক
 (কুরতুবী)মুতা যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)
যুদ্ধে যাওয়ার আগে কাঁদতে কাঁদতে অত্র আয়াতটি পাঠ করে বলেন
, لا أدري أنجو منها أم لا؟ আমি জানি না
পুলছিরাত থেকে আমি মুক্তি পাব কি-না
 (ইবনু কাছীর)অতএব হে মানুষ! মৃত্যু ও জাহান্নামকে ভয় করো
৫. সর্বদা আখেরাতকে স্মরণ করা :
আল্লাহ বলেন, أَلاَ يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوثُونَ-
لِيَوْمٍ عَظِيمٍ- يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
 তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবেসেই মহা দিবসে? যেদিন সকল মানুষ জগত সমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান
হবে
? (মুত্বাফফেফীন
৮৩/৪-৬)
এই আয়াত
পর্যন্ত এসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ক্বিরাআত বন্ধ হয়ে যেত এবং তিনি ক্রন্দন
করতেন
অতঃপর
কিয়ামতের দিনের ভয়ংকর অবস্থা সম্বলিত হাদীছ শুনাতেন
তাছাড়া তিনি বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাবধান
করতেন
 (কুরতুবী)আল্লাহ বলেন, بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ
الدُّنْيَا- وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَى
 বস্ত্ততঃ
তোমরা দুনিয়াবী জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাক
অথচ আখেরাত হল উত্তম ও চিরস্থায়ী (লা
৮৭/১৬-১৭)
তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ
وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي
الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ
 যে ব্যক্তি
আখেরাতের ফসল কামনা করে
, আমরা তার ফসল বৃদ্ধি করে দেইআর যে ব্যক্তি
দুনিয়ার ফসল কামনা করে
, আমরা তাকে সেখান থেকে কিছু দেইকিন্তু আখেরাতে তার
জন্য কোনই অংশ থাকবে না
 (শূরা ৪২/২০)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলামএমন সময় আনছারদের জনৈক ব্যক্তি এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন মুমিন সর্বোত্তম? তিনি বললেন, أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا  সর্বাধিক চরিত্রবান ব্যক্তিঅতঃপর জিজ্ঞেস করল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বিচক্ষণ? তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ
اسْتِعْدَادًا أُولَئِكَ الأَكْيَاسُ
 মৃত্যুকে
সর্বাধিক স্মরণকারী এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য সুন্দরতম প্রস্ত্ততি গ্রহণকারী
মূলতঃ তারাই হল বিচক্ষণ
ব্যক্তি
[17] এরপরেও সর্বদা আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবেকেননা তাঁর রহমত ভিন্ন নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা
যাবে না
উপরোক্ত  উপায় সমূহ  অবলম্বন  করলে  মুমিনগণ তাদের
অন্তরজগতকে কলুষমুক্ত রাখতে পারবেন বলে আশা করা যায়
আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!



[1]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৫৩১৪ রিক্বাক্ব অধ্যায় লোক দেখানো ও শুনানো অনুচ্ছেদ
[2]. বায়হাক্বী-
শু
আব; মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহুল জামে হা/২০৮৫
[3]. মুসলিম হা/৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭-২৮ শিষ্টাচার অধ্যায় যুলুম অনুচ্ছেদ
[4]. বুখারী হা/৫১; মিশকাত হা/৫১২৬
[5]. মুসলিম হা/৯০১; মিশকাত হা/৫৩৪১ রিকবাক্ব অধ্যায়
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯ শিষ্টাচার অধ্যায়
[7]. ত্বাবারাণী; ছহীহুল জামে হা/৫৮৩১
[8]. বুখারী হা/১৩৮৬; মিশকাত হা/৪৬২১ স্বপ্ন অধ্যায়
[9]. দারেমী, ছহীহাহ হা/৬৭৩; মিশকাত হা/৩৬৫৩ দন্ডবিধি সমূহ অধ্যায়
[10]. তিরমিযী হা/১৮৬২; মিশকাত হা/৩৬৪৩-৪৪
[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৩; মিশকাত হা/৫৩৫৬
[12]. বুখারী হা/৬৪৯২; মিশকাত হা/৫৩৫৫
[13]. তিরমিযী হা/২৩০৮; মিশকাত হা/১৩২ কবরের আযাব অনুচ্ছেদ
[14]. তিরমিযী হা/২৩০৭; নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬০৭ জানাযা অধ্যায় মৃত্যু কামনা ও তার স্মরণ অনুচ্ছেদ
[15]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৮১ হাউয ও শাফাআত অনুচ্ছেদ
[16]. দারেমী হা/২৭০৬; তিরমিযী হা/৩১৫৯; ছহীহাহ হা/৩১১
[17]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহাহ হা/১৩৮৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top