সর্বোত্তম আমল হ’ল সালাত

হিজরতের পূর্বে মি’রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এর পূর্বে দু’ ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের পূর্বে অর্থাৎ- ফজরের সালাত। আর সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ- ’আসরের সালাত। আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ’’সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করো’’- (সূরাহ্ আল গাফির/মু’মিন ৪০: ৫৫)।

সর্বোত্তম আমল সালাত : মানুষ সালাত-সিয়াম পালন করার সাথে সাথে যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বাঁচতে পারে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সগীরাহ্ গুনাহগুলো সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিবেন।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ “‏ يَا أَبَا ذَرٍّ إِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ يُمِيتُونَ الصَّلاَةَ فَصَلِّ الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ صَلَّيْتَ لِوَقْتِهَا كَانَتْ لَكَ نَافِلَةً وَإِلاَّ كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ صَلاَتَكَ ‏”‏ ‏.‏ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি, জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পাছে তিনি বিরক্ত হন, এ ভেবে আমি অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত রইলাম। (মুসলিম হা/৮৫)

আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‏ “‏ لَعَلَّكُمْ سَتُدْرِكُونَ أَقْوَامًا يُصَلُّونَ الصَّلاَةَ لِغَيْرِ وَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتُمُوهُمْ فَصَلُّوا الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا وَصَلُّوا مَعَهُمْ وَاجْعَلُوهَا سُبْحَةً ‏”‏ ‏.‏ হয়ত তোমরা এমন লোকের সাক্ষাত পাবে যারা অসময়ে সালাত আদায় করবে। যদি তোমরা তাদের পাও, তাহলে সময়মত সালাত আদায় করবে এবং তাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং তা নফল ধরে নেবে। (নাসঈ হা/১২৫৫)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে পবিত্রতা লাভের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ যেমনভাবে শারীরিকভাবে অপবিত্র হয় তেমনভাবে পাপের কারণে হৃদয় ও মন পংকিল হয়ে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে উক্ত পাপের মোচনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত পাপ দ্বারা শুধুমাত্র সগীরাহ্ গুনাহ উদ্দেশ্য। কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে মুক্ত হতে তাওবাহ্ করা আবশ্যক।

হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৫)

মানুষ সালাত-সিয়াম পালন করার সাথে সাথে যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বাঁচতে পারে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সগীরাহ্ গুনাহগুলো সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিবেন।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্ হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মুসলিম হা/২৩৩; মিশকাত হা/৫৬৪) ইমাম নাবাবী বলছেন যে, উক্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে এই যে, সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা হয় এবং কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের জন্য তাওবাহ্ শর্ত।

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, সে সময় তুমি কী করবে যখন তোমাদের ওপর শাসকবৃন্দ এমন হবে, যারা সালাতের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা তা সঠিক সময় হতে পিছিয়ে দিবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কী নির্দেশ দেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময়ে তুমি তোমার সালাতকে সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে পাও, আবার আদায় করবে। আর এ সালাত তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (মুসলিম হা/ ৬৪৮, মিশকাত হা/৬০০)

অন্যত্র বলেন, ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ আমার পর শীঘ্রই তোমাদের ওপর এমন সব শাসক নিযুক্ত হবে যাদেরকে নানা কাজ ওয়াক্তমত সালাত আদায়ে বিরত রাখবে, এমনকি তার ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব (সে সময়) তোমরা তোমাদের সালাত ওয়াক্তমত আদায় করতে থাকবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তারপর আমি কি তাদের সাথে এ সালাত আবার আদায় করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। (আবূ দাঊদ হা/৪৩৩, মিশকাত হা/৬২১)

ব্যাখ্যা: যদি তুমি ঐ শাসকের সাথে সালাত আদায় করো তাহলে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করার সাওয়াব পেলে না আর যদি তুমি তার বিরোধিতা করো তাহলে শাসকের রোষাণলে পড়বে। এমতাবস্থায় করণীয় সম্পর্কে এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, জনগণের অপছন্দে তাদের ওপর ঐসব শাসকদের চাপিয়ে দেয়া হবে। এ হাদীস মূলত একটি ভবিষ্যতের অদৃশ্যের খবর দিচ্ছে। ‘উমাইয়্যাহ্ শাসনামলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ শাসকগণ সালাতকে মেরে ফেলবে অর্থাৎ- সালাতকে এর সময় থেকে পিছিয়ে দিবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর মতে, এখানে সালাত পিছিয়ে দেয়া মানে সালাতকে এর নির্ধারিত ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয়া। ঐসব শাসক সালাতকে এর সময়সীমার সম্পূর্ণ বাইরে পিছিয়ে দিতো না। এখানে সালাত পিছানো মানে সালাতকে পূর্ণ সময়সীমা থেকে পিছিয়ে দেয়া। এ কথা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত যে, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ও তার আমীর আল্ ওয়ালীদ এবং অন্য অনেকে সালাতকে তার নির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর আবূ যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি ঐ সময় পাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ করেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, তুমি নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করবে এবং তাদের সাথে সালাত পেলে তাদের সাথেও সালাত আদায় করবে। তাহলে যে সালাত শাসকের সাথে পড়বে সে সালাত তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, সালাতকে এর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হবে। আর শাসকগণ যখন সালাতকে এর প্রথম ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেয় তখন তাদের অনুসরণ বর্জন করতে হবে। এরূপ এজন্য করবে যে, যাতে মতানৈক্য ও ফিতনাহ্ (ফিতনা) তৈরি না হয়।

প্রত্যেক সালাতের নির্দিষ্ট সময়ে তা আদায় করা এবং অত্যাচারী শাসক কর্তৃক সালাতকে বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব (আবশ্যক)। আরো প্রমাণ হয় যে, ঐ সব শাসকদের সাথে পুনরায় সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। কারণ, তাদের সাথে সালাত আদায় না করা মুসলিম জামা‘আতে অনৈক্য ও বিভক্তি সৃষ্টি করবে। তবে দ্বিতীয়বার সালাত আদায় করা নফল মাত্র। এ হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণ হয় যে, ফাসিক্ব ব্যক্তির ইমামতি বা নেতৃত্ব বৈধ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top