বাংলাদেশের আহলেহাদীছদের প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কোরায়শী ৭৫ বছর পূর্বে তাঁর লেখা ‘ইছলামি শাসনতন্ত্রের সূত্র’ বইয়ের ২১ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, ‘দ্বীন ও দুনিয়া বলিয়া দুইটা স্বতন্ত্র ও পৃথক বস্তুর ধারনা করিয়া লইয়াছেন, তাহার কারণ এই যে, তাহারা আখেরাত বা পরবর্তী জীবনকে দ্বীন বলিয়া ধরিয়া লইয়াছেন এবং দ্বীন শব্দের বুৎপত্তি, অর্থ ও প্রয়োগের প্রতি নিদারুণ অবহেলা প্রকাশ করিয়াছেন।
দ্বীন ও দুনিয়া আলাদা কোন বিষয়বস্তু নয়। দ্বীন দ্বারা দুনিয়া একই রেখাতে পরিচালিত হবে। আর যারা আলাদা করেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সুতরাং দুনিয়া নয়, দ্বীনকে আঁকড়ে ধরুন। দুনিয়ার জীবন যাত্রা একটি সফরের তুল্য মাত্র। যারা সফরে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হবে দ্বীন পালনের উপর, কেবল তারাই সফল হবেন। অথচ মানুষ সুখে থাকতে পছন্দ করে, কষ্ট নয়। বিধায় দুনিয়ার মানুষ দ্বীনকে দুনিয়ার সামান্যতম হারাম সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করে ফেলছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ’’মানুষ দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে’’(ছহীহুল জামি‘ হা/৫১২৫)। অথচ আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়া বিক্রয় করা উচিৎ (নিসা ৪/৭৪)। আর মুনাফিক্ব ও কাফের দুনিয়ার সামান্য মালের বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রি করে থাকে (ইবনে কাছীর)।
কিন্তু বাস্তবে এদের পরিচয় হ’ল যারা সূদের লেন-দেন করে, ঘুষ বা উৎকোচ দ্বারা কার্যসিদ্ধি করে, অন্যের মাল নিজের মনে করে আত্মসাৎ করে, পিতা-মাতা সন্তানের মধ্যে সম্পদের সুষমো বণ্টণ করে না, ভাই বোনের অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে, প্রতিবেশীর প্রতি যুলুম, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করছে, ইউটিউব, টিকটক, টুইটার ভিডিও, ফেসবুক রীল, ইনস্ট্রাগ্রাম ভিডিও থেকে যে টাকা উপার্জন করছে, মজুদদারী করে ভোক্তাদের কষ্ট দেয়া, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধঃস্তন কর্মচারীর প্রতি যুলুম, সার্টিফিকেট জাল করে কিংবা জন্ম তারিখ কমিয়ে বা বাড়িয়ে অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকুরীতে উপাজর্ন করে, সর্বত্র খাবারে ভেজাল মিশিয়ে ধোঁকা দিয়ে যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে প্রভৃতি ভাবে ছলচাতুরী করে আয়ের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, যদিও তা আল্লাহর নিকটে অতিব তুচ্ছ। তাই এগুলোকে সামান্য সম্পদ বলা হয়েছে। ‘আমার চোখে সবচেয়ে হতবুদ্ধি সেই ব্যক্তির, যে সন্তানের সুখের জন্য নিজে হারাম উপার্যন করে এবং অন্যের হক্ব নষ্ট করে’।
আল্লাহ আমাদেরকে হারাম সম্পদ থেকে বিরত রাখুন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন।