যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি)

(লেখক : ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব)…..
আম্মানে হিজরত :

নানাবিধ নির্যাতন-নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর ১৪০০ হিজরীর ১লা রামাযানে তিনি সপরিবারে দামেশক হ’তে জর্দানের রাজধানী আম্মানে হিজরত করেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একখন্ড জমি ক্রয় করে গৃহ নির্মাণ শুরু করেন। নির্মাণকাজে ব্যাপক পরিশ্রমের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে দামেশকে অবস্থিত তাঁর সমৃদ্ধ লাইব্রেরীর অনেককিছুই নানা জটিলতার কারণে আম্মানে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। ফলে এসময় তাঁর অনেক পান্ডুলিপি হারিয়ে যায়। যাইহোক কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি পুনরায় দারস-তাদরীস ও তাহক্বীক্ব-তা’লীফে আত্মনিয়োগ করেন। 

তবে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জর্দানে হিজরতের আরেকটি কারণ উল্লেখ করেন। তা হ’ল দামেশকে তাঁর দারস-তাদরীস ও দাওয়াতী সফর অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহক্বীক্বী ময়দানে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি এমন একটি দেশে বসবাস করতে চাচ্ছিলেন যেখানে তিনি পরিচিত নন।[1]

সিরিয়ায় অবস্থানকালে তিনি এক বা দুইমাস অন্তর আম্মানে এসে দারস প্রদান করতেন। ফলে সেই সময়কার ছাত্ররা তাঁকে পুনরায় দরস চালু করার অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধক্রমে তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার রিয়াযুছ ছালেহীনের উপর দরস শুরু করেন। কিন্তু একমাস যেতে না যেতেই জর্দান সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে সিরিয়ায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়।

ফলে ১৪০১ হিজরীর ১৯ শাওয়াল বুধবার বিকালে তিনি আম্মান ত্যাগ করে সপরিবারে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং দামেশকে অবস্থান শুরু করেন। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি অনুকূল মনে না হওয়ায় অন্যত্র গমনের ব্যাপারে তিনি ইস্তিখারা করেন এবং শুভাকাংখীদের সাথে পরামর্শ করেন।

অতঃপর দুই রাত অবস্থানের পর তিনি লেবাননের রাজধানী বৈরূতে গমন করেন এবং প্রিয় বন্ধু শায়খ যুহাইর শাবীশের বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। যদিও সেখানে তখন নানা ধরণের ফিৎনা-ফাসাদের কারণে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কিছুটা স্থির হওয়ার পর সেখানে তিনি শায়খ যুহাইরের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে অধ্যয়ন শুরু করেন। সেখানেও তিনি বিরল পান্ডুলিপিসহ নতুন নতুন বহু গ্রন্থের সন্ধান পান।[2] এসময় তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়ভাজন বড় ভাই মুহাম্মাদ নাজী আবূ আহমাদের মৃত্যুসংবাদ পান, যিনি হজ্জব্রত পালনকালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সংবাদ তাঁকে খুবই ব্যথিত করে।

যাইহোক বন্ধুর গৃহে প্রভূত সম্মান-মর্যাদার সাথে অবস্থান করলেও অল্পদিনের মধ্যে তিনি অনুভব করেন যে, বৈরূতের অরাজক-বিশৃংখল পরিবেশ তাঁর জন্য মোটেও অনুকূল নয়। এসময় সেখানে অজ্ঞাত হত্যাকান্ড ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। এমনকি একদিন তিনি পরিবার নিয়ে গাড়ীযোগে শহরে চলার সময় স্নাইপারের গুলির সম্মুখীন হন। এতে তার গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হ’লেও সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।[3] 

এদিকে আরব আমিরাতের বাসিন্দা তাঁর প্রিয়ভাজন কিছু শুভাকাংখীর পক্ষ থেকে সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ আসে। ফলে বৈরূতে প্রায় ছয় মাস অবস্থানের পর তিনি আরব আমিরাতে গমন করেন। সেখানে তিনি সাদর অভ্যর্থনায় বরিত হন। পার্শ্ববর্তী উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ভক্ত-অনুরক্তরা তাঁর আগমনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাঁর দরসে অংশগ্রহণ শুরু করেন। ফলে জ্ঞানপিপাসু একদল শিক্ষার্থীর সাথে দারস-তাদরীসের মধ্যে তাঁর সময়গুলো কাটতে থাকে। এসময় তিনি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি রাষ্ট্রেও দাওয়াতী সফরে গমন করেন।[4]

শায়খ আলবানী আরব আমিরাতে অবস্থান করলেও জর্দানে ফিরে যাওয়ার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। অবশেষে কয়েকমাস পর আলবানীর প্রসিদ্ধ ছাত্র শায়খ আবূ মালিক ইবরাহীম আবূ শাকরা জর্দানের তৎকালীন বাদশাহ হোসাইন ইবনু তালালকে আলবানীর বিষয়টি বুঝানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বাদশাহের নিকটে একথা পৌঁছাতে সক্ষম হন যে, আলবানী কোন রাজনৈতিক বা বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব নন। বরং তিনি একজন আলেম মাত্র। এভাবে একপর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর জর্দান প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হয়। ফলে তিনি ফিরে আসেন।[5] অতঃপর আমৃত্যু জর্দানেই বসবাস করেন।

বিভিন্ন দেশে দাওয়াতী সফর :

আলবানী দাওয়াতী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে জর্দান, সঊদী আরব, লেবানন, কাতার, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে গমন করেন। যেমন ১৯৭২ খৃষ্টাব্দে ‘ইত্তিহাদুল ‘আলামী লি তালাবাতিল মুসলিমীন’ নামে একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে তিনি স্পেন সফরে যান। সেখানে তিনি الحديث حجة بنفسه في العقائد والأحكام (হাদীছ আক্বীদা, আহকাম উভয় ক্ষেত্রেই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য) বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়।

তিনি কাতার সফর করেন এবং ড. ইউসুফ কারযাভী, শায়খ মুহাম্মাদ আল-গাযালী, শায়খ মাহমূদ প্রমুখ বিদ্বানের সাথে একটি সম্মেলনে মিলিত হন। সেখানে তিনি ‘ইসলামে হাদীছের মর্যাদা’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। ১৪০২ হিজরী সনে তিনি কুয়েত সফরে গমন করেন এবং বেশ কয়েকটি স্থানে বক্তব্য ও দরস প্রদান করেন। এছাড়া তিনি আরো কয়েকবার আরব আমিরাত ও ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন।

১৩৮৫ হিজরীতে তিনি বায়তুল মাক্বদিস সফরে যান এবং সেখানে ছালাত আদায়ের সৌভাগ্য লাভ করেন। আরেকবার তিনি শায়খ বিন বাযের আমন্ত্রণে মিসর, মরক্কো এবং ইংল্যান্ডে দাওয়াতী সফরে গমন করেন।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বহু দেশ থেকে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে আহবান করা হ’লেও গবেষণার ব্যস্ততার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি অপারগতা প্রকাশ করতেন। যদিও মূলতঃ লেখনীর মাধ্যমে তাঁর দাওয়াতের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।[6]

জীবন সায়াহ্নে আলবানী :

জীবনের শেষ তিন বছর তিনি কষ্টকর রোগে আক্রান্ত ছিলেন। স্ত্রী উম্মুল ফযলের তথ্য অনুযায়ী তিনি এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।[7] তবে জীবনীকার ইছাম মূসা হাদীর মতে, মৃত্যুকালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।[8] এছাড়া বার্ধক্যজনিত আরো কিছু রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন। তবে আমৃত্যু তিনি গবেষণা কর্মেই নিরত ছিলেন।

আলী হাসান হালাবী বলেন, মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বেও তিনদিন যাবৎ একটি যঈফ ও মুনকার হাদীছ নিয়ে তিনি গবেষণারত ছিলেন। এসময় তিনি প্রকাশিত, হস্তলিখিত বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে স্বীয় নাতী ‘উবাদা ইবনু আব্দুল লতীফের মাধ্যমে ১৮ পৃষ্ঠাব্যাপী আলোচনাটি লিপিবদ্ধ করান। তিনি বলেন, রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময় তিনি বিছানা থেকে উঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তখনও তিনি সন্তানদের ডেকে বলতেন, আমাকে লাইব্রেরীতে নিয়ে চল! সেখানে গিয়ে বলতেন আমাকে বসিয়ে দাও! সন্তানরা বলত, আপনি বসতে সক্ষম নন। তখন তিনি সেখানে শুয়ে পড়তেন এবং কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থটি নামিয়ে তা থেকে পড়ে শুনাতে বলতেন।[9]

শায়খ ইবরাহীম শাকরাহ বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থাতেও গবেষণাকর্ম থেকে তিনি বিরত হ’তেন না। কিছু লিখতে চাইলে বলতেন, হে আব্দুল লতীফ[10] তুমি লেখ! কখনো বলতেন হে উবাদা[11] বা হে লুআই[12] তুমি লেখ!’

আলবানীর পুত্র আব্দুল লতীফ বলেন, ‘মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা পূর্বেও তিনি ছহীহ সুনান আবূদাঊদের একটি খন্ড তাঁর নিকট থেকে চেয়ে নেন, যাতে তিনি হঠাৎ মনে আসা একটি বিষয়ে নযর বুলাতে পারেন’।[13]

শায়খ আলী খাশান বলেন, মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে তিনি কিছু সময়ের জন্য সুস্থতা বোধ করছিলেন। সেসময় তিনি বললেন, আমাকে জারহ ছানী (অর্থাৎ ইবনু আবী হাতেম-এর জারাহ তা‘দীল) গ্রন্থটি দাও।[14]

শেষ দিনগুলোতে তিনি আর নড়াচড়া করতে পারতেন না। এসময় নিরবচ্ছিন্নভাবে কেবল যিকর-আযকারে রত থাকতেন। পাশে অবস্থানকারীদের বলতেন, এই সময়টুকু আমি আল্লাহর যিকরে ব্যয় করতে চাচ্ছি।

মৃত্যুর পূর্বে কৃত অছিয়ত :

১৪১০ হিজরীতে মৃত্যুর ১০ বছর পূর্বে আলবানী স্বীয় পরিবার ও শুভাকাংখীদের উদ্দেশ্যে একটি অছিয়তপত্র লিখে যান। যেখানে তিনি মৃত্যুর পর করণীয় সম্পর্কে নছীহত করেন। তাঁর বক্তব্যটি ছিল নিম্নরূপ-

(১) ‘আমি আমার স্ত্রী, সন্তান ও বন্ধুদের প্রতি এবং আমার অনুরাগীদের প্রতি অছিয়ত করছি যে, তারা যেন আমার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছানোর পর আমার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করে। এবং আমার জন্য বিলাপ ও উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন না করে।

(২) তারা যেন দ্রুততার সাথে আমার দাফনকার্য সম্পাদন করে। আমার মৃত্যুসংবাদ যেন আমার দাফন প্রস্ত্ততির জন্য প্রয়োজনীয় লোক ব্যতীত অন্য কোন ভাই ও আত্মীয়-স্বজনকে না পৌঁছায়। প্রতিবেশী ও একনিষ্ট বন্ধু ইযযত খিযির বা আব্দুললাহ যেন আমার গোসল করায়। একাজে সহযোগিতার জন্য সে যেন পসন্দমত কাউকে বেছে নেয়।

(৩) দাফনের জন্য নিকটবর্তী স্থান নির্বাচন করবে। যাতে আমার জানাযা গাড়ীতে করে নিয়ে যেতে এবং তাঁর পিছে পিছে বিদায়দাতাদের গাড়ী নিয়ে চলতে বাধ্য না করা হয়। কবর দিতে হবে কোন পুরাতন কবরস্থানে, যেটা সহসাই খনন করা হবে না।

যে দেশে আমি মৃত্যুবরণ করব, সে দেশের বাইরে অবস্থানকারী আমার কোন সন্তানকে বা অন্য কাউকে আমার জানাযা সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে যেন মৃত্যুসংবাদ না দেওয়া হয়। তাতে আবেগ প্রাধান্য পেয়ে যাবে এবং তার ক্রিয়া শুরু করবে। ফলে সেটাই আমার জানাযা দেরী হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

মহান প্রভুর নিকটে কামনা! আমি যেন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি। তিনি যেন আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

আমি আমার নিজস্ব লাইব্রেরীতে প্রকাশিত, ফটোকৃত, নিজ বা অন্য কারো হস্তলিখিত পান্ডুলিপিসহ যা কিছু রয়েছে, তার সবই মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর জন্য দান করলাম। কেননা সেখানে শিক্ষকতাকালীন সময়ে সালাফে ছালেহীনের আদর্শ ভিত্তিক কুরআন-সুন্নাহর দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমার অনেক উত্তম স্মৃতি রয়েছে। আমি মহান আল্লাহর নিকটে আশা রাখি যে, উক্ত বইপত্রের মাধ্যমে গবেষকবৃন্দ উপকৃত হবেন। যেভাবে বর্তমানে এর সান্নিধ্য গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্ররা উপকৃত হচ্ছে এবং তাদের দাওয়াত ও ইখলাছের মাধ্যমে আমাকে উপকৃত করছে।

হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে এমন ক্ষমতা দাও যাতে আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছ আমার ও আমার পিতা-মাতার উপরে। আর আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর। আর আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি কল্যাণ দান কর। আমি তোমার দিকে ফিরে গেলাম এবং আমি তোমার আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত।

-প্রতিপালকের নিকটে অনুগ্রহপ্রার্থী নাচীজ : মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী।[15]

মৃত্যু :

আলবানী ৮৮ বছর বয়সে ১৪২০ হিজরীর ২২ জুমাদাল আখেরাহ মোতাবেক ১৯৯৯ খৃষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় আম্মানের শামাইসানী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। অছিয়ত অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর জানাযা প্রস্ত্তত করা হয়। তাঁর ছাত্র শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম শাকরাহ তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন। পাঁচ সহস্রাধিক মতান্তরে দুই সহস্রাধিক মানুষ উক্ত জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর ঐদিন বাদ এশা মৃত্যুর প্রায় তিন ঘন্টা পর আলবানীর বাসস্থানের নিকটবর্তী দক্ষিণ মারেক-এর হামালান পাহাড়ে অবস্থিত স্থানীয় একটি পুরাতন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।[16] 

পরিবার :

দাম্পত্য জীবনে তিনি মোট চারটি বিবাহ করেন। প্রথমা স্ত্রী উম্মে আব্দুর রহমান তিন পুত্র সন্তান রেখে মারা যান। তারা হল- (১) আব্দুর রহমান (২) আব্দুল লতীফ (৩) আব্দুর রাযযাক।

তারপর তিনি নাজীয়া নাম্নী আরেক যুগোস্লাভিয়ান নারীকে বিবাহ করেন। তার ঘরে ৪ পুত্র এবং ৫ কন্যার জন্ম হয়। (৪) আব্দুল মুছাবিবর (৫) আব্দুল আ‘লা (৬) মুহাম্মাদ (৭) আব্দুল মুহাইমিন (৮) আনীসাহ (৯) আসিয়াহ (১০) সালামাহ (১১) হাসানাহ (১২) সাকীনাহ।

এরপর তিনি খাদীজা নাম্নী এক সিরীয় নারীকে বিবাহ করেন, যিনি ছিলেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক ও আলবানীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শায়খ মুহাম্মাদ আমীন মিছরীর স্ত্রীর বোন। যার গৃহে তাঁর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম ছিল (১৩) হেবাতুল্লাহ। অতঃপর তাকে তালাক প্রদানের পর তিনি ফিলিস্তীনী নারী উম্মুল ফযলকে বিবাহ করেন এবং আমৃত্যু তার সাথেই দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। তবে তার গর্ভে কোন সন্তান জন্মলাভ করেনি।[17]

ইলমী ময়দানে গ্রহণযোগ্যতা :

১৯৫৫ খৃষ্টাব্দে দামেশক বিশ্ববিদ্যালয়ের শারী‘আহ বিভাগ কর্তৃক ‘মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিল ইসলামী’ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই বিশ্বকোষের ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছ ও আছারসমূহ তাখরীজ করার জন্য আলবানীর প্রতি আহবান জানালে তিনি তাতে সাড়া দেন।[18]

১৯৬০ খৃষ্টাব্দে আলবানী মিসর ও সিরিয়া সরকারের[19] যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘লাজনাতুল হাদীছ’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। যেটা হাদীছ গ্রন্থসমূহের তাহক্বীক্ব ও প্রকাশনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদীছ বিভাগে শিক্ষকতা করেন।

১৯৬৮ খৃষ্টাব্দে সঊদী আরবের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী শায়খ হাসান আব্দুললাহ মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীছ বিভাগের ডীন হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। তবে এ আহবানে সাড়া দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। একইভাবে ভারতের জামে‘আ সালাফিইয়াহ বানারসে শিক্ষকতার জন্য তাঁকে আহবান করা হ’লে তিনি তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।[20]

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[21]

১৯৮৫ খৃষ্টাব্দে মাকতাবাতুত তারবিয়াতিল ইসলামিইয়াহ তাঁকে সুনানে আরবা‘আহ (আবূদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ) তাখরীজ করার আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে এ মহান দায়িত্ব পালন করেন। যা পরবর্তীতে ছহীহ ও যঈফ পৃথকভাবে খন্ডাকারে প্রকাশিত হয়।[22]

১৯৯৯ খৃষ্টাব্দে তিনি হাদীছের তাখরীজ, তাহক্বীক্ব ও তাদরীসে বিশেষ অবদান রাখায় সঊদী সরকার কর্তৃক ‘বাদশাহ ফয়ছাল পুরস্কারে’ ভূষিত হন। এসময় পুরস্কার প্রদান কমিটি যে লিখিত স্বীকৃতি প্রদান করে সেখানে বলা হয়েছিল যে, ‘ইসলামী গবেষণার ক্ষেত্রে বাদশাহ ফয়ছাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার নির্ধারণ কমিটি ‘হাদীছে নববীর তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও গবেষণার ক্ষেত্রে ইলমী অবদান’ বিষয়ে ১৪১৯/১৯৯৯ খৃষ্টাব্দের পুরস্কার সিরীয় বংশোদ্ভূত সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীকে প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শতাধিক গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে হাদীছে নববীর তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও গবেষণার মাধ্যমে তিনি যে মূল্যবান প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তাঁর সম্মাননা হিসাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হল’। সেখানে আরো বলা হয়েছে, ويعد الشيخ الألباني شخصية علمية رائدة وصاحب مدرسة مةميزة وله عطاء حديثي أغنى الحقل العلمي وأصبحة جهوده وأعماله مراجع لطلاب العلم وعونًا لدارسي السنة النبوية- ‘শায়খ আলবানী একজন নেতৃস্থানীয় বিদ্বান এবং স্বতন্ত্র চিন্তাধারার অধিকারী হিসাবে পরিগণিত। ইলমুল হাদীছে তার প্রভূত অবদান ইলমী ময়দানকে সমৃদ্ধ করেছে। সাথে সাথে তাঁর অবদান ও রচনাসমূহ জ্ঞানান্বেষীদের প্রত্যাবর্তনস্থল ও হাদীছ পাঠকদের সহায়ক হিসাবে পরিণত হয়েছে’।[23]

সমসাময়িক ওলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক :

সমসাময়িক বহু আলেম-ওলামা ও জ্ঞানী-গুণীদের সাথে আলবানীর গভীর সম্পর্ক ছিল। তারা একে অপরের নিকট যাওয়া-আসা করতেন। পরস্পরে ইলমী ফায়েদা হাছিল করতেন। যেসব আলেমের সাথে তাঁর অধিক সম্পর্ক ছিল এবং বিভিন্ন সময়ে যাঁদের সাথে মিলিত হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন-

(১) মিসরের জামা‘আতু আনছারিস সুন্নাহ-এর তৎকালীন সভাপতি শায়খ মুহাম্মাদ হামেদ আল-ফিক্বী।

(২) মিসরের প্রখ্যাত মুহাক্কিক আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির। তাঁর সাথে তাঁর একাধিকবার ইলমী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

(৩) বহু গ্রন্থ প্রণেতা মিসরীয় শায়খ আব্দুর রাযযাক হামযা ও মরক্কোর বিশিষ্ট সালাফী বিদ্বান ড. তাক্বীউদ্দীন হেলালী।

(৪) সঊদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুললাহ বিন বায (রহঃ)। তারা বহু মজলিসে একত্রিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে পত্র বিনিময় করেছেন।[24]

(৫) মিসরের বিখ্যাত দু’টি পত্রিকা ‘মাজাল্লাতুল ফাতহ’ ও ‘হাদীক্বাহ’-এর সম্পাদক ও ‘মাকতাবা সালাফিইয়াহ’-এর পরিচালক সাইয়েদ মুহিববুদ্দীন আল-খত্বীব। আদাবুয যিফাফ গ্রন্থটি রচনার পর আলবানীর আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা সংযোজন করেন।

(৬) ভারতের প্রখ্যাত হানাফী মুহাদ্দিছ হাবীবুর রহমান আ‘যমী। আলবানী একাধিকবার তাঁর সাথে মিলিত হন। ১৩৯৮ হিজরীতে দামেশক সফরকালে শায়খ আলবানী তাঁকে আন্তরিক আতিথ্য প্রদান করেন।

(৭) ভারতের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মুছত্বফা আ‘যমী। তিনি ছহীহ ইবনু খুযায়মার তাহক্বীক্ব সম্পন্ন করার পর আলবানীর নিকটে প্রেরণ করেন এবং আলবানী তা পুনঃনিরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেন।

(৮) ভারতের শায়খ আব্দুছ ছামাদ শারফুদ্দীন। তাদের মাঝে বিভিন্ন সময়ে ইলমী চিঠি-পত্র আদান-প্রদান হ’ত। এক স্থানে তিনি লিখেছেন- ‘একবার রিয়াদের দারুল ইফতা থেকে শব্দগত ও অর্থগত দিক থেকে অপ্রসিদ্ধ একটি হাদীছের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে জামে‘আ সালাফিইয়াহর শায়খুল জামে‘আ শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর নিকটে একটি পত্র আসে। তখন সেখানে উপস্থিত আলেমগণ হাদীছটির উপর পর্যালোচনার জন্য যুগশ্রেষ্ঠ হাদীছ বিশারদ হিসাবে শায়খ আলবানীই উপযুক্ত বলে ঐক্যমত পোষণ করেন।

(৯) সঊদী আরবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-‘আববাদের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি স্বীয় গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন স্থানে শায়খ ‘আববাদের ইলমী অবস্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমন সিলসিলা ছহীহাহ ২২৩৬ নং হাদীছের আলোচনায় তিনি বলেন, …এর সনদ জাইয়িদ। শায়খ ‘আববাদও ইমাম মাহদী সম্পর্কে লিখিত তাঁর রিসালায় এ ব্যাপারে স্বীকৃতি দিয়েছেন। [25]

(১০) মিসরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন-এর প্রতিষ্ঠাতা শায়খ হাসানুল বান্না। তিনি শায়খ আলবানীর নিকটে পত্র প্রেরণ করে তাঁর গৃহীত মানহাজের প্রশংসা করেন এবং তার উপর অটল থাকার জন্য উৎসাহিত করেন।

(১১) মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ-এর রচয়িতা ভারতের উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী।[26]

(১২) মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক প্রধান ড. আমীন মিছরী। উক্ত দায়িত্ব গ্রহণকালে তিনি শায়খ আলবানী ঐ পদের যথার্থ হকদার এবং নিজেকে তাঁর ছাত্র হিসাবে দাবী করেন। এছাড়া আলবানী মদীনায় আগমন করলে তিনি ছাত্রদেরকে তাঁর নিকট থেকে ইলমী ফায়েদা হাছিলের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।

(১৩) দামেশক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলমুল হাদীছ বিভাগের প্রফেসর ড. ছুবহী ছালেহ। তিনিও নিজেকে আলবানীর ছাত্রতুল্য গণ্য করতেন।[27]

(১৪) মিসরের বিশিষ্ট বিদ্বান ও বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফিক্বহুস সুন্নাহ’-এর রচয়িতা সাইয়েদ সাবিক্ব। আলবানী তাঁর গ্রন্থের উপর তা‘লীক্ব পেশ করে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তারা পরস্পর হাদিয়া বিনিময় করতেন।[28] 

এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে ওলামায়ে কেরাম তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য গমন করতেন। অনেকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও সাক্ষাতের গভীর আগ্রহের কথা জানিয়ে পত্র লিখতেন।

ছাত্রবৃন্দ :

শায়খ আলবানীর ছাত্র সংখ্যা অগণিত। সিরিয়া, জর্দান, লেবানন, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তিনি দরস প্রদান করেছেন। সেসময় হাযারো ছাত্র তাঁর নিকট থেকে ইলমী ফায়েদা হাছিল করেছেন। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কালে সেখানেও বহু ছাত্র তাঁর নিকটে অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়া আজীবন তিনি বিভিন্ন গ্রন্থের উপর পাঠদান ও প্রশ্নোত্তরের মজলিস চালু রেখেছিলেন। এসব মজলিসে অগণিত মানুষ অংশগ্রহণ করতেন। সেকারণে তাঁর বহু ছাত্র শারঈ জ্ঞান-গবেষণা ও তার প্রচার-প্রসারে এবং আলবানীর দাওয়াতী মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে অবদান রেখে চলেছেন।

তাঁর ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হ’লেন, (১) পাকিস্তানের প্রখ্যাত বিদ্বান আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর, (২) জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊছূলুদ্দীন বিভাগের শিক্ষক প্রখ্যাত আলেম প্রফেসর ড. বাসেম ফয়ছাল আল-জাওয়াবিরাহ, (৩) মিসরের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আবূ ইসহাক্ব আল-হুওয়াইনী, (৪) বিশিষ্ট সঊদী বিদ্বান ও রিয়াদের বাদশাহ আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীছ বিভাগের প্রফেসর রবী‘ ইবনুল হাদী আল-মাদখালী, (৫) সিরিয়ার প্রখ্যাত সালাফী বিদ্বান সালীম ইবনু ‘ঈদ আল-হেলালী, (৬) সঊদী আরবের মুহাম্মাদ ইবনু স‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উলূমুল হাদীছ বিভাগের প্রফেসর ড. ‘আছিম ইবনু আব্দুল্লাহ আল-কারয়ূত্বী, (৭) সঊদী আরবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-‘আববাদ, (৮) জর্দানী বিদ্বান ও মুহাক্বিক্ব আলী হাসান হালাবী আল-আছারী, (৯) ড. ওমর ইবনু সুলায়মান আল-আশক্বার, (১০) মুহাম্মাদ ইবরাহীম শাকরাহ, (১১) সিরিয়ার প্রখ্যাত সালাফী দাঈ মুহাম্মাদ জামীল যায়নূ, (১২) ইয়ামনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং প্রসিদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র ‘দারুল হাদীছ দাম্মাজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদেঈ। তাঁর সম্পর্কে আলবানী বলতেন- ‘মুক্ববিল আমার শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের অন্যতম। এখন সে শায়খ মুকববিলে পরিণত হয়েছে।[29] (১৩) বিশিষ্ট ফিলিস্তীনী মুহাদ্দিছ মাশহূর ইবনু হাসান আলে সালমান, (১৪) সিরীয় বংশোদ্ভূত আলেম ও মুহাক্বিক্ব, রিয়াদের মালিক স‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উলূমুল কুরআন ওয়াল হাদীছ বিভাগের প্রফেসর মুহাম্মাদ লুৎফী ছাববাগ, (১৫) বিশিষ্ট সিরীয় বিদ্বান ও মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ ঈদ আল-আববাসী (১৬) মক্কাস্থ উম্মুল ক্বোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্বীদা বিভাগের প্রফেসর ড. রেযা ইবনু না‘সান মু‘ত্বা (১৭) মুহাম্মাদ আহমাদ আবূ লায়লা আল-আছারী, (১৮) বৈরূতের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা আল-মাকতাবুল ইসলামী-এর পরিচালক যুহাইর শাবীশ (১৯) হোসাইন ‘আওদাহ ‘আওয়াইশাহ (২০) হুসাইন খালিদ আশীশ প্রমুখ।[30]

(চলবে)

[1]ইমাম আলবানী হায়াতুহু ওয়া দাওয়াতুহু, পৃ. ৩৫।

[2]. মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আছ-ছান‘আনী, রাফ‘ঊল আসত্বার লি ইবত্বালি আদিল্লাতিল ক্বাইলীনা বি ফানাইন্নার, তাহক্বীক্ব : আলবানী (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১ম প্রকাশ, ১৯৮৪ খ্রি.), ভূমিকা দ্রষ্টব্য, পৃ. ৬-৭।

[3]. হায়াতুল আল্লামা আলবানী, পৃ. ২০।

[4]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৫৬।

[5]ইমাম আলবানী হায়াতুহু ওয়া দাওয়াতুহু, পৃ. ৩৫।

[6]নাছিরুদ্দীন আলবানী : মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ, পৃ. ৩১। আল-ইত্তিজাহাতুল মু‘আছারাহ, পৃ. ৩৫৬।

[7]ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ৯৩।

[8]. হায়াতুল আল্লামা আলবানী, পৃ. ১৭।

[9]. মুহাদ্দিছুল ‘আছর ইমাম আলবানী কামা ‘আরাফতুহ, পৃ. ৬৬।

[10]. আব্দুল লতীফ : আলবানীর প্রথমা স্ত্রীর ২য় সন্তান। তিনি আম্মানে বসবাস করতেন এবং পিতার অসুস্থতাকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে তার পাশে অবস্থান করতেন।

[11]. উবাদা : আলবানীর পুত্র আব্দুল লতীফের সন্তান। সেসময় তিনি আরব আমিরাতে আজমানে কর্মরত ছিলেন। অসুস্থতার শেষ কয়েক মাস তিনি দাদার সাথে অবস্থান করেন।

[12]. লুআই : আলবানীর প্রথমা স্ত্রীর ৩য় সন্তান আব্দুর রাযযাকের ছেলে। তিনিও শেষ কয়েকমাস দাদার সাথে ছিলেন।

[13]. আহদাছুন মুছীরাহ মিন হায়াতিশ শায়খ আলবানী, পৃ. ৫৫।

[14]ছাফহাতুন বায়যা, ৯৫ পৃ.।

[15]ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ৯৮-৯৯; মুহাম্মাদ খায়ের রামযান ইউসুফ, মু‘জামুল মুআল্লিফীন আল-মু‘আছিরীন (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মালিক ফাহাদ আল-ওয়াতানিইয়াহ, ১ম প্রকাশ ২০০৪ খৃ./ ১৪২৫ হি.), পৃ. ৭৩০-৩১।

[16]Moyeed-ul-Zafar, Contribution of Shaykh Nāṣir al-Dīn al-Albanī to ḥadīth literature (Aligarh : Depertment of Islamic Studies, Aligarh Muslim University, 2005), P. 81.

[17]ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ৪৬-৪৭।

[18]পূর্বোক্ত, পৃ. ৭০।

[19].সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র (الجمهورية العربية المةحدة‎‎) নামক এই ইউনিয়নটি মিশর ও সিরিয়া নিয়ে গঠিত ছিল। ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দে এর সৃষ্টি হয় এবং ১৯৬১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত টিকে থাকে। তবে মিশর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ নামে সরকারীভাবে পরিচিত ছিল। জামাল আবদেল নাসের এর রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

[20]. সামীর ইবনু আমীন আয-যুহায়রী, মুহাদ্দিছুল ‘আছর মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : দারুল মুগনী, ১ম প্রকাশ, ১৪২০ হি.), পৃ. ৭০।

[21]নাছিরুদ্দীন আলবানী; মুহাদ্দিছুল ‘আছর ওয়া নাছিরুস সুন্নাহ, পৃ. ৩১।

[22]. আবূ মু‘আয তারেক ইবনু ‘আওযিল্লাহ, রাদ‘ঊল জানি আল-মু‘তাদ্দা ‘আলাল আলবানী (কায়রো : মাকাতাবাতুত তারবিয়াহ আল- ইসলামিয়াহ, ২য় প্রকাশ, ২০০১ খ্রি.), পৃ. ৩৭।

[23]. ড. আবূ উসামা সালীম ইবনু ‘ঈদ আল-হিলালী, ইমাম আলবানী শায়খুল ইসলাম ও ইমামু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ফী ‘উয়ূনি আ‘লামিল ওলামা ও ফুহূলিল উদাবা (কায়রো : দারুল ইমাম আহমাদ, ১ম প্রকাশ, ২০১২ খ্রি.), পৃ. ৩৬-৩৭; https://kingfaisalprize.org/ar/sheikh-mohammad-nasir-ad-din-al-albani, 16.03.2019.

[24]. তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কত গভীর ছিল এবং তাঁরা একে অপরকে কত মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতেন তা বুঝা যায় একটি শিক্ষণীয় ঘটনা থেকে। তা হ’ল- শায়খ আলবানী জীবনের শেষ হজব্রত পালনকালে মিনায় অবস্থান করছেন। সেখানে তিনিসহ আরো ছিলেন শায়খ বিন বায এবং শায়খ উছায়মীন। তাদের উপস্থিতিতে বিরাট মজলিসে প্রশ্নোত্তর বৈঠক শুরু হ’ল। সভাপতি হিসাবে শায়খ বিন বায হাদীছ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর শায়খ আলবানীকে, ফিক্বহী প্রশ্নের উত্তর শায়খ উছায়মীনকে এবং আক্বীদাগত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের দায়িত্ব নিজেই পালন করলেন। অতঃপর যোহরের সময় হ’ল। শায়খ বিন বায আলবানীকে বললেন, হে আবূ আব্দির রহমান! যোহরের ছালাতে আপনি আমাদের ইমামতি করবেন। কারণ আপনি আমাদের ইমাম। শায়খ আলবানী অস্বীকৃতি জানিয়ে বললেন, না, বরং আপনাকেই ইমামতি করতে হবে। কেননা আপনি আমাদের শায়খ। শায়খ বিন বায বললেন, আমরা কুরআনের ক্ষেত্রে সকলেই সমান হ’তে পারি। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের ক্ষেত্রে আপনি আমাদের মাঝে সর্বাধিক অবগত। সুতরাং আপনিই ইমামতি করুন। অবশেষে শায়খ আলবানী ইমামতির জন্য এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে শায়খ! আমি কি রাসূল (ছাঃ)-এর ন্যায় ছালাত আদায় করব, না সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করব? শায়খ বিন বায বললেন, রাসূল (ছাঃ)-এর অনুরূপ ছালাত আদায় করুন এবং আমাদেরকে শিখিয়ে দিন কিভাবে রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করতেন। দ্র. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (মাসিক আত-তাহরীক, ৩য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ৩১।

[25]. তারজামাতুন মু’জাযাহ লি ফাযীলাতিল মুহাদ্দিছ নাছিরুদ্দীন আলবানী, পৃ. ১৯।

[26]. কোন এক হজ্জের মওসুম। প্রতিবছরের ন্যায় সেবছরও আলবানী হজ্জে গিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের স্বনামধন্য সালাফী বিদ্বান শায়খ উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীও হজ্জে গিয়েছেন। মিনায় অবস্থানকালে ভারতের অপর আহলেহাদীছ বিদ্বান শায়খ মুখতার আহমাদ নাদভী শায়খ আলবানীর তাঁবুতে আল্লামা মুবারকপুরীকে নিয়ে গেলেন। অতঃপর তাঁকে আলবানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই শায়খ আলবানী প্রবল আবেগে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। যেন তাঁর কতদিনের আকাংখা আজ স্বার্থক হয়েছে। শায়খ মুখতার বলেন, মুসলিম বিশ্বের দুই শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছের সেই অপূর্ব মিলন দৃশ্য দেখে উপস্থিত কেউ সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। দ্র. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (মাসিক আত-তাহরীক, ৩য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ৩১।

[27]তারজামাতুন মু’জাযাহ, পৃ. ১৯; আল-ইত্তিজাহাতুল, পৃ. ৩৫৬।

[28]. ড. জামাল ‘আযযূন, হুছূলুত তাহানী বিল কুতুবিল মুহদাতি ইলা মুহাদ্দিছিশ শাম মুহাম্মাদ আল-আলবানী, ১ম খন্ড (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১ম প্রকাশ, ২০০৭ খ্রি.), পৃ. ২৭৮।

[29]ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ৬২।

[30]. জুহূদুশ শায়খ আলবানী ফিল হাদীছ, পৃ. ৪৫-৪৮; ছাফহাতুন বায়যা, পৃ. ৫১-৬২; হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৯৪-১০৬।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top