তায়াম্মুম-এর শাব্দিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা। পারিভাষিক অর্থে, আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে পবিত্র মাটি দ্বারা মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাসাহ করার নাম তায়াম্মুম। [ফিকহুল মুয়াস্সার, পৃঃ ৩২]
ক. পবিত্রতা অর্জনে পানির বিকল্প মাটি :
ওযূর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে যে সকল কাজ করা যাবে, তায়াম্মুম করেও সে সকল কাজ করা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি পানি না পাও, তাহ’লে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর’ (নিসা ৪/৪৩)। অত্র আয়াতে আল্লাহ্ পানির বিকল্প হিসাবে পবিত্র মাটির কথা উল্লেখ করেছেন। পবিত্রতা অর্জনে পানির বিকল্প মাটি এসম্পর্কে হাদীছে এসেছে, عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلاَثٍ جُعِلَتْ صُفُوْفُنَا كَصُفُوْفِ الْمَلاَئِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُوْرًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ. হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র মানব জাতির উপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি বিষয়ে। আমাদের সারিকে করা হয়েছে ফেরেশতাদের সারির ন্যায়। সমস্ত ভূমন্ডলকে আমাদের জন্য সিজদার স্থান করা হয়েছে এবং মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি না পাই’। [মুসলিম, মিশকাত, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ, হা/৪৯১, বঙ্গানুবাদ, এমদাদিয়া, ২/১৩৪।]
খ. তায়াম্মুম-এর হুকুম :
ইসলামী শরী‘আতে তায়াম্মুম জায়েয। যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য অন্যতম বিশেষ ছাড়। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ- ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নে‘মত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)। এমর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে লোকদের সঙ্গে ছালাত আদায় না করে আলাদা থাকতে দেখে বললেন, হে অমুক! লোকদের সঙ্গে ছালাত আদায় করতে কিসে তোমায় বাধা দিল? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অপবিত্র (সহবাস বা স্বপদোষের কারণে) অবস্থায় আছি, অথচ পানি পাইনি। তিনি বললেন, তুমি মাটি ব্যবহার কর, তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট (বুখারী হা/৩৪৮; মিশকাত হা/৫২৭; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৬৭)।
মাটি ওযূর মাধ্যম স্বরূপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’ (আবুদাঊদ হা/৩৩২; মিশকাত হা/৫৩০)। অন্যত্র হাদীছে এসেছে, عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الصَّعِيْدُ الطَّيِّبُ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ. আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘পবিত্র মাটি মুসলমানের জন্য পবিত্রকারী, যদিও সে দশ বছর পানি না পায়’। [নাসাঈ, তাহক্বীক : নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৩২৪, তিনি হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
গ. তায়াম্মুমের পদ্ধতি :
১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২)
২. মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুর উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দেয়া ও মুখম-ল একবার মাসাহ করা। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৮)
৩. দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার করে বুলানো। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৮)
উল্লেখ্য যে, মাটিতে দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৬)।
পরিশেষে, পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটা প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে এক অপরিহার্য বিষয় । দ্বীন ইসলামের সবচেয়ে বড় ইবাদাত হলো ছালাত। আর এই ছালাতের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে পবিত্রতা অর্জনের ওপর। অবশ্যই মহান আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন। তিনি ইরশাদ করেন, فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ ‘তাতে এমন কতক লোক রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (তাওবাহ ৯/১০৮)।
সুতরাং ত্বাহারাত বা পবিত্রতা বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে খুবই যত্নবান হওয়া প্রত্যক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সর্বদা পবিত্র থাকার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।
(বি.দ্র: লেখাটি মাসিক ‘সোনামণি প্রতিভা’ পত্রিকাতে প্রকাশিত)