দ্বীন ইসলামে পিতা-মাতা ও সন্তানের গুরুত্ব

সন্তানরা পিতা-মাতার খিদমত করবে। তাদেরকে কষ্ট দিবে না, তাদের জন্য দো‘আ করবে।  পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ফরয। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً ‘আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’ (আনকাবূত ২৯/৮)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন, وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيْماً، وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً-  ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হ’লে তাদেরকে ‘উফ’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল’, মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার সাথে পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! দয়া কর তাদের প্রতি যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন’ (ইসরা ১৭/২৩-২৪)।

পিতা-মাতার সন্তুষ্টির জন্য আনুগত্য করা :

পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে হাদীছে অনেক নির্দেশ এসেছে। আর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বড় গোনাহ বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ. ثَلاَثًا. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ. وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ  الزُّوْرِ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করব না? সকলে বললেন, হ্যাঁ, বলুন হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্যতা। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসলেন। এরপর বললেন, সাবধান, মিথ্যা কথা বলা’। (বুখারী হা/২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৭ তিরমিযী হা/১৯০১)।

অন্য হাদীছে এসেছে,  আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কবীরা গুনাহসমূহ কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ. قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ثُمَّ عُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ. قُلْتُ وَمَا الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ؟ قَالَ الَّذِىْ يَقْتَطِعُ مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيْهَا   كَاذِبٌ ‘আল্লাহর সাথে শরীক করা’। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘পিতামাতার অবাধ্যতা। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা শপথ করা’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কি? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের ধন-সম্পদ হরণ করে  নেয়’। (বুখারী হা/৬৯২০; আবু দাউদ হা/২৮৭৫)।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে (তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭)।

ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক বর্ণনায় এমন রয়েছে, رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدَيْنِ وَسُخْطُهٗ فِي سُخْطِهِمَا অর্থাৎ পিতামাতার সন্তুষ্টিতে রবের সন্তুষ্টি, পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে রবের অসন্তুষ্টি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেছেন পিতামাতার সেবা করতে, তাদের আনুগত্য করতে, তাই তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যেরই নামান্তর।

অত্র হাদীসে পিতা-মাতার অবাধ্যতার জন্য চরম হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে, পিতা-মাতার অবাধ্যতা কাবীরাহ্ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হা/১৯০০)

পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা :

পিতামাতা জান্নাতের দরজা। যে ব্যক্তি তাদের আদর-যত্ন ও সম্মান করবে, সে জান্নাতের অধিবাসী হবে। পিতামাতা যদি কাফির-মুশরিকদের মত চলাফেরা করে তারপরেও তাদের সাথে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিৎ এবং ইসলামে তা বৈধ। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا ‘তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে’ (লোক্বমান ৩১/১৫)।

আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّىْ وَهْىَ مُشْرِكَةٌ، فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ إِنَّ أُمِّىْ قَدِمَتْ وَهِىَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ أُمِّىْ، قَالَ نَعَمْ صِلِى أُمَّكِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ফৎওয়া জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার নিকটে এসেছেন, তিনি আমার প্রতি (ভাল ব্যবহার পেতে) খুবই আগ্রহী, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচরণ কর’। (বুখারী হা/২৬২০; মুসলিম হা/১০০৩)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ. ‘কোন আমল আল্লাহর নিকটে অধিক প্রিয়। তিনি বললেন, যথাসময়ে ছালাত আদায় করা। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বললেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, অতঃপর কোনটি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। (বুখারী হা/৫২৭; মুসলিম হা/৮৫)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বললেন, رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ. ‘তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক’। বলা হ’ল, কার হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বার্ধক্যে পেল, কিন্তু (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না’। (মুসলিম হা/২৫৫১)। 

পিতা-মাতার দো‘আ সবার্ধিক কবূলযোগ্য :

পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার কারণে এবং তাদের অধিকার যথাযথ পালন না করার কারণে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। বরং তাদের দোআ অতি দ্রুত কবূল হয়। রাসূল (ছা.) বলেন, ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ) ‘নিসন্দেহে তিন ব্যক্তির দো’আ (আল্লাহর নিকটে) খুব দ্রুত পৌছায় ১. মজলুমের দো’আ ২. মুসাফিরের দো’আ ৩. সন্তানের জন্য পিতামাতার দো’আ’ (তিরমিযী হা/১৯০৫)।  অন্যত্র রাসূল (ছা.) বলেন, ‘বৃদ্ধকালে পিতা-মাতা উভয়কে কিংবা একজনকে পেল, অথচ যে সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করল না, সে হতভাগ্য’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১২)।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো পিতামাতার বৃদ্ধ বয়সে ও তাদের দুর্বল অবস্থায় তাদের প্রতি খরচ করা ও তাদের খিদমাতের মাধ্যমে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং কোন ব্যক্তি এই কাজে কমতি করলে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করল না’; এর অর্থ হলো সে অপমানিত ও লজ্জিত হবেন এবং ধ্বংস হবে। যে ব্যক্তি ঐ সুযোগ পেল যা তাকে সফলতা ও জান্নাত দানে ধন্য করবে এরূপ সুযোগ যে কাজে লাগাতে পারল না।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, (বানী ইসরাঈলের) তিন জন ব্যতীত আর কেউই দোলনায় কথা বলেননি। (ক) ঈসা ইবনু মারিয়াম এবং

(খ) ছাহেবে জুরায়জ। জুরায়জ একজন আবেদ বান্দা ছিলেন। নিজের জন্য একটি ইবাদতখানা তৈরী করে তিনি সেখানেই বসবাস করছিলেন। তার মা সেখানে আসলেন। তিনি এই সময় ছালাত পড়ছিলেন। তার মা বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে রব! আমার ছালাত ও আমার মা। জুরায়জ ছালাতেই মগ্ন থাকলেন। তার মা চলে গেলেন। তার মা পরের দিন আসলেন। তিনি এবারও ছালাতে রত ছিলেন। তাকে তার মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তিনি  (মনে মনে) বললেন, হে রব! আমার মা ও আমার ছালাত। তিনি ছালাতেই মগ্ন থাকলেন। পরের দিন এসেও মা তাকে ছালাতে মগ্ন দেখলেন। তিনি ডাকলেন, হে জুরায়জ! জুরায়জ বলেন, হে আল্লাহ! আমার মা ও আমার ছালাত। তিনি তার ছালাতেই রত থাকলেন। তার মা বললেন, হে আল্লাহ! তুমি একে ব্যভিচারী নারীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিও না। বানী ইসরাঈলের মাঝে জুরায়জ ও তার ইবাদতের চর্চা হ’তে লাগল। এক যিনাকারী নারী ছিল। সে উলে­খযোগ্য রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। সে বলল, যদি তোমরা বল তবে তাকে (জুরায়জকে) আমি বিভ্রান্ত করতে পারি। সে তাকে বিরক্ত করতে লাগল, কিন্তু সেদিকে তিনি (জুরায়জ) লক্ষ্যই করলেন না। তারপর মহিলাটি তার ইবাদতখানার নিকটবর্তী এলাকায় এক রাখালের নিকট আসল। নিজের উপর তাকে সে অধিকার দিল এবং উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হ’ল।  এতে করে সে গর্ভধারণ করল। সে সন্তান জন্ম দিয়ে বলল, এটা জুরায়জের সন্তান। বানী ইসরাঈলরা (রাগান্বিত হয়ে) জুরায়জের নিকট এসে তাকে ইবাদতখানা থেকে বাইরে নিয়ে আসল, ইবাদতখানাটি ধ্বংস করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরায়জ বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, এই নারীর সাথে তুমি ব্যভিচার করেছ। ফলে একটি শিশু জন্ম নিয়েছে। তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে আসল। জুরায়জ বললেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও, ছালাত পড়ে নেই। অতঃপর তিনি ছালাত পড়লেন। ছালাত শেষে তিনি শিশুটির নিকট এসে তার পেটে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করলেন, হে শিশু! তোমার জন্মদাতা কে? সে বলল, অমুক রাখাল আমার পিতা। তখন উপস্থিত ব্যক্তিরা জুরাইজের দিকে আকৃষ্ট হ’ল এবং তাকে চুমু দিতে লাগল। তারা বলল, আমরা এখন তোমার ইবাদতখানাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। তিনি বললেন, প্রয়োজন নেই, বরং আগের মতো মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও। তারপর তার ইবাদতখানাটি তারা আবার নির্মাণ করে দিল।

(গ) একটি বাচ্চা তার মায়ের দুধ পান করছিল। একটি লোক এমন সময় সেখান দিয়ে দ্রুতগামী ও উন্নত মানের একটি জন্তুযানে সওয়ার হয়ে যাচ্ছিল। তার পোশাক-পরিচ্ছদও ছিল উন্নত মানের। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এই লোকের ন্যায় উপযুক্ত করো। দুধপান ছেড়ে দিয়ে শিশুটি লোকটির দিকে তাকাল, তারপর বলল, হে আল্ল­াহ! আমাকে এই লোকের মতো করো না? এই বলে সে পুনরায় দুধ পান করতে থাকল। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি যেন এখনও দেখছি, শিশুটির দুধ পানের চিত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তুলে ধরছেন এবং নিজের তর্জনী (শাহাদাৎ অঙ্গুলি) মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি (নবী) বললেন, একটি দাসীকে মারতে মারতে লোকেরা নিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল, তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। মহিলাটি বলছিল, আমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং আমার জন্য তিনিই উত্তম অভিভাবক। শিশুটির মা বলল, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে তুমি এই ব্যভিচারিণী মহিলার মতো করো না, দুধপান ছেড়ে দিয়ে শিশুটি মহিলাটির দিকে দৃষ্টিপাত করল, তারপর বলল, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি এই মহিলার মতো করে গড়ে তুলো। মা ও শিশুর মাঝে এ সময় কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেলো। মা বলল, একজন সুঠাম ও সুন্দর লোক চলে যাবার সময় আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে এমন উপযুক্ত করে দাও। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এরকম করো না। আবার এই দাসীকে লোকেরা যখন মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমার সন্তানকে এর মতো করো না। আর তুমি প্রতিউত্তরে বললে, হে আল্লাহ! আমাকে এমন করো। শিশুটি এবার উত্তর দিল, প্রথম লোকটি ছিল স্বৈরাচারী অত্যাচারী। আমি সেজন্যই বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এই লোকের মতো করো না। আর এই নারীকে তারা বলে, তুমি যিনা করেছ। সে প্রকৃতপক্ষে যিনা করেনি। তারা বলে, তুমি চুরি করেছ, প্রকৃতপক্ষে সে চুরি করেনি। এ কারণেই আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমাকে এ মহিলাটির মতো করো (বুখারী হা/৩৪৩৬; মুসলিম হা/২৫৫০)।

পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দোআর ফযীলত :

সৎ সন্তান আমাদের জন্য দুনিয়াতে বসে আখেরাতের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সন্তান বিবাহের উপকারসমূহের একটি উপকার ও সর্বাপেক্ষা বড় উপকার এবং ঐ বস্ত্তসমূহের একটি যা পুণ্য এবং কর্ম থেকে মরণের পর মু’মিন ব্যক্তির সাথে মিলিত হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِى الْجَنَّةِ فَيَقُولُ : يَارَبِّ أَنَّى لِى هَذِهِ فَيَقُولُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ. ‘আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হ’ল? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে’। (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০; মিশকাত হা/২৩৫৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৯৮)।

অন্যত্র তিনি বলেন,  تُرْفَعُ لِلْمَيِتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ، فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ، أَيُّ شَيْءٍ هَذَا؟ فَيُقَالُ: وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ. ‘মানুষের মৃত্যুর পর যখন তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কি জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’।  (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৬; সনদ হাসান)।

ইমাম ত্বীবী বলেন, উক্ত হাদীসটি এ প্রমাণ বহন করছে যে, ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা বড় বড় গুনাহ মুছে যায়।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জীবিত পিতা-মাতার খেদমত করার এবং মৃত পিতা-মাতার জন্য দো‘আ ও দান-সাদাক্বাহ করার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loader-image

Scroll to Top