জান্নাত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা :
জান্নাতের ১০০টি স্তর রয়েছে। প্রতি স্তরের মধ্যবর্তী দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের ন্যায়। সর্বোচ্চ হ’ল ফেরদৌস। তার উপরে হ’ল আল্লাহর আরশ। যেখান থেকে জান্নাতের নদীসমূহের উৎপত্তি হয়েছে। অতএব যখন তোমরা চাইবে, তখন ফেরদৌস চাইবে’ (বুখারী, ইবনু মাজাহ, হাকেম, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১২১)। সূরা হিজরের উক্ত আয়াতে জাহান্নামের সাত দরজা দ্বারা দরজাই বুঝানো হয়েছে। ছহীহ হাদীছে জান্নাতের আটটি দরজা আর জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা বর্ণিত হয়েছে (ছহীহুল জামে‘ হা/৩১১৯; ছহীহাহ হা/১৮১২)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَهُمْ مَا يَشَاءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ ‘এখানে (জান্নাতে) তারা যা আকাঙ্খা করবে তা পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে আরও অধিক’ (ক্বাফ ৩৫)।
জান্নাত তৈরীর মালামাল সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ ‘একটি ইট স্বর্ণের এবং একটি ইট রৌপ্যের এভাবে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। আর মিশক হচ্ছে তার সিমেন্ট এবং মণি-মুক্তা ও ইয়াকূত পাথর হচ্ছে তার সুরকি। মেঝে বানানো হয়েছে জাফরান দিয়ে’[তিরমিযী হা/২৫২৬, সনদ ছহীহ]।
জান্নাতে পানীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ فِى الْجَنَّةِ بَحْرَ الْمَاءِ وَبَحْرَ الْعَسَلِ وَبَحْرَ اللَّبَنِ وَبَحْرَ الْخَمْرِ ثُمَّ تُشَقَّقُ الأَنْهَارُ بَعْدُ ‘জান্নাতে বয়েছে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং শরাবের সমুদ্র। অতঃপর তা হ’তে আরও বহু নদী প্রবাহিত হবে’[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০১]।
জান্নাতি ব্যক্তি যারা :
জান্নাতি ব্যক্তিদের তিনভাগে ভাগ করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« تُحْشَرُ هذه الأمةُ على ثلاثةِ أصنافٍ: (صنف) يدخُلون الجنة بغير حسابٍ (وصنفٍ) يُحاسبون حسابًا يسيرًا ثم يَدْخلون الجنة، (وصنف) يجيئون على ظهورهم أمثالُ الجبالِ الراسياتِ ذُنوبًا فيسألُ الله عنهم وهو أعلم بهم فيقول: ما هؤلاء؟ فيقولون: هؤلاء عبيدٌ من عبادِك، فيقول: حُطُّوها عنهم واجعلوها على اليهودِ والنَّصارى وأدْخِلوهم برحمتي الجنَّة » .
“এ উম্মতকে তিন ভাগে উপস্থিত করা হবে-
১. প্রথম ভাগ বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
২. দ্বিতীয় ভাগ থেকে সামান্য হিসেব নেয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩. তৃতীয় ভাগ নিজেদের পিঠের ওপর বড় পাহাড়ের ন্যায় পাপসহ উপস্থিত হবে, অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক জানেন: এরা কারা? তারা বলবে: এরা আপনার কতক বান্দা। তিনি বলবেন: এসব তাদের থেকে হটাও, এগুলো ইহুদি ও খৃস্টানদের ওপর রাখ এবং তাদেরকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও” (হাকেম, হাসান হাদীস)
সত্তর হাযার লোক জান্নাতি যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِىْ سَبْعُوْنَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ. هُمُ الَّذِيْنَ لاَ يَسْتَرْقُوْنَ وَلاَ يَتَطَيَّرُوْنَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ. ‘আমার উম্মতের সত্তর হাযার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ঐসব লোক –
১. যারা ঝাড়-ফুঁক করায় না, ২. যারা অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না এবং ৩. যারা তাদের প্রভুর উপর ভরসা রাখে’। (বুখারী হা/৬৪৭২; মুসলিম হা/২১৮; মিশকাত হা/৫২৯৫)।
সত্তর হাযার ব্যক্তি বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে এবয় আরোও সত্তর হাযার লোক জান্নাতে যাবে। আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَعَدَنِي رَبِّي أَنْ يُدْخِلَ الجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعِينَ أَلْفًا لَا حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلَا عَذَابَ مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا وَثَلَاثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ ‘আমার রব আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে এবং বিনা আযাবে জান্নাতে দাখেল করবেন। প্রত্যেক হাজারের সঙ্গে হবে আরো সত্তর হাজার করে এবং তৎসহ আরো হবে আমার পরওয়ারদিগারের তিন অঞ্জলী পরিমাণ লোক’। (তিরমিযী হা/২৪৩৭; মিশকাত হা/৫৫৫৬)।
অধিকাংশ গরীব ও মিসকিন মানুষ জান্নাতি। রাসূল (ছাঃ) গরীব ও অসহায় মিসকিনদের সাথে হাশর নাশর করার জন্য দোআ করতেন। দুনিয়ার দারিদ্রতা আপনার জন্য কিয়ামতের দিনে কল্যাণ। শর্ত আপনাকে প্রকৃত মুমিন হতে হবে। মুমিনের জীবনে অভাব থাকবে কিন্ত চাহিদা থাকবে না। আবার অল্পে তুষ্ট থাকবে, কিন্তু হতাশাগ্রস্থ হবে না।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। দেখলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন। আর ধনীদেরকে (হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে …।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে, এর অধিকাংশ অধিবাসী হ’ল গরীব-মিসকীন …। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৪)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে বিবাদ হ’ল। জাহান্নাম বলল, আমার মধ্যে উদ্ধত অহংকারী লোকেরা থাকবে। আর জান্নাত বলল, আমার মধ্যে দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা থাকবে। অতঃপর আল্লাহ উভয়ের মধ্যে ফায়ছালা করলেন এইভাবে যে, তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিব। তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব’। (আহমাদ হা/১১৭৫৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৫, সনদ ছহীহ)।