—লিলবর আল-বারাদী
সারা বিশ্বে প্রগতির লু হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। প্রগতিশীল সমাজ বিজ্ঞানীদের ধারনা নারী সমাজটা পরিবর্তন করা উচিৎ। সেকেলের সমাজ ব্যবস্থায় সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় নাই, বিধায় প্রগতিশীল সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তা পরিবর্তন করা সমীচীন। এরই ধারাবাহিকতায় নারী অধিকার অন্যতম। নারী অধিকার মানেই নারীর সার্বিক সম্মান। সার্বিক স্থানে প্রগতিশীল পুরুষ নারীকে দিতে চায় অধিকার এবং নারীও তা গ্রহণে সর্বাত্মক আগ্রহী। সারা বিশ্বের প্রগতিশীল সমাজ যখন নারী অধিকারের নামে মিটিং, মিছিল, আন্দোলন করছে; ঠিক তেমনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল অবলা নারী সমাজও তাদের চেয়ে পিছিয়ে নয়। নারীকে দেশের সরকারী চাকুরীতে ৬০% এবং ছেলেদেরকে ৪০% অধিকার। বহির্বিশ্বে সন্তান তার মায়ের পরিচয়ে বেড়ে উঠে। কিন্তু বাংলাদেশে তা এখনও হয় নাই। তবে পিতার পাশাপাশি মাতার নামের সংযোজন হয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে নারীদেরকে পণ্য হিসাবে পরিগণিত করেছে। তথাকথিত সুশিক্ষিত সুসভ্য জাতি ও প্রগতির ধ্বজাধারীরা ইসলামে অশ্লীলতা বিস্ফোরনে মূল উপাদান নারীদেরকে দেয়া মান সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে দিয়ে তাদেরকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে নানা ধরনের নারী ঘটিত অপরাধ প্রবণতা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘিœত হচ্ছে নারী জাতির নিরাপত্তা। প্রকোটভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা।
নারীদেরকে সিনেমা, টেলিভিশন, থিয়েটার, বিজ্ঞাপন, পত্র-পত্রিকায় নগ্ন, অর্ধনগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। নায়ক নায়িকাদের যৌন আবেদন মূলক অশ্লীল, অশোভন অভিনয়, নাচ-গান, বেহায়াপনা, স্পর্শকাতর গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গসহ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দেহ প্রদর্শন করার ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কুৎসিত চিন্তা চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে কামোদ্দীপনা সৃষ্টি করে যুবসামজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নারী জাতির এ বেহাল অবস্থা দর্শন করে সর্বস্তরের জনসাধারণ হারিয়ে ফেলেছে নারীদেরকে মা বোনদের মত সম্মান করার মন মানসিকতা, তারা হারাতে বাধ্য হয়েছে তাদের হৃদয়ের পবিত্রতা। মানুষ কত নীচে নামতে পারে এবং তাদের নগ্নতা ও অশ্লীলতা কিভাবে দুনিয়ার সামনে উপস্থাপন করা যায় তার প্রতিযোগীতা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রীতা টেম্পিলটন নামে জৈনক মহিলা চার সন্তানের জননী পেশায় একজন লেখিকা। সে তার সন্তানদের নারী শরীর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দিতে নগ্ন হবেন তাদের সম্মূখে। নারী শরীরকে পণ্য করে তোলার প্রতিবাদে রীতার এই অভিনব ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বহু প্রগতিশীল মানুষ।
কিছুদিন আগে অনলাই প্রকাশিত নয়াদিগন্ত পত্রিকায় দেখলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা রাত ১০টা পর্যন্ত হলের বাহিরে থাকতে চায়। সেখানে জৈনক ছাত্রী বলে, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মুরগী নয় যে তারা শিয়ালের ভয়ে হলে ঢুকে পড়বে। আমরা অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়’। এমনকি ছাত্রীরা আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং তারা শ্লোগান দেন,“এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন; হল কোন খোয়াড় নয়, রাত ১০টার পর ঢুকতে হবে”। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ নভেম্বর ২০১৪ইং রাত ১২টা সময় তিনজন ছাত্রী ও চারজন ছাত্র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নেশায় আসক্ত হয়ে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। সেই সময় প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রী অজ্ঞান হলে তাকে ছেলেরা ধরে মেয়েটির হলে পৌছে দেয়। অথচ বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি রাত ১০টার মধ্যে সকল গেট বন্ধ করা হবে।
একুশে টিভির সূত্র মতে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রধান শহরগুলোতে বিউটি পার্লার ও ম্যাসেজ পার্লার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যার অগোচরে চলছে অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ড। বিউটি পার্লার ও ম্যাসেজ পার্লারের ভিতরে ছোট ছোট পর্দা দিয়ে আড়াল করে ম্যাসেজের বেড রাখা হয়েছে। যেখানে সুন্দরী ললনারা অপেক্ষমান তাদের কাস্টমারদের জন্য। এখানে অধিকাংশ কাস্টমার যুবক ।
স্কুল- কলেজের প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাদের সুন্দরী ছাত্রীদের কু প্রস্তাব দিতে লজ্জাবোধ করে না। এমনকি তাদের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে তা ভিডিও করে তাদেরকে জিম্মি করে কিংবা বেশী নাম্বার প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে দিনের পর দিন ধর্ষন করে চলেছে।
দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের দৃশ্য। ছাত্র-ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কথার ছলে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ জমিয়ে পিঠ চাপড়াচ্ছে। এগুলো সবই চলছে হাসিঠাট্টার ছলে। ছাত্রীরা হয়তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে কোনো ছাত্রের গায়ে; ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে একে অপরকে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা একে অপরকে দোস্ত বলে সম্বোধন করছে এবং দেখা যায় সহপাঠী সকলে মিলে সিগারেট টানছে, তাস খেলছে। এসবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। অনেক সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা রেস্টুরেন্টে বা অন্য কোথাও গিয়ে আডডা দিচ্ছে। রেস্টুরেন্টে রয়েছে খুবই খারাপ পরিবেশ। ছোট ছোট ঘর বানিয়ে অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিপরীতেও অনেক চিত্র আছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন তাদের সন্তানদের নিয়ে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি যেভাবে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজ। প্রযুক্তির প্রসার ও সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কারণে তরুণ সমাজে খুব দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড ও দোস্ত কালচার, এমনকি তা গড়িয়ে যাচ্ছে পরোকিয়ায়। পর্নোগ্রাফির বিস্তার ও সংস্পর্শে আসার কারণে লজ্জা এবং নৈতিকতার বাঁধন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ছে লজ্জাহীনতা, খোলামেলা ও অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। একসময় মা-বাবার উদ্বেগ ছিল ছেলেমেয়েদের মোবাইলে কথা বলা এবং এসএমএস বিনিময়ে সময় ব্যয় করা নিয়ে। কিন্তু এখন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্কাইপ, ট্যাংগো, উইচ্যাট, হটসআপ ইত্যাদি ওয়েবক্যামের কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি অবারিত হয়েছে। পর্নো প্রসারের ফলে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাধ মেলামেশার পরিবেশ চালু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বেগজনক চিত্রের কথা জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াতের খবরও বের হচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লীতে খুন হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছরের এক শিক্ষার্থী। রাজধানীর পুরান ঢাকায় পর্নো ভিডিওতে অভিনয়ের সময় ধরা পড়েন দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। রাজধানীর এক কলেজের জৈনক ছাত্রের সাথে প্রণয়ে আশক্ত শিক্ষিকা। ইডেন কলেজের এক ছাত্রী পতিতা বৃত্তিতে লিপ্ত হওয়ায় তার পিতা তাকে দেশের বাসা শেরপুর নিয়ে যায় এবং পড়াশুনা বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু মেয়ে তার পিতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে। এছাড়া পুরান ঢাকায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রী খুন হওয়ার পর জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এক বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাসা ভাড়া নিয়ে লিভটুগেদার করতেন। নিহত ছাত্রীর মা-বাবা জানতেন তিনি কলেজের হোস্টেলে থাকেন। চীনে এক ব্যক্তি তের জন মহিলার সাথে প্রেমের খেলায় জড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ একদিন সে অসুস্থ হলে তের জন একে একে তাকে দেখতে আসে। এঘটনায় পুলিশ তাকে বন্দি করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার প্রত্যেকেরই সন্তান রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে সম্প্রতি এ ধরনের একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটে। দুই সন্তানের জননী লাভলীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক হয় নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তানভির আহমেদের। তাদের ওই সম্পর্কের কথা লাভলীর স্বামী গিয়াসউদ্দিন জানার পর এ নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে লাভলী তানভিরকে দিয়ে স্বামীকে খুন করান।
গত ৩ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে তন্ময় আর মিম দু’জনেরই বয়স ১৬। দু’জনেই মগবাজার প্রভাতী বিদ্যানিকেতনে দশম শ্রেণীতে পড়ত। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। দিনে দিনে গভীর হয় তাদের প্রণয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রেমে বাঁধা দিলে একদা রাতে ঘোরাঘুরি শেষে ভোরে হাতিরঝিল ব্রিজের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
রংপুরে পীরগাছায় অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে দেয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই ছাত্রী। সম্প্রতি বরিশাল বিএম কলেজের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে তার নগ্নভিডিও প্রকাশ হয়ে পড়ায়। গত ফেব্রুয়ারিতে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে ২০ বছরের এক তালাকপ্রাপ্তা নারী ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় সে আত্মহত্যা করেছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঢাকার ঐশীর। সে নিশায় আসক্ত হয়ে বয়ফ্রেন্ডের সহযোগীতায় তার পিতা-মাতাকে হত্যা করে।
সামাজিক যোগাযোগ, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, দোস্ত কালচারের বিস্তৃতি, পর্নো আগ্রাসন, অবাধ মেলামেশার ফলে তরুণ সমাজ জড়িয়ে পড়ছে প্রেম-ধর্ষণ-পরকীয়ার মতো অনেক ঘটনায়। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন ত্রিমুখী, চতুর্মুখী সম্পর্কে। এ নিয়ে বন্ধুবান্ধবের মধ্যেও অনেক সময় ঘটছে সঙ্ঘাত হানাহানির ঘটনা। এসবের রেশ ধরে ঘটছে নানা অনাকাক্ষিত ঘটনা। ঘটছে আত্মহত্যা ও খুনের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনার খবরে প্রায়ই বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছে গোটা দেশবাসী।
এরকম বেহায়া লজাষ্কর পরিবেশ বিধ্বংষীতা অনৈতিক ও অনাচার সম্পর্কে অভিভাবকরা কয়েক বছর আগে চিন্তা করতে পারতেন না। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক অভিভাবক। কোনো কোনো অভিভাবক আবার অন্য অভিভাবকদের দায়ী করে বলছেন, অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না এবং এটা তাদের কাছে দুশ্চিন্তারও কোনো কারণ নয়। এদের সংস্পর্শে এসে প্রভাবিত হচ্ছে অন্যরা। তাই পরিবারকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যৌনতাপূর্ণ হিন্দি নাচ-গান এবং সিনেমা তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রে বিকল্প আফিম হিসেবে ধরা দেয় এবং এটা তাদের মধ্যে নেশার মতো কাজ করে। সমাজ জীবনেও এর নানাবিধ প্রকাশ নানা মাত্রায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘটতে থাকে।
ডিশ টিভির যখন জয় জয়কার তখন দেশে প্রচলন শুরু হয় কম্পিউটারের। তবে তখন ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না। এ সময় অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠে অসংখ্য ভিডিও দোকান। এসব দোকানে পানির দরে বিক্রি এবং ভাড়ায় পাওয়া যেত পর্ণো সিডি এবং অশালীন নাচ-গানের ভিডিও। উঠতি বয়সের বিশেষ করে ছেলেরা দোকান থেকে সিডি এনে রুমের দরজা বন্ধ করে ডুবে যেত পর্নোগ্রাফির জগতে। এ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার খবর স্থান পায় গণমাধ্যমে। যে পর্নোগ্রাফি ছিল একসময় ভিডিও দোকানে সীমাবদ্ধ তা এখন চাহিবামাত্র ক্লিক করলেই চলে আসে সামনে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে না চাইতেও বিভিন্নভাবে কোনো না কোনো লিংকের সূত্র ধরে এসব সাইটে ক্লিক করার জন্য বিজ্ঞাপন আকারে অফার আসতে থাকে ইন্টারনেট জগত বিচরণ করার সময়। ছেলে আর মেয়ে বলে কথা নয়, মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও নেই এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন জব্দের পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে বেশির ভাগ মোবাইলে পর্নো ভিডিও। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমানে অশ্লীল ভিডিও প্রসার লাভ করে হাতের মোবাইল ইন্টারনেটে। চোখের পলক ফেলতে যত দেরী তার চেয়েও দ্রুত পেয়ে যাচ্ছে তাদের কাংখিত পর্ণোগ্রাফি। ইউটিউব, ইউপর্ণ, ও লাইপেজের বাংলা চটি নামে নানারকম মিথ্যে গল্প-কাহিনী প্রকাশ করে ব্লগাররা। এসব কথা আলোচনা করছি কেন? কিছুদিন আগে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ র্যাব বাহিনী সার্স করে পর্নোগ্রাফি। তাদের বন্ধ করা উচিৎ পর্নোগ্রাফি কম্পিউটার লোডে বন্ধ করার পূর্বে ভারতীর স্টার জলসা, জি-বাংলার মত চ্যানেল ও ইউটিউব, ইউপর্ন, ও লাইপেজের মত বাংলা চটি নামে নানারকম মিথ্যে গল্প-কাহিনী প্রকাশ করা ব্লগ সাইটগুলো।
হায়রে সমাজ ব্যবস্থা ভাবতে আবাক লাগে, যারা নারী জাতির বারোটা বাঁজিয়ে ছেড়েছে তারাই আবার নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্য সভা-সমিতি করে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলছে নানা রকম ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে। নারীর আর কি মুক্তি চায় তারা? তারা তো তাদের দেশের নারীদেরকে মুক্ত ভাবে ছেড়ে দিয়ে সর্বনাশের শেষ সীমায় নামিয়ে দিয়েছে।
পাশ্চাত্য সমাজে সাম্যের দিক বিবেচনা করে যে, নারী ও পুরুষ নৈতিক মর্যাদা এবং মানবীয় অধিকারের দিক দিয়ে শুধু সমান নয়, বরং পুরুষ যে কাজ করে নারীও তাই করবে। সাম্যের ভ্রান্ত ধারণার জন্য অফিস, আদালত কল কারখানার চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে তাদের দাম্পত্য জীবনের গুরুদায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন ও গৃহের সু-ব্যবস্থা প্রভৃতি যাবতীয় করণীয় বিষয়গুলো নারীর কর্মসূচী হতে বাদ পড়ছে। তাদের প্রকৃতিগত কাজকর্মের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেছে। সংসার জীবনের সুখ শান্তি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কেনই বা হবে না? যে নারী নিজে উপার্জন করে যাবতীয় প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম, সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, সে শুধু যৌন সম্ভোগের জন্য পুরুষের অধীন থাকবে কেন? বিবাহ ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই মর্মে জার্মান স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইধনবষ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পুরুষ ও নারী তো পশুর মতই। পশু দম্পত্তির মধ্যে কি কখনো স্থায়ী বিবাহের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়?”
এ সকল উল্টা চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক শান্তি না থাকায় তাদের জীবন তিক্ত হতে তিক্ততর হচ্ছে এবং একটি চিরন্তন দুর্ভাবনা তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিতে পারছে না। এটাই ইহলৌকিক জাহান্নাম যা লোকেরা তাদের নির্বূদ্ধিতা ও লোভ লালসার উন্মাদনায় ক্রয় করে নেয়।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, নারী হলো সম্মানিত জাতি। কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে সম্মান প্রদর্শনের নামে অসম্মান করা হচ্ছে। যুগে যুগে নারীরা শয়তানের রশি হিসাবে কাজ করে গোটা সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করেছে। বর্তমানে বিজাতীরা প্রগতির নামে যুবতীতের দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জালবুনে সারা পৃথিবীর বিবেকবান জাতিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম পরিকল্পনা হলো পরিবার পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা আমাদের মেয়েদের লজ্জা হরণ করেছে। যার ফলে তারা নির্দ্বিধায় বিভিন্ন ভাবে যেনায় লিপ্ত হচ্ছে। সম্প্রতি বসনিয়ায়র এক স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে যান। এতে দেখা যায় তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ জন মেয়ে গর্ভবতী হয়েছে। তাদেরকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তারা উত্তরে বলে, বয়ফ্রেন্ডকে না বলতে পারিনি। যার ফলে সেই দেশের সরকার এখন সচেতন যে, ছেলে মেয়েদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যৌন শিক্ষা দিতে হবে। যাতে করে তারা এমন ভুল আর না করে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও অনুরূপ আশাবাদী যে, তাদেরকে যৌন বিষয়ক শিক্ষা দেয়া অতিব প্রয়োজন। সেখানে এমনকি আইন করেছে কোন যুবতি যদি লিভটুগেদার করে কিংবা দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এতে কুমারিত্ব নষ্ট হলে, পরবর্তীতে নারী নির্যাতন আইনে ধর্ষন মামলা দায়ের করতে পারবে না। আমাদের বাংলাদেশেও অনুরূপ ঘটনা অহরহ। তবে যাহোক এ সকল সহশিক্ষার কুফল। তারা ভালো করেই জ্ঞাত যে, মুসলমান জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সর্বপ্রথম তাদের ঈমানী শক্তির উপর আঘাত হানতে হবে। এতে করে তারা তাদের পরিকল্পনা প্রসূত এক শ্রেণির নারীদেরকে দিয়ে সারা বিশ্বে নগ্নতা ছড়িয়ে দিয়েছে। আর আমরা তা অনুসরণ করে চলেছি। আমাদের নারী সমাজ তথা মা-বোনদেরকে তাদের সঠিক সম্মান থেকে বঞ্চিত করে বিপথগামী পথে চলতে সহযোগীতা করছি। আমরা এমন জাতি যে, ইসলাম শিক্ষার পরিবর্তে যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম তৈরী করছি।
একজন সুন্দরী মেয়েকে ঘর থেকে বাহির করে এনে দুই পুরুষের মাঝখানে রিক্সায়, পার্কে, নদীর পাড়ে, চত্ত্বরে, স্কুল-কলেজে, রেস্টুরেন্টে, অডিটোরিয়ামে বসতে দেয়া কি নারী স্বাধীনতা? বয়ফ্রেন্ডস/ গার্লফ্রেন্ড বা বন্ধু – বান্ধবী ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল শ্লোগান দিতে গিয়ে একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরে ফটোসেশন করা কি নারী স্বাধীনতা? বিলবোর্ড থেকে শুরু করে পণ্যের অ্যাডের মডেল নারীর দেহ উপস্থাপন করে পণ্যের মত নারীকে পণ্য বানিয়ে প্রোডাক্টের প্রচারণা চালানো কি নারী স্বাধীনতা? সবচেয়ে বড় কথা যারা নারী স্বাধীনতা নিয়ে তাফালিং করে তাদের চারিত্রিক গুণাবলী দেখলেই বোঝা যায় তারা কেমন নারী স্বাধীনতা চাই!! পাগল নিজেও পাগলের সুখ বোঝে কিন্তু (কথিত প্রগতির) নারী বোঝে না তার প্রকৃত ইজ্জত-সম্মান, নায্য অধিকার, প্রকৃত স্বাধীনতা কে দিতে পারে? আমার নারী বোনদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলে রাখি- এরা যতোক্ষণ পর্যন্ত আপনার শরীরের ব্যবচ্ছেদ করতে পারবে না ততোক্ষণ পর্যন্ত এরা আপনার জন্য নারীবাদী প্রগতিশীল ভালো মানুষ। আর যখন আপনার শরীরের চামড়া ভোঁতা হয়ে যাবে, আপনার রূপের বাহাদুরি হারিয়ে যাবে, তখন তারা আপনাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দিবে, বলবে আপনি সেকেলে। তাই কবি আফসোস করে বলেন,
এ এমন নারীবাদী প্রগতির শিক্ষা
যে করে নারীদের অধিকার ভিক্ষা,
সতীত্ব কেড়ে নিয়ে ফেলে রেখে চম্পট
প্রগতির আবরণে লুটে নেয় লম্পট।
আজ খুব প্রয়োজন প্রগতির সংজ্ঞা
সারাক্ষণ ভাবনা কেমনে হবে সেই প্রগতি চঙ্গা,
নারী প্রগতি মানে নারী দেহ উলঙ্গ
প্রগতির মূলধন সস্তা নারী আজ পণ্য।
বর্তমান বিশ্বে কোন নারী ধর্ষিত হয় তবে তার ডাক্তারী পরীক্ষা করেন একজন পুরুষ ডাক্তার, সাথে থাকেন পুরুষ পুলিশ অফিসার। একবার নয় পুনরায় আবারও তার ইজ্জত দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারী হাসপাতালে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে বাচ্চা প্রসব (ডেলিভারী) করানো হয়।
হে প্রগতিবাদী নারী সমাজ এখনো সময় আছে একবার সুস্থ্য মস্তিষ্কে গভীরভাবে চিন্তা করুন এটা কি প্রকৃত সুস্থ্য জীবনে চলার সঠিক পথ? উপলব্ধি করুন, তারা যা চায় তা কি প্রগতির নামে প্রহসনে নারীর সতীত্ব নষ্ট বৈ কিছু নয়? তাই আসুন! পিছনের সকল পাপ পষ্কিলতার পথ পরিহার করে, সুস্থ্য সঠিক জীবনে ফিরে আসি। ইসলামকে বুকে টেনে নিয়ে একবার গভীলভাবে বুঝার চেষ্টা করি। ইসলাম আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ইজ্জত-সম্মান, প্রতিপত্তি, ইহকালিন শান্তি ও পরোকালিন মুক্তি দিতে পারে।
ইসলাম শ্বাশত সত্য ও শান্তির ধর্ম এবং চিরন্তন প্রগতিশীল ও সার্বজনীন। আর তাই ইসলাম আল্ল¬াহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন। বিশ্ব মানবতা ও বিশ্ব নারী সমাজকে একমাত্র ইসলামই পারে শান্তি দিতে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। সারা বিশ্বের নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত নারী সমাজকে পূনঃ প্রাতিষ্ঠা হরণকৃত অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে একমাত্র ইসলাম।
বর্তমান যুগে আধুনিক প্রগতিশীল কিছু ব্যক্তিরা বলে, ইসলাম মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, যেহেতু উত্তরাধিকারের ব্যাপারে ইসলাম ধর্ম মেয়েদেরকে ছেলেদের সমান অধিকার দেয়নি। আসলে মানুষের মাঝে কিছু চালাক চতুর লোক রয়েছে যারা মেয়েদেরকে নিয়ে সদা সর্বদা তাদের কু-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য চক্রান্ত করছে কেবল তারাই নারী স্বাধীনতার নামে উষ্কানী দিয়ে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে ধাকা দিচ্ছে।
১৪০০ বছর পূর্বে ইসলামী প্রগতির চিরন্তন প্রদ্বীপ্ত সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তৎকালীন আরব সমাজ ছিল বর্বর জাহিলিয়াতের সমাজ। সেই সময় নারীরা ছিল সবচেয়ে বেশী অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও পদদলিত। নারী সমাজকে সামাজিক ভাবে মূল্যায়ন করা হতো না। কোন পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করা হতো। দরিদ্র ও অভাবের ভয়ে ভূমিষ্ট শিশুকে মেরে ফেলা হত। জন্মদাতা যালিম পিতা শিশু সন্তানের হৃদয় বিদারক চিৎকার উপেক্ষা করে তাকে মাটিতে পুঁতে রাখত। অনেক পিতা দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিত। সেই যুগে এমন কি মেয়েদেরকে কিছুই দেয়া হতো না এই বলে যে, তারা যুদ্ধ করত না, তারা তলোয়ার ধারণ করত না এবং শত্রুর মোকাবিলা করত না। এই সূত্র ধরে তারা পিতা মাতার ধন সম্পদেরও মালিক হতো না। আর না হতো তাদের স্বামীর অংশীদার। মেয়েরা এ ভাবেই যুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতো।
আল¬াহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ববাসীর হিদায়েতের লক্ষ্যে চির শ্বাশত ও শান্তিপূর্ণ নির্ভেজাল বিধান দিয়ে বিশ্ব মানবের মুক্তির দূত ও আলোর দিশারী নবী মুহাম্মাদ সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬ামকে পৃথিবীতে পাঠালেন। তিনি চৌদ্দ শত বছর পূর্বে আল¬াহর নির্দেশে নারীর হক নির্ধারণ করলেন যাতে তারা ইযযতের সাথে স্বসম্মানে তা গ্রহণ করতে পারে। করুণা কিংবা দানের ভিত্তিতে নয়, বরং আল্ল¬াহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ ‘রমণীদের পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজন যা রেখে গেছে তার মধ্যে তাদের জন্য অংশ রয়েছে’ (নিসা ৪/৭)।
মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে দুর্বল ও সম্পদের বেশী মুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসলাম ছেলেদের জন্য মেয়েদের দ্বিগুন অংশ নির্ধারণ করলো? ইসলাম কারো প্রতি জলুম করে না। তাই মহান আল্লাহ বলেন, يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের স¤পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য স¤পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যেেতর পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধািিরত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ’। (নিসা ৪/১১)।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়, যার দ্বারা সমাজে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার দ্বারা সে তার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে পারে তা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল আইন কানুন নারীকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল করে রেখেছে এবং সমাজে নারীর দাসত্বের কারণই হলো তার এ আর্থিক দুর্গতি। ইউরোপ এ অবস্থার অবসান চাইল এবং তার জন্য নারীকে উপার্জনশীল হিসাবে তৈরী করলো। উত্তরাধিকার সে লাভ করলো। ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকারের বিরাট অধিকার দান করলো। পিতা, স্বামী, সন্তান ও অন্যান্য নিকট-আত্মীয়ের উত্তরাধিকার সে লাভ করলো। উত্তরাধিকার আইনে নারীকে পুরুষের অর্ধেক অংশ দেয়া হয়েছে। নারী তার স্বামীর নিকট হতে মোহর ও ভরণ পোষণ পায়। পুরুষ এ সকল হতে বঞ্চিত। নারীর ভরণ পোষণ শুধু স্বামীর উপর ওয়াজিবই নয়, বরং স্বামীর অবর্তমানে পিতা, ভাই, সন্তান অথবা অন্যান্য আত্মীয় তার ভরণ পোষণ করতে বাধ্য। মেয়েদের সম্পদ লাভ করার মাধ্যমে তার উপর পূর্ণ মালিকানা ও সত্ত্ব কায়েম হয় এবং তা ব্যয় করার পূর্ণ অধিকার তার, পিতা, স্বামী কিংবা অন্য কারও নেই। কোন ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করলে, অথবা নিজ শ্রম দ্বারা কোন অর্থ উপার্জন করলে তারও সে মালিক হবে। এ ছাড়াও তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ স্বামীর। স্ত্রী যত ধনশালী হোক না কেন, তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব হতে স্বামী মুক্ত হতে পারবে না। এভাবে ইসলাম ধর্মে নারীর আর্থিক অবস্থাকে এত সুদৃঢ় করে দেয়া হয়েছে যে, অনেক সময় নারী পুরুষ অপেক্ষা বেশী ভাল অবস্থায় থাকে।
ইসলামে মেয়েরা সম্পদ গ্রহণ করবে, কিন্তু খরচের ব্যাপারে তাকে বাধ্য করা হয়নি, কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তার লাভ আছে, ক্ষতি নেই। আয় আছে, ব্যয় নেই। জমা আছে, খরচ নেই। অতএব, আদল ও ইনসাফের কষ্টি পাথরে যদি যাচাই করা হয় তাহলে সবার কাছে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে যে, পুরুষদের সাথে নারীদের অংশ পার্থক্য করা হয়েছে সার্বিক যুক্তিসংগত, ন্যায়ানুগ ও বিজ্ঞান ভিত্তিক। কিন্তু প্রগতিবাদিরা যে অধিকারের মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে চলেছে তা মচিকার পিছনে ছুটার নামান্তর বৈ কিছু নয়।
এছাড়াও ইসলাম নারীদেরকে ভূমিকা ভেদে বিভিন্নভাবে সম্মানিত করেছেন। একজন নারী যখন কন্যা সন্তান, তখন সে পিতা মাতার জন্য জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হয়ে যায়। (মুয়াত্তা, মিশকাত হা/৪৯৪৯)। আবার নারী যখন স্ত্রী’র দ্বায়িত্ব পালন করে, তখন সে তার স্বামীর অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করতে সহযোগীতা করে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩০৯৬; ছহীহুল জামে’ হা/৪৩০, ৬১৪৮, সনদ হাসান) এবং যখন ঐ নারী মায়ের ভূমিকায় থাকে, তখন তার পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত থাকে (তিরমিযী; মিশকাত হা/৪৯২৭; নাসাঈ হা/৩১০৪)। সার্বিক বিবেচনা করে এটাই প্রতিয়মান হয়, নারীদের সম্মান ও প্রতিপত্তি এবং প্রগতিশীল সম্মাননা একমাত্র ইসলামই দিয়েছেন ১৪০০ বছর পূর্বে। তাই আসুন! মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝার তাওফিক্ব দান করুন, আমিন।