দাড়ি পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। দাড়ি রাখার যেমন দুনিয়াবী উপকারিতা রয়েছে তেমনি এটি রেখে সুন্নাত পালনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) বা তাঁর লক্ষ লক্ষ ছাহাবীর কেউ দাড়ি মুন্ডন বা শেভ করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) থেকে বিশটিরও অধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তিনি দাঁড়ি ছাটতেন বা কাটতেন মর্মে কোন দলীল নেই। বরং উম্মতের উদ্দেশ্যে তিনি বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি লম্বা কর, গোঁফ ছোট কর’ (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত হা/৪৪২১)।
ঠোটের নিচের দাড়ি রাসূল (ছাঃ) কাটতেন না। বরং সেই দাড়ি সাদা হয়েছিল। আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) বলেন, رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَرَأَيْتُ بَيَاضًا مِنْ تَحْتِ شَفَتِهِ السُّفْلَى الْعَنْفَقَةَ আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি আর তাঁর নীচ ঠোঁটের নিম্নভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি (বুখারী হা/৩৫৪৫)।
অন্যত্র, হারীয ইবনু ‘উসমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি নবী (ছাঃ)-এর ছাহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, قَالَ أَرَأَيْتَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ شَيْخًا قَالَ كَانَ فِيْ عَنْفَقَتِهِ شَعَرَاتٌ بِيْضٌ.
আপনি কি নবী (ছাঃ)-কে দেখেছেন যে, তিনি কি বৃদ্ধ ছিলেন? তিনি বললেন, নবী (ছাঃ)-এর নিম্ন দাড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল (বুখারী হা/৩৫৪৬)।
উল্লেখ্য, অনুরূপভাবে হজ্জ বা ওমরা করার সময় ইবনু ওমর (রাঃ) এক মুষ্টির অধিক দাড়ি কেটে ফেলতেন মর্মে যে বর্ণনা এসেছে, সেটা তার ব্যক্তিগত আমল। হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি এরূপ করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং তা দলীল হিসাবে গ্রহণীয় নয় (ফাৎহুল বারী ১০/৪২৮-২৯, হা/৫৮৯২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। বরং গ্রহণযোগ্য হ’ল জনৈক ব্যক্তির প্রতি তাঁর স্পষ্ট নির্দেশনা- ‘তোমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য না ওমরের সুন্নাত?’ (আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ)।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, দাড়ি বিষয়ে হাদীছে পাঁচ ধরনের শব্দ এসেছে, যার সবগুলি একই অর্থ বহন করে যে, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া (শরহ মুসলিম ৩/১৫১)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী (ছাঃ) এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯৬-৯৭)।
রাসূল (ছাঃ) দাড়ি ছাটতেন মর্মে তিরমিযীতে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা মাওযূ‘ বা জাল (যঈফ তিরমিযী হা/২৭৬২; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৮, ১/৪৫৬ পৃঃ)। আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘জেনে রাখ হে পাঠক! দাড়ি ছাটার পক্ষে রাসূল (ছাঃ) থেকে একটি ছহীহ হাদীছও প্রমাণিত হয়নি। না তার কথা দ্বারা … না তার কাজ দ্বারা’ (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ৫/৩৭৬ পৃঃ, হা/২৩৫৫)।