গাজা দখল ও ইসরাইলের দাবানল সম্পর্কে মতামত

বর্তমানে ইসরাইলে দাবানল চলছে এবং চলছে বন্যা । আর ইসরাইলী বাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা জ্ঞাপন করেছে যে, তারা গাজা দখল করেই ছাড়বে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রাককালে দাজ্জালের আবাসন তৈরী হবে গাজাতে এবং পুড়ে যাওয়া বনভূমিতে রোপণ করা হবে ‘গারকাদ’ গাছ। এরপরেই শুরু হবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে এবং দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের ছয় থেকে সাত বছর পূর্বে মুসলমান ও রোমানদের ঐক্যতে যুদ্ধ হবে যে যুদ্ধবে বলা হয়েছে আল-মালহামা আল-কুবরা ( الملحمة الكبرى)। এ যুদ্ধে এমন ভয়াবহতা নেমে আসবে যে, আকাশে পাখি উড়ে গন্তব্যে পৌছানোর পূর্বে শেষ হয়ে যাবে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, মালহামা আল-কুবরা, একটি ভয়ানক স্কেলের যুদ্ধে শেষ হবে, যে তাদের পার্শ্ব পাখি অতিক্রম চেষ্টা করলে, “এটি তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যাবে। প্রকাশ থাকে, আমার ব্যক্তিগত মতামত, এযুদ্ধে বিমানকে পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং এসব যুদ্ধ বিমানকে লেজার অস্ত্র দিয়ে টুকর টুকর করা হবে।


ইবনু মাজাহর অপর বর্ণনায় মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, আল-মালহামা আল-কুবরা বা  মালহামার বড় যুদ্ধ, কুসতুনিয়ার বিজয় এবং দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ সাত মাসের মাঝেই সংঘটিত হবে। তবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, মালহামার যুদ্ধ ও মদীনাহ বিজয়ের মাঝের ব্যবধান থাকবে মাত্র ছয় বছর এবং সপ্তম বছরেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৪১৭ পৃ.)

আবু আব্দুর রব তাবী রহঃ থেকে বর্ননা করেন, তিনি এরশাদ করেন, যখন তুমি শামে আকাশচুম্বি ভবন নির্মান হতে দেখবে এবং সেখানে এমন ধরনের গাছ লাগানো হবে, যা হযরত নূহ (আ.)-এর যুগেও লাগানো হয়নি তাহলে বুঝতে হবে তোমাদের প্রতি ফিৎনা ধেয়ে আসছে। ( নুয়াম বিন হাম্মাদ )

কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না (বিপদাপদের কারণে) এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মৃত ব্যক্তির স্থানে হওয়ার বাসনা করবে।
গারকদ হলো এক ধরনের সুপরিচিত কাঁটাদার বৃক্ষ যা বায়তুল মাকদিস অঞ্চলে উৎপাদন হয়ে থাকে। আর এখানেই দাজ্জাল ও ইয়াহূদীরা নিহত হবে। (শারূহুন নাবাবী ১৮/৩৬ পৃ.)

পাথর ও বৃক্ষকুলের বাক্যালাপ – কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন। তবে গারকাদ বৃক্ষ -ইহুদীদের রোপিত হওয়ায় কোন কথা বলবে না। কেননা ইহা ইহুদীদের গাছ যা ইয়াহুদিদের প্রান বাঁচানর গাছ ইমাম মাহেদি আর ইসা (আ:) সময় তাদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে ওরা এই গাছের পিছনে লুকাবে ।

ইয়াহুদিদের বাচতে ফিলিস্তিন আশ পাশের বড় এলাকা জুড়ে গারকাদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। কারন তারা হাদিস কুরান নিয়ে অনেক গবেশনা করে। তারা জানে এটা তাদের আশ্রয় স্থল কিন্তু মুসলিমরা কি করবে জানে ইয়াহুদিরা এই বৃক্ষের ভিতর লুকাবেতাই খুজে এন্দের হত্যা করবে।

ইহুদীদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ জড় পদার্থগুলোকেও বাকশক্তি দান করবেন। তারাও ইহুদীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। ইসরাইল যখন গোলান পর্বতমালায় দখল প্রতিষ্ঠা করেছে, তখন থেকেই তারা ওখানে ‘গারকাদ’ বৃক্ষ লাগাতে শুরু করেছে। এছাড়াও তারা স্থানে স্থানে এই গাছটি রোপণ করছে।

হাদিসের ভবিষ্যত বানী ও ইহুদীদের গারকাদ বৃক্ষ রোপন থেকে প্রতিয়মান হয় যে, অভিশপ্ত ইহুদী জাতীর পতন অতিনিকটে। আর ফিলিস্তিন বাইতুল মুকাদ্দেসে আস পাশে এরিয়া গারকাদ গাছ লাগানো হচ্ছে । যা আগে নুহ (আঃ) যুগেও ছিল না হাদিস অনুজায়ি । কেন ইহুদীরা গারকাদ বৃক্ষ রোপণ করছে, কেননা, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা:) বলেছেন,

“‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِئَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ فَيَقُولُ الْحَجَرُ أَوِ الشَّجَرُ يَا مُسْلِمُ يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ ‏.‏ إِلاَّ الْغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُودِ ‏”‏ ‏.

 “মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। মুসলমানরা ইহুদীদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদীরা পাথর ও গাছের আড়ালে লুকাবে। তখন পাথর ও গাছ বলবে, হে আল্লাহর বান্দা, এই যে আমার পেছনে এক ইহুদি লুকিয়ে আছে; তুমি এসে ওকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ বলবে না। কেননা, সেটি ইহুদীদের গাছ।” (সুনানে মুসলিম, হা/2922, মিশকাত হা/৫৪১৪)

আবুল আকার-কন্যা উম্মু শুরাইক (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আরবের লোকেরা তৎকালে কোথায় থাকবে? তিনি বলেনঃ তৎকালে তাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। তাদের অধিকাংশ (ঈমানদার) বান্দা তখন বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থান করবে। তাদের ইমাম হবেন একজন নিষ্ঠাবান সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি।

এমতাবস্থায় একদিন তাদের ইমাম তাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করবেন। ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) সেই সকালবেলা অবতরণ করবেন। তখন ইমাম পেছন দিকে সরে আসবেন যাত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) সামনে অগ্রসর হয়ে লোকেদের নামাযে ইমামতি করতে পারেন। ঈসা (আ) তাঁর হাত ইমামের দু’ কাঁধের উপর রেখে বলবেনঃ আপনি অগ্রবর্তী হয়ে নামাযে ইমামতি করুন। কেননা এই নামায আপনার জন্যই কায়েম (শুরু) হয়েছে। অতএব তাদের ইমাম তাদেরকে নিয়ে নামায পড়বেন।

তিনি সালাত থেকে অবসর হলে ঈসা (আ) বলবেন, দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে এবং দরজার পেছনে দাজ্জাল অবস্থানরত থাকবে। তার সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহূদী কারুকার্য খচিত ও খাপবদ্ধ তরবারিসহ। ঈসা (আ)-কে দেখামাত্র দাজ্জাল পানিতে লবণ বিগলিত হওয়ার ন্যায় বিগলিত হতে থাকবে এবং ভেগে পলায়ণ করতে থাকবে। তখন ঈসা (আ) বলবেনঃ তোর উপর আমার একটা আঘাত আছে, যা থেকে তোর বাঁচার কোন উপায় নাই। তিনি লুদ্দ-এর পূর্ব ফটকে তার নাগাল পেয়ে যাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইহূদীদের পরাজিত করবেন। আল্লাহর সৃষ্টি যে কোন বস্ত্ত-পাথর, গাছপালা, দেয়াল অথবা প্রাণী, যার আড়ালেই কোন ইহূদী লুকিয়ে থাকবে, আল্লাহ তাকে বাকশক্তি দান করবেন এবং সে ডেকে বলবে, হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা! এই যে এক ইহূদী, এদিকে এসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছ কথা বলবে না। কারণ সেটা ইহূদীদের গাছ। (আবূ দাউদ হা/৪৩২১, মিশকাত হা/৬০৪৪)।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে পড়াশুনা করে আমার যা মনে হয়েছে, কিয়ামত সংঘটিত হতে খুব বেশী সময় নেই। ছোট ছোট নিদর্শন সব প্রকাশ পেয়ে গেছে, এখন বড় বড় নিদর্শন প্রকাশ পেতে বাকী। সারা পৃথিবীতে যেভাবে যুদ্ধের দামামা বাজছে তাতে মনে হচ্ছে মুসলিম  ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান মিলে একটি জোট তৈরী হবে মুশরিক, ইহুদী ও তাদের মিত্র নাসারাদের বিপক্ষে। আর এর ফলে শুরু হবে   আল-মালহামা আল-কুবরা  যুদ্ধ।

কিয়ামতের প্রাককালে ইলমের জোর বেড়ে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, নারীরা সংসারের হাল ধরবে এবং স্বামীর ব্যবসাতে সহযোগীতা করবে, খুন খারাপী বেড়ে যাবে, যেনা ব্যভীচার দ্রুত প্রসার ঘটবে (বর্তমানে তা নেটের মাধ্যমে ঘটেছে)।

আর যতক্ষণ না লোকজন সুউচ্চ দালান নির্মাণকার্যে একে অপরের প্রতিযোগিতা করবে। যতক্ষণ না এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির কবরের কাছ দিয়ে গমনকালে বলবে, হায়! আমি যদি এ স্থানে থাকতাম। (বুখারী হা/৭১২১) কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَفِيضَ الْمَالُ، وَتَفْشُو التِّجَارَةُ، وَيَظْهَرَ الْعِلْمُ أَوِ الْقَلَمُ قَالَ : قَالَ عَمْرٌو : فَإِنْ كَانَ الرَّجُلُ يَبِيعُ الْبَيْعَ، فَيَقُولُ : حَتَّى أَسْتَأْمِرَ تَاجِرَ بَنِي فُلانٍ، وَيَلْتَمِسُ فِي الْجَوِّ الْعَظِيمِ الْكَاتِبَ فَلاَ يُوجَدُ-

‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া,ব্যবসায়ের প্রসার হওয়া ও ইলম বা কলমের জোর প্রকাশ পাওয়া। আমর বলেন, কোন লোক যখন কোন কিছু ক্রয় করবে তখন বলবে, আমি অমুক গোত্রের ব্যবসায়ীর সাথে পরামর্শ করি। আর বিরাট এলাকায় একজন লেখক খোঁজা হবে। কিন্তু পাওয়া যাবে না’ (নাসাঈ হা/৪৪৫৬; হাকেম হা/২১৪৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৬৭)।

এর ব্যাখ্যা হলো ইলম বলতে…. কুরআন সুন্নাহ শুধু নয়, জ্ঞান বিজ্ঞানকেও বুঝানো হয়েছে …. এই জামানাতে জ্ঞান বিজ্ঞান তর তর করে বেড়েই চলেছে সাথে সাথে দেখেন আলেম ওলামা ও কুরআনের হাফেয বেড়েই চলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জ্ঞান থাকলেও সকলের বুঝ নেই। মানুষের ইলম হুলকুমের নিচে নামছে না। রাসূল (ছা.) বলেন, শেষ জামানাতে ক্বারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে কিন্তু অধিকাংশ ক্বারী হবে মুনাফেক্ব।

আমর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, শেষ জামানাতে মুসজিদ ভর্তি লোক থাকবে কিন্তু ঈমানদার থাকবে না। মসজিদে সালাত পড়তে যাবে অথচ ঈমানদার বা মুমিন থাকবে না এটা বিস্ময়কর বিষয় নয় কি? আসলে এর ব্যাখ্যা- মানুষ সূদ খাবে, ঘুষ খাবে, যেনা করবে, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, প্রতিবেশীর হক্ব নষ্ট করবে, আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে, মানুষ হত্যা করবে, মদ পান করবে ইত্যাদি কাজ করলে মানুষের ঈমান থাকে না। আর এরাই মসজিদে ভর্তি হয়ে সালাতে দাড়ায়। খেয়াল করে দেখলে বুঝতে পারবেন। আশাকরি সংক্ষেপে বুঝতে পেরেছেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।

উল্লেখ্য : আল্লাহ তা‘আলা সার্বিক বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। আমাদের মতামত দ্বীনের জ্ঞানের উর্ধ্বে নয়, বা প্রাধান্য পাবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top