ভালো সত্য কথা বলা উচিৎ এবং মিথ্যা বানোয়াট কথা বলা থেকে বিরত থাকা অতিব জরুরী। তাছাড়া তর্ক সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলা উচিৎ যদিও আপনি সত্যবাদী তথা হক্বের উপর অবিচল রয়েছেন। যদিও মানুষ তর্ক প্রিয় জীব। এরা বিতর্ক বুঝে না। কেননা, তর্কবাগীশ মূর্খতার বশ্যতা স্বীকার করে, কিন্তু বিতর্ক মানুষকে জ্ঞানী করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَكَانَ الإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَىْءٍ جَدَلاً ‘মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়’ (ক্বাহাফ : ৫৪)।
রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে, তার দ্বারা সে আলেমদের সাথে বিতর্ক করবে ও মূর্খদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন (তিরমিযী হা/৩১৩৮, মিশকাত হা/২২৫)। আর প্রয়োজনে শারঈ বিষয়ে দলীলের ভিত্তিতে শালীনতা বজায় রেখে তর্ক-বিতর্ক করা যায়। আল্লাহ বলেন,‘তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।
জুম‘আ এবং অন্যান্য যেকোন খুৎবা বা বক্তব্য প্রদানের সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নাত, যা পরবর্তী যুগেও অনুসৃত হয়েছে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরের উপর বক্তব্যের জন্য দাঁড়াতেন, তখন লাঠির ওপর ভর দিতেন। অতঃপর আবূ বকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)ও একইভাবে লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন (মারাসীলু আবী দাঊদ, হা/৫৫)।
যেকোন খুৎবায় বা বক্তব্যের সময় হাতে লাঠি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত। হাকাম ইবনে হুযন আল-কুলফী বলেন, ‘আমি সপ্তম অথবা অষ্টম দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছি। আপনি আমাদের কল্যাণের জন্য দো‘আ করুন। তখন তিনি কিছু খেজুর দ্বারা আমাদের মেহমানদারী করতে আদেশ করলেন।
وَالشَّأْنُ إِذْ ذَاكَ دُونٌ فَأَقَمْنَا بِهَا أَيَّامًا شَهِدْنَا فِيهَا الْجُمُعَةَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَقَامَ مُتَوَكِّئًا عَلَى عَصًا أَوْ قَوْسٍ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ كَلِمَاتٍ خَفِيفَاتٍ طَيِّبَاتٍ مُبَارَكَاتٍ ثُمَّ قَالَ ” أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ لَنْ تُطِيقُوا أَوْ لَنْ تَفْعَلُوا كُلَّ مَا أُمِرْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ سَدِّدُوا وَأَبْشِرُوا ”
সে সময় (মুসলিমদের) অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। আমরা সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলাম। অবশেষে আমরা একদিন তাঁর সাথে জুম‘আর ছালাতে যোগ দিলাম। তিনি লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবায় দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘হে মানবমন্ডলী! আমি যা আদেশ করছি তোমরা তা পুরোপুরি আদায় করতে সক্ষম নও। কাজেই মধ্যম পথ অবলম্বন কর এবং মানুষকে সুসংবাদ দাও’ (আবুদাঊদ হা/১০৯৬, সনদ হাসান; ইরওয়া ৩/৭৮ পৃঃ, হা/৬১৬)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করতেন’ (মুসনাদে আব্দুর রাযযাক হা/৫২৪৬; ইরওয়াউল গালীল ৩/৭৮ পৃঃ, সনদ ছহীহ)।
ফাতিমা বিনতে ক্বায়েস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন সাধারণ আলোচনার সময় মসজিদে মিম্বরে বসে লাঠি দিয়ে মিম্বরে আঘাত করে বললেন, «هَذِه طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ هَذِهِ طَيْبَةُ» ‘এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্, এটা ত্বায়বাহ্ (মদীনাহ্)’। … (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৮২)।
এটি ছিল নবম হিজরীর ঘটনা। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিম্বরে বসা অবস্থাতেও তার হাতে লাঠি ছিল। এছাড়া ছাহাবীগণের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হিশাম বিন উরওয়া বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-কে খুৎবা দিতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫৬৫৯)।
কোন কোন বিদ্বান মিম্বর তৈরীর পর রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নেননি বলে মত প্রকাশ করেছেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৪১১ পৃঃ)। কিন্তু তার পক্ষে কোন দলীল নেই।
উপরোক্ত আলোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শুধু জুম‘আ নয়, বরং যেকোন খুৎবা বা বক্তব্য দেওয়ার সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নাত। উল্লেখ্য যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসুস্থ থাকার কারণে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছিলেন’ বলে সমাজে প্রচলিত কথাটি ভিত্তিহীন।