কৃপণতা

কৃপণতা মালের প্রতি লোভী করে তোলে এবং অবৈধ ও হারাম পথে উপার্জনে প্ররোচিত করে। এটাকে الشُّحُّ বা কৃপণতা বলে। যা নিন্দনীয়। একদল বিদ্বান বলেন, الشُّحُّ বা কৃপণতা হ’ল الحرص الشديد ‘কঠিন লোভ’। যা তাকে বৈধ অধিকার ছাড়াই তা নিতে প্ররোচিত করে। যেমন অন্যের মাল অবৈধ ভাবে নেওয়া, অন্যের অধিকারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা এবং যুলুম ও শত্রুতার মাধ্যমে অন্যের মাল বা অন্য কিছু গ্রাস করা। সমাজের মুমিন ব্যক্তি কৃপণ হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, لاَ يَجْتَمِعُ الشُّحُّ وَالإِيمَانُ فِى جَوْفِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ ‘মুমিনের হৃদয়ে কৃপণতা ও ঈমান একত্রিত হ’তে পারে না’। [মিশকাত হা/৩৮২৮]

সমাজে এমন কিছু লোক আছে, যাদের অঢেল টাকা-পয়সা থাকলেও কৃপণতা তাদের পিছ ছাড়ে না। কৃপণদের কঠিন শাস্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى- ‘যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, অচিরেই আমরা তাকে কঠিন পথের জন্য সহজ করে দিব’ (লায়ল ৯২/৮-১০)

যাদের অন্তর কৃপণতা মুক্ত তারা পরোকালে সফল হবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘যারা অন্তরের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (তাগাবুন ৬৪/১৬; হাশর৫৯/৯)

কৃপণতা এক প্রকারের যুলুম। এদের ভয়বহ হাশর নাশর হবে। ধ্বংস হওয়ার পূর্বে কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী। জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ ‘তোমরা যুলম করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা যুলম ক্বিয়ামতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে। আর কৃপণতা থেকে বেঁচে থাক। কেননা কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল। ফলে তারা নিজেদের মধ্যে রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহ হালাল করে নিয়েছিল’। [মুসলিম হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫]

কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতার কারণে ফেরেশতাগণ বদদো‘আ করে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيْهِ، إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُوْلُ أَحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُوْلُ الآخَرُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا- ‘প্রতিদিন বান্দা যখন সকাল করে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন’। [বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/১০১০]

কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন, কৃপণ ব্যক্তি তার কৃপণতার কারণে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। [নববী, শরহ মুসলিম ১৬/১৩৪]

ইমাম মাওয়ার্দী (রহঃ) বলেন, ‘লোভ ও কৃপণতা সকল নিন্দা ও নীচতার মূল কারণ। কেননা কৃপণতা মানুষকে বান্দার হক আদায়ে বাধা প্রদান করে এবং সম্পর্কছেদ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার প্রতি উৎসাহিত করে’। [আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ্দুনয়া, পৃ. ২২৪।]

কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য বেশী বেশী দোআ করা :

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخْلِ وَالجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ،

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। [ বুখারী হা/৫৪২৫; মুসলিম হা/২৭০৬]

পরিশেষে আবারও বলতে চাই, মুমিন কখনও কৃপণ হতে পারে না। কারণ একজন মুমিনের অন্তরে ঈমান ও কৃপণতা একত্রে বসবাস করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে’ (ফুরকান ২৫/৬৭)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top