আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হি.) খোরাসান তথা বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের মার্ভ শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই শহরেই তিনি বেড়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন একাধারে মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, আলেম, মুজতাহিদ, কবি, সাহিত্যিক, দানশীল এবং একজন সাহসী বীর মুজাহিদ। তিনি ‘আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীছ’ উপাধিতে ভূষিত হন। আবূ উসামা (রহঃ) বলেন,ما رأيت رجلًا أطلب للعلم من ابن المبارك، وهو في المحدِّثين مثلُ أمير المؤمنين في الناس، ‘আমি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের চেয়ে অধিক ইলম অন্বেষী ব্যক্তি আর কাউকে দেখিনি। মানুষের মাঝে আমীরুল মুমিনীনের মর্যাদা যেমন, মুহাদ্দিছগণের মাঝে তিনি তেমন’।[1] ইবনু হিববান বলেন, كَانَ بن الْمُبَارك رَحمَه الله فِيهِ خِصَال مجتمعة لم يجْتَمع فِي أحد من أهل الْعلم فِي زَمَانه فِي الدُّنْيَا كله، ‘ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর মাঝে এমন সব কল্যাণকর বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটেছিল, তৎকালীন যুগে সারা দুনিয়ার কোন আলেমের মাঝে যার সমাবেশ ঘটেনি’।[2]
নু‘আইম ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) বলেন,مَا رَأَيْتُ أَعقَلَ مِنِ ابْنِ الـمُبَارَكِ، وَلاَ أَكْثَرَ اجْتِهَاداً فِي العِبَادَةِ، ‘আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের মত অধিক জ্ঞানী এবং তার মত ইবাদতে অধিক পরিশ্রমী আমি আর কাউকে দেখিনি’।[3]
আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ আল-জাহযমী (রহঃ) বলেন, একবার ইমাম আওযাঈ আমাকে বললেন, তুমি কি ইবনুল মুবারককে দেখেছ? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, لَوْ رَأْيْتَهُ لَقَرَّتْ عَيْنُكَ ‘যদি তুমি তাকে দেখতে, তাহ’লে তোমার চোখ শীতল হয়ে যেত’।[4]
বিশ্ব নন্দিত এই পরহেযগার মনীষীর জীবনের পরতে পরতে আমাদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশের খোরাক রয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা তার জীবনী থেকে কতিপয় শিক্ষণীয় ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
(১) ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর পিতা মুবারক ইবনু ওয়াযেহ পরহেযগার ও যাহেদ ব্যক্তি ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ একটি বাগানের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ছিলেন। একদিন বাগানের মালিক এসে তাকে বললেন, আমাকে কয়েকটা মিষ্টি আনার এনে দাও। তিনি বাগানে গিয়ে বেছে বেছে কয়েকটি গাছ থেকে আনার পেড়ে আনলেন। কিন্তু আনারগুলো ভেঙ্গে দেখা গেল সেগুলো টক। মালিক রেগে গিয়ে বললেন, আমি তোমার কাছে মিষ্টি আনার চেয়েছি, আর তুমি আমাকে টক আনার নিয়ে এসে দিলে? যাও! মিষ্টিগুলো পেড়ে নিয়ে আস। এবার মুবারক আরো অন্যান্য গাছ থেকে ডালিম আনলেন, কিন্তু সেগুলোও টক ছিল। এবার মালিক আরো ক্রুব্ধ হ’লেন। এভাবে তিন বার ফল পেড়ে আনার পরে দেখা গেল সেগুলোও টক। মালিক ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন, কোন ফল টক আর কোন ফল মিষ্টি এটা কি তুমি জান না। তিনি না সূচক উত্তর দিলেন। মালিক বললেন, তুমি বাগান দেখা-শোন কর, অথচ ফল দেখে চিনতে পার না, এটা কেমন কথা। তিনি বললেন, আমি তো বাগনের ফল খেয়ে দেখিনি যে, টক-মিষ্টি বুঝতে পারব। মালিক বললেন, খাওনি কেন? মবারক বললেন, আপনি তো আমাকে খাওয়ার অনুমতি দেননি। মালিক যেন তখন সম্বিৎ ফিরে পেলেন এবং মনে মনে ভাবলেন আসলেই তো। মালির সততা যারপর নাই তাকে মুগ্ধ করল। অতঃপর তিনি মুবারক বিন ওয়াযেহের সাথে নিজ কন্যার বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইবনু খাল্লিকান বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, এই দম্পতির ঔরসে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেন।[5]
(২) ইবনুল মুবারক (রহঃ) ছিলেন প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তার সহপাঠী ও বন্ধু ছাখর (রহঃ) বলেন, আমি আর ইবনুল মুবারক ছোটবেলায় একই মক্তবে পড়তাম। একদিন আমরা এক মজলিসে অংশগ্রহণ করলাম। সেখানে এক ব্যক্তি বেশ লম্বা আলোচনা করলেন। লোকটি যখন আলোচনা শেষ করলেন, তখন ইবনুল মুবারক আমাকে বললেন, আমি এই আলোচনা মুখস্থ করে ফেলেছি। এলাকার এক লোক পাশ থেকে এই কথাটি শুনে ইবনুল মুবারককে বললেন, ‘দেখি! আলোচনাটা আমাদেরকে শুনাও!’। অতঃপর ইবনুল মুবারক তাদের সবাইকে পুরো আলোচনাটা শুনিয়ে দিলেন’।[6]
(৩) আবদাহ বিন সুলায়মান বলেন, আমরা একবার আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের সাথে রোমানদের বিরুদ্ধে এক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা শত্রুপক্ষের মুখোমুখি হ’লাম। রোমানদের বাহিনী থেকে এক লোক বেরিয়ে এসে মল্লযুদ্ধের আহবান জানাল। আমাদের পক্ষ থেকে এক মুজাহিদ তার আহবানে সাড়া দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধ শেষে আমাদের মুজাহিদ রোমান যোদ্ধাকে হত্যা করল। রোমানদের থেকে আরেকজন বেরিয়ে আসল, এবার সে তাকেও হত্যা করল। এবার সে নিজেই মল্লযুদ্ধের আহবান জানাল। তার আহবানে সাড়া দিয়ে একজন সৈনিক বেরিয়ে এল, ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধ শেষে তাকেও সে হত্যা করল। আমাদের মুঁজাহিদ ভাইটির বীরত্ব দেখে সবাই তার চারপাশে জড়ো হ’তে থাকল, আমিও সেখানে ছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, মুজাহিদ ভাইটি জামার আস্তিনে নিজের চেহারা ঢেকে রেখেছে। আমি তার আস্তিনের এক প্রান্ত ধরে টান দিতেই অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম এ আর কেউ নয়, তিনি আমাদের আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক।[7] ইমাম যাহাবীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনুল মুবারক আবদাহ বিন সুলায়মানকে কসম খাইয়েছিলেন যেন তার পরিচয় গোপন রাখা হয়।..
(৪) মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে শাক্বীক্ব (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘হজ্জের সময় ঘনিয়ে এলে মার্ভের অধিবাসীরা ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর নিকটে এসে বলতেন, আমরা আপনার সাথে হজ্জে যাব। তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, তোমরা আমার নিকট খরচের টাকা জমা দাও। তারা তাদের টাকা-পয়সা তার কাছে জমা রাখত। এরপর তিনি সেগুলো নিয়ে একটি বাক্সে রেখে তালাবদ্ধ করে রাখতেন। আর তাদের জিনিসপত্র বহন করার জন্য লোকও ভাড়া করতেন। অতঃপর তারা মার্ভ থেকে বাগদাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতেন। পথিমধ্যে তাদের যত কিছুর প্রয়োজন হ’ত, তিনি তা মিটাতেন এবং তাদের জন্য সর্বোত্তম খাদ্য ও মিষ্টান্নসহ সবকিছু কিনতেন। তারপর উৎকৃষ্ট পোষাক ও পরিপূর্ণ মানবিক গুণাবলী নিয়ে তারা মদীনার দিকে রওনা করতেন। রাসূলের শহর মদীনায় পৌঁছে তিনি প্রত্যেক সাথীকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমাদের পরিবার-পরিজন তাদের জন্য মদীনা থেকে কি জিনিস নিতে বলেছে? তারা বলত, অমুক অমুক জিনিস নিতে বলেছে। এরপর তিনি তাদের জন্য উল্লেখিত বস্ত্তসমূহ কিনে নিতেন। তারপর তাদেরকে নিয়ে মক্কার দিকে যাত্রা করতেন। হজ্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি প্রত্যেক সঙ্গীকে আবার বলতেন, তোমাদের পরিবার তাদের জন্য মক্কা থেকে কি কি বস্ত্ত কিনতে বলেছে? তারা বলত, অমুক অমুক জিনিস কিনতে বলেছে। তিনি তাদের জন্য উল্লেখিত জিনিসপত্র কিনে নিতেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে মক্কা থেকে বের হ’তেন এবং মার্ভ শহরে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তাদের জন্য অনবরত খরচ করতেই থাকতেন। তারপর এলাকায় এসে সঙ্গী-সাথীদের ঘর-বাড়ী ও দরজাগুলো মোজাইক করে দিতেন। আর তিন দিন পর তাদের জন্য খানাপিনার আয়োজন করতেন এবং তাদের সবাইকে জামা-কাপড় উপহার দিতেন। খাওয়া-দাওয়ার পর তারা খুশী হ’লে তাদের টাকা-পয়সা যে বাক্সে রাখা ছিল, সেই বাক্সটা নিয়ে আসতেন এবং সেটা খুলতেন। তারপর প্রত্যেককে তাদের টাকার থলে ফিরিয়ে দিতেন। আর প্রত্যেকের থলের উপর মালিকের নাম লেখা থাকত’।[8]
(৫) হাসান বিন আরাফাহ বলেন, একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক আমাকে বললেন, ‘আমি সিরিয়ায় এক লোকের কাছ থেকে একটা কলম ধার নিয়েছিলাম। কলমটা ফিরিয়ে দেওয়ার নিয়তও আমার ছিল। কিন্তু মার্ভ (তুর্কমেনিস্তান) পৌঁছে আমার খেয়াল হ’ল কলমটা ফেরত দেওয়া হয়নি। কলমটা মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য আমি আবার সিরিয়ার পথ ধরলাম’।[9]
(৬) সালামাহ ইবনু সুলাইমান (রহঃ) বলেন, একবার এক ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর কাছে তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য আরয করল। তিনি লোকটির কাছে একটি চিঠি লিখে দিয়ে তার কোষাধ্যক্ষের নিকটে পাঠালেন। কোষাধ্যক্ষ চিঠি হাতে পেয়ে লোকটিকে বলল, আপনার কী পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করা প্রয়োজন? লোকটি বলল, সাত শত দিরহাম। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক চিঠিতে লোকটাকে সাত হাযার দিরহাম দিয়ে দিতে বলেছেন। তাই বিষয়টি যাচাই করার জন্য কোষাধ্যক্ষ ইবনুল মুবারাকের কাছে পত্র দিয়ে বললেন, লোকটিকে এত টাকা দিয়ে দিলে আপনার ফান্ড শেষ হয়ে যাবে। প্রত্যুত্তরে ইবনুল মুবারক বললেন, যদি ফান্ড শেষ হয়ে যায়, তা’হলে মনে রেখ! বয়সও একদিন শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং আমি তাকে যত টাকা দিতে বলেছি, তাকে ততটুকুই দিয়ে দাও।[10]
(৭) শাক্বীফ ইবনে ইবরাহী বলখী (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ)-কে বললাম, ‘আপনি তো আমাদের সাথেই ছালাত আদায় করেন, কিন্তু আমাদের সাথে বসেন না কেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে ছাহাবী ও তাবেঈদের সাথে বসে কথা বলি’। আমরা বললাম, ‘ছাহাবী-তাবেঈদের আপনি কোথায় পেলেন’। তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে ইলম চর্চায় মনোনিবেশ করি। তখন তাদের কথা ও কর্মের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তোমাদের সাথে বসে আমি কী করবো? তোমরা তো বসেই মানুষের দোষ চর্চা করা শুরু করো’।[11] নাঈম ইবনে হাম্মাদ বলেন, ইবনুল মুবারক (রহঃ) অধিকাংশ সময় নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন। তাকে বলা হ’ল, আপনি সবসময় বাড়িতে বসে থাকেন, এতে কি একাকীত্ব অনুভব করেন না? জবাবে তিনি বললেন, আমি তো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে থাকি, এককীত্ব অনুভব করব কীভাবে?[12]
(৮) আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) খুব বিনয়ের সাথে মানুষকে আদব শিক্ষা দিতেন এবং ভুল সংশোধন করে দিতেন। মুহাম্মাদ ইবনে হুমাইদ (রহঃ) বলেন, একবার এক লোক ইবনুল মুবারাকের সামনে হাঁচি দিল। কিন্তু ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলল না। তখন ইবনুল মুবারাক লোকটিকে বলল, বলুন তো! হাঁচি দিলে কী বলতে হয়? লোকটি বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। তখন তিনি বললেন, ইয়ারহামুকাল্লাহ। ইবনু হুমাইদ বলেন, তার এই আদব শিক্ষা দেওয়ার সুন্দর পদ্ধতি দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।[13] মূলত তিনি লোকটিকে নিমেণর হাদীছটি শিক্ষা দিয়েছেন। যেখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: الحَمْدُ لِلَّهِ، وَلْيَقُلْ لَهُ أَخُوهُ أَوْ صَاحِبُهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَإِذَا قَالَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَلْيَقُلْ: يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ‘যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে। আর তার মুসলিম ভাই অথবা বন্ধু হাঁচিদাতার জবাবে বলবে, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। যখন শ্রোতা ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে, তখন হাঁচি দাতা বলবে, ইয়াহদীকুমুল্লাহ ওয়া ইয়ূছ্লিহ বা-লাকুম (আল্লাহ আপনাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আপনাদের মনের অবস্থা সংশোধন করুন)’।[14]
(৯) আবূ খুযাইমাহ আল-আবেদ (রহঃ) বলেন, একবার আমি ইবনুল মুবারাক (রহঃ)-কে দেখতে গেলাম। তখন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন এবং অস্থির হয়ে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছিলেন। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! এমন অস্থির হচ্ছেন কেন? ধৈর্য ধারণ করুন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর গ্রেপ্তারে ধৈর্য ধারণ করার সাধ্য কার আছে? অথচ তিনি বলেছেন, إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ ‘নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, বড়ই কঠিন’ (হূদ ১১/১০২)।[15]
(১০) পারিবারিকভাবে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানা নূহ ছিলেন মার্ভের সেরা ধনীদের একজন। সেই সূত্রে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইবনুল মুবারক। তাঁর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা ছিল। তবে অন্য পাঁচজন ব্যবসায়ী থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ)-কে একবার বললেন, ‘আচ্ছা! আপনি তো আমাদেরকে দুনিয়াবিমুখতা, অল্পতুষ্টি এবং বেশী পরিমাণে ইবাদত করার নির্দেশ দেন। অথচ আমরা দেখি, আপনি খোরাসান থেকে হারামে (মক্কা-মদীনা) পণ্য আমদানী করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। এটা কেন করেন? তখন ইবনুল মুবারাক বললেন, ‘হে আবু আলী! আমি এটা করি আমার সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষা ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য। আর এর মাধ্যমে আমি আমার প্রভুর আনুগত্যের সামর্থ্য অর্জন করি। এটা (ব্যবসা) ছাড়া আল্লাহর অধিকার দ্রুত আদায় করা সম্ভব নয়’। ফুযাইল বললেন, ‘হে ইবনুল মুবারক! আপনার ব্যবসায়িক সাফল্য কতই না উত্তম’![16]
(১১) আশ‘আছ ইবনু শুবাহ আল-মাছীছী (রহঃ) বলেন, আমীরুল মুমিনীন খলীফা হারূনুর রশীদ একবার বর্তমান সিরিয়ার রাক্কা শহরে আগমন করেন। খলীফা তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই শহরের একটি শাহী প্রসাদে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় জানা গেল যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) রাক্কা শহরে এসেছেন। তখন ইবনুল মুবারকের শুভাগমনে মানুষ দলে দলে তার পিছনে জড়ো হ’তে থাকল। ফলে তাদের জুতার দলনে আকাশে ধূলা-বালু উড়তে লাগল। খলীফার স্ত্রী প্রসাদের উপর থেকে এটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? তখন লোকেরা বলল, খোরাসান থেকে একজন আলেম রাক্কা শহরে এসেছেন, তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক’ নামে পরিচিত। তখন খলীফার স্ত্রী বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! হারূণুর রশীদ যে রাজত্ব করেন, সেটা প্রকৃত বাদশাহী নয়; ইবনুল মুবারাকের বাদশাহীই প্রকৃত রাজত্ব। কেননা হারূণুর রশীদের নিকটে লোক জড় করতে সৈন্যসামন্ত লাগে। পক্ষান্তরে মানুষ কোন সাহয্য-সহযোগিতার স্বার্থ ছাড়াই এমনিতেই তার নিকটে সমবেত হয়েছে।[17] কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, খলীফার স্ত্রী তার স্বামীকে লক্ষ্য করে বলেন, হে হারূণ! আপনি মনে করছেন যে, আপনি বড় বাদশাহ হয়েছেন। অর্ধজাহান আপনার শাসনে চলছে, কিন্তু সত্যকথা হ’ল এই যে, বাদশাহী তো তাদের হক। বাস্তবে তারাই তো বাদশাহ, যারা মানুষের মনের ওপর রাজত্ব করছে। কোন পুলিশ তাদের হাঁকিয়ে আনেনি; বরং এটি শুধু ইবনুল মুবারকের প্রতি তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যেটি সবাইকে এখানে সমবেত করে দিয়েছে। এ অবস্থান আল্লাহ তা‘আলাই তাকে দান করেছেন। তাই তো আরবী প্রবাদে বলা হয়, إن الملوك يحكمون على الورى، وعلى الملوك لتحكم العلماء، ‘রাজাগণ সৃষ্টিজগতের উপর শাসন করেন, আর রাজাগণের উপর শাসন করেন আলেমগণ’।
(১২) মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা (রহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক প্রায়ই তারাসূস[18] শহরে যাতায়াত করতেন। তিনি যাত্রাকালে রাক্কা শহরের এক সরাইখানাতে উঠতেন। সেই সরাইখানার এক যুবক তার খেদতম করত এবং তার প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম করে দিত। একবার যাওয়ার পথে তিনি এই সরাইখানাতে উঠে সেই যুবককে দেখতে পেলেন না। অতঃপর তিনি সেখানে বেশীক্ষণ অবস্থান না করে জিহাদে চলে গেলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি লোকদের কাছে সেই যুবকের খোঁজ-খবর নিয়ে জনতে পরলেন যে, সে দশ হাযার দিরহাম ঋণের কারণে বন্দী হয়ে আছে। তখন তিনি ঋণদাতার খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে তার সন্ধান পান। অতঃপর তিনি ঋণদাতাকে রাতের বেলা সাক্ষাৎ করতে বলেন এবং যুবকের পক্ষ থেকে দশ হাযার দিরহাম পরিশোধ করেন। তিনি ঋণদাতার কাছ থেকে এই মর্মে শপথ নেন যে, তার জীবদ্দশাতে যেন এই দেনা পরিশোধের কথা কাউকে না জানানো হয়। তারপর কারও সাথে দেখা না করেই রাতের আঁধারে রাক্কা শহর ছেড়ে চলে যান। আর পরের দিন সকালে যুবককে মুক্ত করে দেওয়া হয়। লোকজন যুবককে বলল, এখানে ইবনুল মুবারক এসেছিলেন, তোমাকে অনেক খোঁজা-খুঁজি করেছেন, এখন হয়ত তিনি চলে গেছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি দুই-তিন বার সেই সরাইখানাতে এসেছিলেন। প্রথম বার তিনি ঐ যুবকের সাক্ষাৎ পেয়ে বললেন, হে যুবক! তুমি কোথায় ছিলে? গতবার এসে তো তোমাকে দেখতে পেলাম না? তখন যুবক বলল, হে আবূ আব্দুর রহমান! আমি ঋণের কারণে বন্দী ছিলাম। তিনি বললেন, তাহ’লে মুক্তি পেলে কীভাবে? যুবক বলল, এক অচেনা লোক এসে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিয়ে গেছেন। সেই লোককে আমি চিনি না এবং তার সম্পর্কে কিছু জানতেও পারিনি। তিনি বললেন, হে যুবক! তুমি আল্লাহর প্রশংসা কর, এজন্য যে, তিনি তোমাকে ঋণ পরিশোধ করার তাওফীক্ব দিয়েছেন। ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর মৃত্যুর পর সেই যুবকটি জানতে পেরেছিল, তার ঋণ পরিশোধকারী সেই অচেনা লোকটা ছিল স্বয়ং আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ)।[19]
(১৩) একবার আব্দুল্লাহ্ ইবনুল মুবারক (রহঃ) হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হ’লেন। বিভিন্ন শহর-বন্দর অতিক্রম করে তিনি কা‘বার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের কাফেলার একটি পাখি মারা গেল। তিনি পাখিটাকে একটি ভাগাড়ে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তার সাথীরা পাখিটা একটি ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে সামনে এগোতে থাকল, আর তিনি সবার পিছনে পিছনে চলতে থাকলেন। তিনি যখন ভাগাড়ের একদম কাছে চলে আসলেন, তখন পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ি থেকে এক মহিলা বের হয়ে সেই মরা পাখিটা কুড়িয়ে নিল। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হ’লে তিনি কিছুটা বিম্মিত হ’লেন এবং মহিলাটিকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। মহিলা বলল, আমি ও আমার বোন এই বাড়িতে থাকি। এই পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই। আমাদের বাবার অনেক সম্পদ ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমাদের উপর হামলা করেছে এবং বাবাকে হত্যা করে তার সব সম্পদ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এই অবস্থাতে আমাদেন জন্য তো এই মরা পাখি খাওয়া হালাল, তাই এটা কুড়িয়ে নিলাম। মেয়েটির কথা শুনে ইবনুল মুবারক স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তিনি কাফেলাকে থামিয়ে দিলেন এবং তার কোষাধ্যক্ষকে বললেন, খরচের জন্য তোমার কাছে কত টাকা আছে? সে বলল, এক হাযার দীনার আছে। বললেন, এখান থেকে গণে গণে বিষ দীনার আলাদা কর। মার্ভ পর্যন্ত পৌঁছাতে এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। আর বাকী দীনারগুলো এই মেয়েকে দিয়ে দাও। এই বছর হজ্জ করার চেয়ে এই মেয়েকে সাহায্য করাই আমাদের জন্য অধিকতর উত্তম হবে। অতঃপর তিনি কাফেলাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা করলেন।[20]
(১৪) কাসিম বিন মুহাম্মদ বলেন, একবার আমরা আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের সাথে সিরিয়া সফরে ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, লোকটার মাঝে কি এমন গুণ আছে যে, তিনি এতটা জনপ্রিয়? তিনি যদি ইবাদতগুযার হন, তাহ’লে আমরাও তো ইবাদত করি। তিনি যদি ছিয়াম রাখেন, জিহাদে অংশগ্রহণ করেন, হজ্জ করেন, এর সবই তো আমরা করি। তাহ’লে আমাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? পথিমধ্যে আমরা এক বাড়ীতে রাত কাটালাম। হঠাৎ ঘরের বাতিটা নিভে গেল, এতে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ জেগে উঠল। এরূপ অবস্থায় কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক নিভে যাওয়া বাতিটা বাইরে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঘরে ফিরে আসলেন। প্রদীপের আলোয় হঠাৎ আমার চোখ পড়ল তাঁর চেহারার দিকে। দেখলাম চোখের পানিতে তাঁর দাঁড়ি ভিজে গেছে। মনে মনে বললাম, ‘এই সেই আল্লাহভীতি, যা আমাদের সবার থেকে তাঁর মর্যাদাকে পৃথক করে দিয়েছে’। কারণ যখন ঘরে আলো নিভে গিয়ে চারদিকে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, ইবনুল মুবারক তখন আখেরাতের অন্ধকারের কথা ভেবে অঝোর নয়নে কাঁদছিলেন’।[21]
(১৫) মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়াযীর বলেন, একবার আমি পালকি বা ডুলিতে চড়ে ইবনুল মুবারকের সাথে এক সফরে বের হয়েছিলাম। রাতের বেলা আমরা এক শ্বাপদসংকুল জায়গায় উপনীত হ’লাম। ইবনুল মুবারক বাহন থেকে নেমে খচ্চরের উপর আরোহণ করলেন। আমিও তার সাথে আরোহন করলাম। আমরা সেই জায়গাটা অতিক্রম করে একটা নদীর কাছে এসে পৌঁছলাম। তিনি খচ্চর থেকে নামলেন। তখনও রাতের কিছু অংশ বাকী ছিল। তাই আমি একটু গা এলিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্ত্ততি নিলাম। আর তিনি ওযূ করে ছালাত আদায় করা শুরু করলেন। আমি মনোযোগ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তিনি ফজর পর্যন্ত ছালাত আদায় করলেন। যখন ফজর উদিত হ’ল, তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘ওঠ! ওযূ করে নাও’। বললাম, ‘আমি ওযূ করে নিয়েছি’। এরপর আমরা রওনা দিলাম। ইবাদতে তার এই কষ্ট স্বীকারের দৃশ্য দেখে আমার ভিতরে দুশ্চিন্তা চেপে বসল। নিজেকে উৎকণ্ঠার মাঝে হারিয়ে ফেললাম। পরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দেখি তার সাথেই অবস্থান করছি। তিনি দুপুর পর্যন্ত আমার সাথে কোন কথা বলেননি। অতঃপর তার সাথেই বাড়ীতে পৌঁছে গেলাম’।[22]
(১৬) অনেক সময় মহান আল্লাহর কারামত বা অলেŠকিক ঘটনা প্রদর্শন করে তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে সম্মানিত করেন। ইতিহাসের পাতায় ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর কিছু কারামতের নমুনা খুঁজে পাওয়া যায়। তার অন্যতম একটি হ’ল- একবার এক অন্ধ লোক ইবনুল মুবারকের কাছে এসে আরয করে বলেন, ‘হে ইবনুল মুবারক! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন’। ইবনুল মুবারক সেই অন্ধের জন্য দো‘আ করলেন। অতঃপর আল্লাহর অনুগ্রহে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল।[23]
(১৭) ইলমের প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। হিববান ইবনু মূসা (রহঃ) বলেন, ইবনুল মুবারক (রহঃ) নিজ শহর ছাড়া অন্যান্য শহর-বন্দরের অধিবাসীদের জন্যও তার সম্পদ বরাদ্দ রাখতেন। এতে তার কওমের লোকেরা একটু উষ্মা প্রকাশ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এমন অনেক জনপদের লোকদেরকে চিনি, যাদের মর্যাদা ও সততা রয়েছে। সঠিকভাবে হাদীছের জ্ঞানার্জনে তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে। জনগনের ইলমী চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে তার নিজেরা অভাবী হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় আমরা যদি তাদেরকে ত্যাগ করি, তাহ’লে তাদের ইলম ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। আর আমরা যদি তাদেরকে সহযোগিতা করি, তাহ’লে তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর মাঝে দ্বীনী জ্ঞানের প্রচার-প্রসার ঘটাবে। অতঃপর তিনি বলেন, لا أعلم بعد النبوة درجة افضل من بث العلم ‘মর্যাদার দিক দিয়ে নবুওয়াতের পরে ইলমের প্রসার ঘটানোর চেয়ে উৎকৃষ্টতর কোন কাজ আছে বলে আমার জানা নেই’।[24]
পরিশেষে বলা যায়, নবী-রাসূল, ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত পথেই আমাদের মুক্তির সুনিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য তাঁদের জীবনী বেশী বেশী অধ্যয়ন করা যরূরী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জান্নাতুল ফেরদাউসের সরল পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
লেখক : আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
………………………………..
[1]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, তাহক্বীক: আমর আল-আমরী (বৈরূত: দারুল ফিক্র, ১৪১৫হি./১৯৯৫খৃ.) ৩২/৪০৭, ৪২৫।
[2]. ইবনু হিববান, আছ-ছিক্বাত (হায়দারাবাদ: দারুল মা‘আরেফ, প্রথম সংস্করণ, ১৩৯৩ হি./১৯৭৩ খৃ.) ৭/৮।
[3]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (বৈরূত: মুআস্সাতুর রিসালাহ, ২য় প্রকাশ, ১৪০৫হি./১৯৮৫খৃ.) ৮/৪০৫।
[4]. খত্বীব বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ, তাহক্বীক: মুছতাফা আব্দুল ক্বাদের আত্বা (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪১৭হি.) ১০/১৫৬; হিলয়াতুল আওলিয়া ৮/১৬২; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৮৪।
[5]. ইবনু খাল্লিকান, ওয়াফিইয়াতুল আ‘ইয়ান, তাহ্ক্বীক্ব: ইহসান আববাস (বৈরূত: দারু ছাদের, প্রথম প্রকাশ, ১৯০০ খৃ.) ৩/৩২।
[6]. তারীখু বাগদাদ ১০/১৬৪; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৯৩।
[7]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ, তাহক্বীক: আহমাদ ইবনে আলী (কায়রো: দারুল হাদীছ, ২০০০খ্রিঃ/১৪২১হিঃ) ২/৩২৯; খত্বীব বাগদাদ, তারীখু বাগদাদ, ১০/১৬৫।
[8]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/৩৬৮-৩৬৯; তারীখু বাগদাদ ১০/১৫৭-১৫৮।
[9]. তারীখু দিমাশ্ক ৩২/৪৩৪; তারীখু বাগদাদ ১০/১৬৫।
[10]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৮৬।
[11]. খত্বীব বাগদাদী, তাকয়ীদুল ইলম (বৈরূত: ইহয়াউস সুন্নাহ আন-নববিয়্যাহ, তাবি) পৃ. ১২৬; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[12]. ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[13]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৮৩; তারীখু বাগদাদ ১০/১৫৪।
[14]. বুখারী হা/৬২২৪; মিশকাত হা/৯৭৩।
[15]. তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৩৭।
[16]. তারীখু বাগদাদ ১০/১৫৮; তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৫৬
[17]. তারীখু বাগদাদ ১০/১৫৫।
[18]. ‘তারাসূস’ বর্তমান তুরস্কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর (উইকিপিডিয়া)।
[19]. তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৫৫; তারীখু বাগদাদ ১০/১৫৮; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৮৭।
[20]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তাহ্কীক্ব: আলী শাইরী (বৈরূত: দারু ইহ্য়াউত তুরাছ আল-আরবী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৮ হি./১৯৮৮ খৃ.) ১০/১৯১।
[21]. ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৪/১৪৫-১৪৬।
[22]. তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৩৫।
[23]. তারীখু বাগদাদ ১০/১৬৫; তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৩৫; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৩৯৫।
[24]. তারীখু দিমাশক্ব ৩২/৪৫৬।