রুকু পেলে রাক‘আত পাওয়া হয় কি-না

কেউ কোনো সালাতের একটি রাকাত জামা‘আতের সাথে পেলেই সে পুরো জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে রুকু’ পেলেই কোনো রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নতুবা নয়:

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».

“যে ব্যক্তি কোনো সালাতের একটি রাকাত (ইমামের সাথে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই ইমামের সাথে পেলো”। (বুখারী হা/৫৮০ মুসলিম হা/৬০৭)

আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলে তিনি তখন সালাতের সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনেই রুকু’ করে ফেললেন। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

«زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ».

“আল্লাহ তা‘আলা তোমার সালাতের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এ কাজ তুমি আর কখনো করবে না। তথা সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনে কখনো দ্রুত রুকু’ করবে না”। (বুখারী হা/৭৮৩)।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».

“যখন তোমরা আমাদেরকে সালাতের সেজদাহরত অবস্থায় পাও তখন তোমরাও সাজদাহ করো। তবে উহাকে রাকাত হিসেবে ধরবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু’ তথা রাকাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”। (আবু দাউদ, হা/৮৯৩)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا قَبْلَ أَنْ يُقِيمَ الإِمَامُ صُلْبَهُ».

“যে ব্যক্তি ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে নিজ পিঠ উঠানোর আগেই তাঁর সাথে রুকু’ পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”।(বায়হাক্বী হা/২৬৭৮; দারাক্বুত্ব্নী হা/১; ইবন খুযাইমাহ হা/১৫৯৫)

তবে কোনো ব্যক্তি ওযরবশতঃ সালাতে হাজির হতে দেরি করে ফেললে এবং সে মসজিদে এসে সালাতের রুকু না পেয়ে তার কোনো একটি অংশ পেলে অথচ সে সর্বদা সালাতের পাবন্দ তবুও সে জামা‘আত পেলো না বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু তাকে নিয়্যাত ভালো ও ওযর থাকার দরুন জামা‘আতের সাওয়াব দেওয়া হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».

“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”। (আবু দাউদ হা/৫৬৪)

আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا».

“যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত অথবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার আমলনামায় মুক্বীম (নিজ এলাকা অথবা তেমন কোনো এলাকায় ইক্বামতের নিয়্যাতে অবস্থানরত অবস্থা) ও সুস্থ অবস্থার আমলের ন্যায় আমল লেখা হবে”। (সহীহ বুখারী হা/২৯৯৬)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি বললেন:

«إِنَّ أَقْوَامًا بِالـْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».

“কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যাদেরকে আমরা মদিনায় রেখে এসেছি অথচ আমরা যে কোনো গিরি পথ ও উপত্যকায় গিয়েছিলাম তারা সেখানে আমাদের সাথেই ছিলো। তাদেরকে মদিনায় একমাত্র ওযরই আটকে রেখেছে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩৮, ২৮৩৯)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

«إِنَّ بِالْـمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ؟ قَالَ: وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».

“মদিনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে; তোমরা যে পথ বা উপত্যকাই অতিক্রম করেছো তারা তোমাদের সাথেই ছিলো। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো বস্তুতঃ মদিনায় রয়েছে অথচ তারা আমাদের সাথে থাকলো কি ভাবে? তিনি বললেন: তারা সত্যিই মদিনায়। একমাত্র ওযরই তাদেরকে সেখানে আটকে রেখেছে। তবে তারা মানসিকভাবে তথা আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে তোমাদের সাথেই রয়েছে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২৩)

রুকু না পেলে রাকাত গণ্য হবে না। ‌مَنْ ‌أدرَكَ ‌الرَّكعَةَ ‌قَبلَ ‌أن ‌يَرفَعَ ‌الإمامُ ‌رَأسَه فقَد أَدْرَكَ السَّجدَةَ ‘যে ব্যক্তি ইমাম মাথা উত্তোলনের পূর্বে ইমামকে (রুকুতে) পেল, সে সাজদা তথা রাকআত পেল (সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী, হা/২৫৮৬ ‘সনদ জায়্যেদ’)

আবূ হুরায়রা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমরা সিজদারত অবস্থায় তোমরা যখন সালাতে আসবে, তখন সিজদা করবে। তবে তাকে কোনো কিছু (রাকআত) গণ্য করবে না (আবূ দাউদ হা/৮৯৩)। অত্র হাদীছে সিজদাকে রাকআত হিসাবে গণ্য করা হয়নি। যা প্রমাণ করে যে, রুকু রাকআত হিসাবে গণ্য। অতএব আপনার সালাত তিন রাকআত হয়েছে। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে যে কয় রাকআত ছুটে গেছে তা পূর্ণ করে নেওয়া। অর্থাৎ আপনার জন্য আরেক রাকআত সালাত পড়ে সাহু সিজদা করায় যথেষ্ঠ হবে (বুখারী হা/১১৬৯)

ইসলামিক জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েব সাইটে শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন,

ইমাম যখন রুকুতে, তখন মুক্তাদির ছালাতে প্রবেশের তিনটি অবস্থা:

১. মুক্তাদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলা, তারপর রুকু দেয়া এবং তখনও ইমাম রুকুতে থাকা। এ অবস্থায় সে ইমামের সাথে রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে।

২. ইমাম রুকুতে থাকা অবস্থায় সে তাকবীরে তাহরীমা বলেছে, কিন্তু ইমাম রুকু থেকে ওঠার পর সে রুকু দিয়েছে, এ অবস্থায় সে ইমামের সাথে রাকাত পায়নি বলে গণ্য হবে এবং তাকে এই রাকাত নিজে পড়তে হবে।

৩. তাকবীরে তাহরীমা ছাড়াই সে সরাসরি রুকুতে চলে যাওয়া। এমন অবস্থায় তার নামায বাতিল হবে। কারণ সে নামাযের অন্যতম একটি রোকন তথা তাকবীরে তাহরীমা ছেড়ে দিয়েছে।

“যে রুকু পেল, সে রাকাত পেল” শীর্ষক হাদীসটির উপর সাহাবীদের আমল।

ফকীহরা একমত যে ইমামকে যে ব্যক্তি রুকুতে পাবে, সে রাকাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রুকু পেল, সে রাকাত পেল।”[হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেন এবং শাইখ আলবানী ‘ইরওয়াউল গালীল’ (৪৯৬) বইয়ে এটিকে সহীহ বলে গণ্য করেন]

তিনি বলেন (পৃ. ২৬২): “একদল সাহাবী হাদীসটির উপর আমল করেছেন, যা এই হাদীসটিকে শক্তিশালী করে। তারা হলেন:

এক: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ। তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পায়নি, সে রাকাতটি পায়নি। …” এর সনদ সহীহ।

দুই: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর। তিনি বলেন: “আপনি যদি এসে দেখেন ইমাম রুকুতে আছেন, তাহলে ইমাম ওঠার আগে আপনার দুই হাত হাঁটুতে রাখুন, তাহলেই আপনি রাকাত পেয়ে গেলেন।” এটির সনদ সহীহ।

তিন: যাইদ ইবনু সাবিত। তিনি বলতেন: “ইমাম মাথা তোলার আগে যে ব্যক্তি (রুকু দিয়ে) রাকাত ধরেছে, সে রাকাত পেয়েছে।” এর সনদ সহীহ …”[সমাপ্ত] দেখুন: আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়াইতিয়্যাহ (২৩/১৩৩) এবং আল-মুগনী (১/২৯৮)।

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

আহলে ইলমগণ এ মাসআলায় দ্বিমত পোষণ করেছেন:

প্রথম মত হচ্ছে : এ রাকাত গণ্য হবে না। কারণ, সূরা আল-ফাতিহা পড়া ফরয ছিল যা সে পড়তে পারে নি। এ অভিমত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। ইমাম বুখারী নিজের লিখা ‘জুযউল কিরাআহ’ গ্রন্থে এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এটাকে তিনি তাদের প্রত্যেকের অভিমত হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা বলেন মুক্তাদির জন্য সূরা আল-ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। আউনুল মা‘বুদ গ্রন্থেও এরূপ এসেছে। ইবন খুযাইমাহ ও একদল শাফে‘ঈ আলেম থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে। শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’ গ্রন্থে এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তার সপক্ষে বিস্তর আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয় মত হচ্ছে : এ রাকাত গণ্য করা হবে। হাফেয ইবন আব্দুল বার এ অভিমত আলী, ইবন মাসউদ, যায়েদ ইবন সাবেত ও ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখদের থেকে বর্ণনা করেছেন। জমহুর ইমামদের থেকেও তিনি উক্ত অভিমত বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন: চার ইমাম, আওযা‘ঈ, সাওরী, ইসহাক ও আবু সাওর। একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকায় শাওকানী এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, আওনুল মা‘বুদের গ্রন্থকার স্বয়ং লিখকের বরাতে উক্ত পুস্তিকা সম্পর্কে বলেছেন। এ অভিমত আমার নিকট অধিক বিশুদ্ধ। সাহাবী আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস তার দলীল। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রাকাত কাযা করার নির্দেশ দেন নি, (অথচ তিনি রুকু অবস্থায় জমাতে শরীক হয়েছেন, যে জামা‘আতের ইমাম ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।) যদি তার ওপর রাকাত কাযা করা ওয়াজিব হত তাহলে অবশ্যই তিনি তার নির্দেশ করতেন। কারণ, প্রয়োজনের মুহূর্ত থেকে নির্দেশ বিলম্ব করা বৈধ নয়, আর হাদীসে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (زادك الله حرصاً ولا تعد) (আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন, কিন্তু পুনরায় এরূপ করো না [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩]) এর অর্থ হচ্ছে ‘কাতারে অংশ গ্রহণ না করে দ্বিতীয়বার এরূপ করে দূর থেকে সালাতে প্রবেশ করো না’। কারণ, মুসলিমের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ইমামকে যে হালতে পাবে সে হালতেই সালাতে অংশ গ্রহণ করবে।

জমহুর আলেমদের আরো দলীল হচ্ছে আবু দাউদ, ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকী কর্তৃক বর্ণিত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মারফু‘ হাদীস:.

إذا جئتم إلى الصلاة ونحن سجود فاسجدوا ولا تعدوها شيئاً ومن أدرك الركعة فقد أدرك الصلاة-

“যখন তোমরা সালাতের জন্য আস এবং আমরা সাজদাহয় থাকি, তোমরা সাজদাহ কর, তবে সেটাকে কিছু গণ্য কর না। আর যে ব্যক্তি রাকাত পেল সে সালাত পেল” ( আবূ দাঊদ হা/৮৯৩, দারাকুত্বনী হা/১৩১৪, মুসতাদরাক আল হাকিম হা/১০১২, ইরওয়া হা/৪৯৬, মিশকাত হা/১১৪৩, হাদীসের মান : হাসান)।

 হাদীসটি ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকীর বর্ণনায় এসেছে এভাবে:

»ومن أدرك ركعة من الصلاة فقد أدركها قبل أن يقيم الإمام صلبه«

“আর যে ইমামের পিঠ সোজা করার পূর্বে সালাতের রাকাত (রুকু) পেল সে তা (রাকাত) পেয়ে গেল”। [ইবন খুযাইমাহ: (খ. ৩), হাদীস নং ১৫৯৫]

এ হাদীস জমহুর আলেমদের স্পষ্ট দলীল। তা কয়েকটি কারণে:

এক. ‘সাজদাহ অবস্থায় অংশ গ্রহণ করো’ (ولا تعدوها شيئاً) এবং তা রাকাত হিসেবে গণ্য করো না। এ থেকে স্পষ্ট হয়, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রুকুকে রাকাত হিসেবে গণ্য করবে।

দুই. সাজদাহর সাথে রাকাত শব্দ উল্লেখ হলে তার অর্থ হয় রুকু। এরূপ অর্থ একাধিক হাদীসে এসেছে। তন্মধ্যে বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসটি হচ্ছে:

»رمقت الصلاة مع محمد صلى الله عليه وسلم، فوجدت قيامه فركعته فاعتداله بعد ركوعه فسجدته… «

“আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত পর্যবেক্ষণ করেছি, তাই আমি দেখতে পেয়েছি তার কিয়াম, অতঃপর তার রাকাত (রুকু) অতঃপর রুকুর পর তার স্থির দাঁড়ানো অতঃপর তার সাজদাহ… ”।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭১]

অনুরূপ কুসুফের সালাত সম্পর্কিত একাধিক হাদীস ও তার ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হয়, যা সাহাবীগণ করেছেন। সেখানেও ‘রাকাত’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ রুকু, যেমন তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুসুফের সালাত চার রাকাত (রুকু) ও চার সাজদাহয় পড়েছেন। এখানে চার ‘রাকাত’ অর্থ চার রুকু।

এখানে আরো প্রকাশ থাকে যে, জানাযার সালাতে কোন রাকাত নেই, কারণ জানাযার সালাতে কোন রুকু নেই। সুতরাং যে সালাতে যত রুকু থাকবে, সেই সালাত তত রাকাত হিসেবে গণ্য হবে।

তিন. ইবন খুযাইমাহ, দারাকুতনী ও বায়হাকীর বর্ণনা মোতাবেক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: (قبل أن يقيم صلبه) স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি ‘রাকাত’ দ্বারা রুকু বুঝিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর এ হাদীস দু’টি সনদে এসেছে, একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। হাদীস শাস্ত্রের স্বীকৃত নীতি অনুসারে এ জাতীয় দু’টি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যায়। অধিকন্তু এখানে উল্লেখ করা সাহাবীগণের আমল দ্বারাও হাদীসের অর্থ শক্তিশালী হয়। এতদসংক্রান্ত আলোচনা শেষে ইমাম নাওয়াবী ‘শারহুল মুহাযযাব’ (খ. ৪, পৃ. ২১৫) গ্রন্থে বলেন: “আমরা যে রাকাত পাওয়ার অর্থ রুকু পাওয়া করেছি এটাই ঠিক, ইমাম শাফে‘ঈ তা স্পষ্ট বলেছেন। এ কথাই বলেছেন অধিকাংশ বন্ধু ও আহলে ইলমগণ। এ অর্থের ওপর একাধিক হাদীস ও মনীষীদের ঐকমত্য রয়েছে। এ মাসআলায় একটি দুর্বল মত রয়েছে যে, (রুকু পেলে) রাকাত পাবে না। মতটি উদ্ধৃত করেছেন ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থের লিখক মুহাম্মাদ ইবন খুযাইমার বরাত দিয়ে, যিনি আমাদের ফকীহ মুহাদ্দিসদের অন্যতম। রাফে‘ঈ উক্ত মত ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থ ও আবু বকর সিগি থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘তাতিম্মাহ’ গ্রন্থের লিখক বলেন, এ মত বিশুদ্ধ নয়। কারণ, সমসাময়িক সবাই একমত যে, রুকু পেলে রাকাত পাবে। অতএব, তাদের পরবর্তী কারো ইখতিলাফ গ্রহণযোগ্য নয়”। ইমাম নাওয়াবীর কথা শেষ হল। হাফিয ইবন হাজার রহ. ‘তালখিসুল হাবির’ গ্রন্থে ইবন খুযাইমাহ থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তার দ্বারা প্রমাণ হয় ইবন খুযাইমাহও জমহুরের সাথে আছেন, আর তা হলো রুকু পেলে রাকাত পাবে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top