(প্রবন্ধটি মাসিক ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকায় ১০তম বর্ষ ১ম সংখ্যা অক্টোবর ২০০৬ইং-তে প্রকাশিত)
ছিয়াম একটি আধ্যাত্মিক ইবাদত। বস্তুত বান্দার তাক্বওয়া অর্জনের জন্য ছিয়াম আল্লাহ্র পক্ষ হ’তে অসীম নে‘মত। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা হাদীছে কুদসীতে বলেছেন, ‘ছিয়াম আমারই জন্য। আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব’। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৯, ‘ছাওম’ অধ্যায়।)
রামাযান মাস পাপ-পঙ্কিলতা ভস্মীভূত হবার মাস। এ মাসের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্র বান্দারা যদি রামাযানের মাহাত্ম্য অনুধাবন করত, তাহ’লে সারা বছরই রামাযান হওয়ার আকাংখা পোষণ করত’। (ইবনু খুযায়মা, ৩/১৯১ পৃঃ।) নিম্নে কুরআন, হাদীছ ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে সাহারী ও ইফতার সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।
সাহারীর পরিচয় :
‘সাহারী’ আরবী শব্দ। এর অর্থ হ’ল, ভোর রাতের খাবার। ছুবহে ছাদেক্বের সময় ছিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে যে পানাহার করা হয় তাকে সাহারী বলে।
তাক্বওয়া বা আল্লাহভীরুতা অর্জনে যেমন ছিয়ামের গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি ছায়েমের ছিয়াম পালনে সাহারী ও ইফতারের গুরুত্ব রয়েছে। সাহারী না খেলে ছিয়াম পালনে যেমন বিধর্মীদের অনুসরণ করা হয়, তেমনি ছিয়াম ব্যতীত একজন মুমিনের তাক্বওয়া হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট ও ভূলুণ্ঠিত। সাহারী হ’ল বরকত মণ্ডিত খানা, যা শরীরকে পুষ্টি যোগান দেয় এবং ইবাদতে স্পৃহা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, একদিন রামাযানে সাহারীর সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে ডেকে বলেন, هَلُمَّ إِلَى الْغَدَاءِ الْمُبَارَكِ. ‘এসো এই বরকত মণ্ডিত খানার দিকে’। (আবূদাঊদ হা/২৩৪৪; নাসাঈ হা/২১৬৫; মিশকাত হা/১৯৯৭।)
সাহারীর খাবারে ফেরেশতামণ্ডলী রহমত বর্ষণ করেন। ইবনু ওমর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الله وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ সাহারীকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন’। (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৪৬৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৬৫৪; হাসান হাদীছ।)
সাহারী দেরীতে খাওয়া কল্যাণকর। উম্মে হাকীম বিনতে ওয়াদে‘ আল-খুযা‘ইয়াহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, عَجِّلُوا الْإِفْطَارَ وَأَخِّرُوا السُّحُورَ. ‘তোমরা ইফতার দ্রুত করো এবং সাহারী দেরীতে করো’। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৩৯৫; ছহীহুল জামি‘ হা/৩৯৮৯। )
সাহারীর সময়সীমা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ، ‘আর তোমরা খানাপিনা রো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ফজরের শুভ্র রেখা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)। (বিস্তারিত পিডিএফ)