বিপদ বান্দার উপর দুভাবে আসে। এক. দুষ্ট লোকের জন্য আযাব হিসেবে দ্বীনে ফেরানোর জন্য। দুই. সৎ ব্যক্তিকে ঈমানের দৃঢ়তার পরীক্ষা স্বরূপ। আর উভয়ের জন্যই পাপ মোচন হয়ে থাকে। প্রশ্ন হ’তে পারে যে, পৃথিবীতে নবী-রাসূল ও সৎ লোকদের উপর যেসব বালা-মুছীবত আসে, সেগুলি কি আল্লাহর গযব হিসাবে গণ্য হবে? যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়, أىُّ الناسِ أشدُّ بلاءً ؟ قال: الأنبياءُ ثمَّ الأمثلُ فالأمثلُ، يُبتلَى الرَّجلُ على حسب دينيه فإن كانَ صُلباً في دينيه اشتدَّ بلاءُه، وإن كانَ فى دينيه رِقَّةٌ هُوِّنَ عليه، فمازال كذلك حتى يمشىَ على الأرضِ ما لَهُ ذنبٌ رواه الترمذي وفى رواية ابن ماجه: وماعليه من خطيئة-
‘মানব সমাজে সবচেয়ে বেশী বিপদগ্রস্ত কারা? জবাবে তিনি বলেন, নবীগণ। অতঃপর তাঁদের নিকটবর্তী নেককার ব্যক্তিগণ। অতঃপর তাদের নিকটবর্তীগণ। মানুষ তার দ্বীন অনুযায়ী বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শক্ত হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ কঠিন হয়। আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শিথিল হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ সহজ হয়। এভাবেই চলতে থাকে। এক সময় সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে, তার কোন গোনাহ থাকে না’।[তিরমিযী, ইবনু মাজাহ দারেমী; মিশকাত হা/১৫৬২]
সৎ লোকের বিপদাপদ দেওয়ার কারণ তাদের গোনাহ নয়, বরং উদ্দেশ্য হ’ল তাদের পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে আল্লাহ কঠিন পরীক্ষা সমূহ নিয়েছেন। অবশেষে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাঁকে আল্লাহ বিশ্বনেতার মর্যাদায় ভূষিত করেন। ইহুদী-নাছারা-মুসলমান সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘পিতা’ হিসাবে তিনি সারা পৃথিবীতে বরিত ও নন্দিত। অথচ তাঁকে নির্যাতনকারী রাজা নমরূদ সর্বত্র ধিকৃত ও নিন্দিত। এমনকি নমরূদ বা ফেরাঊন বা আবু জাহলের নামে সন্তানের নাম রাখতেও কোন পিতা-মাতা রাযী হবেন কি-না সন্দেহ। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুমিনগণের উপরে মুছীবত প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। এর দ্বারা তাদের গোনাহের কাফফারা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ ولا وَصَبٍ ولا هَمٍّ ولا حَزَنٍ ولا أذًى ولا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إلا كفَّرَ اللهُ بها من خَطَايَاهُ- ‘মুসলিম বান্দার কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ছবর করে ও আল্লাহর উপরে খুশী থাকে), তাহ’লে তার কারণে আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন’।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, রিয়ায হা/৩৭] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, مَن يُّرِدِ اللهُ به خَيْرًا يُصِبْ منه- ‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’। (বুখারী, রিয়ায হা/৩৯)। অন্য হাদীছে তিনি বলেন, لا يزال البلاء بالمؤمن أو المؤمنة فى نفسه و ماله و ولده حةى يلقىَ الله ةعالى وما عليه من خطيئة- ‘মুমিন পুরুষ বা নারীর জীবন, সন্তান ও মালের উপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার (আমলনামায়) কোন পাপ থাকে না’।[তিরমিযী, মালেক, মিশকাত হা/১৫৬৭] অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফলে মুমিন বান্দা পাপমুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যান এবং আল্লাহর কাছে মহা পুরষ্কার লাভে ধন্য হন।
বিপদ আপদে করণীয় :
মানুষকে আল্লাহ্ তা’আলা বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। ভাল-মন্দ, ধনী-গরিব, দুঃখকষ্ট, সার্বিক অবস্থায় ফেলে তিনি তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এসমস্ত অবস্থায় বিশ্বাসে সন্দেহ হলে যদি সে তা তাড়িয়ে দিয়ে ঈমানের উপর স্থির থাকতে পারে তবেই সে সফলকাম। অনুরূপভাবে তার প্রবৃত্তির পাগলা ঘোড়া তাকে যা ইচ্ছে তা করতে বললে সে যদি তা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে তবেই সে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও পাশ করেছে বলে বিবেচিত হবে। কিয়ামতের মাঠে বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির আমলনামা দেখে বিলাসী জীবন যাপনকারী ব্যক্তি আফসোস করতে থাকবে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, «يَوَدُّ أَهْلُ الْعَافِيَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ الْبَلَاءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا بِالْمَقَارِيضِ» . ‘কিয়ামতের দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সাওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত ‘ (তিরমিযী হা/২৪০২, মিশকাত হা/১৫৭০)।
(১) যথাসাধ্য ধৈর্যধারন করা :
হতাশা, অস্থিরতা বা উৎকণ্ঠা বিপদ দূর করেনা, বিপদের কষ্ট কমায় না বা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথ দেখায় না। সর্বোপরি হতাশা বা ধৈর্যহীনতা স্বয়ং একটি কঠিন বিপদ যা মানুষকে আরো অনেক কঠিন বিপদের মধ্যে নিপতিত করে। পক্ষান্তরে ধৈর্য বিপদ দূর না করলেও তা বিপদ নিয়ন্ত্রণ করে, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য শান্তভাবে চিন্তা করার সুযোগ দেয় এবং অস্থিরতা জনিত অন্যান্য বিপদের পথরোধ করে। সর্বোপরি বিপদে কষ্টে ধৈর্যের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর নিকট মহান মর্যাদা, সাওয়াব, জাগতিক বরকত ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্য পরীক্ষা করব। আর আপনি শুভ সংবাদ প্রদান করুন ধৈর্যশীলদেরকে, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তণকারী।” (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৬)। কোন জনপদে আল্লাহর গযব নাযিল হ’লে প্রথম কর্তব্য হ’ল সবর করা এবং এটাকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধারণ করা।
যারা দুনিয়াতে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে সবর করে এবং পাপ কাজ থেকে সংযম অবলম্বন করে, আল্লাহর কাছে দাবী ব্যতিরেকেই সবরকারীরা তাদের সওয়াব পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰهِ وَاسِعَۃٌ ؕ اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ‘বল, ‘হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই’ (যুমার ৩৯/১০)।’
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে তাদের ক্লেশ কষ্টর জন্য পাপ ক্ষমা করা হয়। আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ. মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী হা/৫৬৪১, মুসলিম হা/২৫৭৩)।
(২) বিপদ থেকে উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করা:
আল্লাহর পরীক্ষায় ঈমান সুদৃঢ় হয়। ঈমান আনয়নের পরে ঈমানের দৃঢ়তার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। এমনকি প্রত্যেক নবী-রাসূল অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছেন যুগে যুগে। বলা বাহুল্য, যার ঈমানের যতবেশী তীক্ষ্ণতা, তার ততবেশী পরীক্ষা। অধিকাংশ দুর্বল মুমিন বান্দা জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এটাকে আযাব মনে করে বিপথগামী হয়। সুতরাং আল্লাহ পরীক্ষা ব্যতীত কাউকেই জান্নাতে ঢুকাবেন না। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে?’(আনকাবুত ২৯/২)? অপর দিকে রাসূল (সা.) জান্নাতকে দুঃখ-কষ্টের এবং জাহান্নামকে প্রবৃত্তির চাদরে আবৃত দেখেন।
একমাত্র বুদ্ধিমান জ্ঞানীরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বিপদ দেখে শিক্ষা বা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। আল্লাহ বলেন, فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الأَبْصَارِ ‘অতএব হে চক্ষষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর’ (হাশর ৫৯/২)। আর রাসূল (ছা.) বলেন, যে ব্যক্তি চাওয়া হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন, আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেয়া হয়নি (বুখারী হা/১৪৬৯)।
(৩) নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা:
যখন কোন ব্যক্তির গুনাহ করবে অতঃপর তাওবাহ্ করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে তখন সে যা ইচ্ছা তা যেন করে। কেননা যখনই সে গুনাহ করবে তখন তার তাওবাহ্ ও ক্ষমা প্রার্থনা তার ঐ গুনাহ মোচনের কারণ হবে, তখন গুনাহ তার ক্ষতি সাধন করবে না। এই জন্য ইখলাছপূর্ণ অঙ্গিকারসহ তওবাহকে আল্লাহ পসন্দ করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন এক ব্যক্তি গোনাহ করার পর বললঃ হে আল্লাহ! আমি গোনাহ করেছি সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেনঃ আমার বান্দা গোনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গোনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গোনাহ করে আবারও বললঃ হে রব! আমি গোনাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ আমার বান্দা গোনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গোনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গোনাহ করে আবারও বললঃ হে রব! আমি গোনাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেনঃ আমার বান্দা গোনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গোনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সে যাই করুক না কেন। [বুখারী হা/৭৫০৭, মুসলিম হা/২৭৫৮]
আল্লাহ বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর তোমরা সকলে (তওবা করে) ফিরে এসো আল্লাহর দিকে হে বিশ্বাসীগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (নূর ২৪/৩১)। তিনি বলেন, قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। এই সময় যাবতীয় পাপচিন্তা থেকেও তওবা করা উচিত। কেননা আল্লাহ গোপন পাপচিন্তারও হিসাব নিবেন’ (বাক্বারাহ ২/২৮৪)। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ মুমিন বান্দাকে ডেকে তার গোপন পাপগুলি সব একে একে স্মরণ করিয়ে দিবেন। কিন্তু তা সকলের সামনে প্রকাশ করবেন না। তাকে মাফ করে দিবেন।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫১] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিন বান্দা যদি কোন পাপ করার সংকল্প করে এবং তা বাস্তবে করে, তাহ’লে তার একটি পাপ হয়। কিন্তু যদি সেটা বাস্তবায়ন না করে, তাহ’লে আল্লাহ নিজের কাছে তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী লেখেন’।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৭৪]
(৪) বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিদের প্রতি নছীহত :
ঈমান ও তাকওয়ার পথে কষ্ট অনিবার্য এবং প্রবৃত্তি ও আত্মার চাহিদাকেও কুরবানী করা অবধারিত। যার জন্য ধৈর্যের দরকার। এই জন্য ধৈর্যশীলদের মাহাত্ম্যও বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান এমন অপরিসীম ও অগণিত রূপে দেওয়া হবে যা কোন ওজন বা হিসাবের যন্ত্র দ্বারা ওজন বা হিসাব করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তাদের পুরস্কার অপরিমিত হবে। কারণ যার হিসাব করা যায়, তার একটি সীমা থাকে আর যার কোন সীমা ও শেষ নেই,তা গণনা করা অসম্ভব। এটি ধৈর্যের এমন বৃহৎ মাহাত্ম্য যা অর্জন করার চেষ্টা প্রত্যেক মুসলিমকে করা উচিত। কারণ অধৈর্য হয়ে হা-হুতাশ, ক্ষোভ প্রকাশ বা কান্না-কাটি করে কষ্ট ও বিপদ দূর করা যায় না, যে কল্যাণ ও বাঞ্ছিত জিনিস লাভে বঞ্চনা আসে, তা অর্জন করা যায় না এবং যে অপছন্দনীয় অবস্থা এসে যায়, তা দূর করা সম্ভব হয় না। অতএব মানুষের উচিত, সবর করে সেই বৃহৎ সওয়াবের অধিকারী হওয়া, যা আল্লাহ তাআলা সবরকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল (সেজদা : ২৪)। অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্যে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিন্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না (দাহর : ২৪)। অতএব, আপনি সবর করুন। আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে (রূম : ৬০)।
(৫) আমার উপলব্ধি :
বর্তমানে আমি নিজেই এমন কিছু মানুষের সাথে মিশেছি এবং তাদের দেখেছি। এমন অবস্থা দেখে তাদেরকে আমি বলেছিলাম।
(১) আল্লাহ আপনার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। আপনি কত বড় মুমিন হয়েছেন!
(২) পরীক্ষা এ কারণে হতে পারে যে, আপনি ঈমানের উপর অবিচল থাকবেন না আবারও ফিরে যাবেন যে পথ থেকে এসেছেন সেই পথে।
(৩) আল্লাহ আপনার ধন-সম্পদ থেকে হারামকে সরিয়ে দিয়ে পবিত্র করতে চাইছেন। এমনকি স্বাস্থ্যহানী ঘটিয়ে আইয়ূব (আঃ)-এর মত পরীক্ষা নিচ্ছেন।
(৪) মানসিক দুঃখ কষ্ট দ্বারা আল্লাহ আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন এবং বিগত পাপের কাফফারা উঠে যাচ্ছে। কেননা, দুঃখ-কষ্ট মানুষের পাপ মোচন করে। আর কষ্টের পরেই সুখ রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তার বান্দাকে দুঃখ-কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে কল্যাণ কামনা করেন।
(৫) মানুষ যখন দ্বীনে ফিরে তখন অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন তার থেকে দূরে সরে যায়। কেননা, তারা তাদের প্রত্যাশা থেকে বিমূখ হয়। এমনকি তারা নানা প্রকার মানসিক কষ্ট দিতে লজ্জাবোধ করে না
.
পরিশেষে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর পরীক্ষা সহজ করে দেন এবং ধৈর্যের সাথে সফল হওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।

























